রেললাইনের পাশে
প্রকাশিত: মার্চ ৬, ২০১৮
লেখকঃ vickycherry05

 1,840 বার দেখা হয়েছে

এই লেখক এর আরও লেখা পড়ুনঃ vickycherry05

গল্প লেখকঃ
নুসাইবা ইসলাম অধরা
(মার্চ – ২০১৮)
…………

বাবা দুইটা পয়সা দিয়ে যান। মা ও মা দুইটা পয়সা দিয়ে যান। দুই দিন না খেয়ে আছে আমার নাতী। এভাবে বলতে বলতে গয়া শুকিয়ে উঠলো সুমির। সূর্যের এত তাপ আর সহ্য হচ্ছে না। একটু শক্তিও নাই ছায়াতে যাওয়ার বৃদ্ধা সুমির। ট্রেনের শব্দ শোনা যাচ্ছে। মানে অনেক মানুষের ভীর। কিছু টাকা এবার পাবে এই আশা নিয়ে মানুষের দিকে তাকিয়ে আছে সুমি…….।

কিছুটা দূরে চায়ের দোকানে বসে বৃদ্ধা মায়ের দিকে তাকিয়ে ছিলাম আমি। ময়লা ছেড়া একটা কাপড় পড়ে আঁচলটা সামনে বিছিয়ে বসে আছে। পাশে একটা লাঠি। সাদা চুল আর চোখের পানিতে ছল ছল করা চোখে কত আশা নিয়ে বসে আছে।
সহ্য করতে না পেরে এগিয়ে গেলাম। ‘বাবা কিছু দিবেন’ আর কিছু বলতে পারছে না। বৃদ্ধার চোখে দিয়ে শুধু পানি ঝড়ছে। তার চোখের দিকে তাকিয়ে আর পানি ধরে রাখতে পারলাম না। মা আপনি আসুন আমরা এই ছায়াতে বসি। বৃদ্ধা কে ধরে নিয়ে এসে বসলাম দোকানের পাশে। এই নিন গলাটা একটু ভিজিয়ে নিন। হাউ মাউ করে কেঁদে উঠলো সুমি। মা আপনার বাড়িতে কে কে আছেন? এই বয়সে রাস্তায় কেন বের হয়েছেন? আমি না খেয়ে থাকতে পারি কিন্তু আমার নাতি যে পারে না বাবা।আর কেউ নেই মানে আপনার ছেলে মেয়ে?
এ যেন অদ্ভুত নিরবতা। সুমি আকাশের দিকে তাকিয়ে রইল।
– কিছু বলছেন না যে!
– ভাঙ্গা ভাঙ্গা কন্ঠেঃ আমার বয়স তখন তোমার মত। আমি গ্রামের মেয়ে ছিলাম। সাদেক আর আমি একই কলেজে পড়তাম। অনেক ভালবাসতাম আমরা একে অপরকে। ভালই চলছিল সব কিছু। হঠাৎ শহর থেকে খবর আসলো দেশে নাকি যুদ্ধো লাগছে। কলেজ বন্ধ হয়ে গেলো।
– আর কি দেখা হয়নি সাদেকের সাথে আপনার?
– হয়েছিল। !একদিন রাতে সাদেক এসেছিল। এসে বলে গেলো,’আমি গেলাম আবার দেখা হবে। চিন্তা করো না আমি এসেই তোমাকে বিয়ে করবো।’

কিছু দিন পরে বুঝতে পারলাম আমার ভিতরে বড় হচ্ছে আরো একটা প্রান। অপেক্ষা করতে থাকলাম সাদেকের জন্য। ছোট্ট মিতালীর জন্ম হলো। দেশও স্বাধীন হলো।সাদেক আর আসলো না। গ্রামের মানুষের আঙ্গুল তুললো মিতালীর দিকে। পশুদের ফসল নাকি আমার মিতালী।
পালিয়ে আসলাম মেয়েকে নিয়ে। ছোট্ট মিতালীকে নিয়ে এই রেললাইনের পাশে থাকতাম। মেয়েটা বড় হয়ে বাবাকে নিয়ে প্রশ্ন ছুরে মারে আমার দিকে। আমি ভাষা হারিয়ে ফেলি। কি ভাবে বলবো তর বাবা যে যোদ্ধা ছিল। কিন্তু সমাজের চোখে তুই বেজন্মা। আচ্ছা মিতালী এখন কোথায়? মিতালী! কেঁদে উঠলো সুমি। এই যে রাস্তার ঐ পাশের কিছু হায়নাদের চোখ পরেছিল আমার কলিজার উপরে। সারা দিন বুকে আগলে রাখতাম। কিন্তু তারপরও ওরা আমার মিতালকে নিয়ে গেলো। কোথায় নিয়ে গেছে? এই যে পুকুর এই পুকুরের পাশে পড়ে ছিল আমার মিতালী।
আর বুঝতে বাকি রইলো না কি হয়েছিল মিতালীর সাথে। নিজের চোখের পানি আর ধরে রাখতে পারলাম না। সামলে নিলাম নিজেকে। আচ্ছা আপনি যে বললেন আপনার নাতী আছে। তাহলে কে সে?
আমাদের বস্তিতেই থাকতো রুমা। ওর ছোট মেয়ে কে নিয়ে। কিছু দিন আগে গাড়ির নিচে পরে মরে যায় রুমা। কেউ দেখলো না ছোট মেয়েটাকে। তাই আমিই নিয়ে আসলাম আমার ঘরে।
আমাকে নিয়ে যাবেন আপনার বস্তিতে?
পানি আর কিছু খাবার নিয়ে বৃদ্ধা মা’কে ধরে হেঁটে যেতে লাগলাম রেললাইনের পাশে এই ছোট পৃথিবী তে………

সম্পর্কিত পোস্ট

অঘোষিত মায়া

অঘোষিত মায়া

বইয়ের প্রিভিউ ,, বই : অঘোষিত মায়া লেখক :মাহবুবা শাওলীন স্বপ্নিল . ১.প্রিয়জনের মায়ায় আটকানোর ক্ষমতা সবার থাকে না। ২.মানুষ কখনো প্রয়োজনীয় কথা অন্যদের জানাতে ভুল করে না। তবে অপ্রয়োজনীয় কথা মানুষ না জানাতে চাইলেও কীভাবে যেন কেউ না কেউ জেনে যায়। ৩. জগতে দুই ধরণের মানুষ...

আমার জামি

আমার জামি

জান্নাতুল না'ঈমা জীবনের খাতায় রোজ রোজ হাজারো গল্প জমা হয়। কিছু গল্প ব্যর্থতার,কিছু গল্প সফলতার। কিছু আনন্দের,কিছু বা হতাশার। গল্প যেমনই হোক,আমরা ইরেজার দিয়ে সেটা মুছে ফেলতে পারি না। চলার পথে ফ্ল্যাশব্যাক হয়। অতীতটা মুহূর্তেই জোনাই পরীর ডানার মতো জ্বলজ্বলিয়ে নাচতে...

ভাইয়া

ভাইয়া

ভাইয়া! আবেগের এক সিক্ত ছোঁয়া, ভালবাসার এক উদ্দীপনা, ভাইয়া! ভুলের মাঝে ভুল কে খোঁজা, আর ভালবাসার মাঝে ভাইকে খোঁজা, দুটোই এক কথা! ভুল তো ভুল ই তার মাঝে ভুল কে খোঁজা যেমন মূর্খতা বা বোকামি। ঠিক তেমনি ভালবাসার মাঝে ভাইকে খোজাও মূর্খতা! আমার কাছে ভাইয়া শব্দটাই ভালবাসার...

০ Comments

Submit a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *