দস্যু ছেলের মা
প্রকাশিত: জুলাই ২১, ২০১৮
লেখকঃ augustmault0163

 2,617 বার দেখা হয়েছে

এই লেখক এর আরও লেখা পড়ুনঃ augustmault0163

লেখক-তাসনীম মাহমুদ
১.
ভোর ৬ টার ট্রেন স্টেশনে আসার পূর্বেই কাশেম স্টেশনে পৌঁছে তার আমড়ার ঝুড়ি নিয়ে।এই কাজে তাকে সবসময় সহযোগিতা করে তার স্ত্রী জমীলা।কাকডাকা ভোরে ঘুম থেকে উঠে এক ঝুড়ি আমড়া ধুয়ে ছিলে ঝুড়িতে সাজাতে হয়।সেই সাথে ছোট ছোট কাগজ,বিট লবন,সরিষা বাটা আর মরিচের গুড়া বোতলে ভরে দিতে হয়।কাশেম বাড়ি থেকে বের হয়ে ফিরে আসে রাত ১০টায়।তার ছেলে করীম তখন ঘুমে থাকে।ছেলের সাথে তার খুব একটা দেখা হয় না।ঘরে ফেরার পর ছেলের কথা মনে পড়ে।’করীমের মা’ ডাকে কাশেম।জমীলা তখন সরিষা বাটায় ব্যস্ত।’আমি করীমের মা না’।ঝাঁঝিয়ে উওর দেয় জমীলা।জমীলা তুমিই তো এহন করীমের মা।’তোমার এমন দস্যু পোলার মা হওনের কোনো সাধ নাই আমার’।কি কও তুমি এগুলা। আমার পোলাডার মা মরনের পর তোমারে ওর মা বানানোর জন্যই তো বিয়া কইরা ঘরে আনছি।ও একটু দুরন্ত ,তুমি রাগ কইরোনা।ছেলে মানুষ,একদিন ঠিক হইয়া যাইবো।কাশেম স্ত্রীকে বোঝায়।’এমন দস্যু পোলারে আমার দরকার নাই’।
২.
চিরাচরিত সৎমায়ের ভূমিকায় জমীলা জাজ্বল্যমান।আট বছরের করীম ঠিকই বুঝতে পারে নতুন মা তাকে একদম সহ্য করতে পারেনা।তাই যতোটা সম্ভব তার চোখের আড়ালে থাকে।সারা দিন বাইরে খেলাধুলা করে কাটায়।তার একমাএ খেলার সাথি লোহার চাকতি।চাকতি নিয়ে কখনো দৌড়ে কখনো হেঁটে হেঁটে সে দূর থেকে বহু দূরে চলে যায় একাকীঅনিচ্ছার সত্ত্বে বাড়ি ফিরতে হয়।বাড়িতে থাকলে উঠতে বসতে সৎমা দোষ খোঁজে।বাবার কাছে নালিশ দেয়।অসহ্য হয়ে বাবা কয়েক বার হাতও উঠিয়েছে মা মরা করীমের গায়ে।
৩.
এক পড়ন্ত দুপুরে ক্লান্ত হয়ে বাড়ি ফিরেছে করীম।খুব বেশী ক্ষুধা পেয়েছে।বেলা গড়িয়ে যাচ্ছে তারপরও খাবার দেয়ার কোনো লক্ষন নেই।আর সইতে না পেরে সাহস করে জমীলার কাছে বলে ‘খিদে পাইছে মা’ অমনি জমীলা চেচিয়ে ওঠে ‘খিদে লাগছে তো সিধা হয়ে বসে থাক’।’আর শোন আমারে মা বলবিনা।এমন পোলার মুখে মা ডাক শুনতে ভাল্লাগে না আমার’।করীমের খুব মন খারাপ হয়।মা বলতে জমীলা কেই জানে ।আপন মা কে কখনো দেখেনি ।তাই জমীলা কে মা বলে ডাকতে তার খুব ইচ্ছা করে।
৪.
আজ সকালে ঘুমের মধ্যে করীম বাবা মার কথোপকথনে নিজের নাম শুনতে পেয়ে তড়ি ঘড়ি করে উঠে পড়ে।এখুনি বুঝি আবার ঝগড়া শুরু হয়ে যাবে সেই আশঙ্কায় ঘর থেকে বের হয়ে যায়।যাওয়ার সময় তার প্রিয়ো চাকতি সাথে নিতে ভুলে না।ঘর থেকে বের হয়ে দৌড়ে দৌড়ে চাকতি চালানো শুরু করে।এক সময় রেলস্টেশনে এসে পৌঁছায়।হই হুল্লোর,চিৎকার,ডাকাডাকি,যাত্রীরা দ্রুত উঠা নামা করছে।করীম অবাক হয়ে এসব দেখছে।হঠাৎ পরিপাটি পোশাক পরা এক ভদ্র লোক করীমকে কিছু বস্তা উঠিয়ে দিতে অনুরোধ করে।বস্তাগুলো উঠিয়ে দেয়ার পর লোকটা তাকে ভাঁজ খাওয়া একটা কাগজ দেয়।ট্রেন ছেড়ে দেয়ার পর করীম কাগজটি খুলে দেখে এটা কোনো সাধারন কাগজ নয়,পুরো টাকার নোট।সে আবার ভালো করে দেখে সত্যিই তো!এক হাজার টাকার নোট! নোট টি পকেটে পুরে করীম চুপচাপ ঘরে ফিরে বিছানায় ঘাপটি মেরে শুয়ে রইলো।এত খুশি, এত আনন্দ! রাতে টাকার চিন্তায় ঘুম আসছে না।কত টাকার মালিক সে,এত গুলো টাকা! তা দিয়ে কি করবে সে?উল্লাসিতো মনে ভাবছে সে কাল তার সব চেয়ে প্রিয়ো জিনিস কিনবে।বাজারে গিয়ে সব চকলেট ড্রাম ভরে কিনবে।আবার ভাবে না থাক ,দোকানে লম্বা মালার মত ঝুলিয়ে রাখা সব চিপস কিনে আনবে।নানা কিছু ভাবতে ভাবতে করীম ঘুমিয়ে পড়ে।
৫.
সাকালে ঘুম ভাঙ্গে জমীলার বিকট চিৎকারে ।করীম ধরফড়িয়ে ওঠে গিয়ে দেখে মাএ সাজিয়ে রাখা আমড়ার ঝুড়িটা পাশের বাড়ির পাগলা ষাঁড় মাড়িয়ে দিয়ে গেছে।সব আমড়া থেতলিয়ে গেছে।জমীলা এগুলো তোলার ব্যর্থ চেষ্টা করছে।এদিকে কাশেম বাড়ি নেই।বাড়িতে এলে কি করবে সেই চিন্তায় জমীলা থরথরিয়ে কাঁপছে।আজ হয়তো পিটিয়ে বাপের বাড়ি পাঠিয়ে দিবে।হঠাৎ করীমের মাথায় কী যেন খেলা করল।সে দৌড়ে ঘর থেকে বেরিয়ে গেলো।কিছুক্ষন পর ফিরে এলো এক ঝুড়ি আমড়া নিয়ে।ঝুড়িটা জমীলার পাশে রেখে দিলো।জমীলা পাশে ফিরে নতুন ঝুড়ি দেখে অবাক!কী করে সম্ভব?পেছেনে ফিরে দেখে করীম তার দিকে মিষ্টি করে তাকিয়ে আছে।জমীলা বুঝতে পারলো এটা করীমের কাজ।কিন্তু এতোগুলো টাকা সে কোথায় পেল।বুঝি জমীলার জমানো টাকা চুরি করেছে।দৌড়ে করীমে কাছে গেলো।
এগুলা আনছস কেমনে?টাকা পাইছস কই?চুরি করছস?কষে এক থাপ্পর দিলো করীমের গালে।না না ,আমি চুরি করি নাই।বিশ্বাস করো আমি চোর না।কাঁদতে কাঁদতে বলল করীম।তাইলে কেমনে আনলি বল?করীম সব ঘটনা খুলে বলে।বলল ‘এগুলা এহন কিইনা না আনলে আব্বায় যে তোমারে মারতো’শুনে তো জমীলা অবাক।চোখে পানি চলে আসলো।’তোরে আমি বুঝতে পারিনাইরে।তুই আস্ত এটা সোনার টুকরা’ বল তুই কি চাস?
করীম নির্ভয়ে জমীলার দিকে এগিয়ে গিয়ে বলে তোমাকে মা বলে ডাকতে চাই।শুধু তোমার ছেলে হতে চাই।জমীলা নিজেকে আর ধরে রাখতে পারেনা।করীম কে জড়িয়ে ধরে কান্নামিশ্রিত স্বরে বলে ‘হ হ আমি তোর মা।দস্যু পোলার মা’।এই দৃশ্য দেখে অদূরে দাঁড়িয়ে থাকা কাশেমে চোখ ঝাপসা হয়ে আসে।
(সমাপ্ত)

সম্পর্কিত পোস্ট

যদি পাশে থাকো

যদি পাশে থাকো

তাসফিয়া শারমিন ** আজকের সকালটা অন্য রকম। সাত সকালে আম্মু বকা দিলো। মানুষের ঘুম একটু দেরিতে ভাঙতেই পারে। তাই বলে এত রাগার কী আছে ?একেবারে যে দোষ আমারও তাও নয়। মানুষ ঘুম থেকে উঠে ফোনে বা দেওয়াল ঘড়িতে সময় দেখে। কিন্তু আমি উঠি জানালার পর্দা সরিয়ে বাইরের আলো দেখে।কে জানে...

কুড়িয়ে পাওয়া রত্ন

কুড়িয়ে পাওয়া রত্ন

অনন্যা অনু 'আমিনা বেগম' মেমোরিয়াল এতিমখানার গেট খুলে ভেতরে ঢুকতেই ওমরের বুকটা ধুক ধুক করতে শুরু করে। ওমর ধীর গতিতে ভেতরে প্রবেশ করে। চারদিকে তখন সবেমাত্র ভোরের আলো ফুটতে শুরু করেছে। ওমর গত রাতের ফ্লাইটে আমেরিকা থেকে এসেছে। সে এসেই সোজা আমিনা বেগম মেমোরিয়াল এতিমখানায়...

দাদাভাইকে চিঠি

দাদাভাইকে চিঠি

প্রিয় দাদাভাই, শুরুতে তোকে শরতের শিউলি ফুলের নরম নরম ভালোবাসা। কেমন আছিস দাদাভাই? জানি তুই ভালো নেই, তবুও দাঁতগুলো বের করে বলবি ভালো আছি রে পাগলী! দাদাভাই তুই কেন মিথ্যা ভালো থাকার কথা লেখিস প্রতিবার চিঠিতে? তুই কি মনে করিস আমি তোর মিথ্যা হাসি বুঝি না? তুই ভুলে গেছিস,...

৪ Comments

  1. Anamika Rimjhim

    একমাএ-একমাত্র*
    প্রিয়ো-প্রিয়*
    অনিচ্ছাসত্ত্বেও-অনিচ্ছা সত্ত্বেও*
    সৎমা-সৎ মা*
    মাএ-মাত্র*
    শব্দসং্খ্যা কম। নতুনত্ত্ব নেই।তবে গুছানো,সুন্দর।শুভ কামনা।

    Reply
  2. Learner

    গুছানো পরিপাটি লেখা, তবে গল্পের কাহিনিতে সৃষ্টিশীলতা খুব একটা দেখা যায়নি। শুভ কামনা ♥ আরো ভালো কিছু আশাকরি।

    Reply
  3. Jannatul Ferdousi

    একমাএ→ একমাত্র

    লক্ষন→ লক্ষণ

    চেচিয়ে→ চেঁচিয়ে

    তড়ি ঘড়ি→ তড়িঘড়ি

    প্রিয়ো→ প্রিয়

    হই→ হৈ

    উল্লাসিতো→ উল্লাসিত

    ছেলে কে→ ছেলেকে

    ….
    মমতায় জড়ানো গল্প। ভালো লেগেছে গল্পটি। তবে লেখকের উচিত ছিল গল্পটি আরেকটু বড় করে এর মধ্যে আরো কিছু টুইস্ট আনা। কারণ পাঠক এক্টার পর একটা ধড়ক পড়া দেখতে চায়! হা হা হা

    তবে গল্পটা সম্পর্কে সত্যিই নেগেটিভ কিছু বলার নেই। তাছাড়া লেখকের লেখার হাতও দারুণ। এভাবে সাহিত্য নিয়ে চর্চা করলে ভালো কিছু করবে বলে মনে করি।
    আপনার জন্য শুভ কামনা থাকলো।

    Reply
  4. Halima Tus Sadia

    ভালো লিখেছেন।
    হ্নদয়স্পর্শী গল্প।
    কিছু সৎ মা আছে কখনো সন্তানদের বুঝে না।আদর করে না।

    করীমের মা মারা যাওয়ার পর তার বাবা বিয়ে করে। তবে মা ডাকা আর হলো না।
    অবহেলায় করীমকে দূরে রাখতো।
    একদিন বুঝতে পেরেছে।

    বাস্তবে ও এমন ঘটনা কম নয়।প্রতিনিয়ত ঘটে যাচ্ছে।
    আল্লাহ সব সৎ মাকে বুঝার তৌফিক দান করুক ।

    বানানে ভুল আছে।

    একমাএ-একমাত্র
    চেচিয়ে-চেঁচিয়ে
    মাএ-মাত্র
    সৎমা-সৎ মা
    হেই-হৈ
    প্রিয়ো-প্রিয়।
    উল্লাসিতো-উল্লাসিত

    সব শেষে বলি গল্পটা ভালো লেগেছে।
    লেখকের জন্য শুভ কামনা।

    Reply

Leave a Reply to Anamika Rimjhim Cancel reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *