লেখা : তাহসিন আহমেদ ধ্রুব
জীবনে কখনো কখনো খুব কঠিন সময় আসে। যেখান থেকে বের হয়ে আবার ভালো জায়গায় ফিরে আসার মতো সক্ষমতা খুব কম মানুষেরই থাকে। আমার জীবনের সেই কঠিন সময়টা যাচ্ছে এখন৷ পড়ালেখা শেষ করে সার্টিফিকেট নামক কাগজগুলো নিয়ে পথে পথে হাঁটছি। কোথাও কোন চাকরি নেই। প্রায়ই আমার চারদিকে এক ধরণের বিষন্নতা অনুভব করি৷ গভীর থেকে অন্ধকারের ভ্যাপসা গরমের মতো বাতাসের বড় একটি দীর্ঘশ্বাস বের হয়ে আসে। মনে হয়, জীবন অর্থহীন। এর আদৌ কোন মূল্য নেই৷ কিন্তু পাশের বাসার রহিম মিয়া আমাকে প্রতিনিয়ত উৎসাহের জোগান দেয়। রিকশাচালক থেকে সমাজের উঁচু স্তরের একজন মানুষ হয়ে গেছে সে৷ একদিন দেখা হলে বললো,
– বাবা, আহমদ। করো কী?
– কিছু না চাচা। চাকরি খুঁজতেছি।
– বর্তমান সময়ে চাকরি তো মনে হয় নাই বললেই চলে।
– জ্বি চাচা৷
– তুমি আমার ভাঙারীর দোকানটায় কাজ নিতে পারো৷ নিজের খরচটা চলে যাবে। পাশাপাশি চাকরিও খুঁজবে। চাকরি পেলে তো হলোই।
– আচ্ছা চাচা, ভেবে দেখবো।
আর কোন কথা হয়নি। চলে এসেছি তার সামনে থেকে। খুব ভালো মানুষদের মধ্যে একজন তিনি। তাকে দেখে আমার মনে হয় পৃথিবীতে এখনও কিছু ভালো মানুষ আছে৷
প্রতিদিন বের হওয়ার সময় তার কথা ভাবি। নতুন উদ্যমে বের হয়ে পড়ি। সারাদিন ঢাকা শহরের অলিগলি আর চাকরির খবর পত্রিকার ঠিকানাগুলো চষে বেড়াই। কিন্তু লাভের লাভ কিছুই হয় না। দিনশেষে সন্ধ্যাবেলা চায়ের কাপে চুমুক দিতে দিতে সারাদিনের রোজনামচা আমাকে ব্যর্থ বলে ঘোষণা দেয়। রাতে যখন এয়ারফোন কানে গুঁজে দিয়ে বিষন্নতার গান শুনি তখন নিজেকে সত্যিই একজন ব্যর্থ মানুষ বলে মনে হয়। মোটিভেশনাল স্পিচগুলো এখন আর আমাকে টানে না। প্রতিটা স্পিকারকেই এখন আমার ঠক মনে হয়। এই মনে হওয়ার পেছনের কারণ কী? আমি জানি না। হতে পারে কোন গভীর অনিশ্চয়তা থেকে এই ভাবনাগুলোর উৎপত্তি।
পরেরদিন আবারও বের হয়ে যাই আমি। আবারও একই রুটিনের কষ্টকর কোন এডভেঞ্চার। সময়ের শেষকালে কোন উন্নতির পদচিহ্ন খুঁজে পাওয়া যায় না৷ বরাবরই হতাশ হই আমি৷ মাঝে মাঝে ইচ্ছে করে ঝুলে পড়ি কোন গাছের ডালে। পেয়ে যাই চিরমুক্তি। কিন্তু বাস্তবতা আমাকে বারবার ফিরিয়ে রাখে সেদিক থেকে। মেসের দুইমাসের ভাড়া বাকি রাখা পিতৃমাতৃহীন কোন ছেলের লাশ কারো বইবার মতো রুচি হবে না। হয়তো বেওয়ারিশ হয়ে পরে থাকবো কোন লাশকাটা ঘরে শিক্ষার্থীদের ব্যবহারিক ক্লাসের উপকরণ হয়ে। তাই মরে যাওয়ার ইচ্ছেটাও হয়ে গেছে শোকস্তব্ধ মৃতের মতো। এককথায়, এই শহরের জীবন্মৃত যুবক আত্মা এই আমি৷ আমার চারপাশ ঘিরে আছে নিস্তব্ধতা, শুধুই নিস্তদ্ধতা।
উপরের এই গল্পগুলো আজ থেকে সাত বছর আগের। পুরনো মলাটের ডায়েরীতে ময়লার দাগ পরে যাওয়া পৃষ্টায় লিখা কিছু ভারি ভারি শব্দের সমাহার। সাত বছর পার হয়ে গেছে। বদলে গেছে অনেক কিছুই। যেটা ছিল না সেটা হয়েছে, যেটা ছিল সেটা এখন আর নেই। আমারও কিছু ছিল না। না ছিল মাথা গোঁজার মতো ঠাই, না ছিল মাস শেষে ভাল মাইনের কোন চাকরি। শেষে এক বয়োজ্যেষ্ঠের(রহিম মিয়া) পরামর্শে ভাঙারী কেনা-বেচার দোকানে কাজ নেই। আস্তে আস্তে সস্তার খরিদদার থেকে হয়ে উঠলাম মালিক। সময়ের সাথে সাথে হাতে আসতে লাগল কাঁচা পয়সা। মসজিদে নামাজের পর কিছুক্ষণ বসার সময়ও বের হলো৷
চেইন স্মোকার এই আমি পাল্টে গেলাম পুরোটাই। ধর্মের দিকে মন চলে গেছে। কিন্তু কথায় আছে, অভ্যাস কখনওই বদলায় না। কিছু অভ্যাস তাই এখনও বদলাতে পারিনি। এখনও সেই আগের মতোই, ডায়েরীর পাতায় শব্দের সাথে শব্দ মিলিয়ে অর্থ বানাই৷ প্রতিদিন সকালে চাকরির খবর পত্রিকায় চোখ বুলিয়ে দেখি। সবচেয়ে বড় যে দুটি অভ্যাস বদলাতে পারিনি তা হলো- আজিমপুর গোরস্থানে বাবা মায়ের কবরের পাশে গিয়ে দুফোঁটা অশ্রু বিসর্জন করা আর প্রতিমুহুর্তে সৃষ্টিকর্তাকে স্মরণ করা। মনে হয় না, কখনও পারবো বদলাতে৷ কারণ, পুরনো ইতিহাস অধিকাংশ সময় মানুষকে বদলাতে দেয় না৷ ভুলে যেও না তাদের কথা, যারা তোমাকে মাথা উঁচু করে দাঁড়াতে শিখিয়েছে। যাদের কারণে আজ তুমি এত সুন্দর পৃথিবীটা উপভোগ করতে পারছো। আমি এই কথাটা বয়সে ছোটদরকে প্রায়ই বলি অথচ আমি জানি এই কথাটা শতকরা সত্তর ভাগ মানুষ ভুলে যায়। তাদের আমি প্রশ্ন করি- শেষ কবে সৃষ্টিকর্তাকে আর গর্ভধারিণীকে মন থেকে স্মরণ করেছ?
আচ্ছা, এটা কি আপনার জীবন থেকে নেয়া…..নাকি গল্পের কোনো চরিত্র?
মুহুর্ত-মুহূর্ত*
ছোটদরকে-ছোটদেরকে*
শব্দসংখ্যা কম ছিল কিন্তু ম্যাসেজ টা ভাল ছিল।হাল ছাড়া উচিত নয়।শুভ কামনা।
চমৎকার অনুগল্পের মধ্যে দারুণ এক শিক্ষণীয় দিক ছিল। ভীষণ ভালো লেগেছে। এই লেখা আমি মনে করি প্রত্যেকের একবার পড়া উচিত। আর শেষ লাইনটা সত্যিই প্রশ্ন করার মতো ছিল।
গল্পে বানান ভুল তেমন নেই। তাছাড়া লেখকের লেখার হাত পাকা মনে হচ্ছে। ভবিষ্যতে আরো ভালো করতে পারবে এই লেখক।
শুভ কামনা থাকলো আপনার জন্য।
যদি ও অণুগল্প।তবে গল্প থেকে শিখার আছে।
কোন কাজকে ছোট করতে নেই।ছোট কাজ থেকেই বড় হওয়া যায়।
যুগে যুগে মনিষীগণ এভাবেই বড় হয়ছে।
সাফল্য এমনি এমনি ধরা দেয় না।কষ্ট করতে হয় জীবনে।তবেই উন্নতি হওয়া।
আজকাল সার্টিফিকেট থাকলে ও চাকরী পাওয়া কষ্টের হয়ে দাড়ায়।
বানানে তেমন ভুল নেই।
প্রতিমুহুর্ত-প্রতিমুহূর্ত
ছোটদরকে-ছোটদেরকে
জ্বি-জ্বী
লেখকের জন্য শুভ কামনা।