অব্যক্ত এক প্রশ্ন
প্রকাশিত: অক্টোবর ২১, ২০১৮
লেখকঃ augustmault0163

 1,725 বার দেখা হয়েছে

এই লেখক এর আরও লেখা পড়ুনঃ augustmault0163

লেখা : #কানিজ_ফাতিমা
,
ঘুম ভাঙে ট্রেনের ঝমঝম শব্দে। শুরু হয় দিন।মেয়েটির নাম মনি, বয়স মাত্র ৮ বছর। দেখতে ফুটফুটে প্রকৃতির মেয়ে,।ঘুরে ঘুরে মালা বিক্রি কারা তার কাজ,।
মনি জানে না তার মা কে? বাবা কে? শুধু জানে তার গন্তব্য সেই রেলস্টেশনে, যে জায়গায় গিয়ে সারাদিনের ক্লান্তি শেষে চোখ বুজে শান্তিতে ঘুমিয়ে পরে। বাবা মা যখন শিশুদের নিয়ে স্কুলে যায়, তখন মনির খুব স্কুলে যেতে ইচ্ছে করে। ইচ্ছে করে বাবা মার আদর পেতে।
পার্কে যখন দেখে একটা শিশুকে তার মা কতটা আগলে রাখে, মনি ভাবে আমার কি কেউ নেই যে আমাকে আগলে রাখবে? মনির কষ্ট হয় এসব ভাবতে। মাঝে মাঝে সময় হয় না এসব ভাবার,তাকে অনেক ব্যস্ত সময় পার করতে হয়।নিজের জন্য খাবার কিনে যখন দেখে একটা শিশু না খেয়ে বসে আছে, নির্দিধায় সে তার খাবারটা সেই শিশুকে দিয়ে দেয়।
মনির মধ্যে কিছু দিক আছে যা সব শিশুর মধ্যে থাকে না। মনি ফুলের মালা বিক্রি করে রাস্তায়য় রাস্তায়। প্রতিদিনের মতো আজও সে ফুলের মালা বিক্রি করছে। আফা ফুল লইবেন ফুল, লন না আফা, একটা ফুল লন।
রাস্তার সিগন্যাল পরার সাথে সাথে ওরা কয়কজন ব্যস্ত হয়ে পরে ফুল বিক্রি করতে। মাঝে মাঝে দু একজন ফুল নিয়ে টাকা না দিয়েই চলে যায়। এতে করে অনেক সময় মালিকের কাছে বকা আবার কিছু সময় মারও খেতে হয়। আজও মনি ফুল বিক্রি করছে।
হঠাৎ গাড়ির গ্লাস নামিয়ে এই পিচ্চি বলে ডাক দিল। একটা মালা দেতো বলেই মহিলা মনির দিকে তাকিয়ে রইল। মনিও মহিলার দিকে পলকহীন ভাবে তাকিয়ে রইল। মনির মনে হচ্ছে সে এই মহিলাকে অনেক দিন ধরে চিনে, সে তার অনেক আপন জন। দেখতে একদম তার কল্পনার মায়ের মত।
মনি কখনো তার মাকে দেখেনি ঠিক কিন্তু গভীর রাতে সে তার মাকে মনে করে খোলা আকাশের নিচে শুয়ে আকাশের তারার দিকে তাকিয়ে মাকে কল্পনা করে। মনিকে দেখেও মহিলার খুব আপন মনে হয়েছিল, তা না হলে সে ওমন করে তাকিয়ে ছিলো কেনো? মনি তাকে দুটো মালা দিয়েছিল কিন্তু কোনো টাকা নেয়নি। মহিলাটা তার দিকে আরও অবাক হয়ে তাকিয়ে রইল। সিগন্যাল পরল, গাড়ি চলে গেলে,কিন্তু মনি তখনো তাকিয়ে রইল।
সে সারারাত ঘুমাতে পারেনি, শুধু তার মার কথা আর সেই মহিলার ছবি চোখের সামনে আসতে লাগল। সে ভাবলো, ঐ মহিলাকে প্রশ্ন করবে আপনি কে? সে পরের দিন ঐ রাস্তায় গেল যেখানে সে ঐ মহিলাকে দেখেছিল। মনি সারাদদিন ওই জায়গায় ছিলো কিন্তু সে মহিলাকে দেখতে পেলো না। এভাবে দিন গেলো, মাস গেলো। মনি এখনো সেই একই জায়গায় দারিয়ে আছে অপেক্ষায়। প্রায় ছয় মাস পর একটা গাড়ি দেখল একদম সেই গাড়িটার মতো যেটায় ওই মহিলা ছিলো। মনির মনে হলে মহিলাটা ওই গাড়ির মধ্যেই আছে। মনি পাগলের মতো ওই গাড়ির পিছনে দৌড় দিল।
হঠাৎ পিছন থেকে একটা গাড়ি এসে মনিকে রক্তাক্ত করে দিল। নিমিষেই শান্ত করে দিল মনিকে। তারপর সাংবাদিক আসল, ছবি তোলা হলো, খবরের কাগজে লেখা হলো, কিন্তু তাতে লাভ কি ?
মনিদের জীবন এই রকমই থাকবে। আর এভাবেই শেষ হয়ে যাবে নিস্পাপ এই কচি ফুলগুলো। মনিদের নিয়ে ভাবার সময় কারো নেই। খবরের কাগজের লেখাটা হয়ত কেউ পরবে না। এভাবেই হয়তো আরও অনেক ফুল কলিতেই ঝরে যাবে। কিন্তু মনির সেই না বলা কথাটা আর বলা হবে না। তার প্রশ্নটা ” অব্যক্তই ” রয়ে যাবে।

সম্পর্কিত পোস্ট

যদি পাশে থাকো

যদি পাশে থাকো

তাসফিয়া শারমিন ** আজকের সকালটা অন্য রকম। সাত সকালে আম্মু বকা দিলো। মানুষের ঘুম একটু দেরিতে ভাঙতেই পারে। তাই বলে এত রাগার কী আছে ?একেবারে যে দোষ আমারও তাও নয়। মানুষ ঘুম থেকে উঠে ফোনে বা দেওয়াল ঘড়িতে সময় দেখে। কিন্তু আমি উঠি জানালার পর্দা সরিয়ে বাইরের আলো দেখে।কে জানে...

কুড়িয়ে পাওয়া রত্ন

কুড়িয়ে পাওয়া রত্ন

অনন্যা অনু 'আমিনা বেগম' মেমোরিয়াল এতিমখানার গেট খুলে ভেতরে ঢুকতেই ওমরের বুকটা ধুক ধুক করতে শুরু করে। ওমর ধীর গতিতে ভেতরে প্রবেশ করে। চারদিকে তখন সবেমাত্র ভোরের আলো ফুটতে শুরু করেছে। ওমর গত রাতের ফ্লাইটে আমেরিকা থেকে এসেছে। সে এসেই সোজা আমিনা বেগম মেমোরিয়াল এতিমখানায়...

দাদাভাইকে চিঠি

দাদাভাইকে চিঠি

প্রিয় দাদাভাই, শুরুতে তোকে শরতের শিউলি ফুলের নরম নরম ভালোবাসা। কেমন আছিস দাদাভাই? জানি তুই ভালো নেই, তবুও দাঁতগুলো বের করে বলবি ভালো আছি রে পাগলী! দাদাভাই তুই কেন মিথ্যা ভালো থাকার কথা লেখিস প্রতিবার চিঠিতে? তুই কি মনে করিস আমি তোর মিথ্যা হাসি বুঝি না? তুই ভুলে গেছিস,...

২ Comments

  1. Parvej Mosharof

    এটা তো গল্প হয়ে গেলো। প্রবন্ধ আর গল্পে বেশ ফারাক রয়েছে। প্রবন্ধ লিখা হয় বিষয় নিয়ে ব্যক্তি নিয়ে নয়। আর লেখায় কিছু শব্দে ভুল আছে। ভুল সংশোধিত প্রবন্ধের অপেক্ষায় আছি।

    Reply
  2. Rifat

    নিস্পাপ — নিষ্পাপ
    খুব সুন্দর একটা গল্প লিখেছেন। কিন্তু এটা কোনো প্রবন্ধ হয়নি। এটা আপনাকে গল্প হিসেবে জমা দিতে হতো।
    শুভ কামনা।

    Reply

Leave a Reply to Parvej Mosharof Cancel reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *