পাপমুক্তি
প্রকাশিত: মার্চ ৬, ২০১৮
লেখকঃ vickycherry05

 1,402 বার দেখা হয়েছে

এই লেখক এর আরও লেখা পড়ুনঃ vickycherry05

লেখা: সুমাইয়া সারাহ মিষ্টি
(মার্চ -২০১৮)
……………

বউদি ছাড়া আমাদের সংসারের সব্বাই ভালো! সুখী সংসার বলতে যা বুঝায় সবই আছে।
কিন্তু এই বউদি টা এসেছে কোত্থেকে ভগবান জানে! সে যেন এই পরিবারে মানিয়েই নিতে পারছে না! দাদার পছন্দে বিয়ে, যদিও পারিবারিক সম্মতি ছিল। শুধু বাপের বাড়ি যেতে চায় সে, যেন এই বাড়িতে তার থাকতে ইচ্ছেই করেনা! ঘুম থেকেও মহারাণী উঠে দেরিতে! শুধু কি তাই? রান্নাটাও ঠিকঠাক পারেনা সে! এইতো সেদিনই তো ঠাম্মা বলল পটল দিয়ে মাছের ঝোল করতে, মহারাণী এতোই লবণ দিয়েছে ঠাম্মা খেতেই পারেনি!

রোজ রোজ তার ভুল করা যেন অভ্যেস! এখন আবার নতুন ব্যামোতে ধরেছে তেনাকে! শুনলাম বাবু হবে। বমি করছে দিনে চোদ্দবার! ছিঃ, ওসব দেখে কি আর খাওয়া ঢুকে! এই এক বাহানা পেয়েছে, তার না কি মাথা ঘুরে বমি লাগে! তাই কাজকাম বাদে সারাদিন শুয়ে থাকার বাহানা খুঁজে! আরে বাবা, আর কেউ কি কোনোদিন মা হয়নি নাকি? না বাপু, এতো আল্লাদ আর কারো দেখিনি! আমার দাদাও না, বউ ছাড়া যেন কিচ্ছুই বুঝেনা! বউয়ের খাওয়া,ঘুম,আরাম যত্ন কিচ্ছুই তার চোখে পরেনা! আর যেই না একটু কাজে বলা হবে, ব্যস শুরু হয়ে যায় ক্যাচাল!

বাবার গোসলের পানি গরম হচ্ছিল, বাবা আমাকে বললো পানি গোসলখানায় দিতে। আমি চন্দন লাগাচ্ছিলাম, সন্ধ্যে বেলা আমাকে দেখতে আসবে বলে। বউদিকে বললাম পানি দিয়ে আসতে। আমি কি আর জানতাম পানি নিয়ে যেতে লেগে সে পা পিছলে পরে যাবে! আর বাচ্চাটাও পরে যাবে। জানলে কি আর বলতাম নাকি পানি দিয়ে আসতে! বউদির জন্যে দাদা মা বাবা ঠাম্মা সব্বাই আমাকে বকলো! যেন আমারই দোষ! বউদি টা খুব খারাপ!

পাত্রপক্ষ আমাকে খুব পছন্দ করেছে, বিয়ে হয়ে যাবে সপ্তাহ খানেক বাদেই…ভালো হবে, এই বাড়ি থেকে মুক্তি পাবো! এই বাড়ির কেউ আমাকে ভালবাসে না! বিয়ের পর আর কখনোই এই বাড়ি আসবো না বলে ঠিক করেছি!

ভাবনা টা ভুল হলো বিয়ের দু’দিন পরেই। স্বামী, সংসার ভালো লাগেনা! মায়ের কাছে ছুটে যেতে ইচ্ছে করে! বাবার আদর, ঠাম্মার গল্প, দাদার সাথে খুনসুটি সব মনে পরে! কাঁদতে ইচ্ছে করে সারাদিন! বাবার বাসায় যাবো সে উপায়ও নেই! এই সংসারে অনেক কাজ! রান্না, ঘর ঝাড়ু দেয়া, মুছা, থালাবাসন ধোয়া, কাপড় কাচা আরও কত কি! সারাদিন কাজ করি, তাও যেন কাজ শেষ হয়না! শুধু অপেক্ষা করি রাতের! কখন একটু আরাম করে ঘুমাতে পারবো! ঘুম আর হয় কই? স্বামীর সেবা করাও তো আমার কাজ, আমার ধর্ম! রাতে ঘুমাতে দেরি হয়ে যায়, তাই সকালে উঠতেও দেরি হয়, এই সামান্য ব্যাপার নিয়ে শাশুড়ি মা কতই না কটু কথা শুনায় আমাকে!

এতো কাজ করি, তাও কারো মন পাওয়া যায় না! সামান্য এদিক ওদিক হলেই কটু কথার বন্যা বয়ে যায়! সেদিন গ্রাম থেকে অনেক আত্মীয় এলো, অনেক রান্না করতে হলো, ভুলে তরকারি তে হলুদ বেশি পরে গেছিলো। তা নিয়ে শাশুড়ি মা কত্ত চিল্লাচিল্লি করলেন! আমি না কি কিচ্ছুই পারিনা! মা নাকি রান্না শেখায়নি! আরও কত্তো কি! আচ্ছা, আমার ভুলের জন্যে আমার বাড়ির লোক কে কথা শোনানো কি ঠিক?

কদিন থেকে শরীরটা ভালো যাচ্ছেনা, খুব দুর্বল লাগে,বমিবমি লাগে, মাথা ঘুরে! টেস্ট করে বুঝলাম আমি মা হতে চলেছি! এখন আর ঠিকমতো কাজ করতে পারিনা, কষ্ট হয়! শাশুড়ি মা বলে বসলেন, “এত্তো ঢং করো কেন বাপু? আমরা কি ছেলে জন্ম দিইনি? একটুতেই এতো নেতিয়ে পরলে চলবে?”

হুট করে মনে হলো, এই কথা এর আগেও শুনেছি! শুনেছি মানে আমিই তো এসব বলতাম বউদি কে! শুধু আজকের কথা না! আমার সাথে যা যা ঘটছে, সবই তো বউদির সাথে আমিই ঘটিয়ে এসেছি! বউদি বেচারি কে কত্ত কিছু বলতাম, সে কখনো পাল্টা জবাব দেয়নি! অথচ কতই না কষ্ট পেয়েছে! শুধুমাত্র আমার জন্যই সে তার বাচ্চা হারিয়েছে, এমনকি আর কখনো মা হতেও পারবে না! একি পাপ করে ফেলেছি আমি! ছিঃ, আমি এতো নিকৃষ্ট! এতো নিচ!

এসব ভাবতে ভাবতেই মাথা ঘুরে পরে গেলাম! জ্ঞান হারানো অবস্থায় ক্লিনিকে নিয়ে যাওয়া হয় আমাকে। সেখানে আমার বাড়ির সবাই আসে, আমাকে বাড়িতে নিয়ে যেতে চায়। বরও চাচ্ছিলো এটাই, কারণ ও বুঝতো আমাকে। দেখতো আমার অবস্থা! আমি বাসায় আসি, আমার বাবার বাসায়। যেখানে আমার পরিবার আছে আর আছে একটা লক্ষী বউদি!

বউদির সাথে এতো অন্যায় করেছি, তারপরেও সে কতই না যত্ন করে আমার! এটা খাও, বাচ্চার জন্য ভালো! ওটা খেয়ো না, বাচ্চার ক্ষতি হবে! এটা করো, ওটা করো না! কত কি! যেন আমার চেয়ে বউদির বেশি খুশি, বেশি চিন্তা, বেশি আগ্রহ আমার বাচ্চা নিয়ে।

দিন, সপ্তাহ, মাস কেটে আমার ডেলিভারির দিন চলে আসে। কোলজুড়ে আসে দুই রাজপুত্র, একসাথে! দুনিয়া যেন আমার হাতের মুঠোয়! রাজ্যের খুশি আমার কাছে! এবং তখনি আমার মনে হলো, এই খুশি আমার একার জন্য আসেনি! আমার কোলে দুইজন রাজপুত্র, মা ও হবে দুজন!

বর কে বললাম, সে রাজি হলো, উপরন্তু খুশিও হলো! সবাই যখন রাজপুত্রেদের একসাথে আছে, আমি একজন কে কোলে তুলে নিয়ে বউদির কোলে দিলাম। বললাম, “বউদি যা আমার জন্য গেছে তা ফেরানোর ক্ষমতা ঈশ্বর আমাকে দেয়নি! যা দিয়েছে, তা দিচ্ছি! ওকে তোমার আদর্শে আদর্শবান করো!”

বউদি পেলো তার সন্তান, আর আমি পেলাম পাপমুক্তি!

সম্পর্কিত পোস্ট

অঘোষিত মায়া

অঘোষিত মায়া

বইয়ের প্রিভিউ ,, বই : অঘোষিত মায়া লেখক :মাহবুবা শাওলীন স্বপ্নিল . ১.প্রিয়জনের মায়ায় আটকানোর ক্ষমতা সবার থাকে না। ২.মানুষ কখনো প্রয়োজনীয় কথা অন্যদের জানাতে ভুল করে না। তবে অপ্রয়োজনীয় কথা মানুষ না জানাতে চাইলেও কীভাবে যেন কেউ না কেউ জেনে যায়। ৩. জগতে দুই ধরণের মানুষ...

আমার জামি

আমার জামি

জান্নাতুল না'ঈমা জীবনের খাতায় রোজ রোজ হাজারো গল্প জমা হয়। কিছু গল্প ব্যর্থতার,কিছু গল্প সফলতার। কিছু আনন্দের,কিছু বা হতাশার। গল্প যেমনই হোক,আমরা ইরেজার দিয়ে সেটা মুছে ফেলতে পারি না। চলার পথে ফ্ল্যাশব্যাক হয়। অতীতটা মুহূর্তেই জোনাই পরীর ডানার মতো জ্বলজ্বলিয়ে নাচতে...

ভাইয়া

ভাইয়া

ভাইয়া! আবেগের এক সিক্ত ছোঁয়া, ভালবাসার এক উদ্দীপনা, ভাইয়া! ভুলের মাঝে ভুল কে খোঁজা, আর ভালবাসার মাঝে ভাইকে খোঁজা, দুটোই এক কথা! ভুল তো ভুল ই তার মাঝে ভুল কে খোঁজা যেমন মূর্খতা বা বোকামি। ঠিক তেমনি ভালবাসার মাঝে ভাইকে খোজাও মূর্খতা! আমার কাছে ভাইয়া শব্দটাই ভালবাসার...

০ Comments

Submit a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *