পিতার কাছে পুত্রের চিঠি
প্রকাশিত: জানুয়ারী ১৭, ২০১৯
লেখকঃ augustmault0163

 3,425 বার দেখা হয়েছে

এই লেখক এর আরও লেখা পড়ুনঃ augustmault0163

আকরাম হোসেন ফারাবি।

প্রিয় বাবা,
আসসালামু আলাইকুম। আশা করি মহান আল্লাহর রহমতে ভাল-ই আছো। পরম করুণাময় আল্লাহর রহমতে আমিও ভাল আছি। মা, ছুটকি দু’জন-ই ভাল আছে। তোমার ফারাবি এখন আগের মতো নেই বাবা। আমি অনেকটাই বদলে গেছি। মা, ছুটকি এবং আমাকে রেখে আজ তুমি আছো বিদেশ বাড়িতে। বাবা তোমার কি কষ্ট হয় না আমাদেরকে ছেড়ে থাকতে? আমাদেরকে রেখে বিদেশে একলা একা কি থাকতে পারো বাবা? জানো বাবা, মা তোমার ছবি দেখে খুব কাঁদে। আমিও কাঁদি। তুমি জানতে পারলে অনেক খুশি হবে, তোমার ছুটকি আজ অনেক বড় হয়ে গেছে। ছুটকিটাকে একটা লাল টুকটুকে বরের সাথে বিয়ে দিয়েছি। ছুটকির বর একজন কোরআনের হাফেজ। তুমি দেশে থাকতে আমাকে অনেকবার বলতে ইসলামিক জীবন গড়তে। কিন্তু, আমি তা শুনিনি বাবা। আমি আমার মতো পথ চলতাম। আমার কারণে তোমাকে অনেক নালিশ শুনতে হয়েছে বাবা, হারাতে হয়েছে সম্মান। তুমি বিদেশ চলে যাওয়ার পর আমি আরও স্বাধীনতা পেয়ে গেছিলাম। আমার ভুল ভাঙে ঘুমের মাঝে একটা স্বপ্ন দেখে। একদিন রাতে আমি ঘুমিয়ে ছিলাম। ঘুমের মাঝে একসময় স্বপ্ন দেখতে লাগলাম। স্বপ্নে দেখলাম আমি মৃত্যুবরণ করেছি! মা এবং ছুটকি চিৎকার করে কাঁদছে। মা আমার দেহটাকে ধরে কাঁদছে আর বলছে, “ফারাবি তুই কেন চলে গেলি আমাদেরকে একা রেখে? তোর বাবা আমাদেরকে রেখে বিদেশ চলে গেছে এখন আবার তুই চলে গেলি আল্লাহর কাছে।”
ছুটকিটা কাঁদছে আর বলছে, ‘ও ভাইয়া তুমি কেন এত স্বার্থপর? তোমার পিচ্চি বোনটাকে একা রেখে চলে গেলে। তোমার কি ভয় করবে না ভাইয়া অন্ধকার মাটির ঘরে একলা একা থাকতে? আমি কি ওখানে যেতে পারবো তোমার মাথায় হাত বুলিয়ে দিতে? আমাকে কে এখন আদর করে পেত্নী বলে ডেকে আইসক্রিম, চকলেট কিনে দিবে?’
বাবা, তারপর আমার দেহটাকে বরই পাতার গরম পানিতে গোসল করানো হলো। মসজিদের ইমাম সাহেব যখন আমার মৃত শরীরে হালকা গরম পানি ঢেলে দিচ্ছিলেন তখন একজন ভয়ঙ্কর লোক আমার জীবন্ত দেহে ফুটন্ত গরম পানি ঢেলে দিচ্ছিলেন। আমি যন্ত্রণায় চিৎকার করেছি।
গোসল করানো শেষ হলে আমার দেহটাকে সাদা কাফনে আবৃত করা হলো। বাড়ির আঙিনায় একটা চৌকিতে আমার দেহটা রাখা হলো। গ্রামের মানুষ আমার লাশটাকে একটুখানি দেখে যাচ্ছেন। মা এবং ছুটকি তখনও কেঁদেই চলেছে। আমি অনেকবার কাঁদতে না করলাম। কিন্তু, কেউ আমার কথা শুনছে না এবং আমাকে দেখতে পাচ্ছে না। আমার লাশের পাশে বসে কয়েকজন কোরআন তেলাওয়াত করছেন। মা এবং ছুটকি বার-বার দৌঁড়ে আসছে আমার লাশটাকে দেখার জন্য। আমি শুধু চিৎকার করে কেঁদে চলেছি, কেউ শুনতে পাচ্ছে না আমার কান্নার আওয়াজ। আমার লাশটাকে কিছুক্ষণ রাখা হলো বাড়ির আঙিনায়। বাবা, তারপর আমার জানাজা নামাজের জন্য মসজিদের মাইকে ঘোষণা দেওয়া হলো। বিভিন্ন জায়গা থেকে পরিচিত এবং অপরিচিত অনেক মানুষ আসতে শুরু করলো আমার জানাজা নামাজ পড়ার জন্য। বাবা, তারপর তোমার ছেলের দেহটাকে খাটিয়ায় করে বাড়ির বাহিরে নিয়ে গেলেন কয়েকজন। আমার লাশটাকে সামনে রেখে সবাই নামাজের প্রস্তুতি নিতে লাগলেন। হামিদ চাচা সবাইকে জিজ্ঞেস করলেন বেঁচে থাকতে আমি কেমন ছেলে ছিলাম। সবাই বললেন আমি ভাল ছেলে ছিলাম। বাবা, তুমি’ই তো জানো আমি কতটা খারাপ ছেলে ছিলাম। আমি সবাইকে চিৎকার করে বললাম, আমি অনেক খারাপ ছেলে ছিলাম, আপনারা কেউ আমার মতো হয়ে কবরে আসবেন না। আমার চিৎকারের আওয়াজ কোনো মানুষ-ই শুনতে পেলেন না। বাবা, জানাজা শেষে চারজন আমার লাশের খাটিয়াটা কবরের দিকে নিয়ে যাচ্ছেন। বাবা, আমি দেখতে পাচ্ছিলাম লাশের খাটিয়ায় আমার দেহটা নেই, খাটিয়ার মধ্যে একটা কুকুর বসে আছে! কবরের কাছে যাওয়ার পর লাশের খাটিয়াটা রেখে কয়েকজন কবরটা প্রস্তুত করলেন। তারপর দু’জন কবরের মধ্যে নামলেন। আমার লাশটাকে কবরের মধ্যে রেখে সেই দু’জন উপরে উঠে আসলেন। সব প্রস্তুতি শেষ করে আমার লাশটা দাফন করা হলো। বাবা, আমাকে দাফন করে সবাই যখন চলে গেলেন তখন শুরু হলো ভয়ঙ্কর সব ঘটনা। আমার লাশটাকে জীবিত করা হলো এবং কবরে দু’জন লোক প্রবেশ করলেন। সেই দু’জন আমাকে কয়েকটি প্রশ্ন করলেন। বাবা, আমি কোনো প্রশ্নের উত্তর দিতে পারিনি। তারপর সেই দু’জনের চেহারা ভয়ানক রূপে রূপান্তরিত হলো! সেই দু’জন আমাকে হাতুড়ি দিয়ে আঘাত করতে লাগলেন। আমাকে শাস্তি দিয়ে দু’জন চলে গেলেন। তারপর কবরের দু’পাশের মাটি
দু’দিক থেকে আমাকে চাপ দিতে আরম্ভ করলো। তখন আমার শরীরের হাড্ডিগুলো ভেঙে, মাংস ছিড়ে বেরিয়ে গেল। বাবা, আমি প্রচণ্ড যন্ত্রণায় অনেক চিৎকার করেছি, কিন্তু শাস্তি দেওয়া থামেনি। আমি দেখলাম, সাপ, বিচ্ছু এবং আরও ভয়ানক কিছু প্রাণী আমাকে ছিঁড়ে খাচ্ছে। বাবা, আমার তখন খুবই কষ্ট হতে লাগলো। তারপর একজন কুৎসিত চেহারার লোক এসে আমার পা-এ লোহার শিকল বেঁধে টেনে নিয়ে যেতে লাগলেন। একটা আগুনের সাগরের কাছে আমাকে নিয়ে যাওয়া হলো। শিকল দিয়ে বেঁধে আমাকে আগুনের মধ্যে ফেলে দিলেন সেই লোকটা। বাবা, আমি চিৎকার দিলাম এবং তখন-ই আমার ঘুম ভেঙে গেল। চিৎকার শুনে মা পাশের রুম থেকে দৌঁড়ে আসলো। বাবা, আমি তখন চিৎকার করে কেঁদেছি আর আল্লাহর কাছে আমার কৃতকর্মের জন্য ক্ষমা চেয়েছি। তারপর মা-কে বললাম আমি ভাল হয়ে যাবো। বাবা, আমি সেদিন সারারাত কেঁদেছি। পরদিন থেকে আমি সব খারাপ কাজ ছেড়ে নামাজ পড়া শুরু করেছি। বাবা, আল্লাহ কি আমাকে ক্ষমা করবেন? তুমি জেনে খুশি হবে যে, আমি তাবলীগ জামাতে তিনমাস সময় লাগিয়েছি। তাবলীগ জামাতে গিয়ে আমি ইসলাম সম্পর্কে এবং ইবাদাত করার অনেক নিয়ম-কানুন শিখেছি। বাবা, তুমি নিজেই জানতে, তখন আমি ইসলামের পথে চলতাম না। এখন আমি নিজেই মানুষকে ইসলামের পথে ডাকি। আমার জন্য দোয়া করিও বাবা। আল্লাহ যেন তোমাকে ভাল রাখেন, সুস্থ রাখেন। আসসালামু আলাইকুম। আল্লাহ হাফেজ।
ইতি
তোমার ফারাবি।

সম্পর্কিত পোস্ট

যদি পাশে থাকো

যদি পাশে থাকো

তাসফিয়া শারমিন ** আজকের সকালটা অন্য রকম। সাত সকালে আম্মু বকা দিলো। মানুষের ঘুম একটু দেরিতে ভাঙতেই পারে। তাই বলে এত রাগার কী আছে ?একেবারে যে দোষ আমারও তাও নয়। মানুষ ঘুম থেকে উঠে ফোনে বা দেওয়াল ঘড়িতে সময় দেখে। কিন্তু আমি উঠি জানালার পর্দা সরিয়ে বাইরের আলো দেখে।কে জানে...

কুড়িয়ে পাওয়া রত্ন

কুড়িয়ে পাওয়া রত্ন

অনন্যা অনু 'আমিনা বেগম' মেমোরিয়াল এতিমখানার গেট খুলে ভেতরে ঢুকতেই ওমরের বুকটা ধুক ধুক করতে শুরু করে। ওমর ধীর গতিতে ভেতরে প্রবেশ করে। চারদিকে তখন সবেমাত্র ভোরের আলো ফুটতে শুরু করেছে। ওমর গত রাতের ফ্লাইটে আমেরিকা থেকে এসেছে। সে এসেই সোজা আমিনা বেগম মেমোরিয়াল এতিমখানায়...

দাদাভাইকে চিঠি

দাদাভাইকে চিঠি

প্রিয় দাদাভাই, শুরুতে তোকে শরতের শিউলি ফুলের নরম নরম ভালোবাসা। কেমন আছিস দাদাভাই? জানি তুই ভালো নেই, তবুও দাঁতগুলো বের করে বলবি ভালো আছি রে পাগলী! দাদাভাই তুই কেন মিথ্যা ভালো থাকার কথা লেখিস প্রতিবার চিঠিতে? তুই কি মনে করিস আমি তোর মিথ্যা হাসি বুঝি না? তুই ভুলে গেছিস,...

৩ Comments

  1. আফরোজা আক্তার ইতি

    এক কথায় অসাধারণ! এতো চমৎকার একটা চিঠির নিশ্চয়ই কোনো তুলনা হয় না। প্রতিটি পিতামাতাই সন্তানের মঙ্গল চায় তেমনি ফারাবির বাবাও চেয়েছিলেন সন্তান ইসলামের পথে আসুক আর আজ সে তার স্বপ্ন পূরণ করেছে ঘুমের মাঝে স্বপ্ন দেখে। যদিও এরকম সাবধানবাণী কম মানুষই দেখে, তবে এ থেকেই ফারাবি সংশোধন হতে পেরেছে। খুবই ভালো লাগল তবে প্রবাসী বাবার প্রতি আকুলতা তেমন প্রকাশ পায় নি চিঠিতে।
    সুন্দর লিখেছেন শুভ কামনা।

    Reply
  2. Halima tus sadia

    খুব সুন্দর একটি চিঠি।
    শিক্ষণীয় ছিলো।

    আমাদের প্রত্যেকেরেই ভাবা উচিৎ আমাদের সময়গুলো কিভাবে ব্যয় করছি।
    সৎ পথে নাকি অসৎ পথে।
    খারাপ পথে চললে একদিন জবাব দিতে হবে।

    তাই সময় থাকতে বুঝতে হবে।
    ফারাবী এক দিনের স্বপ্ন দেখে নিজেকে বদলে নিয়েছে।
    এ থেকে আমাদের শিক্ষা নেওয়া উচিৎ।

    শুভ কামনা।

    Reply
  3. Md Rahim Miah

    ভাল-ই-ভালোই(বর্তমানে ভালো বেশি ব্যবহার হয়)
    গেছিলাম-গিয়েছিলাম
    কিন্তু, কেউ-কিন্তু কেউ(কিন্তুর পর কমা হবে না)
    ছিড়ে-ছিঁড়ে
    শুনে-শোনে
    ভাল-ভালো
    আমি তাবলীগ জামাতে তিনমাস সময় লাগিয়েছি-আমি তাবলীগ জামাতে তিনমাস সময় কাটিয়েছি। (লাগিয়েছি দিয়ে অন্য কিছু বুঝায় যা লাইনের সাথে মিলে না)

    বাহ্ বেশ ভালো লিখেছেন। স্বপ্ন দেখে ভয়ে নিজেকে পরিবর্তন করে ফেলল, যা চিঠির মাঝে উল্লেখ করলেন। কোনো এক সিনেমার কাহিনীর সাথে কিছুটা মিল আছে।তবে আরেকটু গভীরভাবে ফুটে তুললে ভালো হতো। যাইহোক অনেক শুভ কামনা রইল।

    Reply

Submit a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *