ভুলে ভরা জীবন
প্রকাশিত: ফেব্রুয়ারী ১৩, ২০১৮
লেখকঃ vickycherry05

 3,545 বার দেখা হয়েছে

এই লেখক এর আরও লেখা পড়ুনঃ vickycherry05

লেখক:
Akram Hussain Tahosin
(ফেব্রুয়ারী’১৮)
………………

আমি আর নিরব সেই ঘন্টাদুয়েক ধরে হাঁটতেছি। কোথায় হাঁটতেছি বুঝতেছি না। চারপাশে হাজার হাজার মানুষ। সবাই নিজেকে নিয়ে ব্যস্ত। হাঁটতে হাঁটতে একটা সময় আমি ক্লান্ত হয়ে বসে পড়লাম। উঠে দেখি নিরব নেই। চারপাশে হাজার হাজার মানুষ কিন্তু কোথাও নিরব নেই। আমি চিৎকার দিতেই ঘুম ভেঙ্গে গেল। চোখ মেলে দেখি নিরব হাতের উপর ভর দিয়ে আমার দিকে তাকিয়ে আছে। দেয়াল ঘড়িতে তখন রাত আড়াইটা। সে বলে উঠলো, দুঃস্বপ্ন দেখছো সুমাইয়া?
আমি কিছু বললাম না। চোখে জল নিয়ে শুধু নিরবের দিকে তাকিয়ে রইলাম। সে ডানহাতের শাহাদাত আঙ্গুলি দিয়ে আমার চোখের জল মুছে কপালে চুমো খেল। আমি জড়িয়ে ধরে বললাম, আমাকে কখনো ছেড়ে যাবে নাতো?
– কক্ষনো না।
আমাদের সময়টা খুব সুন্দর ছিলো। নিরব প্রচুর ঘুমাতো। কিন্তু মাঝেমধ্যে সারারাত জেগে আমার দিকে তাকিয়ে থাকতো। এইতো গত অক্টোবরের কথা। রাত তিনটার সময় চোখ মেলে দেখি আমার মুখের উপরে নিরবের মুখ। প্রথমে একটু হকচকিয়ে গিয়েছিলাম। পরে সে মুচকি হাসলো। আমি জিজ্ঞেস করলাম, – ঘুমোওনি?
– না।
– কি দেখছিলে অমন করে?
– তোমাকে।
আমিও মুচকি হাসলাম। তারপর দুজন মিলে উঠে ফ্রেশ হয়ে তাহাজ্জুদ নামাজ পড়লাম। ফযরের পর তার মাথায় হাত বুলিয়ে ঘুম পারিয়ে দিলাম। ছোট বাচ্চাদের মত সে ঘুমিয়ে পড়লো। ঘুমানোর সময় বলেছিলো, তোমার হাতে মায়ের মমতা আছে। তখন আমার মনে হচ্ছিলো, পৃথিবীর সব মেয়েই ‘মা’। মমতাময়ী।

এক জোৎস্না রাতের কথা আমার খুব মনে পড়ে। আহা আকাশে কতো বড় চাঁদ। চারপাশে ছড়িয়ে ছিটিয়ে রয়েছে জোৎস্না। জানালা দিয়ে চাঁদ দেখে আরাম পাচ্ছিলাম না। নিরবকে টেনেটুনে বিছানা থেকে তুললাম। সে আমার ঘাড়ে ভর দিয়ে ছাঁদে গেল। আমি মুগ্ধ হয়ে আকাশের দিকে তাকিয়ে আছি। কিছুক্ষণ পর লক্ষ্য করলাম। নিরব এক দৃষ্টিতে আমার মুখের দিকে তাকিয়ে আছে। তার চোখের পলক পড়ছে না। আমি কিছুটা বিস্ময় নিয়ে বললাম, কি দেখছো নিরব?
সে নেশাজড়ানো কন্ঠে বললো, চাঁদ।
আমি বললাম, চাঁদ কি ছাঁদে না আকাশে?
– আমার চাঁদ ছাঁদে। এইতো আমার সাথে কথা বলছে। এই চাঁদে একটুও কলঙ্ক নেই।
আমি হাসলাম। সে এখনো তাকিয়ে আছে। ছাঁদে বসে দীর্ঘ সময় গল্প করার পর নিরবের কাঁধে মাথা রেখে ঘুমিয়ে পড়লাম। ঘুমের ঘোরে টের পাচ্ছিলাম সে কোলে করে আমাকে রুমে নিয়ে যাচ্ছে। আহা জীবন। আজ সবকিছু স্মৃতির পাতায়।

পরের গল্পটা একটু কষ্টের।
আমি একটা জিনিস সবচেয়ে বেশী পছন্দ করতাম। কেউ আমাকে ছবি এঁকে দিলে আমি মুগ্ধ না হয়ে পারতাম না। একদিন সকালে ফেসবুকে ডুকতেই ইনবক্সে একটা মেসেজ আসলো। মেসেজে আমার ফেইস স্কেচ করে ফটো তুলে পাঠিয়েছে একজন। স্কেচটা দেখে আমি আনন্দে কেঁদে দিয়েছিলাম। এই আনন্দটাই ছিলো আমার জীবনের সবচেয়ে বড় ভুল।
যে ছেলেটা ফটো এঁকে দিয়েছিল তার নাম হৃদয়। ছেলেটি যে শুধু ভালো স্কেচ করতো তা না। সুন্দর কবিতা লিখত। ভালো গান করতো। ওর গানের গলা অসাধারণ। নিরব যতক্ষণ অফিসে থাকতো তার পুরোটা সময় আমি হৃদয়ের সাথে চ্যাটিং করতাম, ফোনে কথা বলতাম, গান শুনতাম। একটা সময় হৃদয় ছেলেটার সাথে আমার খুব ভালো সম্পর্ক হয়ে যায়। প্রতিদিন দুপুরে লাঞ্চ করতে ওর সাথে বাহিরে যেতাম, ঘুরতাম। অনেক ভালো কাটছিলো সময়টা। মনে হচ্ছিলো এই ফাস্ট আমার জীবনে ভালোবাসা নামক কিছু একটা এসেছে।
ডিসেম্বরের ১৪ তারিখ। নিরবকে অফিসে পাঠিয়ে হৃদয়ের সাথে দেখা করতে কেএফসিতে গেলাম। যেতেই হৃদয় বলে উঠলো, চলো আমরা বিয়ে করে ফেলি। আমি হৃদয়কে এতোটাই ভালোবেসে ফেলেছিলাম যে ‘না’ শব্দটা উচ্চারণ করতে পারিনি। ওর সাথে চলে গেলাম। নিরবকে ডিভোর্স দিয়ে, হৃদয়ের সাথে চট্টগ্রামে….!
প্রথম কয়েকদিন বেশ ভালোই কাটছিলো। কিন্তু মাসখানেক পর দেখি হৃদয় পুরো চেইঞ্জ। সে রাত জেগে কার সাথে কথা বলে। প্রতিদিন দেখা করতে চলে যায়। আমাকে একটুও পাত্তা দেয় না। কিছু বললে ধমক মারে, গায়ে হাত তুলে। মাত্র একমাসে হৃদয় পুরো চেইঞ্জ। হঠাৎ সে একদিন বাসায় এসে আমার হাতে ডিভোর্সের পেপার ধরিয়ে দিলো। আমি কোনোকিছু না বলে সই করে বেরিয়ে আসলাম। মনে হলো এতেই মুক্তি। কিন্তু তার পরের সময়টা ছিলো আমার জন্য খুবই যন্ত্রণার। স্মৃতিগুলো নিতে পারছিলাম না।
গতকাল রাত ১২টার দিকে সুসাইড করার জন্য ছাঁদে উঠেছিলাম। আকাশে ভরা পূর্নিমা। হঠাৎ নিরবের কথা মনে পড়ে হার্টবিট বেড়ে গেল। খুব ইচ্ছে হচ্ছিলো আগের দিনগুলোতে ফিরে পেতে। আচ্ছা নিরব কি আমাকে মাফ করবে?

সম্পর্কিত পোস্ট

অঘোষিত মায়া

অঘোষিত মায়া

বইয়ের প্রিভিউ ,, বই : অঘোষিত মায়া লেখক :মাহবুবা শাওলীন স্বপ্নিল . ১.প্রিয়জনের মায়ায় আটকানোর ক্ষমতা সবার থাকে না। ২.মানুষ কখনো প্রয়োজনীয় কথা অন্যদের জানাতে ভুল করে না। তবে অপ্রয়োজনীয় কথা মানুষ না জানাতে চাইলেও কীভাবে যেন কেউ না কেউ জেনে যায়। ৩. জগতে দুই ধরণের মানুষ...

আমার জামি

আমার জামি

জান্নাতুল না'ঈমা জীবনের খাতায় রোজ রোজ হাজারো গল্প জমা হয়। কিছু গল্প ব্যর্থতার,কিছু গল্প সফলতার। কিছু আনন্দের,কিছু বা হতাশার। গল্প যেমনই হোক,আমরা ইরেজার দিয়ে সেটা মুছে ফেলতে পারি না। চলার পথে ফ্ল্যাশব্যাক হয়। অতীতটা মুহূর্তেই জোনাই পরীর ডানার মতো জ্বলজ্বলিয়ে নাচতে...

ভাইয়া

ভাইয়া

ভাইয়া! আবেগের এক সিক্ত ছোঁয়া, ভালবাসার এক উদ্দীপনা, ভাইয়া! ভুলের মাঝে ভুল কে খোঁজা, আর ভালবাসার মাঝে ভাইকে খোঁজা, দুটোই এক কথা! ভুল তো ভুল ই তার মাঝে ভুল কে খোঁজা যেমন মূর্খতা বা বোকামি। ঠিক তেমনি ভালবাসার মাঝে ভাইকে খোজাও মূর্খতা! আমার কাছে ভাইয়া শব্দটাই ভালবাসার...

১ Comment

  1. Shimul

    kostokor khub, nice story….

    Reply

Submit a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *