লেখকঃ
xenifar critine
(ফেব্রুয়ারী’১৮)
……………
চোখ খুলতেই নেহা দেখলো তার মেয়ে অপলা পাশে নেই। আরমোরা ভেঙে নেহা উঠে অপলাকে খুঁজতে পাশের রুমে গেলো। অপলা এই সাঝ সকালে খেলনা সাজিয়ে বসেছে। নেহাকে একপলক দেখে অপলা আবার খেলায় মন দিলো।
অপলার কাছ থেকে নেহা সোজা কিচেনের দিকে গেলো। আজ শুক্রবার,অফিস নেই। নাস্তা বানাতে বানাতে নেহা ভাবলো আজ অপলাকে নিয়ে বাইরে কোথাও ঘুরে আসবে। লাঞ্চটাও বাইরেই করবে। অনেকদিন বাইরে কোথাও যাওয়া হয়না। সারাদিন একা একাই বাসায় থাকে। ভাবতে ভাবতেই মন খারাপ হয় নেহার।
অর্নবের সাথে নেহার ডিভোর্স হয়েছে প্রায় ২ বছর আগে। ডিভোর্স এর পরপরই অর্নব আমেরিকা চলে গেছে। তারপর থেকে অপলা মায়ের সাথেই আছে। তার বয়স সাড়ে চার। নেহাদের তেমন আপন কেউ নেই তাই অপলাকে একাই বাসায় থাকতে হয়।
মা মেয়ে সন্ধ্যার অনেক পরে বাসায় ফিরলো। আজ সারাদিন অনেক ঘুরেছে। অপলা খেলনাও কিনেছে অনেক। সে খাটে বসে একের পর এক খেলনা নারছে। নেহা ফ্রেস হয়ে এসে দেখে অপলা ঘুমিয়ে গেছে। সে মেয়েকে ঠিক করে শুইয়ে দিয়ে কপালে চুমো খায়। এই মেয়েটা ছাড়া তার পৃথিবী শূন্য।
নেহা অফিসে ঢুকতেই এমডি স্যারের রুম থেকে ডাক এলো। এই মানুষটার প্রতি নেহার বিরক্তির শেষ নেই। যখন তখন রুমে ডেকে নিয়ে অহেতুক গল্প শুরু করে। অফিসের অন্য কাউকে না শুধু নেহাকেই চোখে পরে গল্প করার সঙ্গী হিসেবে। ভাবতে ভাবতে নেহা স্যারের রুমির দিকে গেলো।
শাহরিয়ারের রুমে ঢুকতেই নেহা খেয়াল করলো লোকটাকে আজ অন্য দিনের চেয়ে সুন্দর লাগছে।
শাহরিয়ারের বয়স ২৮। ক্লিন সেইভের জন্য মনে হয় দু বছর কমে গেছে।
নেহাকে চমকে দিয়ে শাহরিয়ার বলে উঠলো,”কেমন আছো নেহা? ”
শাহরিয়ার নেহাকে বরাবরই আপনি করে বলে আজ হঠাৎ তুমি বলাতে নেহা কিছুটা ঘাবরে গেছে।
সে কিছুটা দ্বিধা নিয়ে উত্তর দেয়, জ্বি স্যার ভালো। আপনি ভালো আছেন?
শাহরিয়ার জবাব না দিয়ে সরাসরি অন্য প্রসঙ্গে চলে যায়। আমি তোমাকে বিয়ে করতে চাই নেহা ।
নেহার প্রথম মনে হলো সে ভুল শুনেছে। সে নির্বাক হয়ে শাহরিয়ার এর মুখের দিকে তাকিয়ে রইলো।
নেহার জবাব না পেয়ে শাহরিয়ার আবার কথা শুরু করলো। অনেক দিন তোমাকে কথাটা বলার চেষ্টা করেছি কিন্তু কি ভাবে শুরু করবো ভেবে পাচ্ছিলাম না।
এবার নেহা কথা বললো, কিন্তু………..
কিন্তু কি? তোমার মেয়ে? আমি সব ভেবেই সিদ্ধান্ত নিয়েছি।
নেহা শাহরিয়ারকে আর কিছু বলার সুযোগ না দিয়ে রুম থেকে বের হয়ে গেলো।
শাহরিয়ারও নেহাকে ডাকলো না শুধু তাকিয়ে রইলো।
কিছুক্ষন পরে নেহা শাহরিয়ার এর রুমে ঢুকলো। চেয়ারে বসতে বসতে হাতের রিজাইন লেটারটা টেবিলে রাখলো।
এটা কি প্রেম পত্র নাকি? বলতে বলতে শাহরিয়ার হাসলো।
শাহরিয়ার এর কথা শুনে নেহা জ্বলে যাচ্ছে। সে রাগ সামলে বললো “রিজাইন লেটার ।”
কম্পানি থেকে রিজাইন করবে এটা কি বিয়ের প্রথম শর্ত?
আমি আপনাকে বিয়ে করছি না। কি ভাবেন আপনি নিজেকে?
আপতত কিছুই ভাবছিনা। তুমি অধিকার দিলে……………
কথা শেষ হওয়ার আগেই নেহা চলে গেলো।
নেহাকে অসময়ে বাসায় দেখে অপলা মাকে বললো ” আম্মু তোমার অফিস কি আজ তারাতারি ছুটি হয়ে গেছে?”
“হ্যা মা” বলেই নেহা অপলাকে কোলে নিয়ে বেড রুমের দিকে গেলো।
সন্ধা সারে সাতটা। নেহা কিচেনে রান্না করছে। হঠাৎ কলিং বেলের শব্দ হলো। অপলা দৌড়ে গিয়ে দরজা খুললো। শাহরিয়ার কে দেখে অপলা প্রশ্ন করলো আপনি কি আমার আম্মুর কাছে এসেছেন?
শাহরিয়ার হেসে জবাব দিলো, না মামনি আমি তোমার কাছে এসেছি। কেমন আছো তুমি?
অপলা জবাব দিলো,” ভালো”। আপনি?
আমিও ভালো আছি। এই নাও তোমার চকলেট।
নেহা এসে অপলার পিছনে দাড়ালো। সে তাকিয়ে আছে অপলক দৃষ্টিতে।
শাহরিয়ার নেহাকে অগ্রাহ্য করে অপলার সাথে একের পর এক কথা বলে যাচ্ছে। আর অপলা হাসছে খিলখিল করে।
আজ নেহার দ্বিতীয় বিবাহ বার্ষিকী। সে ১০মিনিট ধরে বাবা মেয়েকে নাস্তা খাওয়ার জন্য ডেকে চলছে। কারও ওঠার নাম নেই।
সে ডাকাডাকি বন্ধ করে অপলার পাশে গিয়ে বসলো। কি সুন্দর লাগছে তার মেয়েটাকে!
সে আর চোখে শাহরিয়ার এর দিকে তাকায়। শাহরিয়ার নামের সেই বিরক্তিকর মানুষটাকে আজ কাল তার বড় ভালো লাগে। সে এখন তার অস্তিত্বের অংশ।
০ Comments