নয়নের কথা
প্রকাশিত: ফেব্রুয়ারী ৮, ২০১৮
noyoner kotha
লেখকঃ vickycherry05

 3,432 বার দেখা হয়েছে

এই লেখক এর আরও লেখা পড়ুনঃ vickycherry05

গল্প লেখকঃ
জেলী আক্তার
উলিপুর ,কুড়িগ্রাম।
(ফেব্রুয়ারী’১৮)
…………..

আজ আমার জন্ম দিন, ১৮ বছরে পা দিলাম৷ শুনেছি এই বয়সকে নাকি অষ্টাদশী বলে। এই সময়ে প্রেমে পড়ার সম্ভবনা থাকে বেশি৷ তাই সতর্ক ছিলাম বেশ। তবে নয়ন নামের একটা ছেলের সাথে ফেসবুকে পরিচয় থেকে অনেক ভাল বন্ধুত্ব তৈরী হয়৷ ফেসবুকে নয়ন আমাকে অনেক বার প্রেমের প্রস্তাব করেছিলো, কিন্তু আমি একসেপ্ট করিনি৷ নয়ন বলেছিলো আমার জন্য জন্ম জন্মান্তর অপেক্ষা করবে৷ কিন্তু আমি তো নয়ন কে ভালবেসে ফেলেছি কথাটা বলতে পারিনি। কারণ আমার সঙ্গে জড়িয়ে নয়নের জীবনটা নষ্ট হোক চাইনি৷ দিনের পর দিন নয়ন আমার প্রতি অনেক দুর্বল হয়ে পড়ছে৷ সব ভেবে নয়নের সাথে আর তেমন কথা বলি না । ফেসবুক থেকে ব্লক করে দিই৷

কিন্তু সেদিন নয়ন মদ খেয়েছিলো সেই ছবি নয়নের বন্ধু ইনবক্স করেছিল, ভাবলাম আমার জন্য কারো জীবন নষ্ট হোক তা চাইনা । অনেক ভেবে ব্লক তুলে নিলাম৷
রাতে নয়ন ইউশ করলো ম্যাসেজ করে আমাকে৷ আর আমার সাথে দেখা করতে চাইল৷ আমি তাকে শর্ত দিলাম মাত্র পাঁচ মিনিটের জন্য দেখা হবে কোন কথা হবে না৷ জাষ্ট পাঁচ মিনিট আমি নয়নের সামনে দাড়িয়ে থাকবো। প্রথমে নয়ন মানতে চাইল না৷ বলল, তিন বছর পর তোমাকে ৫ মিনিট এর জন্য পাবো তাতে আবার কথা নেই কেন? আমি বললাম, এটাই শর্ত৷ যদি পারো তবে দেখা করবো৷ অগত্যা বাধ্য হয়ে নয়ন রাজি হল৷

পরদিন রেডি হয়ে পার্কে গেলাম গিয়ে দেখি নয়ন এক বদ্ধ উন্মাদের মত চেহারা করে ফেলেছে। কেন জানি নিজেকে সামলাতে পারিনি নয়ন কে জড়িয়ে ধরে কেঁদে ফেলেছি! নয়ন আলতো করে কপালে একটা চুমু দিয়ে বললো –
– পাগলি, কি হয়েছে, আমি আছি তো।
– উত্তর না দিয়ে চলে এসেছি।
রাতে নয়নের ফোন, কখনো ফোনে কথা বলি নি৷ বলবো বা কি করে কথা বলতে পারলে তো। ওর সাথে পরিচয় ফেসবুকে আর ঠাঁই করে নিয়েছি ওর বুকে।
এসএমএস করলাম ফেসবুকে আসো৷
– হুম, বলো কি বলবা?
– আমার সাথে কথা বলবা কি না? আজ তোমার কন্ঠে শুনবো।
– জিদ করো না ।
– তুমি বলবে কি না বলো৷ তুমি কি কথা বলতে পার না?
– প্লিজ, নয়ন, জিদ করো না৷
– না, আজ তোমাকে বলতেই হবে।
– নয়ন, তোমার কথাই সত্যি৷ কথা বলতে পারে না তোমার কথা। বাংলায় উনচল্লিশটি ব্যঞ্জনবর্ণ আর এগারটি স্বরবর্ণ, ইংরেজিতে ছাব্বিশ টি লেটার! তবুও কোনো কোন শব্দ মানুষের কন্ঠনালীতে উচ্চারিত হয় না। কারো কারো সবগুলাই অনুচ্চারিত থাকে৷ আমার কন্ঠ আজন্ম বাজেয়াপ্ত বোবা নামক শব্দের কাছে। তাই বলে মা বাবা অতি অক্ষেপে আমার নাম রেখেছে “কথা”৷ পারবে একটা বোবা মেয়েকে নিয়ে জীবন তরী পারি দিতে? পারবে না জানি।

এর পর থেকে সাত দিন নয়নের ফোন সুইচ অফ৷ ভেবেছিলাম হয়তো বোবা শব্দ নয়ন কে তাড়া করছে তাই হয়তো পালিয়ে যাওয়ার অভিনয়৷ এই সাত দিনে একটা বিয়ের কথা এসেছিলো৷ বোবা জানা সত্বেও ছেলে পক্ষ সবাই রাজী । ছেলেও পছন্দ পরিবারের । নয়ন কে অনেক ইনবক্স করেছিলাম ফেসবুকে, কোনো উত্তর আসেনি। দাওয়াতটা করে রেখেছিলাম ইনবক্স মেসেজে৷ রিপ্লাই দিল ধন্যবাদ, আর কোন আওয়াজ নাই। অবশেষে নয়নকে মুক্তি দিয়ে কবুল বলে নিলাম।
.
বাসর ঘর বলে মনে হচ্ছিল না! মনে হচ্ছিল কোনো বাগানে এসেছি৷ এত্ত বেশী ফুল ছিলো, মনে মনে ভাবছিলাম একটা বোবা মেয়ের জন্য এত্ত কিছু! অবাক হচ্ছিলাম ।
কিন্তু তার থেকে বেশী অবাক হই বর কে দেখে । এতো নয়ন!!
হাত ইশারা করে বলি তুমি?
নয়ন জল ছল ছল চোখে বলে হ্যাঁ আমি।
কেমন অবাক করে দিলাম? তুমি না বলেছিলে তোমাকে নিয়ে জীবন তরী সাজাতে পারবো না? আজ আমি বলি তোমার চোখে চোখ রেখে, চোখের ভাষা পড়ে পড়ে আমি শত জনম সংসার করতে পারবো কথা। তখন মনে হচ্ছিল বোবা হয়েও সত্যি অনেক সুখি নয়নের মত স্বামীর বুকে ঠাই পেয়ে।

সম্পর্কিত পোস্ট

অঘোষিত মায়া

অঘোষিত মায়া

বইয়ের প্রিভিউ ,, বই : অঘোষিত মায়া লেখক :মাহবুবা শাওলীন স্বপ্নিল . ১.প্রিয়জনের মায়ায় আটকানোর ক্ষমতা সবার থাকে না। ২.মানুষ কখনো প্রয়োজনীয় কথা অন্যদের জানাতে ভুল করে না। তবে অপ্রয়োজনীয় কথা মানুষ না জানাতে চাইলেও কীভাবে যেন কেউ না কেউ জেনে যায়। ৩. জগতে দুই ধরণের মানুষ...

আমার জামি

আমার জামি

জান্নাতুল না'ঈমা জীবনের খাতায় রোজ রোজ হাজারো গল্প জমা হয়। কিছু গল্প ব্যর্থতার,কিছু গল্প সফলতার। কিছু আনন্দের,কিছু বা হতাশার। গল্প যেমনই হোক,আমরা ইরেজার দিয়ে সেটা মুছে ফেলতে পারি না। চলার পথে ফ্ল্যাশব্যাক হয়। অতীতটা মুহূর্তেই জোনাই পরীর ডানার মতো জ্বলজ্বলিয়ে নাচতে...

ভাইয়া

ভাইয়া

ভাইয়া! আবেগের এক সিক্ত ছোঁয়া, ভালবাসার এক উদ্দীপনা, ভাইয়া! ভুলের মাঝে ভুল কে খোঁজা, আর ভালবাসার মাঝে ভাইকে খোঁজা, দুটোই এক কথা! ভুল তো ভুল ই তার মাঝে ভুল কে খোঁজা যেমন মূর্খতা বা বোকামি। ঠিক তেমনি ভালবাসার মাঝে ভাইকে খোজাও মূর্খতা! আমার কাছে ভাইয়া শব্দটাই ভালবাসার...

০ Comments

Submit a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *