লেখা: আফরোজা আক্তার ইতি
প্রিয় আপনি,
আসসালামু আলাইকুম। আসলে কী বলে সম্বোধন করব ঠিক বুঝে উঠতে পারছি না। আল্লাহর রহমতে আমাদের বিয়ের একমাস পূরণ হয়েছে আজ। হাতে মেহেদীর রঙ মুছতে না মুছতেই আপনি পাড়ি জমিয়েছিলেন বিদেশের পানে। আমার না মাঝে মাঝে বড্ড অভিমান হয় জানেন, আপনার উপর। কোথাও শুনেছেন যে বিয়ের পর মাত্র চারদিন পরেই নতুন বউকে রেখে কেউ এভাবে চলে যায়? আপনার বুঝি আমার জন্য একটুও মায়া হলো না? এই দেখেন, শুরুতেই আপনার উপর সমানে রাগ ঝেড়ে যাচ্ছি আমি, অথচ এখনও জিজ্ঞেসই করি নি আপনি কেমন আছেন। আচ্ছা, আপনি কেমন আছেন সত্যি করে বলুন তো? আল্লাহর রহমতে ভালো আছেন বলেই আশা করি। মায়ের কাছে শুনেছি আপনি নাকি খাওয়া-দাওয়ায় অনেক অবহেলা করেন। ওখানে গিয়ে ঠিকমতো খাচ্ছেন তো? আপনি যেই অগোছালো আর ভুলোমনা। মনে আছে, আপনি যে প্রায়ই বাইরে বেরুনোর সময় রুমাল আর হাতঘড়ি নিতে ভুলে যেতেন? তখন আমি ছুটে গিয়ে আপনার রুমাল আর হাতঘড়ি এগিয়ে দিতাম। ওখানে আবার এসব ভুলে রেখে যাবেন না, ওখানে কিন্তু এগুলো মনে করিয়ে দেয়ার জন্য আপনার কোনো বউ নেই! আচ্ছা, মালয়েশিয়ায় নাকি সব সুন্দরী, আর সাদা চামড়ার মেয়েদের আনাগোনা বেশি? ওখানে আবার তাদের দিকে হাঁ করে তাকিয়ে থাকেন না তো? আপনি কিন্তু জানেন আপনার বৌ-এর চেয়ে সুন্দরী জগতে আর কেউ নেই, ভুলেও যদি একবার আপনি তাদের দিকে তাকান তবে কিন্তু আমি বাপের বাড়ি চলে যাব বলে দিলাম। হুম।
আজকে মা রান্নাঘরে শিং মাছের ঝোল রাঁধছিলেন আর আফসোস করে বলছিলেন, “আমার পোলাটা মালুশিয়ায় গিয়া কী খায় কেডা জানে! ওইখানে নাকি সব সাপ-কচ্ছপ রাঁন্দে।” আমি মাকে আশ্বাস দিয়ে বললাম, “মা, চিন্তা করবেন না। আপনার ছেলে বলেছে ওখানে নাকি বাঙালী খাবারই বেশি পাওয়া যায়।” মা চোখের পানি ফেলে বললেন, “যাই কউ বৌমা, আমার হাতের তৈরি খাওন পাইলে পোলাটা যেই তৃপ্তি করে খাইতো, ওখানের বাঙালী খাওন খেয়ে কি সেই তৃপ্তি পাইবো!” মায়ের কথা শোনার পর আমার মনটাও বড় খারাপ লাগছে। মা মাঝে মাঝে প্রায়ই কান্না করে আপনার জন্য। বাবা একা বাজার করে হাঁপিয়ে উঠেন। বাড়িতে এসে বলেন, “আমার মামুনটা একমাস হইলো বাড়িত নাই। পোলাটারে ছাড়া ঘরটা কেমন খালি খালি লাগে।” বাবা আপনার পথ চেয়ে খেজুরের রস নিয়ে বসে থাকেন, মা পিঠা বানিয়ে অপেক্ষা করেন। আপনার বোন রুমি তো আমার সাথেই ঘুমায়। রাতভর আপনারই গল্প করে আমার পাগলী ননদটা। ও বলে, ছোটবেলায় নাকি আপনি তার খেলনা মাটির পুতুল ভেঙে ফেলেছিলেন বলে রুমি ভীষণ কেঁদেছিল, তার মান ভাঙাতে আপনি নাকি টাকা জমিয়ে মেলা থেকে নতুন পুতুল কিনে দিয়েছিলেন? রুমি তো কেঁদেই ফেলে তার ভাইয়ের কথা মনে করে। ও হ্যাঁ, আরেকটা খুশির খবর। কিছুদিন আগেই রুমির সপ্তম শ্রেণীর পরীক্ষার ফলাফল দিল। আলহামদুলিল্লাহ্ সে পরীক্ষায় প্রথম হয়ে সাফল্যের সাথে অষ্টম শ্রেণীতে উত্তীর্ণ হয়েছে। জানেন, আপনি যেই রুমালটা রেখে গেছেন, তাতে এখনও আপনার আতরের ঘ্রাণ লেগে আছে। আতরের জুঁই ফুলের ঘ্রাণটা শুঁকলে মনে হয় আপনি যেনো এখনও আমার সামনেই আছেন। আপনার পাসপোর্টের জন্য তোলা সেই ছবির এককপি এখনও আমার বালিশের নিচে রাখা, সেদিন ননদিনী দেখে ফেলে কী লজ্জাটাই না দিল! বাড়ির সামনে আপনি যেই মেহেদী গাছটা বুনেছিলেন, সেটা বেশ বড় হয়েছিল। কিন্তু পরশু সকালবেলা উঠে দেখি ছাগল গাছটা ভেঙে রেখে গেছে। মন খারাপ করবেন না, আমি দুইটা মেহেদী গাছের চারা বুনেছি আজ দুপুরেই। মিনি এক সপ্তাহ হলো চারটা বিড়ালছানা জন্ম দিয়েছে। আমি আর রুমি পালা করে বাচ্চাগুলোর দেখাশুনা করছি। বেশ বড় হয়েছে বাচ্চাগুলো। তাদের নাম দিয়েছি টিনু, মিনু, বুলি, লালী। কেমন হয়েছে নামগুলো বলুন তো? কাল মিন্টু এসে আপনার বুকশেলফ থেকে দুইটা বই নিয়ে গিয়েছে। বলল, “ভাবী, মামুন ভাই থাকলে কত বই পড়তে পারতাম। তার কথা বড়ই মনে পড়ে।”
আচ্ছা, আপনি কবে আসবেন বলুন তো? আমার দু’চোখ আপনাকে দেখার জন্য পাগল হয়ে গেছে। মা, বাবা আর রুমিও আপনার পথ চেয়ে বসে থাকে। আপনি ছুটি নিয়ে একবার গ্রামে আসুন না। আসার সময় বাবার জন্য একটা শাল নিয়ে আসবেন, মায়ের জন্য একটা শাড়ি আর রুমির জন্য মনে করে কিছু কসমেটিক্স নিয়ে আসবেন। আমার জন্য কিছু আনতে হবে না। শুধু সুস্থভাবে বাসায় ফিরে আসুন এটাই চাই। আর বাড়ি আসলে কিন্তু এবার মেলায় আমাকে নিয়ে হাতভর্তি রেশমি চুড়ি, আর আলতা, টিপ, কাজল কিনে দিতে হবে। আপনি কিন্তু নিজের খেয়াল রাখবেন, আমাদের চিন্তা করবেন না। আল্লাহর রহমতে আমরা সবাই ভালো আছি।
চিঠি লিখতে গিয়ে কলমের কালি আর সময় দু’টোই ফুরিয়ে যাচ্ছে কিন্তু কথা যেনো ফুরোচ্ছে না। রাত জেগে বসে হ্যারিক্যানের আলোয় আপনাকে চিঠি লিখছিলাম, এখন ঘুমে দু’চোখ বন্ধ হয়ে আসছে। আজ এখানেই শেষ করি। শেষে এসে একটা সুসংবাদ দিয়ে আপনার মনটা খুশি করে দিতে চাই। বলতে চাচ্ছিলাম যে, ক’দিন ধরেই অনুভব করছি আমার মাঝে ছোট্ট একটি প্রাণের অস্তিত্ব বেড়ে উঠছে। আশা করি, আপনি তার জন্য তাড়াতাড়ি গ্রামে ফিরে আসবেন। আপনি ভালো থাকবেন, নিজের যত্ন নিবেন। আল্লাহ হাফেজ।
ইতি,
আপনার সহধর্মিণী,
জান্নাত।
ওটা যেন চিঠি নয়, এক বাস্তবতার গল্প! লেখিকা অসাধারন উপায়ে যে বিষয়গুলো তুলে ধরেছেন, সবই তো এ দেশের প্রবাসী’র পরিবারের বাস্তব গল্প। এমন বহু স্বামী আছে, যারা বিয়ের দু-এক দিন পরেই দেশ ত্যাগ করে। হয়তো এ লিখার মতো তাদের স্ত্রী’রা বেশ অভিমান করে বসে থাকে!
অনেক অনেক ধন্যবাদ রাকিব ভাই।দোয়া রাখবেন।
জিজ্ঞেসই-জিজ্ঞাসাই(কিংবা প্রশ্নই)
করি নি-করিনি(নি শব্দের সাথে বসে)
বৌ-বউ
বলে দিলাম। হুম। -বলে দিলাম হ্যাঁ(দাড়ি দুইবার বসেছিল কিন্তু বসবে একবার)
বুনেছিলেন-লাগিয়েছিলেন (বুনেছিলেন দিয়ে অন্য কিছু বুঝায়, কিন্তু এইখানে গাছ লাগানোর কথা বলা হয়েছে)
বুনেছি-লাগিয়েছি
মা, বাবা-মা-বাবা
হ্যারিক্যানের-হারিকেনের ( হারিকেন (বাতি)এটা হবে হয়তো)
ছোট্ট-ছোট(ছোট্ট শুধু নামের ক্ষেত্রে ব্যবহার হয়)
বাহ্ বেশ লিখেছেন তো, পড়ে অনেক ভালো লেগেছে। বিয়ের চারদিন পর স্বামী বিদেশ চলে গিয়েছে আর শেষে উল্লেখ করেছেন মা হবে স্ত্রী। সময়টা একটু বাড়ালে ভালো হতো মনে হয়। তবে ভালোই লিখেছেন আর বানানের দিকে খেয়াল রাখবেন। অনেক শুভ কামনা রইল।
আমার অতি প্রিয় রাহিম ভাই, আমি জানতাম এই বিষয়টা অন্য কেউ উল্লেখ না করলেও আপনার অন্তর্দৃষ্টি সেদিকে পড়বেই। বিয়ের চারদিন পর স্বামী বিদেশ চলে গিয়েছে আর স্ত্রী সন্তানসম্ভবা এটা নিয়েও আপনার মাথায় চিন্তা এসে পড়েছে যে সময় আরেকটু বাড়ালে ভালো হতো! এই যদি হয় মন্তব্যের হাল তবে আর কিছু নাই ই বলি।
আর বিচারক প্যানেল তো আছেনই। তাদের উপরেও আমার পূর্ণ আস্থা আছে।
আমি যে কোথায় যাবো। আমি তো বলেছি বাড়ালে ভালো হতো। আমি তো বলিনি যে আপনার ভুল হয়েছে। আসলে আমার ছোট বোনের ২০১৮সালের শুরুতে বিয়ে হয়েছিল, একমাস পরেই তার স্বামী বিদেশ চলে গিয়েছে, কিন্তু বোন আর মা হলো না একবছর হয়ে যাচ্ছে। এইদিকে জামাইও বিদেশ থেকে আসার কোনো নাম গন্ধ নাই। বোন এখন পায়ের উপর পা তুলে আমার আর বাবার উপরে পড়ে খাচ্ছে জামাই যাওয়ার পর থেকেই। জামাই বাড়িতে যায় না। কি আর বলবো দুঃখের কথা, আমার আরো কিছু বোন আছে ঘটনা শুনলে হতবাক হয়ে যাবেন। আর ভাববেন তারা মেয়ে নাকি ছেলে। তবে আপনার ৪দিন উল্লেখ ভুল নয়। একদিনও মা হওয়ার জন্য যথেষ্ট যদি স্বামী সেইরকম পড়ে।
ইতি আপু অসাধারণ লিখেছো।
তোমার লেখার হাত ভালো।
বিয়ে করে চারদিন পর বিদেশ চলে গেছে, বউয়ের মনে কদো রাগ,অভিমান জমে আছে।
বর কী সেগুলো জানে…
প্রবাসীদের ভালো রাখুক।
আর তাদের বউদের মনে অভিমান দূর হোক।
বিয়ের চারদিনে ক্যামনে কী ইতি?
মা হতে চলেছে।
অন্তত পনেরো দিনের কথা উল্লেখ করতা।
শুভ কামনা রইলো।