গল্প লেখকঃ
Mahbuba Upoma
(মার্চ – ২০১৮)
…………
আজকে ঊষা খুব খুশি৷ আকাশের যে চাঁদটার জন্য এতদিন অপেক্ষা করেছিল, সেটা যেন আজ তার হাতের মুঠোয়৷ এতদিনের পরিশ্রমের পুরষ্কার হিসেবে একমাস আগে নতুন চাকরিটা পায় সে৷ জীবনের প্রথম উপার্জন তার ব্যাগের ভিতর মুচকি মুচকি হাসছে৷ তার সাফল্যের পিছনে যেই মানুষটির অবদান তাকে সে একদমই ভুলে যায়নি৷ মানুষটির নাম রাশেদা বেগম৷ ঊষার স্কুলের টিচার ছিলেন৷ কিন্তু ঊষার মনে তার মর্যাদা মায়ের সমান৷ ক্লাস এইটে মা যখন চিরদিনের জন্য ঊষাকে ছেড়ে না ফেরার দেশে চলে যায়, তখন ভোরের সূর্য হয়ে আসেন রাশেদা ম্যাম৷ ব্যবসায়ী বাবা মা মরা মেয়েকে নিয়ে কি করবেন বুঝতে পারছিলেন না৷ আর কিশোরী মেয়ে এদিকে একাকিত্ব আর হতাশায় জীবনের সকল অর্জন হারাতে বসেছে৷ তখন এই রাশেদা ম্যামই ঊষার হাত ধরেন, তাকে বুঝান জীবনে বাঁধা আসবেই কিন্তু বাঁধা ডিঙিয়ে এগিয়ে যেতে হবে৷ তারপর থেকে সব সময় পাশে পেয়েছে রাশেদা ম্যামকে৷
ঊষা একটা শাড়ি কিনেছে রাশেদা ম্যামের জন্য- হালকা আকাশি রঙের৷ দুবছর আগে ম্যামের স্বামী মারা যাওয়ার পর থেকে তিনি আর গাঢ় রঙের শাড়ি পরেন না, সেটা ঊষা কেমন করে যেন জেনেছে৷ ম্যাম নিশ্চয় খুব খুশি হবেন ঊষাকে দেখে৷ ঊষার মুখে সুন্দর এক হাসি খেলে গেল৷
ম্যামের বাড়িতে যাওয়ার পর ঊষার সেই হাসি মুখটা অন্ধকার হয়ে গেল ৷ কি শুনল সে? রাশেদা বেগম নিজ বাড়িতে না থেকে বৃদ্ধাশ্রমে থাকেন? অথচ কত কষ্ট করেই না এই বাড়িটি বানিয়েছিলেন তিনি৷ শেষ পর্যন্ত তারই ঠাই হলো না এই বাড়িতে৷ পেনশনের সব টাকা খরচ করে যে ছেলেকে বিদেশে পাঠালেন সেই ছেলেই আজ মায়ের ভার বহন করতে নারাজ৷ শেষ বয়সে এই পুরষ্কারই কি তার প্রাপ্য ছিল? নাহ! রাশেদা ম্যামের শেষ ঠাই হবে বৃদ্ধাশ্রমে -এটা ঊষা মেনে নিতে পারবে না৷ নিজের কাছে এনে রাখবে তাকে৷ চাকরির টাকায় দুটো মানুষের খুব চলবে ৷ বাবা মারা যাবার পর আর কেই বা আছে তার?
প্রথম দিকে রাজি না হলেও ঊষার অনেক জোরিজুরিতে রাশেদা বেগম ঊষার কাছে থাকতে রাজি হন৷ কিন্তু তার মনে যে ক্ষতটা সৃষ্টি হয়েছে সেটা কি সেরে উঠবে?
Ma sha Allaah.. <3