পালিশ করা জুতো
প্রকাশিত: মার্চ ১৫, ২০১৮
লেখকঃ vickycherry05

 2,055 বার দেখা হয়েছে

এই লেখক এর আরও লেখা পড়ুনঃ vickycherry05

লেখকঃ
আরাফাত শাহীন
রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়।
(মার্চ – ২০১৮)
…………

পালিশ করা চকচকে দামী জুতোটার দিকে জোবায়ের অপলক তাকিয়ে থাকে।আলো পড়ে জুতোটা কেমন ঝিলিক দিয়ে উঠল না! একদম নতুনের মত লাগে।অথচ জুতোটা নতুন নয়। পুরোপুরি এক বছর হল কেনা হয়েছে। জুতোটা জোবায়েরের নিজের নয়। রহমত ভাইয়ের কাছ থেকে ধার করে এনেছে।বিশ্ববিদ্যালয় জীবনের প্রথম ভাইভা দিতে যাবে-একজোড়া জুতো না হলে কি চলে!অথচ জোবায়েরের কোনো জুতো নেই। দুই ফিতাওয়ালা একজোড়া চামড়ার স্যান্ডেল পায়ে দিয়ে সে যে কতদিন চলছে তা নিজেও বলতে পারবে না। তারপরও চলতে হয়। বাস্তবতা অনেক সময় খালি পায়েও চলতে বাধ্য করে!

-রহমত ভাই,আপনার জুতোজোড়া একটু দিতে পারবেন?

সকাল সকাল ঘুম থেকে ডেকে তোলার জন্য রহমত ভাই যারপরনাই বিরক্ত। জোবায়ের নিজেও কম লজ্জিত নয়। ভাইভার চিন্তা করে এটা ওটা ঘাটতে ঘাটতে বেশ রাত হয়ে গিয়েছিল ঘুমাতে। রাতে মনে ছিলনা বলতে। ইশ! জোবায়েরটা যা বোকা!জোবায়ের মনে মনে ভাবতে থাকে,দিবে তো? যদি না দেয়!
রহমত ভাই বিরক্ত হলেও আচরণে সেটা প্রকাশ করলেন না।

-জুতো দিয়ে কী করবি?

-ফার্স্ট ইয়ারের ভাইভা আছে আজ।

-নিয়ে যা। তবে সাবধানে ব্যবহার করিস। গতকালই পালিশ করে এনে রেখেছি।ধূলাবালি লাগিয়ে আনিস না যেন আবার!

জোবায়ের জুতো নিয়ে হাসিমুখে বের হয়ে আসে রুম থেকে। রহমত ভাইকে তার বড় আপন মানুষ বলে মনে হয়।

ভাইভা শেষ করে রুম থেকে বের হয়ে আসে জোবায়ের। ভাইভাটা তার বড় সুন্দর হয়েছে। সবগুলো প্রশ্নেরই সঠিক জবাব দিতে পেরেছে। স্যাররা মুগ্ধ হয়েছেন ওর উত্তর শুনে। ভাইভা বোর্ডের চেয়ারম্যান পাঠ্যবইয়ের প্রশ্ন বাদ দিয়ে এবার ওকে প্রশ্ন করেন,”বাড়ী কোথায় তোমার”?

-ঝিনাইদহের মহেশপুরে।

-কয় ভাইবোন তোমরা?

-৫ ভাই ২ বোন।

-বাবা কী করেন?
সহসা এ প্রশ্নের জবাব দিতে পারেনা জোবায়ের। ওর গলা ধরে আসে। দু’চোখ ছাপিয়ে জল নেমে আসতে চায়। বহু কষ্টে নিজেকে সংবরণ করে বলে,”বাবা গতবছর রোড অ্যাক্সিডেন্টে মারা গেছেন।”

চেয়ারম্যান সাহেবও মর্মাহত হন। তিনি আর প্রশ্ন বাড়ান না। জোবায়েরকে চলে যেতে বলেন।

জোবায়েরের ভাইভা শেষ হতে হতে প্রায় বিকেল হয়ে গিয়েছে। বড় ক্লান্তি অনুভব হয় ওর। সকালে সামান্য একটা কেক আর একগ্লাস পানি খেয়ে এসেছে। পা চলতে চায়না। অথচ পকেটের যা অবস্থা তাতে রিকশাতে যাওয়াও কঠিন ব্যাপার। জোবায়ের তবুও রিকশা নেওয়ার সিদ্ধান্ত নেয়। ক্ষুধা পেটে এত পথ হেঁটে যাওয়া তার পক্ষে সম্ভব নয় কিছুতেই।

শহীদ মিনার পার হতেই জোবায়েরের মনে হল কেউ যেন তার বাম পা টিকে দুমড়ে মুচড়ে দিয়ে যাচ্ছে। ব্যথায় কঁকিয়ে ওঠে ও। রিকশাওয়ালাকে রিকশা থামাবার কথাটাও বলতে পারেনা। সবটুকু শক্তি কে যেন শুঁষে নিয়েছে! দড়াম করে পড়ে যায় রাস্তার পাশে। আসরের নামাজ আদায় করে কয়েকটা ছেলে মসজিদ থেকে বের হচ্ছিল। দৌঁড়ে এসে জোবায়েরকে তারা টেনে তুলল। ভাগ্যিস খুব বেশি ক্ষতি হয়নি।”বড় বাঁচা বেঁচে গেলেন এ যাত্রা” মন্তব্য করল একটি ছেলে।জোবায়েরের তখন কোনো কথা শোনার মত মানসিকতা নেই। ও বাম পায়ের জুতোটা খুঁজে ফিরছে। ছিটকে পড়ার সময় জুতোটাও পা থেকে খসে পড়েছে। কেউ একজন ওটা কুড়িয়ে নিয়ে এল। জুতোর অবস্থা থেকে জুবায়েরের দুঃখে কান্না পাবার দশা। ওটা আর আস্ত নেই। রিকশার চাকার ভিতর ঢুকে একেবারে থেঁতলে গেছে। সুন্দর চকচকে পালিশ করা জুতোটা মুহূর্তের মধ্যে পায়ে দেবার অযোগ্য হয়ে গিয়েছে। জোবায়ের ডুকরে ওঠে।

-হায় আমার জুতোর এ কী হাল হয়েছে! এখন আমি রুমে ফিরব কী করে!

-আরে ভাই আপনার পা খানা যে আস্ত আছে এই তো বাবার ভাগ্যি!
বড়লোকের ছেলের আদিখ্যেতা মনে করে খেঁকিয়ে ওঠে একজন।
জোবায়েরের ওদিকে মন নেই। ও আছে জুতোর চিন্তায়। কী করে মুখ দেখাবে গিয়ে রহমত ভাইয়ের সামনে! জুতো কিনে দেবার সাধ্যিও যে নেই। জোবায়েরের গলা ছেড়ে কাঁদতে ইচ্ছা করে; ভীষণ ইচ্ছা করে।

সম্পর্কিত পোস্ট

অঘোষিত মায়া

অঘোষিত মায়া

বইয়ের প্রিভিউ ,, বই : অঘোষিত মায়া লেখক :মাহবুবা শাওলীন স্বপ্নিল . ১.প্রিয়জনের মায়ায় আটকানোর ক্ষমতা সবার থাকে না। ২.মানুষ কখনো প্রয়োজনীয় কথা অন্যদের জানাতে ভুল করে না। তবে অপ্রয়োজনীয় কথা মানুষ না জানাতে চাইলেও কীভাবে যেন কেউ না কেউ জেনে যায়। ৩. জগতে দুই ধরণের মানুষ...

আমার জামি

আমার জামি

জান্নাতুল না'ঈমা জীবনের খাতায় রোজ রোজ হাজারো গল্প জমা হয়। কিছু গল্প ব্যর্থতার,কিছু গল্প সফলতার। কিছু আনন্দের,কিছু বা হতাশার। গল্প যেমনই হোক,আমরা ইরেজার দিয়ে সেটা মুছে ফেলতে পারি না। চলার পথে ফ্ল্যাশব্যাক হয়। অতীতটা মুহূর্তেই জোনাই পরীর ডানার মতো জ্বলজ্বলিয়ে নাচতে...

ভাইয়া

ভাইয়া

ভাইয়া! আবেগের এক সিক্ত ছোঁয়া, ভালবাসার এক উদ্দীপনা, ভাইয়া! ভুলের মাঝে ভুল কে খোঁজা, আর ভালবাসার মাঝে ভাইকে খোঁজা, দুটোই এক কথা! ভুল তো ভুল ই তার মাঝে ভুল কে খোঁজা যেমন মূর্খতা বা বোকামি। ঠিক তেমনি ভালবাসার মাঝে ভাইকে খোজাও মূর্খতা! আমার কাছে ভাইয়া শব্দটাই ভালবাসার...

০ Comments

Submit a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *