গল্প লেখকঃ
মোঃ রোবেল পারভেজ
(মার্চ – ২০১৮)
…………………
সে অনেক কাল আগের কথা। ছবির মতো সুন্দর একটা দেশ ছিলো এক সাগর ঘেষে। দেশছিলো সবুজে সবুজময়। চারিদিকে জালের মতো ছড়ানো ছিটানো ছিলো নদী। ছোট নদী,বড় নদী,সুন্দর নদী,শিহরণ তুলা নদী আর ছিলো কিছু ভয়ংকর নদী। এরই একটা নদীর পাশে ছিলো বিশাল একটা বন। যে বনে থাকতো বাঘ, সিংহ,হাতি, হরিণ, বানর, বন গরু আরো কত কত প্রাণি। কী তাদের আকার! কী বিচিত্র তাদের নাম। আর ছিলো হাজার হাজার পাখি।সারাদিন ভরে কিচিরমিচির করতো তারা।
সেই দেশের মানুষগুলো ছিলো বড্ড ভালো আর বোকা। সেই দেশে একমন্ত্রী ছিলেন।লম্বা, চিকন, মাথায় টাক পড়া। খুব সুন্দর করে কথা বলতেন। মিথ্যেকথা এতো সুন্দর করে বলতেন বোকা মানুষগুলো খুব সহজেই বিশ্বাস করতো। মন্ত্রী সাহেবের আবার অস্বীকার করা আর মিথ্যা বলার বাতিক ছিলো। তিনি যদি নিজের দোষ অস্বীকার না করতেন তাহলে তার অম্বল হতো। কোনো বদ্যির বড়িতেই অম্বল কমতোনা। তখন উনাকে মিথ্যে বলতে হতো।কী কষ্ট বেচারা মন্ত্রীর! অম্বল থেকে বাঁচতে সবসময় মিথ্যে বলতে হয়।
রাজা মশাই তার এই মন্ত্রীটাকে খুব পছন্দ করতেন। দেশের মানুষকে শিক্ষিত করে তুলার দায়িত্ব দিলেন এই মন্ত্রীমশাইকে। মন্ত্রীমশাই মহা তোড়জোড়ে নিজের কাজে লেগে গেলেন। দেশের সব মানুষকেই শিক্ষিত করতে হবে। তাদেরকে উচ্চ শিক্ষায় শিক্ষিত করে আশেপাশের রাজ্যকে দেখাতে হবে আমরা কত কি করতে পারে। অন্য মন্ত্রীদেরও দেখানোর ব্যাপার আছে নিজের ক্ষমতা। মহা ব্যস্ততা নিয়ে গড়ে তুললেন অনেক স্কুল। রাজা মশাইয়ের রাজকোষ অনেকটাই খালি করে ফেললেন এতে। আবার সুযোগ করে দিলেন অন্যদের স্কুল করার। ব্যাঙের ছাতার মতো স্কুল গজালো সারাদেশে। রাজ্য ভরে গেলো স্কুল,কলেজ আর বিশ্ববিদ্যালয়ে। ছেলেমেয়েদের খেলাধুলা হয়ে গেলো বন্ধ। কেউ আর এখন শিশু না। কারো বাল্যকাল বা কৈশোর বলে কিছু রইলো না। রইলো শুধু ব্যাগ ভর্তি বই আর ক্লাসে ফার্স্ট হওয়ার চাপ।
প্রাইমারি স্কুল, কিন্ডারগার্টেন ছাত্রছাত্রীতে ভরে গেলো। এতো ছাত্র পড়ানোর শিক্ষক কোথায়? তাই মন্ত্রীমশাই বড় বুদ্ধি করে কোনো রকম পড়তে পারা লোকজন দিয়ে পড়ানো শুরু করলেন বাচ্চাদের। এমন শিক্ষকের কাছে পড়ে বাচ্চাদের শিক্ষার্থী হওয়া হয়ে উঠলো না। আর খেলার সুযোগ না পেয়ে তাদের ওজন বাড়তে থাকলো।রাজ্য ভরে গেলো মোটা মোটা ছেলে মেয়েতে। শরীরের সাথে সাথে তাদের মাথাও মোটা হতে শুরু করলো। মন্ত্রীমশাই জানালেন মাথা খোলতে খেতে হবে হরলিক্স, ডানো, নিডো। বাচ্চারা দুধ, ডিম, কলা, শাকসবজি খাওয়া বন্ধ করে দিয়ে এসব খেতে শুরু করলো। কিন্তু মাথা আর খোললো না।
এবার তাহলে উপায়? মাথা ত খোলতে হবে। মন্ত্রীমশাই আবিষ্কার করলেন সৃজনশীল পদ্ধতি। যাতে ছাত্রছাত্রীরা সৃজনশীল হয়। ছাত্রছাত্রীদের সৃজনশীল করতে যে মানের শিক্ষক দরকার তা ত নাই। তাই ছেলেমেয়ে গুলো আরো অথর্ব হয়ে পড়লো। পরীক্ষায় তারা খারাপ করতে লাগলো। ছেলেমেয়েদের পরীক্ষায় ভালো করানোর জন্য বাবা-মায়েরা নিজেদের জমানো টাকা স্যারদের পিছনে ব্যয় করতে লাগলেন। কাজ বাদ দিয়ে ছেলেমেয়েদের কাজ শুধু পড়া ।তাও তারা ভালো করতে না পারায় হতাশ হলেন মন্ত্রীমশাই।
নীচের স্কুলগুলো ছাত্রছাত্রীতে ভরা থাকলেও কলেজ,বিশ্ববিদ্যালয় ত ছাত্র কম। তাহলে উপায় নিচের ক্লাস থেকে বেশি করে ছাত্রছাত্রী পাশ করানো। প্রশ্ন সহজ করেও তা সম্ভব না হওয়াই শুরু হলো চুরির সৃজনশীলতা। প্রশ্ন ফাস হতে লাগলো প্রতি পরীক্ষায়। ছেলেমেয়েরাও ছাত্রছাত্রী হয়ে উঠলো। তারা ভালো ফলাফল করতে থাকলো সব পরীক্ষায়। কলেজ, বিশ্ববিদ্যালয় ভরে গেলো ছাত্রছাত্রীতে। মন্ত্রীমশায় ফলাফলে খুশি হয়ে বাহবা দিতে লাগলেন। কিন্তু কিছু কুচক্রী লোক বলতে লাগলো রাজ্যে শিক্ষার মান ভালোনা। প্রশ্ন ফাস হচ্ছে। মন্ত্রী সবই অস্বীকার করে গেলেন চোখ বন্ধ করে। অস্বীকার না করলে যদি আবার অম্বল হয় এই ভয়ে। কুচক্রীরা কিন্তু থামলোনা। প্রশ্নফাসের কথা বলতেই লাগলো। রাজ্যের বোকা মানুষগুলোও কুচক্রীদের সাথে সুর মিলালো। তারাও বিশ্বাস করলো প্রশ্নফাস হচ্ছে। রাজ্যে শিক্ষা বাণিজ্য হচ্ছে। শিক্ষার মান বাড়ছে না। রাজ্যে শিক্ষিত মানুষ না বরং কিছু শিক্ষিত অপদার্থ তৈরি হচ্ছে। রাজ্যের বোকা মানুষগুলো কুচক্রীদেরকেই আপন করে নিয়ে মন্ত্রীমশায়ের শাস্তির প্রার্থনা জানায় রাজামশাইয়ের কাছে। সব শোনে রাজামশায় মন্ত্রীকে নির্বাসন দেন। মানুষেরা রাজার জয়ধ্বনি দিলো,”রাজা মশাইয়ের জয় হোক।জয় রাজা মশাইয়ের জয়।”
০ Comments