মায়ের কাছে চিঠি
প্রকাশিত: জানুয়ারী ২২, ২০১৯
লেখকঃ augustmault0163

 3,073 বার দেখা হয়েছে

এই লেখক এর আরও লেখা পড়ুনঃ augustmault0163

লেখা:এস এম শাহাদত হোসেন।
.
.
প্রিয় মা,
কেমন আছো তুমি? আশা করি বেশ ভালো আছো। কিন্তু আমি ভালো নেই। ভালো নেই এজন্য যে, আমি বেশ কয়েক মাস ধরে জেলে আছি। তোমাদের সে কথা বলা হয়নি। আমার আইডির মেয়াদ শেষ হয়ে গেছিল। যার জন্য অনেকদিন প্রবাসে পুলিশের কাছ থেকে লুকিয়ে থেকেছি। কিন্তু কয়েক মাস আগে হঠাৎ তাদের হাতে পড়ে যাই। সেই থেকে জেলে আছি। আমার শাস্তি হয়েছে পাঁচ মাসের। আর মাত্র দুইটা মাস আছি এখানে। দুই মাস পর ফিরে আসবো তোমাদের কাছে। তোমাদের এই কথাটা বলা হয়নি। বললে কষ্ট পাবে বলে বলিনি। এই চিঠি টাও তোমাদের পাঠাবো না। চিঠি লিখছি নিজের মনকে শান্তি দেওয়ার জন্য। চিঠি লিখে মনকে হালকা করছি। ওরা একটা কলও করতে দিচ্ছে না। তাই বেশ কয়েক মাস ধরে চিঠি লিখছি। তোমাদের বেশ কয়েকটা চিঠির উত্তরও পেয়েছি আমি। বাবা কেমন আছে মা? বাবার অপারেশ কেমন হয়েছে? হয়তো ভালো হয়েছে। অপারেশনের জন্য রহিম সাহেবকে টাকা দেওয়ার জন্য বলেছিলাম। তোমাদের আর একটা কথা বলা হয়নি। আমি ঢাকা শহরে একটা বাড়ি নিয়েছি। ভেবেছিলাম তোমাদের দেশে এসে জানাব।
.
ছোট ভাইটা কেমন আছে? ওর পড়ালেখা কেমন চলছে? নিশ্চয় ভালো। কারণ আমার ভাইটা তো মেধাবী একজন ছেলে। তোমাদের জন্য খুব মন খারাপ হয় মা। জেলের বাইরে থাকলে ভিডিও কল করে তোমার চেহারাটা দেখে নিতাম। কিন্তু এরা তো মোবাইল নিয়ে নিছে অনেক আগেই। জানো মা রাতের অাঁধার যখন নেমে আসে, তখন তোমারা চেহারাটা ভেসে ওঠে। তোমাকে খুব দেখতে ইচ্ছা করছে মা। চোখ বন্ধ করলে তোমার হাসি মুখটা চোখের সামনে ভেসে ওঠে। তোমার হাসি মুখ দেখে আমারও বেশ ভালো লাগে। রহিম সাহেব হয়তো তোমাদের সব খরচের টাকা দিচ্ছেন। তিনি আমার ঘটনা জানেন। তাকে তোমাদের বলতে নিষেধ করেছি। আমি যে বাড়িটা কিনেছি তাতে উনাকে ম্যানেজার বানিয়েছি। তিনি গরীব মায়ের একজন সন্তান। পড়ালেখা করেও তাকে চাষ করতে হয়। তার খবর পেয়ে আমি তাকে এই চাকরিটা দিই। আমি ভালো করিনি মা?
.
মা, আমার সাথে কথা না বললে তো তোমার ঘুম হয় না। এখন তো আমি কথা বলছি না, তুমি কি ঘুমাতে পারছো মা? প্রতিদিন নিয়ম করে ঘুমাবে মা। না ঘুমালে যে শরীর খারাপ হবে। মা তোমার একটা ছবি আমার পকেটে থাকে সবসময়। কিন্তু এরা সেই ছবিটা পর্যন্ত নিয়ে নিছে। অনেক বললাম,
‘এটা আমার মায়ের ছবি। আমার মায়ের ছবি আমাকে দিয়ে দেন।’
কিন্তু মা এরা আমার কথা শুনেনি। মা তোমাদের কথা মন পড়লে খুব কষ্ট হয়। ভাগ্য ভালো বাড়িটা কিনেছিলাম তা নাহলে তোমাদের না খেয়ে থাকতে হতো। অপারেশনের অভাবে বাবাকে মারা যেতে হতো। মা, বাবা কি এখন সুস্থ আছেন? অবশ্য রহিম সাহেব বলেছিলেন, বাবা এখন সুস্থ আছেন। কিন্তু তার কথাতে মন ভরছে না। বাবাকে দেখতে ইচ্ছা করছে। মা এই চিঠিটা তোমরা কখনোই পাবে না। আমি জানি এই চিঠি পেলে তোমরা খুবই কষ্ট পাবে। তোমাদের কোনো কষ্ট আমি সহ্য করতে পারি না এখন। ছোট বেলায় অনেক কষ্ট দেখেছি। এখন যদি তোমাদের কোনো কষ্ট পেতে দেখি তাহলে নিজের উপর ঘৃণা হয় আমার। কেমন ছেলে হলাম? এখনো বাবা মায়ের কষ্ট দূর করতে পারিনি। মা এরা ঠিক মতো খাবারও দেয় না আমাকে। সারাক্ষণ মন খারাপ করে বসে থাকি আর মনে মনে তোমার ছবিটা কল্পনা করি। মা আমার চিঠির শেষ কথা, তুমি ভালো আছো তো মা?
যদি বলো ভালো আছি, তাহলে বুঝে নিব তুমি ভালো থাকার অভিনয় করছো। আমাকে ছাড়া তো তুমি কখনো ভালো থাকতে পারো না মা। মা তোমাকে ভালো রাখার জন্য আমি অবশ্যই আসবো। আর কখনো কোথায় যাবো না তোমাকে ছেড়ে।
.
মা এরা চলে এসেছে এখন বলবে,
‘তোমার চিঠি লেখার টাইম শেষ, চিঠি আমাকে দাও আমি পাঠিয়ে দিব।’
এদের কাছ থেকে অনেক কষ্টে কাগজ নিয়ে লিখছি মা। এই চিঠি ওদের হাতে দেওয়া যাবে না। ওদের হাতে দিলে চিঠি তোমার কাছে চলে যাবে। মা, তুমি ভালো থেকো। বাবাকে দেখে রাখবে। ছোটকেও দেখে রাখবে। দেশের অবস্থা মা ভালো না। ছোটর মতো ছেলেরা খারাপের দিকে এগিয়ে যাচ্ছে। আমি না আসা পর্যন্ত ওকে দেখে রাখবে। আল্লাহ্ হাফেজ।
.
ইতি,
তোমার বড় ছেলে,
সৈয়দ মোহাম্মদ শাহাদত হোসেন।

সম্পর্কিত পোস্ট

যদি পাশে থাকো

যদি পাশে থাকো

তাসফিয়া শারমিন ** আজকের সকালটা অন্য রকম। সাত সকালে আম্মু বকা দিলো। মানুষের ঘুম একটু দেরিতে ভাঙতেই পারে। তাই বলে এত রাগার কী আছে ?একেবারে যে দোষ আমারও তাও নয়। মানুষ ঘুম থেকে উঠে ফোনে বা দেওয়াল ঘড়িতে সময় দেখে। কিন্তু আমি উঠি জানালার পর্দা সরিয়ে বাইরের আলো দেখে।কে জানে...

কুড়িয়ে পাওয়া রত্ন

কুড়িয়ে পাওয়া রত্ন

অনন্যা অনু 'আমিনা বেগম' মেমোরিয়াল এতিমখানার গেট খুলে ভেতরে ঢুকতেই ওমরের বুকটা ধুক ধুক করতে শুরু করে। ওমর ধীর গতিতে ভেতরে প্রবেশ করে। চারদিকে তখন সবেমাত্র ভোরের আলো ফুটতে শুরু করেছে। ওমর গত রাতের ফ্লাইটে আমেরিকা থেকে এসেছে। সে এসেই সোজা আমিনা বেগম মেমোরিয়াল এতিমখানায়...

দাদাভাইকে চিঠি

দাদাভাইকে চিঠি

প্রিয় দাদাভাই, শুরুতে তোকে শরতের শিউলি ফুলের নরম নরম ভালোবাসা। কেমন আছিস দাদাভাই? জানি তুই ভালো নেই, তবুও দাঁতগুলো বের করে বলবি ভালো আছি রে পাগলী! দাদাভাই তুই কেন মিথ্যা ভালো থাকার কথা লেখিস প্রতিবার চিঠিতে? তুই কি মনে করিস আমি তোর মিথ্যা হাসি বুঝি না? তুই ভুলে গেছিস,...

৩ Comments

  1. Halima tus sadia

    এই চিঠি পড়ে চোখে পানি চলে আসলো।
    সত্যিই খারাপ লাগলো।

    বাবা মার জন্য পরান কাঁদে।তাই জেলে বসে চিঠি লিখে।
    বিষয়টা খুবই মর্মান্তিক।

    প্রবাসে সকল মায়ের সন্তানদের ভালো রেখো।

    শুভ কামনা রইলো।

    Reply
  2. আফরোজা আক্তার ইতি

    ভিন্নধরনের একটা চিঠি পড়লাম। আপনার চিঠির আইডিয়াটা অন্যধাঁচের এটা স্বীকার করে নিতেই হয়। জেলের ভেতর চিঠি! হয়ত বাস্তবক্ষেত্রেও এসব ঘটে। আইডি কার্ডের মেয়াদ শেষ হয়ে যাওয়ার পরও তা বেআইনিভাবে ব্যবহার করলে জেলে যেতে হয় আর সেখান থেকেই এক দুঃখী ছেলের তার মায়ের প্রতি লেখা এ চিঠি। ভালোই লাগল।
    এই চিঠি তার মা পড়লে সেও দুশ্চিন্তায় পড়ে যাবে তার চেয়ে বরং তাঁকে এ চিঠি না পাঠানোই শ্রেয়।
    অপারেশ- অপারেশন।
    তোমারা- তোমরা।
    শুভ কামনা অনেক প্রিয়।

    Reply
  3. Md Rahim Miah

    আইডির মেয়াদ-ভিসার মেয়াদ(বিদেশে আবার আইডির মেয়াদ হয় নাকি?)
    কয়েক মাস-কয়েকমাস
    চিঠি টাও-চিঠিটাও(টা, টি শব্দের সাথে বসে)
    অপারেশ-অপারেশন
    জানাব-জানাবো
    তোমারা-তোমার
    বাবা মায়ের-বাবা -মায়ের
    বাহ্ বেশ ভালো লিখেছেন। তবে চিঠি যেহেতু মায়ের কাছে পৌঁছাবেই না সেটা চিঠি হবে বা কীভাবে। বরং বলা যায় ডায়েরিতে স্মৃতি বন্ধি করা। এই ক্ষেত্রে এটাকে চিঠি বলা যায় না। তবে ভালোই লিখেছেন আর পড়েও অনেক অনেক ভালো লেগেছে। আসলে বেশিরভাগ প্রবাসীর জীবনই এইরকম ঘটনা ঘটে।ভুলের দিকে আগামীতে খেয়াল রাখবেন আশা করি আর অনেক শুভ কামনা রইল।

    Reply

Submit a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *