লিখা: মাহফুজা সালওয়া
লিখতে বসেছি বর্তমানের সবচেয়ে আলোচিত, বিতর্কিত, বিক্ষিপ্ত এবং অমীমাংসিত বিষয় নিয়ে। আমি কখনোই মিষ্টভাষী মেয়ে ছিলামনা, আজও নই! তাই পাঠকদের কাছে অনুরোধ থাকবে দয়াকরে আমার তিতা কথাকেই হজম করে নিবেন। বেশী দূর চিন্তা করার প্রয়োজন নেই।নিজের দেশের কথাই ভাবি।
কি অপরাধের বাকি রেখেছি আমরা?
হত্যা-রাহাজানি, চুরি-ছিনতাই, ধর্ষন-গুম এগুলোতো এখন পান্তাভাত!
আর পুলিশ বেচারার দোষ দিয়েই বা কি হবে?
নিজের ভালো তো পাগলেও চায়। ভুঁড়ির পাশাপাশি পকেটের মোটাতাজাকরনে ক্রিমিনালের ক্রাইম করার অপরিসীম ভূমিকা আছে বৈকি!
পুলিশের মতো বিজ্ঞ, চটুল কাউকে এই কথাটা বুঝতে অবশ্য চশমা পন্ডিত হতে হবেনা!
সে যাই হোক,আমি এখানে কারো বাড়া ভাতে পানি ঢালতে আসিনি।
কথা হলো, আমাদের সমাজে ধর্ষিতা-ধর্ষিত হয়, কোনো হিংস্র শকুন খুবলে খায় তার শরীর। লজ্জায়, অপমানে, বিষে নীল হয়ে পরপারে পাড়ি জমায় জন কতক। কেউ কেউ আবার বলে,”সংগ্রাম করবো”।
তারপর প্রতিবেশী -পরিজন থেকে শুরু করে থানা-আদালত, মেডিকেল কোথায় হেয় না হয় তারা?
এমন পরিস্থিতিও আসে যখন নিজ পরিবারের আপন আত্নাগুলোও বুঝিয়ে দেয়,”তুমি একটা আবর্জনা”।
একজন ধর্ষিতার হেরে যাবার গল্পটা সমাজ-সভ্যতার সামনেই শুরু হয়।
এবং বলাই বাহুল্য গল্পের শেষ পর্যন্ত আমাদের তথাকথিত সুশীল সমাজ নির্বাক শ্রোতা-দর্শকের ভূমিকা পালন করেন।
কিন্তু, এই ধর্ষিতাই যখন মরে, পঁচে, মর্গে যাবে, তখনই সমস্বরে কোরাস শুরু করেন আমাদের সুশীল সমাজ !
আস্তে আস্তে তাদের সেই সুরও থেমে যায়।
তারপর কি হয়?
কলম হাতে নেয় লেখক-কবিরা।
কেউবা স্পষ্ট উচ্চারণে বক্তৃতা দেয়!
কোথাও আবার নারী মহল চিৎকার করে বলেন “সমানাধিকার চাই”।
ফেসবুক বা তথ্য-প্রযুক্তির ব্যাপক উন্নয়নে এসবের কিছুই এখন আর আমাদের অজানা থাকার কথা নয়।
যাইহোক, আমার জীবনের ছোট একটা ঘটনা বলেই মূল কথায় যাবো।
“সেদিন তিন বান্ধবী মিলে বাসে করে কলেজ যাচ্ছিলাম। সবকিছুই স্বাভাবিক ছিলো প্রথমে। কিন্তু কে জানতো সেদিন আমার জন্য এতো এতো বিস্ময় অপেক্ষা করছিলো? হ্যাঁ, শুনতে খারাপ লাগবে হয়তো। তবে, সত্য এটাই সেদিন বাসে এক কুলাঙ্গার আমাকে এসল্ট করেছিলো”।
অনেক শুভাকাঙ্ক্ষীই আমাকে বলেছেন, এসব বিষয় চাপা থাক। কিন্তু, এই ব্যর্থ সমাজকে বৃদ্ধাঙ্গুলি দেখিয়ে “থুড়াই কেয়ার করি” বলাটাই সমীচিন মনে করি আমি।
যে সমাজ আমার নারী-নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে পারেনি, সেই সমাজের মুখে “নীতি” কথাটা বড্ড বেশি বেমানান।ঠিক সেই মুহূর্তে, যখন পিশাচটা খুব জঘন্যভাবে নিজের জানোয়ারের মতো চরিত্র উপস্থাপন করছে, রাগে-ঘৃনায়, তেজে লাফিয়ে উঠি আমি। আমার বিশ্বাস হতে চাইছিলোনা যখন আমার বান্ধবীরা আমাকে বসিয়ে দিয়ে, মাথা ঠান্ডা রাখার অনুরোধ করছিলো(পরিস্থিতি সামলাতে না পেরে)।
এখনও কানে বাজে আমার, চিৎকার করে বলেছিলাম, “বন্ধু হতে পারিসনা তোরা, একেকটা কলঙ্ক “।
ভরা বাসের কাছে আকুতি জানিয়েছিলাম, জিজ্ঞেস করেছিলাম, কেন চুপ তারা? আমি কারো মেয়ে-বোন হতে পারিনা? তখনও কোনো সাপোর্ট নেই আমার।
চলন্ত বাসের পিছন থেকে এক দালাল বলে উঠলো, “এই মেয়ে বললেই হলো? ভদ্রলোককে দেখলেই বুঝা যায়,মানুষটা খারাপ না।”
ঘৃনায়, অপমানে, শোষিত হয়েও আমার দিকে আঙুল তোলার লজ্জায় কেঁদেই দিয়েছিলাম তখন।
পরমুহূর্তে পিশাচটা বলে উঠলো, “বেইজ্জত মেয়ে। লোকের কাছে কিসব বলছে, নির্লজ্জ একটা”!
আমার চিৎকারে ড্রাইভার বাধ্য হলো বাস থামাতে। ততক্ষণে খবর পৌঁছে গেছে আমার সুপার হিরো বাবার কাছে, বিচার না হয়ে যাবে কোথায়?
জোর গলায় পরিচিত আইন-প্রশাসনের উচ্চপদস্থদের নাম উচ্চারণ করলাম।
এবার বোধহয়, সবাই একটু নড়েচড়ে বসলো। একজন-দু’জন করে অনেকেই আসলো আমার পক্ষে। বান্ধবীরাও দাঁড়ালো আমার পাশে।
ব্যস্ত শহরের কোনো এক অফিসকক্ষে বিচার বসলো, গণধোলাই হলো।
পিশাচটা কান ধরে উঠবস করলো।
কোনো এক ফাঁকে আমার দু’পা ধরে মাফ চেয়েও বসলো।
ঘটনাটা এখানেই শেষ হয়ে যায়নি। লম্পটটার কাছ থেকে বন্ড-সই নেয়া হয়েছিলো,বিশেষ শর্ত-চুক্তি দিয়ে।
বলা হয়েছিলো,আর কোনোদিন যাত্রিসেবা পাবেনা সে।
তাকে পুলিশে দিতে চেয়েছিলো অনেকে, কিন্তু এটাতো জানা কথা, দু’দিন জেলখানা ভ্রমন করে সেইতো ফিরে আসবে সে ,হয়ে উঠবে প্রতিশোধপ্রবন!
এসব ভেবে আমার পরিবার তাকে ছেড়ে দিয়ে অজান্তেই খুব বড় এক ভূল /পাপ করেছিলো। যেকারনে লম্পটটা আমাকে আবারও অনুসরণ করার সাহস করেছে এবং আজও আমি নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছি।
সে যাইহোক, এই পঙ্গু সমাজের থেকে নিরাপত্তা ভিক্ষা চাচ্ছিনা আমি।
শুধু এটা স্বরণ করিয়ে দিতে চাই, মানুষ হয়ে মানুষের অধিকার হরণ, নিরাপত্তায় আঘাত – এসব কেবল একটা পশুর পক্ষেই সম্ভব।
আমার বেশী আক্ষেপ একারনেই,
“কেনো সেদিন আমার পিতার সমান হয়ে, সত্য জানা সত্বেও কেউ একজন শয়তানটাকে নির্দোষ প্রমান করতে চেয়েছিলো”?
” কেনো সেদিন বিবেক নিয়ে প্রশ্ন তুলে ও একা একটি মেয়ে তাদের কোনো প্রতিক্রিয়া দেখেনি”?
“কেনো সেদিন পাবলিক বাসে একটা কলেজ ছাত্রীর এসল্ট হওয়া দেখেও চুপ করেছিলো সুশীল সমাজ”?
“কেনো সেদিন আইনের লোকের নাম উচ্চারণ করার পরে তারা আমার পক্ষে এসেছিলো”?
” কেনো সত্য ধারন করতে তাদের এতো জড়তা”?
“এই সমাজ ঠিক থাকলে কি আদৌ কোনো লম্পট এমন সাহস করতো”?
প্রশ্ন রইলো পুরো সমাজের প্রতি, নিজের মা-বোনকে এমন অসহায় পরিস্থিতিতে চিৎকার করে কান্নারত দেখেও কি চুপ থাকতেন তারা?
বারবার মনে হয়, শুধুমাত্র আজ নারী হয়ে জন্মেছি বলেই আমি অনিরাপদ!
হে সমাজপতিরা, কিছু বলতে চাই আমি।
শোনার সময় হবে কি?
“সমানাধিকার নয়, মানবাধিকার চাই”।
outstanding performance…….
নিশ্চিত থাকেন সেরার তালিকায় আপনার লেখাটি থাকছে।
শুভ কামনা রইলো।
খুব সুন্দর একটা বিষয় নিয়ে লিখেছেন। সুন্দর জিনিস অলংকরনের জন্য বানান সচেতন হওয়া প্রয়োজন। অামার দৃষ্টিতে ভুল গুলো তুলে ধরলাম সংশোধন করে নিবেন।
কি অপরাধের- কী অপরাধের
কি হয় – কী হয়
থুড়াই – এমন কোন শব্দ অাছে বলে অামার জানা নাই তবে থোড়া শব্দটা হিন্দিতে ব্যবহৃত হয় সামান্য অর্থ বুঝাতে
প্রতিশোধপ্রবন – প্রতিশোধ প্রবন
ভূল – ভুল
তুলে ও- তুলেও
অসাধারণ। লেখায় প্রতিটি লাইনে যেন অন্যায়ের প্রতিবাদের এক ঝংকার ফুটে উঠেছে। আসলেই আমাদের এই বর্তমান সমাজ কোনদিকে যাচ্ছে তা বলা মুশকিল। আমরাই যেখানে নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছি সেখানে আমাদের আগামী প্রজন্ম, আমাদের কন্যারা কতটা অনিশ্চয়তায় থাকবে তা ভাষায় প্রকাশ করা যায়। তাই সময়টা এখনই গর্জে ওঠার। প্রতিবাদ করার। আমাদেরই একটু সুন্দর সমাজ উপহার দিতে হবে আগত শিশুদের। এইমাত্র ফেসবুকে একটা ভিডিও দেখলাম, বাসের মধ্যে এমনই একটি চরিত্রহীন লোকের অশ্লীল কাজের জন্য মেয়েটি তার গাল চড় দিতে দিতে লাল করে ফেলেছে।
তবে আপনার বাবা একজন উচ্চপদস্থ কর্মকর্তা, তাই সাহায্য পেয়েছেন। কিন্তু বর্তমানে সব নারীকে নিজেরই প্রতিবাদী হবে যেন কারো সাহায্য না লাগে। সে একাই সব মোকাবিলা করতে পারে।
বানানে বেশ কিছু ভুল আছে। উপরের আপু তা সংশোধন করে দিয়েছেন।
শুভ কামনা।
অন্যায়ের বিরুদ্ধে আপনার কলম খুব তীব্রভাবে রুখে দাঁড়িয়েছে।
কথাগুলো অনেক গোছালো। সমাজের ভুলগুলোকে তুলে ধরতে সার্থক হয়েছেন।
শুভ কামনা।