আমার জামি
প্রকাশিত: জানুয়ারী ১৯, ২০১৯
লেখকঃ augustmault0163

 1,565 বার দেখা হয়েছে

এই লেখক এর আরও লেখা পড়ুনঃ augustmault0163

জান্নাতুল না’ঈমা

জীবনের খাতায় রোজ রোজ হাজারো গল্প জমা হয়। কিছু গল্প ব্যর্থতার,কিছু গল্প সফলতার। কিছু আনন্দের,কিছু বা হতাশার। গল্প যেমনই হোক,আমরা ইরেজার দিয়ে সেটা মুছে ফেলতে পারি না। চলার পথে ফ্ল্যাশব্যাক হয়। অতীতটা মুহূর্তেই জোনাই পরীর ডানার মতো জ্বলজ্বলিয়ে নাচতে থাকে। গভীর অন্ধকারে ছোট ছোট জোনাকি পোকার আলোকে আকাশের তারা বলে ভ্রম হয়। হবেই-বা না কেন! রাতের আঁচল খচিত তারাগুলো যেমন পথহারা নাবিকদের তীরের সন্ধান দেয়,মরুভূমির বেদুইনদের দিকের ঠিকানা মিলিয়ে দেয়; তেমনি স্মৃতিগুলো আমাদের দৃঢ় পদক্ষেপে অগ্রসর হবার উদ্দীপনা যোগায়। আনন্দ-সফলতার গল্পগুলো স্রষ্টার প্রতি ভালোবাসা আর সম্মানে মাথা নুইয়ে দেয়, ভুল শুধরিয়ে মহান রাহমানের প্রতি তাওয়াক্বুলের প্রয়োজনীয়তা অনুভব করায় দুঃখ-হতাশার গল্পেরা। তাই জীবনের কোনো গল্পই তুচ্ছ নয়! আজ, এই মুহূর্তে নিউরনের সিনাপ্স কানেকশানগুলোকে একটি গল্প খুব অনুরণিত করছে।
(১)
আমার ক্লাস ওয়ানে পড়ুয়া ভাই,হাসনাত জামি। খুব সাধারণ একটা পরিবারের সন্তান আমরা। ফযরের আযানের কিছু আগে আমাদের ঘুম ভাঙে। আম্মু তাহাজ্জুদ পড়ে সকালের খাবার তৈরিতে ব্যস্ত হয়ে পড়েন। আমি তাহাজ্জুদের পর ভাইকে আরবী পড়া দেখিয়ে দিই,নিজেও পড়ি। তারপর ফযর সেরে সোয়েটার-বোরখা-নিক্বাব জড়িয়ে দু’ভাইবোন বাড়ির সামনের রাস্তার এমাথা ওমাথা ঘুরে আসি। মানুষ তেমন একটা থাকে না,অবশ্য সূয্যিমামা পুরোপুরি জেগে যাবার পর চকবাজার এলাকায় তিল ধারণের ঠাই হয় না।
.
সেদিন ভোরটাও আমাদের ছোট্ট বাড়িতে এভাবেই শুরু হয়েছিল। যথারীতি চকবাজার বাস স্ট্যান্ড পর্যন্ত হেটে আমরা আবার বাড়ির পথ ধরছিলাম-
> জামি,আমি খেয়াল করেছি,তুমি স্বলাতে মনোযোগী হচ্ছো না। তুমি কি জানো,আমরা যদি এমন করি,আল্লাহ্ মন খারাপ করেন? তোমাকে স্বলাতে খুশু খুযু র ব্যাপারটা বলেছিলাম না?
>> আপু, তুমি কয়েকদিন ধরে রুকু আর সিজদাহ্’য় অনেকক্ষণ থাকো। আমার হাত পা সুড়সুড় করে। মনে হয় সামনে দিয়ে কেউ হেঁটে চলে যাচ্ছে। পেছনে একটা তেলাপোকা যদি আমার পিঠে উঠে যায়! সূরাহ তিলাওয়াতের সময় বেশিক্ষণ জায়নামাযের দিকে ঝুঁকে থাকতে পারি না।
>তাই তুমি হাত পা ছুড়ে খেলা শুরু করে দিবে? লাফাতে লাফাতে জায়নামাযটাও গুটিয়ে ফেলো।
>> অতক্ষণ তো পারি না।
>আচ্ছা সোনামানিক,একটা গল্প শুনবে?
>>ইয়েএএএএ…..শুনবো শুনবো,গল্প শুনবো।
>বেশ, শুনাবো ইন-শা-আল্লাহ্। দেখো আমরা বাড়ি পৌঁছে যাচ্ছি। তোমাকে স্কুলে দিতে যাবো যখন,শুনো।
বাড়ি পৌঁছে হাত মুখ ধুয়ে নিলাম দুজন। আম্মু রুটি, আলুভাজি,সালাদ সাজিয়ে দিলেন। আমরা একপ্লেটে খাই। নবীজি (সাঃ) এর সুন্নাহ। এতে ভালোবাসা বৃদ্ধি পায়। জামি আমায় খুব ভালোবাসে,আর আমরা দুজন ভালোবাসি আমাদের নবী (সাঃ) কে …..বারাকাল্লাহ্।
.
>>আপু,গল্পটা বলো না?
জামিকে আমি প্রতিদিন স্কুলে দিয়ে আসি। স্কুলটা কাতালগঞ্জে। আমরা হেঁটে যাই।
>বলছি সোনাভাই,তোমার আলী (রাঃ) কে খুব পছন্দ,না?
>>হ্যাঁ,ওই যে যুদ্ধে লোহার তোরণ ভেঙে ফেলেছিলেন,কী শক্তি আপু। আমিও অমন হবো।
>ইন-শা-আল্লাহ্, বলো ভাই।
>>ইন-শা-আল্লাহ্।
>গুড বয়। এখন শোনো। আলী (রাঃ)’র পায়ে এক যুদ্ধে একটা তীর বিধেছিলো। তীরটা বের করে নিতে চাইলেই যন্ত্রনায় তিনি কাতরাচ্ছিলেন। অবশেষে এক সাহাবা (রাঃ) বললেন,” তোমরা কেনো তাঁকে কষ্ট দিচ্ছো? তিনি যখন স্বলাতে দাঁড়াবেন,তখন তীর বের করে নিয়ো।” সবাই শুনলেন সেই সাহাবা (রাঃ)’র কথা। বুদ্ধির তারিফ ও করলেন।
>>আপু,সেই সাহাবা (রাঃ)’ র নাম কী? আর কোন বইতে তুমি এই গল্পটা পড়েছো? আমার বইগুলোতে নাই।
> নামটা এইমুহূর্তে মনে পড়ছে না ভাই, দেখে জানাবো। আমি ‘কিয়ামুল লাইল’ বইতে গল্পটা পড়েছি।
>>’কিয়ামুল লাইল’ মানে কী আপু?
>’কিয়ামুল লাইল’ অর্থ হলো রাতের স্বলাত।
>> মানে তাহাজ্জুদ?
>ঠিক ধরেছো। বইটাতে তাহাজ্জুদের গুরুত্ব খুব সুন্দরভাবে ফুটিয়ে তোলা হয়েছে।
>>আমাকে পড়ে শুনাবে?
>শুনাবো বাবুটা।
>>উহিব্বুকি ফিল্লাহ্,আপু। তারপর কী হলো বলো। এখুনি স্কুল এসে যাবে। তখন আর শুনতে পারবো না।
>হ্যাঁ,তারপর স্বলাতের ওয়াক্ত হলো। আলী (রাঃ) জায়নামাযে দাঁড়ালেন। তিনি তাঁর স্বলাতে এতটাই ডুব
দিয়েছিলেন, কখন তীর বের করে আনা হলো টেরই পেলেন না! সুবহানাল্লাহ্। আমরা এখন থেকে আরো সাবধান হবো স্বলাতে মনোযোগের ব্যাপারে,কেমন?
>>হুম আপু।
বাকি পথটা জামি কী যেনো ভাবছিলো। স্কুল শেষে বাড়ি ফিরেও একদম চুপচাপ। অন্যান্য দিন কথার খই ফোটায়,কিন্তু সেদিন মনে হচ্ছিলো কেউ যেনো তার মুখে একটা হাইড্রোজেন বোমা রেখে দিয়েছে,মুখ খুললেই ব্লাস্ট হবে । আমি একটু চিন্তিত হলেও অতোটা আমলে নিই নি।
(২)
শীতকাল।
যুহুর থেকে আসর পর্যন্ত সময়ের কিছুটা বারাকাহ্ থাকে,আসরের পর কখন যে টুপ করে আঁধার নেমে আসে,ঠাহর হয় না। শীতল বায়ুর অণু-পরমাণুতে কম্পাঙ্ক তুলে এগিয়ে আসে মাগরিবের আযানের ধ্বনি। অদ্ভুতভাবে শিহরিত হয় দেহ-মন। তারপর….। দরজা জানলা বন্ধ হয়ে যায়,আম্মু জামিকে পড়াতে বসেন,আমিও স্বলাত শেষে কোচিং আর হোমটিউটরের হোমওয়ার্কে চোখ বুলাই। টুকটাক ফেইসবুকিংও বাদ যায় না।
.
যুহুর-আসর জামি মসজিদে যায়। ফযর-মাগরিব-ঈশা আমার সাথে পড়ে। সেই সন্ধ্যায় ঈশার স্বলাতে শেষ বৈঠকে সালাম ফিরিয়ে নিচ্ছি,এমন সময়ে জামি ‘আআআআআ’ চিৎকার জুড়ে দিলো। দ্রুত সালাম ফিরিয়ে দেখি ছেলেটা জায়নামাযের দিকে তাকিয়ে ডান হাত নাড়াচ্ছে আর ‘আআ’ করছে। হাতের কনুইয়ে বড় একটা মশা। শরীর জুড়ে সাদা সাদা ফোঁটা। এডিস মশা। আমি ওকে এডিস মশা চিনতে শিখিয়েছিলাম।
.
রাতে খাবার সময় আম্মু ধমকে বললেন,
>তুই মশাটা মেরে ফেলতে পারলি না? অন্তত তাড়িয়ে তো দিতে পারতি। এখন কিছু একটা হলে?
>>কিছু হবে না আম্মু,ইন-শা-আল্লাহ্। আমি তোমাকে আলী (রাঃ) র একটা গল্প শুনাই? তুমিও আর মশা তাড়াতে চাইবে না।
______
__________
জামির মুখে মশা না তাড়ানোর গল্পটা শুনে আম্মু হতবাক হয়ে রইলেন। আমিও কিছু ভাবতে পারছিলাম না। ব্রেইন সার্কিট তাৎক্ষণিক সুখ আবেশের ফ্রিকোয়েন্সিতে যেনো ফিউজ হয়ে গেছে,ল্যাক্রিমাল গ্ল্যান্ডের সিক্রেশানে কপোল ভিজে একাকার,সিক্স বাই সিক্স অবতল লেন্স জোড়া ঝাপসা হয়ে আসছিল বারবার।
আমার জামি সেই ২য় রাকা’আত থেকেই এডিস মশাটাকে নিজের রক্ত খাওয়াচ্ছিল

সম্পর্কিত পোস্ট

অঘোষিত মায়া

অঘোষিত মায়া

বইয়ের প্রিভিউ ,, বই : অঘোষিত মায়া লেখক :মাহবুবা শাওলীন স্বপ্নিল . ১.প্রিয়জনের মায়ায় আটকানোর ক্ষমতা সবার থাকে না। ২.মানুষ কখনো প্রয়োজনীয় কথা অন্যদের জানাতে ভুল করে না। তবে অপ্রয়োজনীয় কথা মানুষ না জানাতে চাইলেও কীভাবে যেন কেউ না কেউ জেনে যায়। ৩. জগতে দুই ধরণের মানুষ...

ভাইয়া

ভাইয়া

ভাইয়া! আবেগের এক সিক্ত ছোঁয়া, ভালবাসার এক উদ্দীপনা, ভাইয়া! ভুলের মাঝে ভুল কে খোঁজা, আর ভালবাসার মাঝে ভাইকে খোঁজা, দুটোই এক কথা! ভুল তো ভুল ই তার মাঝে ভুল কে খোঁজা যেমন মূর্খতা বা বোকামি। ঠিক তেমনি ভালবাসার মাঝে ভাইকে খোজাও মূর্খতা! আমার কাছে ভাইয়া শব্দটাই ভালবাসার...

হতভাগিনি

হতভাগিনি

গল্প লেখকঃ মোঃ খালেদ সৌরভ (মার্চ - ২০১৮) ---------------------------- জন্ম হয়েছে খড়কুটার এক কুঁড়েঘরে। তখন ছিলো গ্রীষ্মকাল। গতকাল কাল বৈশাখীর ঝড়ে চালের কিছু অংশ নিয়ে গেছে উড়িয়ে। ফকফকা পূর্ণিমার চাঁদ আলোকিত করেছে ঘরটাকে। ওই পূর্ণিমার সাথে মিতালী করে ঘরের আলোকসজ্জা...

৬ Comments

  1. Md Rahim Miah

    ধরণের-ধরনের
    ঠাই-ঠাঁই
    ছোট্ট-ছোট
    হেটে-হেঁটে
    আল্লাহ্‌ মন খারাপ করে- আল্লাহ্‌ অসন্তুষ্ট হতে পারে(কারণ মন খারাপ কথাটা মানায় না)
    যায়-যাই (নিজের বেলা ই হয়)
    অতক্ষণ -বেশিক্ষণ(অতক্ষণ আঞ্চলিক ভাষা মনে হয়)
    শুনো-শোনো
    যন্ত্রনায়-যন্ত্রণায়
    কেনো-কেন
    অতোটা-ততটা
    নিই নি-নেইনি(নি শব্দের সাথে বসে)
    যুহুর-যোহর
    ফযর- ফজর
    ঈশা-এশার (নামাজের ওয়াক্ত বানানে ভুল হয় কীভাবে বুঝে উঠতে পারি না)
    শুনে-শোনে
    জামির মুখে মশা আর আলী সাথে তুলনা করে গল্প বললো। কিন্তু সেই গল্প কোথায় উল্লেখ করলেন না যে। যদি সেটা গল্পের নায়িকা আগে যেটা উল্লেখ করেছিল সেটা হয়ে থাকে। তাহলে লেখা উচিত ছিল আমার বলে দেওয়ার গল্প শুনে। যাইহোক গল্পটা অনেক ভালো লিখেছেন। কিন্তু শেষে ইংরেজি ব্যবহার করার কারণে গল্পের সুন্দর্য্য হারিয়ে গেছে বলা যায়। এটা বাংলা সাহিত্য, যত বাংলা সুন্দর শব্দ লিখতে পারবেন তত ভালো লাগবে পড়তে। যাইহোক বানানে অনেক ভুল সেগুলোর প্রতি আগামীতে খেয়াল রাখবেন আশা করি। অনেক অনেক শুভ কামনা রইল।

    Reply
    • জান্নাতুন না'ঈমা

      আসসালামু আলাইকুম, ভাই। এই গল্পের বানান আর ভাষা নিয়ে গ্রুপে যথেষ্ট তর্ক হয়েছিল।
      আপনাকে স্বাগতম। আর ধন্যবাদ।
      বিভিন্ন ইসলামিক বুকস দেখেই ওসব লিখেছিলাম,আর গল্পটা কই উল্লেখ করলাম না? ‘কিয়ামুল লাইল’ বইটাতে ও আছে।
      ছোট বাচ্চাদের আবেগ একটু বেশি হয়। বড়দের মতো ‘অসন্তুষ্ট’ শব্দে তারা মুভড অন নাও হতে পারে।
      জাযাকাল্লাহু খঈরন।

      Reply
  2. Halima tus sadia

    অনেক ভালো লিখেছেন।

    জামির গল্প শুনলাম।

    আরও ভালো লিখার চেষ্টা করেন।

    বানানে কিছু ভুল–

    বেদুইন–বেদুঈন

    হেটে–হেঁটে

    যন্ত্রনায়–যন্ত্রণায়

    স্বলাত–সালাত

    নেই নি–নেইনি

    কপোল–কপাল

    যুহুর–জোহর

    শুভ কামনা রইলো।

    Reply
    • জান্নাতুন না'ঈম

      আসসালামু আলাইকুম।

      Reply
  3. Halima Tus sadia

    সত্যিই জীবনের খাতায় রোজ রোজ কতো গল্প জমা হয়।কিছু গল্প সফলতার,কিছু গল্প ব্যর্থতার,কিছু হতাশার,কিছু আনন্দের।

    ভালো লিখেছেন।

    বেদুইন–বেদুঈন

    হেটে–হেঁটে

    যন্ত্রনায়–যন্ত্রণায়

    স্বলাত–সালাত

    নেই নি–নেইনি

    কপোল–কপাল

    যুহুর–জোহর

    শুভ কামনা রইলো

    Reply
  4. আফরোজা আক্তার ইতি

    পুরো গল্পটার শেষের দিকে এসে কেমন যেন এলোমেলো লাগল। আপনি খুব সুন্দরভাবেই বর্ণনা দিচ্ছিলেন। ভালো লাগছিল। তবে কিছু কিছু জায়গায় লেখার ধারার বিচ্যুতি ঘটছে বলে মনে হলো!
    সালাত অর্থাৎ নামাজ আসলেই এমনভাবে পড়া উচিৎ যেন অন্যদিকে ধ্যান না থাকে, আল্লাহ তা’আলার ইবাদাতে মশগুল হয়ে থাকি, এক্ষেত্রে হযরত আলী (রঃ) এর উদাহরণটি চমৎকার একটি উদাহরণ।
    গল্পটি পড়ে শিক্ষা নিবে অনেকেই।
    ঠাই- ঠাঁই।
    বিধেছিল- বিঁধেছিল।
    বিরামচিহ্ন এর ভুল প্রয়োগ হয়েছে।
    শুভ কামনা আপনাকে অনেক।

    Reply

Submit a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *