ইকো যাই চলো
প্রকাশিত: অক্টোবর ২২, ২০১৮
লেখকঃ augustmault0163

 2,242 বার দেখা হয়েছে

এই লেখক এর আরও লেখা পড়ুনঃ augustmault0163

মাস্ঊদ আহমাদ

মসজিদ থেকে বেরিয়েই ছানোয়ার চাচাকে বললাম, “ঈদ উপলক্ষে ঘুরতে যাবেন কোথাও?” তিনি বললেন, “আছে ইচ্ছে। চলো না, যমুনা ইকোপার্কে যাই!”
.
ঈদের দিনে অন্য দিনগুলোর মত ঘরে বসে থাকতে ভাল লাগে? এই দিন ব্যতিক্রমী কিছু করতে ও উপভোগ করতে ইচ্ছে করে। ফজরের নামাজের পর মসজিদ থেকে সোজা বাড়িতে না এসে হাঁটতে লাগলাম ছানোয়ার চাচা এবং আরো কয়েকজনের সাথে।
.
পরদিন দুপুর বারোটার কাছাকাছি সময়। উইকিপিডিয়া থেকে আতিয়া জামে মসজিদ সম্পর্কে তথ্য নিচ্ছিলাম। টাঙ্গাইল জেলায় অবস্থিত এই মসজিদটির ছবি আগের দশ টাকার নোটে ছিল। পড়ছিলাম, এটি নির্মাণ করা হয়েছে ১৬০৮-১৬০৯ সালে। ১৮৩৭ সালে  রওশন খাতুন চৌধুরানী, ১৯০৯ সালে আবুল আহমেদ খান গজনবী এর সংস্কার করেন। একজন ইসলাম প্রচারক, আদম শাহ কাশ্মীরি রহ.-এর কবরের পাশে এই মসজিদ নির্মাণ করেছিলেন সাঈদ খাঁ পন্নী।
.
পুরো আর্টিকেলটা পড়ে শেষ করতে পারিনি। জানালার কাছে বিছানায় ট্যাব রেখে পড়ছিলাম, হঠাৎ একটি হাত জানালায় উঠে এলো, পাঁচটা আঙুল দেখালো। বুঝলাম, আমাকে ডাকতে আসা হয়েছে এবং যে এসেছে, সে নিশ্চয় ছাব্বির।
.
ছানোয়ার চাচার ছোট ভাই ছাব্বির। আমি তাকে তুমি করে কথা বলি। দরজা খুলে ভেতরে আসতে বললাম। সে বলতে লাগল, তাড়াতাড়ি কর ভাই, এখন আর ভাবার সময় নাই।
.
আমি প্রতিবাদ করলাম, “এটা কেমন কথা? এখন যদি রওনা হই তাহলে যেতে যেতেই বিকেল তিনটা বাজবে। ঘুরব কখন, ফিরব কখন?” “কথা ব’লো না তো, তাড়াতাড়ি খালি বের হও। দেরি হওয়া নিয়ে আমাদের ঝগড়ার মত হয়ে গেছে।”
.
কাপড় পরতে যাচ্ছি তখনই ট্রেনের পুউউউউ…পুউউউউ….আওয়াজ কানে এল। ছাব্বির বলে উঠল, “ওই তো, ট্রেন আসছে, এসে গেল! তাড়াতাড়ি, তাড়াতাড়ি! আরে মিঞা, তাড়াতাড়ি কর না কেন!” ও হ্যাঁ, রেলওয়ে স্টেশনটা হলো আমাদের বাড়ির কাছেই।
.
ব্যাগ-ট্যাগ গুছিয়ে আগেই রেখেছিলাম, এখন শুধু ট্যাবলেটটা ওতে ভরে ছাব্বিরের সামনে রাখলাম, যাতে ও ব্যাগটা নিয়ে যেতে থাকে। ব্যাগ নিয়ে চলে গেল ছাব্বির। ভাবনা ছিল যাই আর না যাই, গুছিয়ে রাখতে দোষ নেই। খুশি লাগল, নয়তো এখন আমার গোষ্ঠী উদ্ধার চলত। ছাব্বির বলেছে, এখন সবাই শুধু আমার জন্যই অপেক্ষা করছে।
.
রাস্তায় বের হয়েই দৌড় লাগালাম। ছাব্বিরদের বাড়ির সামনে পথে দাঁড়িয়ে ছিল সবাই। তাদের কাছে পৌঁছাবার আগেই ছুটতে লাগল তারা। ছাব্বির বাদে। তার কাছ থেকে ব্যাগটা নিয়ে নিলাম।
.
ট্রেনে খুব ভিড়। ভিড়টা ঈদের। মানে, ঈদকে কেন্দ্র করে। ঢাকা থেকে শ্রমিক এবং চাকুরীজীবীরা শেকড়ের টানে বাসে-ট্রেনে চাপেন। ঈদের পাঁচ কি ছয় দিন আগে থেকে বড় ভিড়টা শুরু হয় ঢাকা ছেড়ে আসা ট্রেনগুলোয়, ঈদের পর আবার ঢাকায় ফিরতি ট্রেনে। অনেক মানুষ ঢাকাতেই ঈদের দিনটা কাটিয়ে ফিরেন। গাড়ি এবং ট্রেনের ভিড় তাদেরকে কম পায়। তবু আজকের ভিড়টাও তাদেরই। তাদেরও ছাদে আসতে হয়ই। আমি কখনো ছাদে চড়ে দেখিনি। কাউকে যখন ট্রেনের ছাদে দৌড়তে দেখি, তাতেই আমার পায়ে সুড়সুড়ি লাগে। এই বুঝি আমিই পড়ে যাব! দু’দিকে যে ঢাল, বাপরে!
.
স্টেশনে উঠে ধীরে এগোতে লাগলাম। মনেমনে বলছিলাম, এ ট্রেনে আর আমাদের চড়তে হবে না। যেতে
হবে গাড়িতে। মানুষজন ছাদে চড়ছে, ছাদ থেকে নামছে। আর ট্রেনের ভেতরটায় যেন মানুষকে ঠেলে ভরা হয়েছে।
.
ট্রেন পুউউউ… করে উঠল, মানে ছেড়ে দিচ্ছে। কী করি! এই সময় ট্রেনের মাথার দিক থেকে আমাকে ডাকল একজন। আমার সাথীরা ট্রেনের মাথায় উঠে পড়েছে। না, না, ট্রেনের মাথায় ওঠা মানে মাথার ওপরে, মানে, ছাদে না। ট্রেনের মাথায় বেলকনির মত রয়েছে। সিঁড়ি বেয়ে ওখানে উঠতে হয়। আমাকে দৌড়ে যেতে বলা হচ্ছে। কিন্তু আমি ভাবছি ছাব্বিরের কথা। ছাব্বির এমন সময় কী কারণে যেন বাড়িতে গিয়েছে, তাকে রেখে তো আমি যেতে পারি না! এবার আমাকে ডাকলেন ছানোয়ার চাচা। এবার মনে হলো তার ছোট ভাইয়ের জন্য আমার অপেক্ষা করা উচিত না। এই ভেবে দ্রুত এগিয়ে গিয়ে সিঁড়ি বেয়ে চাপা বেলকনিতে উঠে পড়লাম। রেলিং ধরে দাঁড়ালাম। দেখলাম ছাব্বির আসছে। আসছে ধীরেধীরে-ধীরেসুস্থে। ট্রেনের চাকা-আঁটকানো ভারি লোহায় পা রেখে ছাব্বির আমাদের সামনের দিকে উঠে গেলো।
.
ভাবিনি যে ট্রেনে যাব। গাড়িতে যাওয়ার সিদ্ধান্ত হয়েছিল ঈদের দিন। ট্রেন বন্ধ বলে জেনেছিলাম। শুনেছিলাম কেবল একটি ট্রেন ঈদের পরদিন চালু থাকবে। এমন সময় যে ঢাকার দিক থেকে ট্রেন আসবে কে-বা ধারণা করেছিল! ট্রেনের আওয়াজ পেয়ে বুঝেছি ট্রেন আসছে। ট্রেন ধরতে দৌড়েছি। উঠেছি ট্রেনে।
.
আমরা ছয়জন ছেলে, চলেছি যমুনার ওপাড়ে ইকো পার্ক দেখতে। ছালাহ্উদ্দীন, ছাব্বির, ছানোয়ার
চাচা, আশিক, সিয়াম এবং আমি। পেছনে ট্রেনের ইঞ্জিন। হেলান দিই তো তাপ লাগে পিঠে। ওদিকে
কানের কাছে এত্ত আওয়াজ হচ্ছে ইঞ্জিনের, তা সয়ে নিতে বেশ সময় লাগল। ট্রেনের মাথা, এখানে এভাবে চড়া, এটা আমার সম্পূর্ণ নূতন অভিজ্ঞতা।
.
ছালাহ্উদ্দীন হাত নাড়ছিল। তাকিয়ে দেখি, রেলওয়ে স্টেশনের সীমানা-দেয়ালে দাঁড়িয়ে তিন-চারজন মেয়েও একই তালে হাত নাড়ছে; বিদায় জানানো হচ্ছে? ছালাহ্উদ্দীনের দিকে তাকালাম, তখন ও বললো, “দেখো ভাই, আমি তো শিপনের ভাইকে হাত নাড়ছিলাম, ওরা হয়তো ভেবেছে ওদেরকেই হাত নাড়ছি, আমার কী দোষ!” কী জানি, শিপনের ছোট্ট ভাইটি তো আমাদের সাথে এসেছিল এগিয়ে দিতে, তা সত্যি।
.
প্রকৃতিকে নতুন করে অনুভব করছি। প্রকৃতির সৌন্দর্য নতুন করে উপভোগ করছি। কী যে ভালো লাগছে!
শরীরে লাগছে হিমেল বাতাস, মন-প্রাণ জুড়িয়ে যাচ্ছে! এখানে বাতাসের তীব্রতা আছে, তীব্রতা ট্রেনের গতির কারণে। ট্রেনের তো ট্রাফিকজ্যাম নেই, সামনে থেকে কোন ট্রেন আসতে পারে অথবা সামনে চলা কোন ট্রেনের পেছনের বগিতে গিয়ে টেক্কা লাগতে পারে, এরকম ভয় নেই, তাই ট্রেন চলে পূর্ণ গতিতে। এদিকে আবার সামনে থেকে গুলির মতো লাগছিল বৃষ্টির ছাঁট। গুঁড়িগুঁড়ি বৃষ্টি হচ্ছে। আল্লাহ জানেন! বৃষ্টি যদি ভালোমতো নামে তাহলে আমাদের ঘুরাঘুরির শখ এখানেই মাটি, পানি হতে পারে। অবশ্য সালাহ্উদ্দীন বলছে এতেই কি না মজা, তাছাড়া আমার কাঁধের ব্যাগে আমার দ্বিতীয় এক সেট কাপড় আছে। সতর্কতাবশত ব্যাগে ভরেছি। প্রয়োজনীয় বোধ করা কিছু জিনিস সাথে নিয়ে নিতে হয়। এক বোতল পানিও নেবার প্রয়োজন ছিল, নিয়েছিলাম না। ঘুরে-বেড়াবার সময় বড্ড টেষ্টা পেয়েছিল। এজন্য ছাব্বিরকে একহাত নিয়েছিলাম, সে কেন পানি নেয়নি সঙ্গে করে। অবশ্য রাগ ছিল মেকি। ভুলটা আশা করি সামনে কখনো হবে না।
.
যমুনা সেতু পার হয়ে আমাদেরকে অনেক দূরে চলে যেতে হয়েছিল। সেতু পূর্ব স্টেশনে ট্রেন থেকে নেমে গাড়িতে যমুনা পার হতে হয়েছিল। কারণ সেতু যেখানে শেষ হয়েছে সেখান থেকেই ইকো পার্কের শুরু। যদি ট্রেনে সেতু পার হই তাহলে অনেক দূরের স্টেশনে গিয়ে ট্রেন থেকে নামতে হবে। ঠিক সেতু পরবর্তী স্টেশনে এই ট্রেন না থামার কথা ছিল।
.
গাড়ির জন্য অনেকক্ষণ অপেক্ষা করতে হয়েছিল। কোন খালি গাড়িই আসছিল না। যা আসছিল সেগুলোতে ছিল উপচেপড়া ভিড়। অপেক্ষা করতে করতে শেষে যখন একটি খালিমত গাড়ি আসল, সেটি থামার পর গাড়িতে ওঠার জন্য ভিড় লেগে গেল। আমরা আর গাড়ির ভেতরে চড়তে পারলাম না। ছাদে চড়তে হলো। এটিই জীবনে প্রথম গাড়ির ছাদে চড়া। উঠতে তেমন অসুবিধা হয়েছিল না। কিন্তু নামতে গিয়ে বড় বিপাকে পড়েছিলাম। ভয়-ভয় করছিল। এই বুঝি পড়ে যাই, এই বুঝি পড়ে যাই। অবশ্যি পড়িনি। সেতু পার হয়ে গাড়ি-রাস্তার পাশের সেতু-পরবর্তী রেলওয়ে স্টেশনের সীমানা পার হয়ে বাস গিয়ে থেমেছিল সেই রেলওয়ে স্টেশনের কাছে যেখানে আমাদের সেই ট্রেনটা এসে থেমেছিল। আমরা তখন আফসোস করেছিলাম। খামাখা ঝামেলা পোহাতে হলো। আমাদের এক সাথী বেশ বকাবকি করেছিল বাসের হেল্পার-ড্রাইভারের উদ্দেশ্যে। নামিয়ে দিতে বলা হলেও নামিয়ে দেওয়া হয়নি, বারবার গাড়ি থামানোর জন্য বলা হলেও সে উদ্যোগ নেওয়া হয়নি।
.
এরপরেও যেতে যেতে তিনটা কিন্তু বাজেনি। স্টেশন মসজিদে জামাতের সাথে যোহরের নামায আদায় করেছিলাম। নামাযের পর ইকোপার্কের দিকে রওনা হয়েছিলাম মোটরচালিত ভ্যানে।
.
২.
.
Ecological Park এর সংক্ষেপ হলো Eco park। ইকো পার্ক, প্রাকৃতিক উদ্যান। দেশের বহুমূল্য বনজ
সম্পদকে সংরক্ষণের লক্ষ্য থেকেই এধরনের পার্ক গড়ে তোলা হয়েছে। বিভিন্ন বন্য প্রাণীও এই পার্কগুলোয় সংরক্ষিত থাকে। ইকো পার্কের মতো আমাদের দেশে আরো গড়ে তোলা হয়েছে জাতীয় উদ্যান, বন্যপ্রাণী অভয়ারণ্য, বোটানিক্যাল গার্ডেন, সাফারি পার্ক, গেম রিজার্ভ ইত্যাদি।
.
চট্টগ্রাম, সিলেট, মৌলভীবাজার—এই তিনটি জেলায় রয়েছে দুইটি করে ছয়টি ইকোপার্ক। ইকোপার্ক আরো তিনটি রয়েছে পটুয়াখালী এবং বরগুনা, শেরপুর, সিরাজগঞ্জ। পটুয়াখালী জেলার কলাপাড়া এবং বরগুনার আমতলী উপজেলায় কুয়াকাটা ইকোপার্কটির বিস্তৃত। শেরপুর রয়েছে মধুটিলা আর বঙ্গবন্ধু যমুনা ইকোপার্ক সিরাজগঞ্জ জেলায়। বাংলাদেশে সবচে’ বড় ঝর্ণা ‘মাধবকুণ্ড জলপ্রপাত’, ‘পরীকুণ্ড’ রয়েছে মৌলভীবাজারের মাধবকুণ্ড ইকোপার্কেই। মৌলভীবাজারের আরেকটি ইকোপার্ক হলো বড়শীজোড়া। জাফলং গ্রীন, টিলাগড় ইকোপার্ক—এই দু’টি ইকোপার্ক সিলেটে। বাকী চট্টগ্রামের দু’টি ইকোপার্ক হলো সীতাকুণ্ড ইকো এবং বাঁশখালী। ১৯৯৯-তে স্থাপন করা হয়েছে বাংলাদেশের সর্বপ্রথম ইকো সীতাকুণ্ড পার্ক। যমুনা বঙ্গবন্ধু ইকোপার্কটি ২০০৭-এ স্থাপিত। এ পার্কের বিস্তার ১২৪ একর বনভূমি এলাকাজুড়ে। এরকম একটি পার্ক দেখতে এসেছি, অথচ হাতে নিয়ে এসেছি মাত্র কয়েক ঘন্টা। এরচে’ বোকামি আর হয় না। অন্ততপক্ষে এসব পার্ক ঘুরতে আসতে প্রয়োজন দুইদিন। যদি সপ্তাহখানেক কাটিয়ে দেওয়া যায় তাহলে ইকোপার্ক ঘুরে বেড়াবার স্বাদ পূর্ণতা পাবে।
.
পার্কের দিকে দিকনির্দেশ করা সাইনবোর্ডটির কাছে এসে মানুষের ঢল দেখতে পেয়েছি। এখানেই
বাস, ঘুরতে আসা মানুষদের অন্যসব গাড়ি রাখা হয়। পার্ক পর্যন্ত চলে যেতে হয় হেঁটেহেঁটে। কোথায় পার্ক, পার্কের গেট, তখনো তা ঠাওর করতে পারিনি। শুধু দেখছি দলের পর দল হাঁটছে মানুষ। এখানে দু’দিকে দু’টো সড়ক চলে গেছে। দু’টোর একটাতেও কোন গাড়ি চলতে দেখিনি। এ দুটি সড়কের মাঝ দিয়ে ট্রেনের লাইন। ট্রেনের লাইনটি পার হয়ে যে পথ, সে পথেই সবাই পায়ে চলে এগিয়ে যাচ্ছে। ভ্যানের চালক বললেন, আমাদেরকে আর যেতে দেওয়া হয় না। অগত্যা আমাদেরও হাঁটতে হলো। রেললাইন পার হলাম। মানুষের ঢলের মাঝে মিশে গেলাম। বড় এক মিছিলের মত এগিয়ে চলতে থাকলাম।
.
সবুজ আমার ভাল লাগে। চারপাশের সবুজের ভেতর বাস করতে ইচ্ছে করে। এখানে পথের বামে বড় বড় গাছ, তারের বেড়ার ওপাশে। পথের ডানে জঙ্গল, জঙ্গল ছাড়িয়ে রয়েছে পরিকল্পিত বন। ইকোপার্কের গেট কত দূরে, এখনো ধারণা করতে পারিনি। হাঁটছি আর হাঁটছি। আমাদের সাথে, সামনে ও পেছনে হাঁটছে আরো আমাদের বয়েসী ছেলে ও মেয়েরা। সবাই হাঁটছি, কথা বলছি। কখন ফুরোয় পথ অপেক্ষা করছি।
.
গানবাজনার আওয়াজ পাচ্ছি, কিন্তু কতদূর থেকে জানা নেই। এই গম্ভীর প্রকৃতির ভাবগাম্ভীর্য ক্ষুণ্ণ হচ্ছে ঠিক। কোথায় পাখির কলতান শুনবো, ঝিঁঝিপোকার ডাক শুনবো, শুনতে হচ্ছে ধামাকা। কোথায় প্রকৃতিকে অনুভব করব, উপভোগ করব, না, তা হবে না। কোথায় কোন পরিবেশে কীভাবে শান্তি পাওয়া যায়, কীভাবে ভালোলাগা অনুভব করা যায় তার সঠিক ধারণার অবলুপ্তি ঘটেছে তাদের হৃদয় থেকে যারা এখানে এসেও এমন উচ্চতর আওয়াজে গানবাজনা বাজাতে পারে।
.
মনে হলো দীর্ঘ সময় পর পার্কের গেট দেখতে পেলাম। গেটের পাশের খালি জায়গাতে রান্নাবান্না চলছে। কেউ মরিচ বাঁচছে, কেউ পেঁয়াজ-রসুন, কেউ ছিলছে আলু। সবাই ছেলে। তারা পিকনিকে এসেছে। বক্সগুলি বাজছে এখানেই।
.
গেট পেরিয়ে আমরা দেখলাম দুই দিকে পথ চলে গেছে। একটি বড় মানচিত্র টাঙিয়ে রাখা হয়েছে দেখতে পেলাম। মানচিত্র আমি ভাল বুঝি। এগিয়ে গেলাম পুরো ইকোপার্কের পথঘাটের ধারণা নেওয়ার জন্য। তারপর সোজা পথে আমরা চললাম। কিছুদূর যাওয়ার পর কয়েকটা বিরাট খাঁচা দেখলাম। বানরের খাঁচা। ওখানে গিয়ে একটা বোর্ডে লেখা দেখতে পেয়েছিলাম যেন বানরগুলোকে বিরক্ত করা না হয়। কিন্তু তা-ই করা হচ্ছিল। ওগুলোকে বিরক্ত করেই মজা পাচ্ছিল ছেলেরা। আমরা হাঁটতে থাকলাম।
.
বাম পাশে ঘনবন। বানরগুলোকে এই বনে ছেড়ে রাখা হলে তারা আনন্দ পেত। কিন্তু তখন বানর দেখে আমাদের আনন্দ পেতে হলে এখানে থাকা প্রয়োজন হত অনেক অনেক বানর। অবশ্য নিয়মিত যদি পথের পাশে তাদের জন্য খাবার দেওয়া হত তাহলে সেগুলো অল্পকতক হলেও পথচারীরা দেখতে পেত। আমি জানি না আমাদের আনন্দ দেওয়ার জন্য অন্য প্রাণীদের আটকে রাখা কতটা ভাল।
.
আমাদের পথের শেষ দেখতে পাচ্ছি না। একই দৃশ্য দেখতে দেখতে এগিয়ে চলেছি। কতক্ষণ হাঁটার পর রাস্তা দেখলাম বামে মোড় নিয়েছে। ডানে বড় ফাঁকের নেটের বেড়া। তার ওপার বয়ে চলেছে নদী। এই নদী যমুনা। ওই যে যমুনা সেতু, না, বঙ্গবন্ধু সেতু দেখা যাচ্ছে।…

সম্পর্কিত পোস্ট

যদি পাশে থাকো

যদি পাশে থাকো

তাসফিয়া শারমিন ** আজকের সকালটা অন্য রকম। সাত সকালে আম্মু বকা দিলো। মানুষের ঘুম একটু দেরিতে ভাঙতেই পারে। তাই বলে এত রাগার কী আছে ?একেবারে যে দোষ আমারও তাও নয়। মানুষ ঘুম থেকে উঠে ফোনে বা দেওয়াল ঘড়িতে সময় দেখে। কিন্তু আমি উঠি জানালার পর্দা সরিয়ে বাইরের আলো দেখে।কে জানে...

কুড়িয়ে পাওয়া রত্ন

কুড়িয়ে পাওয়া রত্ন

অনন্যা অনু 'আমিনা বেগম' মেমোরিয়াল এতিমখানার গেট খুলে ভেতরে ঢুকতেই ওমরের বুকটা ধুক ধুক করতে শুরু করে। ওমর ধীর গতিতে ভেতরে প্রবেশ করে। চারদিকে তখন সবেমাত্র ভোরের আলো ফুটতে শুরু করেছে। ওমর গত রাতের ফ্লাইটে আমেরিকা থেকে এসেছে। সে এসেই সোজা আমিনা বেগম মেমোরিয়াল এতিমখানায়...

দাদাভাইকে চিঠি

দাদাভাইকে চিঠি

প্রিয় দাদাভাই, শুরুতে তোকে শরতের শিউলি ফুলের নরম নরম ভালোবাসা। কেমন আছিস দাদাভাই? জানি তুই ভালো নেই, তবুও দাঁতগুলো বের করে বলবি ভালো আছি রে পাগলী! দাদাভাই তুই কেন মিথ্যা ভালো থাকার কথা লেখিস প্রতিবার চিঠিতে? তুই কি মনে করিস আমি তোর মিথ্যা হাসি বুঝি না? তুই ভুলে গেছিস,...

৪ Comments

  1. Tasnim Rime

    তথ্যে ভুল অাছে, কুয়াকাটা ইকোপার্ক পটুয়াখালী জেলার অন্তর্গত। বরগুনার অামতলীতে কোন ইকোপার্ক নাই এছাড়া অপনার লেখায় যে সব তথ্য উল্লেখ করছেন তার তথ্যসূত্রের উল্লেখ করা উচিত ছিল।

    শুভ কামনা।

    Reply
  2. আফরোজা আক্তার ইতি

    বাহ! অনেক সুন্দর একটা ভ্রমণকাহিনী পড়লাম। প্রথমেই করতে হয় লেখকের প্রশংসা। এতোবড় একটা লেখা পড়লাম অথচ তেমন কোনো ভুল ববানান নজরে পড়ে নি। লেখা খুবই পরিপাটি এবং যত্নের সাথে লেখা তা বুঝাই যায়। পাঠককে আকৃষ্ট করার কৌশল লেখক খুব ভালো করেই জানেন।
    ভ্রমণকাহিনী টা পড়ে খুবই ভালো লাগলো। কল্পনায় হারিয়ে যাচ্ছিলাম। লেখার ধাঁচ, বর্ণনাভঙ্গি ও উপস্থাপন খুবই সুন্দর। তবে প্রথনে ভূমিকাটা একটু বেশিই বড়ো হয়ে গেছে বলে মনে হয়।
    বানানে দুইটা ভুল আছে।
    নিয়েছিলাম না- নেই নি।
    টেষ্টা- তেষ্টা।
    শুভ কামনা।

    Reply
  3. আফরোজা আক্তার ইতি

    বাহ! অনেক সুন্দর একটা ভ্রমণকাহিনী পড়লাম। প্রথমেই করতে হয় লেখকের প্রশংসা। এতোবড় একটা লেখা পড়লাম অথচ তেমন কোনো ভুল বানান নজরে পড়ে নি। লেখা খুবই পরিপাটি এবং যত্নের সাথে লেখা তা বুঝাই যায়। পাঠককে আকৃষ্ট করার কৌশল লেখক খুব ভালো করেই জানেন।
    ভ্রমণকাহিনী টা পড়ে খুবই ভালো লাগলো। কল্পনায় হারিয়ে যাচ্ছিলাম। লেখার ধাঁচ, বর্ণনাভঙ্গি ও উপস্থাপন খুবই সুন্দর। তবে প্রথনে ভূমিকাটা একটু বেশিই বড়ো হয়ে গেছে বলে মনে হয়।
    বানানে দুইটা ভুল আছে।
    নিয়েছিলাম না- নেই নি।
    টেষ্টা- তেষ্টা।
    শুভ কামনা।

    Reply
  4. Rifat

    অনেক ভালো লাগলো। ভ্রমণ কাহিনীটি পড়ে মনে তৃপ্তি পেলাম। খুব গোছালোভাবে কাহিনীটি উপস্থাপন করেছেন। বলতেই হবে আপনার লেখনী শক্তি অনেক ভালো।
    শুভ কামনা।

    Reply

Submit a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *