#চিঠি
মাহমুদা তাহিরা
মৈত্রী?
এই যে একটা এ-ফোর কাগজের উপর কলম ধরলাম, তোর কাছে এই একটা চিঠি পাঠাবার জন্য কতদিন অবধি আমাকে অপেক্ষায় থাকতে হয়েছে জানিস তুই?
তোর কি আর আগের মতো আমায় মনে পড়ে না রে?
কর্তব্যপরায়ণ মা কিংবা আদুরে স্ত্রী হয়ে খুব বড় হয়ে গেছিস বলেই? গত পরশু হঠাৎ রিকু মামার সাথে দেখা। ডিসি রোডের লাইব্রেরিটাতে গিয়েছিলাম, সেখানেই দেখা। লাইব্রেরিটা আগের চেয়ে এখন আরো অনেক বড় হয়েছে জানিস? তুই যেমনটা বলেছিলি হাত বাড়ালেই খুব সহজে পাতা ঘেঁটে নেওয়া যায় টনি মরিসনের ‘প্যারাডাইজ’ কিংবা বিভূতিভূষণের ‘আরণ্যক’-এর।
তবে ভিক্টোরিয়া কলেজ রোডটা এখনো সেই আগের মতোই আছে। আমাদের পছন্দের পলেস্তার খসে পড়া পুরনো দালানটাও, দিঘীর উপর বেঁকে যাওয়া সেই যে যমজ দুটো নারকেল গাছ এখনো তেমন সরু হয়েই আছে।
আচ্ছা তোর কি এখনো বাণিজ্য মেলার ঘটনাটা মনে পড়ে? হাতে কতগুলো বেলুন নিয়ে হাঁটছিলাম আমরা, মাঝপথে বসেই এক লোককে হিসু করতে দেখে দুজন যে লোকটার পিছনে গিয়ে বেলুন পটাশ করে ফুটিয়েই ভৌ-দৌড়! হা হা লোকটা কী ভ্যাবাচেকাটাই না খেয়েছিলো! মনে পড়লে আমি এখনো হাসতে হাসতে গড়াগড়ি খাই।
তো যা বলছিলাম, রিকু মামাকে পেয়েই মস্ত এক চিল্লানী দিলাম। অনেক কথা হলো, অনেক। সে জানালো তোর সাথে গেলো মাসেই নাকি কথা হয়েছিলো একবার। আমার উৎসুক চাহনি দেখে নিজ থেকেই ফোন নাম্বারটা বের করে দিলো তোর। কেমন যেন এক চাপা অভিমানে ফেঁটে পড়ছিলাম আমি।
আমি খুব করে ভাবতাম আমি তোর ঠিকানাটা পেলেই একটা চিঠি লিখবো। আগের অভ্যাসটা তুই কাটিয়ে উঠতে পারলেও আমার ভেতরটা থেকে কাটেনি রে। রুম থেকে রুমে আমরা দুষ্টুমি ঢিলাঢিলি করতাম কাগজের দলায় আর এখন সুদূর ইউকে তে গিয়েও ভুলে বসে আছিস আমায়।
রিকু মামাকে বলে তাই ঠিকানাটাই নিয়ে নিলাম তোর। গত বছরের পর আর একটি চিঠিও দিলি না তুই। ভালো আছিস তো মৈত্রী?
তুই ভালো আছিস জানলে আমার সত্যিই ভালো থাকা হয়ে যায়। আমার কৈশোরের ভালো লাগাটা, ভালো থাকাটা তুই ই দেখেছিস কিনা! তুই আমার বোনের চেয়েও কম কিরে?
এই অভাগীর সব যখন তুচ্ছ এক গাড়ি দূর্ঘটনায় মরে যায়, তুই ছাড়া মাথায় তখন আর হাত রাখার ছিলো কে? টেনে হিঁচড়ে নিয়ে যে নিজের বাসায় তুললি, আমি বোধহয় আজ এতদূর আসতে পেরেছি সেই টানা হেঁচড়ার ফলেই। আংকেল আন্টিকে পেয়ে যেন মা বাবার কথাই ভুলতে বসেছিলাম আমি!
মানুষ দুটোও আমাদের ফেলে দূরে চলে গেলো যখন, তখনও তুই আমার একমাত্র আপনজন আর আমি তোর করে কাটিয়ে দিলাম আরো দু’টি বছর।
সেই দিনগুলোর কথা মনে পড়ে না তোর?
একই ভার্সিটিতে চান্স পাওয়ায় খুশিতে গলা জড়িয়ে যেদিন কেঁদেছিলাম দুজন।
আমার সবচেয়ে বেশি কষ্ট হতো কখন জানিস? সাজিদ ভাইয়ার জন্য লুকিয়ে লুকিয়ে কাঁদতি যখন তুই। আমি তখন তোর সামনে যেতে পারতাম না কি ভরসা দেবো তোকে সেই ভয়ে। তোদের যখন বিয়েটা হয়ে গেলো সবচেয়ে বেশি খুশি আমিই হয়েছিলাম রে।
আমার স্পষ্টতই মনে পড়ে, নামাজ পড়ে কত কেঁদেছিলাম সেদিন বোনটা যেন আমার ভালো থাকে।
আজ এই যে এত দূরে গিয়ে বসে আছিস, না না অভিমান করছি না আমি কোনো! আমার বেশ যাচ্ছে জানিস? সারাদিন ভীষণ ব্যস্ত থাকি, বাচ্চাদের একটা নতুন স্কুল করার প্ল্যান করছি। চাকরিটা তো আছেই, লিখতেও হয় সময় পেলেই। বেশ যাচ্ছে আমার দিন।
আমি জানি তুই কি ভাবছিস। না রে, অই বিয়ে শাদীতে মন লাগে না আমার। বয়স পেরিয়ে যাচ্ছে জানি কিন্তু অতো বড় দায়টা মাথায় তোলে নেবার সাহসে মন কুলায় না।
চিঠিটার উত্তর দিস? আমার আরো অনেক কথা জমে আছে, আরো অনেক কিছু শুনাবো তোকে। ভুলেই যখন বসে আছিস আমিও ভুলতে দিই কী করে অতো সহজে। বাবুটার একটা ছবি দিস সাথে? ওরে দেখতে ইচ্ছে খুব। সাজিদ ভাইয়াকে আমার সালাম দিস। আর দেশের প্রতি অভিমানটা যদি খানিকটাও কমাতে পারিস বাল্যকালের বান্ধবী নামক এই অভাগীটারে একটু দেখে যাস। আমি অপেক্ষায় আছি তোদেরকে একটিবার দেখার জন্য।
আজ তবে শেষ করি রে, স্কুলটা তৈরি নিয়ে কথা বলতে বের হতে হবে কাউন্সিলরের সাথে। তারপর এই শীতের সন্ধ্যেটা কাটিয়ে আসবো দিঘীটার পাড়ে। জানোস এখনো আমি আকাশ দেখি আগের মতই, পথে প্রান্তরে ঘুরে বেড়াই একা হলেই। কিন্তু এই শীতের আকাশ যে খুব বর্ণহীন রে মৈত্রি।
কবিতা শুনবি? ম্যারি অলিভারের কয়টা লাইন শুনাচ্ছি তোকে,
I would have time, I thought, and time to spare,
With only streams and birds for company.
To build out of my life a few wild stanzas.
And then it came to me, that so was death,
A little way away from everywhere.
ভালো থাকিস মৈত্রী, খুব ভালো।
ইতি,
তোর বনু
অসাধারণ একটি চিঠি।
বান্ধুবীর প্রতি কতো ভালোবাসা।
কি করে অভিমান করা যায় এমন বান্ধুবীর সাথে।
যদিও সুদূরে থাকার কারণে বান্ধুবী স্বামী,বাচ্চা নিয়ে ব্যস্ত তবুও তো একটু খোঁজ নেওয়া যায়।
বান্ধুবীর সাথে নির্মল এক বন্ধুত্বের কথা ব্যক্ত করেছেন।
এমন বন্ধন অটুট থাকুক।
শুভ কামনা রইলো।
খুব খুব বেশি ভালো লাগল পড়ে। ছোট্টবেলার একটা খেলার সাথী হিরার থেকেও মূল্যবয়ান হয়। কতো আবেগ, কতো স্মৃতি, দুষ্টুমি আর হাজারো অভিমান জড়িয়ে থাকে তার সাথে। পলক ফেলতেই সব মনের আকাশে আয়নার মতো ভেসে উঠে। একসময় সময়ের দায়ে, বাস্তবতার চাপের সবাই দূরে চলে যায় কিন্তু এই স্মৃতিগুলোই মনের দেয়ালে জড়িয়ে থাকে।
প্রবাসী বান্ধবীর কাছে এই চিঠিটা আমারই বান্ধবীর কথা মনে করয়ে দিল। কতো সুন্দর সোনালী মূহুর্ত কেটেছে তার সাথে।
ভালো থাকুক সবাই। চিঠিটা সুন্দর হয়েছে। অনেক শুভ কামনা আপনাকে।
যায়-যাই(নিজের কথা বলেছে যেহেতু)
কিরে-কিসের(কিরে দিলে লাইনের সাথে মিলে না ভাব)
দুটোও-দু’টোও
দুজন-দু’জন
কি -কী
অই-ওই
অতো-এত
অতো-এত
যাস-যাবি
জানোস-জানিস
বাহ্ বেশ ভালো লিখেছেন বলতে গেলে । কিন্তু বাংলা সাহিত্য এর মাঝে ইংরেজি কবিতা কেমন জানে বেমানান লাগে। মনে হচ্ছে চিঠির সুন্দর্য্য ক্ষুন্ন হয়েছে। যাইহোক চিঠির মাঝে এক বান্ধবীর প্রতি অন্য বান্ধবীর ভালোবাসা প্রকাশিত হয়েছে। অনেক ভালো লিখেছেন আর ইংরেজি কবিতাটা বদলে বাংলা কবিতা দিলে আরো ভালো হতো। শুভ কামনা আপনার জন্য