প্রবন্ধ : মহিলা
প্রকাশিত: জানুয়ারী ১৭, ২০১৯
লেখকঃ augustmault0163

 3,219 বার দেখা হয়েছে

এই লেখক এর আরও লেখা পড়ুনঃ augustmault0163

অভিতোষ অভি

রাস্তাঘাটে হাটে বাজারে– প্রায় সর্বত্র সবার মুখেই এই “মহিলা” শব্দটা শুনতে শুনতে আমরা বেশ সয়ে গেছি। বাসের গায়ে লেখা থাকে,” মহিলা, শিশু ও প্রতিবন্ধীদের জন্য নয়টি আসন সংরক্ষিত।” আমরা ভাবি, ভালোই তো!
আগে কোথাও কোথাও দেখতাম এবং পড়তাম “বাংলাদেশ অনূর্ধ্ব ১৫ প্রমীলা ফুটবল দল” কিংবা “জাতীয় প্রমীলা ক্রিকেট দল”।যাহোক, বিস্তর সমালোচনা এবং লেখালেখির পর সেই “প্রমীলা” শব্দটাকে ওঠানো গেছে। “প্রমীলা” বলতে সাধারণত বোঝায়, আনন্দদায়ী কিংবা দৈহিক বা স্নায়বিক তৃপ্তি দাত্রী! আসলেই কি মেয়েদের খেলা দেখে আমরা স্নায়বিক তৃপ্তি বোধ করি? যাইহোক, সেটা এখন কিছুটা বদলেছে।এখন আর “প্রমীলা” শব্দটার খুব বেশি ব্যবহার চোখে পড়ছে না।
আর এর আগেও দেখেছি,”নারী”র সমার্থক শব্দ ছিল “অবলা”, অর্থাৎ নির্বল বা বলহীনা।ছোট ক্লাসের ব্যাকরণ বইতে এই শব্দটা পড়েছিলাম, স্পষ্ট মনে আছে।তবে এও মনে আছে যে, পড়ানোর সময়ে ক্লাসের শিক্ষিকা এই শব্দটার ব্যাখ্যা করে দিয়েছিলেন সুচারুভাবে।মানে মোটামুটি তিনি ছিলেন এই শব্দটার বিপক্ষে। হয়তো আমার পরম সৌভাগ্য,এই বিষয়টা একজন “শিক্ষিকা” আমায় পড়িয়েছিলেন।কোনো শিক্ষক পড়ালে তার স্বীয় বলের পরিচয় ত্যাগ করতে পারতেন কিনা সন্দেহ!
“প্রমীলা” গেল,” অবলা”গেল,এরপর আসি “মহিলা”– তে। একজন নারীর দৃষ্টিকোণ থেকে কখনো কি ভেবে দেখেছি ব্যাপারটা কতটা অপমানকর ?”মহিলা” বলতে বোঝায় যারা মহলে থাকে, অর্থাৎ যারা অন্তঃপুরের বাসিন্দা।তাহলে নারী কি এখনও অন্তপুরের চার দেয়ালে আবদ্ধ এক প্রজননক্ষম বহুকোষী জীবমাত্র?সাংবাদিক থেকে শুরু করে বাস কন্ডাক্টর পর্যন্ত সকলেই এই ব্যাপারে কতটা যে উদাসীন বা অজ্ঞান,আশেপাশে কান পাতলেই বুঝতে পারা যায় বেশ। পুরুষ অধ্যুষিত কোনো বাসে “মহিলা(!)” সিট ফাঁকা না থাকলে প্রায়শই বলতে শোনা যায়,”অ্যাই, মহিলা উঠায়েন না, মহিলা উঠায়েন না।” আবার,”মহিলা(!) সিট” খালি থাকলে বলতে শুনেছি ,”অ্যাই, মহিলাগুলারে ওঠা।” তাহলে কি আমাদের সমাজে নারীজাতি শুধু মাল-সামান এর মতো কিংবা গরু ছাগলের মতো কোনো প্রয়োজন মেটানোর বা উৎপাদন চাহিদা মেটানোর মাধ্যম মাত্র?
একজন নারীর অস্তিত্বের সংকট এতো প্রকট কখনো ভেবে দেখেছেন কি? আমাদের পুরুষশাসিত সমাজের পুরুষরচিত ব্যাকরণ যে নারীবান্ধব হবে তা আশা করা নেহায়েত বোকামি। তাই ব্যাকরণে আমরা নারীর জন্য উপযুক্ত একটা সমার্থক শব্দ খুঁজে পাই না,এতদিনেও! আজকাল টিভিতে “কমপ্লান বয়”এর পাশাপাশি “কমপ্ল্যান গার্ল” এর বিজ্ঞাপনও দেখায় –ভালো লক্ষণ।
তবে একটা বিষয় না বলে পারছি না।আমাদের দেশে মাধ্যমিক এবং উচ্চ মাধ্যমিক স্তরে বাংলা এবং ইংরেজি প্রশ্নে চিঠি বা ই-মেইল লিখতে হয় সাধারণত বন্ধুর কাছে ।ছোটবেলা থেকেই দেখে আসছি বন্ধুর নাম উল্লেখ করা থাকে দুইটি –একজন ছেলে এবং একজন মেয়ের। মেয়েরা তাদের উত্তরে মেয়েবন্ধুর কাছে চিঠি লেখে এবং ছেলেরা তাদের উত্তরে ছেলেবন্ধুর কাছে চিঠি লেখে।আমি আসলেই জানি না একটা ছেলে আর একটা মেয়ের ভালো বন্ধু হওয়ার ক্ষেত্রে বাধাটা কোথায়? এমন কি হতে পারে না, যে একটিমাত্র নাম দেয়া থাকবে এবং সব শিক্ষার্থীকেই সেই নামটির উদ্দেশ্যে চিঠি লিখতে হবে –ছেলে মেয়ে নির্বিশেষে?আমার তো মনে হয় এভাবে খুব ছোটবেলা থেকেই আমাদের ছেলেমেয়েদের মাথায় বৈষম্যের ভাব ঢোকানো হয় –বুঝে বা না বুঝে!এখানে আরো আশ্চর্যের ব্যাপার হলো এই যে শিক্ষকরাও ছাত্রদের কাছ থেকে ছেলেবন্ধুর কাছে লেখা চিঠিই প্রত্যাশা করেন।খেয়াল করলে এটাও দেখা যায়,যদি কোনো “চ্যাংড়া” ছাত্র দুষ্টুমি করে মেয়ে নামটির উদ্দেশ্যে চিঠি লেখে,তবে শিক্ষক খাতা দেখার সময়ে অতি অবশ্যই সেই ছাত্রটির প্রতি বিরূপ ধারণা করেন।আর,জেলা মেয়ে যদি ছেলেবন্ধুর কাছে চিঠি লিখেও ফেলে,তাহলে তো কথাই নেই!ঘ্যাচাং ঘ !
আমাদের বাংলা ভাষায় এক দেড়শো বছর আগে একটা শব্দ ব্যবহার করা হতো —“অসূর্যম্পশ্যা”।এর অর্থ হলো যে নারীর দেহে সূর্যের আলো প্রবেশ করে না।অর্থাৎ,চার দেয়ালের আড়ালে থাকা নারী।শব্দটি ব্যাপক অর্থেই “নারী”-র প্রতিশব্দ রূপে ব্যবহৃত হতো।যাইহোক,একটা ছোট ঘটনার কথা বলে লেখাটা শেষ করি।
একদিন দুপুরে আমার এক ঘনিষ্ঠ বন্ধুকে বলছিলাম,”আমরা নারী-পুরুষের সমান অধিকারের পক্ষে কাজ করি।” তখন সে জানতে চাইলো,”কেমন সমতা?” আমি বেশ কিছুক্ষণ তাকে বুঝিয়ে বললাম.এরপর সে যে উদাহরণটি দিলো,তা শুনে আমি তো রীতিমতো আকাশ থেকে পড়লাম।সে বললো,”কর্মজীবী মেয়েরা গর্ভবতী হলে কয়েক মাসের মাতৃত্বকালীন ছুটি পায়।তাহলে যদি নারী-পুরুষের সমান অধিকার আসলেই প্রতিষ্ঠিত করতে হয় তাহলে পুরুষদেরও ঐরকম ছুটির সুবিধা দিতে হবে।”
তো আমার কথা ফুরাল,নটে গাছটি মুড়ালো!

লেখক:অভিতোষ অভি

সম্পর্কিত পোস্ট

যদি পাশে থাকো

যদি পাশে থাকো

তাসফিয়া শারমিন ** আজকের সকালটা অন্য রকম। সাত সকালে আম্মু বকা দিলো। মানুষের ঘুম একটু দেরিতে ভাঙতেই পারে। তাই বলে এত রাগার কী আছে ?একেবারে যে দোষ আমারও তাও নয়। মানুষ ঘুম থেকে উঠে ফোনে বা দেওয়াল ঘড়িতে সময় দেখে। কিন্তু আমি উঠি জানালার পর্দা সরিয়ে বাইরের আলো দেখে।কে জানে...

কুড়িয়ে পাওয়া রত্ন

কুড়িয়ে পাওয়া রত্ন

অনন্যা অনু 'আমিনা বেগম' মেমোরিয়াল এতিমখানার গেট খুলে ভেতরে ঢুকতেই ওমরের বুকটা ধুক ধুক করতে শুরু করে। ওমর ধীর গতিতে ভেতরে প্রবেশ করে। চারদিকে তখন সবেমাত্র ভোরের আলো ফুটতে শুরু করেছে। ওমর গত রাতের ফ্লাইটে আমেরিকা থেকে এসেছে। সে এসেই সোজা আমিনা বেগম মেমোরিয়াল এতিমখানায়...

দাদাভাইকে চিঠি

দাদাভাইকে চিঠি

প্রিয় দাদাভাই, শুরুতে তোকে শরতের শিউলি ফুলের নরম নরম ভালোবাসা। কেমন আছিস দাদাভাই? জানি তুই ভালো নেই, তবুও দাঁতগুলো বের করে বলবি ভালো আছি রে পাগলী! দাদাভাই তুই কেন মিথ্যা ভালো থাকার কথা লেখিস প্রতিবার চিঠিতে? তুই কি মনে করিস আমি তোর মিথ্যা হাসি বুঝি না? তুই ভুলে গেছিস,...

৪ Comments

  1. Halima Tus Sadia

    দারুণ প্রবন্ধ লিখেছেন।

    আজকাল রাস্তাঘাটে, সব জায়গাই মহিলা লেখা থাকে।
    একসময় সমাজে মহিলাদের অনেক সম্মান দিতো।
    মূল্যায়ণ করতো।

    কিন্তু বর্তমানে কিছু নারীবাদী মহিলার জন্য কিছু পুরুষ আছে সব নারীদেরকে খারাপ ভাবে।

    নারী পুরুষ সমান অধিকার চায়,তাইতো অনেক মহিলা চাকরিজীবী পুরুষের মতো সমান কাজ করতে হয়।
    কোন ছাড় দেয় না।

    সবকিছুতেই যেহেতু সমান অধিকার তাহলে কাজও করতে হবে সমান।

    শুভ কামনা রইলো।

    Reply
    • অভিতোষ অভি

      অনেক ধন্যবাদ আপনার শুভকামনার জন্য।

      Reply
  2. আফরোজা আক্তার ইতি

    বাহ! আপনি নিজে কতটা গভীরভাবে ভেবেছেন আর আমাদেরকে গভীরভাবে ভাবাতে বাধ্য করেছেন এই লেখাটা তারই প্রমাণ! এটা শুধু প্রবন্ধই নয়, অসাধারণ প্রতিবাদ। খুব ভালো লাগল। যেসব শব্দগুলো সবাই অনায়াসে সহজেই বিভিন্ন কথার ক্ষেত্রে ব্যবহার করে আসছে তারা অনেকেই জানে না, শব্দগুলোর মূল অর্থ কি। বর্তমানে অনেক পুরুষ এমনকি নারীরাও নারীদের এমনভাবে সম্বোধন করে আর আচরণ করে যেন তারা কোনো অবহেলিত বস্তু বা কুকুর বিড়ালের মতো তুচ্ছ ব্যাপার ছাড়া আর কিছুই না!
    খুবই মুগ্ধ হয়েছি প্রবন্ধটা পড়ে। ভালো লেগেছে। অনেক শুভ কামনা।

    Reply
  3. Md Rahim Miah

    যাহোক-যাইহোক
    ওঠানো-উঠানো
    ঐরকম-ওইরকম
    বাহ্ বেশ ভালো লিখেছেন বলতে গেলে। তবে নারীদের নিয়ে লিখলে লিখে শেষ করা যাবে না। প্রবন্ধের মাঝে আরো লেখার উচিত ছিল, যে একটা নারী কতটা কষ্টে জীবনযাপন করে। তবে জেনে ভালো লাগলো মহিলা শব্দের অর্থ। আসলে এটা আমারও অজানা ছিল। আর সত্য কথা বলতে আমাদের সরকার নারীদের সমান অধিকারের জন্য অনেককিছু করেছে আর করছেও। তবুও অনেক নারী অবহেলার স্বাকীর হয়। আপনার জন্য অনেক অনেক শুভ কামনা রইল।

    Reply

Submit a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *