গল্প লেখকঃ
মো: রাকিব হোসেন
চট্টগ্রাম , খাগড়াছড়ি।
(ফেব্রুয়ারী”‘১৮)
……………
SSC পরীক্ষার পর ভাল রেজাল্ট করে গ্রাম থেকে শহরে যথারীতি একটি সরকারি কলেজে ভর্তি হলাম। গ্রাম থেকে দূর হয়ার কারণে কলেজের এক হোস্টেলে থাকা ব্যবস্থা করলেন বাবা।
মধ্যবিত্ত ঘরে জন্ম আমার। বাবা ব্যবসা করে, তাই কোন অসুবিধা হল না।
আমার হোস্টেলের রুমে আমি (রাকিব),আকিব,আনোয়ার,আলিফ ও ইব্রাহিম এই পাঁচ জন থাকতাম। তিন জন ছিলাম সরকারি কলেজের আর দুজন ছিল ডিপ্লোমায়।
খুব ভাল কাটছিল হোস্টেলের শুরুর দিন গুলো। রুমমেটদের সাথে খুব ভাল ভাবে মিশে গেলাম।।
হাসি ঠাট্টা দিয়ে কাটছিল দিন গুলো। সবাই খুব ভাল, কিন্তু সবাই তো আর একরকম হয়না, ঠিক তেমনি ছিল আকিব।
সবার সাথে মিশলেও মনটা সব সময় যেন মন মরা হয়ে থাকত। কিন্তু কারণ টা কখনও জানা হয়নি, অবশ্য জানার কোন আগ্রহ ছিল না। কিন্তু সবার সাথে হাসি ঠাট্টা ঠিকই করত।
হোস্টেলে আসার পর আমরা সবাই আকিবের একটা জিনিস লক্ষ করতাম আর তা হল, আকিবের প্যান্টের পিছন পকেটে থাকা একটা পুরনো ম্যানিব্যাগ। যা নিয়ে আমরা প্রায় হাসি তামাসা করতাম। ওকে বললেও ও তেমন কিছু বলতোনা , শুধু বলতো এটা ওর খুবই প্রিয়। ভালবেসে ওর জন্য একটা ম্যানিব্যাগ কিনে রেখেছিলাম ভেবেছিলাম ওর বার্থ ডে গিফট করব,কিন্তু এই কথাটা কাউকে বলিনি এমন কি আকিব কেও না।।।।
গল্পের মূল কাহীনি…..
তারিখ টা হয়ত মনে নাই… কিন্তু দিনটা ছিল সোমবার…. সকাল ১০:০০ – ১১:০০ টা বাজই। প্রতিদিনের মতো গোসল করতে যেতাম আমরা সবাই। ওয়াস রুমে করতাম বলে এক জনের পর আরেক জন যেতাম। প্রতিদিনের মত ও গেল গোসল করতে। যে ম্যানিব্যাগ ও কখনওই হাতছাড়া করে না সেই ম্যানিব্যাগ আজ ও ভুল করে দেয়ালের উপর রেখে গেছে। আর এই সুযোগে আলিফ মজা করার জন্য আকিব এর ম্যানিব্যাগ লুকিয়ে রাখলো তাও আবার আকিবের প্যান্ট এর পকেটে। কিন্তু আকিব তা না জেনেই গোসল করে এসে খুজতে লাগল।
বুজতে পারল যে এটা আমাদেরই কাজ। তাই খুব খুজতে লাগল আমাদের কাছ থেকে।
আমি বললাম তোরটা ছিরে ফেলে দিয়েছি, আর তোর জন্য নতুন একটা কিনে আনছি, বলে নতুনটা বের করলাম। কিন্তু কথাটা শুনার পর আমি ওর মুখের দিকে তাকাতে পারলাম না। কি বলব ওর মুখ এতটাই কালো আর চোখ গুলো এত লাল আর চোখের নিচে পানি একদম ছলছল করছিল।
ওর এই অবস্থা দেখে ইব্রাহিম বলতে লাগলো, সামান্য একটা পুরাতন ম্যানিব্যাগ এর জন্য এমন করছিস। না জানি দামি কিছু হলে কি করতি।
এতক্ষণে চোখ দিয়ে পানি পরা শুরু করে দিয়েছে। আমরা সবাই প্রায় হতবাক।
ও কেঁদে কেঁদে বলতে লাগল, তোদের কাছে হয়তবা এই ম্যানিব্যাগটা সামান্য, পুরাতন কিন্তু তোরা এটা জানিস না যে এই ম্যানিব্যাগটা আমার কাছে কত বড়।
ওর কান্না দেখে আনোয়ার ওর পকেট থেকে ম্যানিব্যাগটা এনে দিল। আর ও ম্যানিব্যাগটা পেয়ে যেন হাতে আকাশের চাঁদটা হাতে পেল।
তারপর ও বলতে লাগল ওর ম্যানিব্যাগ কাহীনি।
দশম শ্রেণি মডেল টেস্ট পরীক্ষার আগে আকিবের মা মারা যায়। এটা শুনার পর আমার চোখ দিয়ে পানি চলে আসল। খুব খারাপ লাগছিল ওর কথা গুলো শোনার পর।
ও আবার বলতে লাগল, ওর মা মারা যাওয়ার কিছুদিন আগে একটা দশ টাকা সহ এই ম্যানিব্যাগটা ওর হাতে দিয়ে বলে, বাবা এই দশ টাকা সবসময় ম্যানিব্যাগে রাখবা, মনে রাখবা এই দশ টাকা দিয়া তুমি তোমার ইনকাম আজ থেকে শুরু করবা। যখন প্রয়োজন মনে করবা তখন শুধু এই দশ টাকাটা ভাঙ্গবা। আর তার কিছুদিন পরেই নাকি আকিবের মা মারা যায়। আর তারপর থেকে ওর মা ওর সাথে থাকে, বলছিল আকিব।
বলল এটা ওর মায়ের শেষ স্মৃতি, যেটা ও সারা জীবন ওর কাছে আগলে রাখতে চায়…..
কথা গুলা শুনার পর আমাদের পুরো রুমটা কিছুক্ষনের জন্য নি:স্তব্দ হয়ে যায়।
আনোয়ার আর আমি তো কান্নাই করছি, আলিফের চোখ দুটো ছলছল করছিল, ইব্রাহিম জড়িয়ে ধরলো আকিব কে।
কান্নায় নিস্তব্দ আমাদের রুমটা শুধু এক জন আরেক জনের মুখের দিকে তাকাচ্ছি।
এর পর থেকে কোনদিন আকিবকে কষ্ট দেওয়া তো দূরের কথা কষ্টের কথাও ওর সামনে বলতাম না।
আমাদের বাড়িতে নিয়ে যাওয়ার পর ও বলেছিল যে আমার মাকে ওর খুব ভাল লাগে তাই আমি যখন বাড়িতে যাই ওকে সঙ্গে করে নিয়ে যাই।।।
আর এখন ও খুব হাসি খুশি আর মজা আড্ডা সব কিছুতেই ওর মাতামাতি বেশি।
আর ইতিমধ্যেই ও আমার best friend
কলেজে সবাই প্রাই এটাই বলে আকিব আর রাকিব দুই ভাই…….
(আকিব+রাকিব)
সারাজীবন থাকুক আমাদের এই বন্ধুত্ব
০ Comments