লিখাঃ নওমিতা সুপ্তি
চিঠির বিষয়ঃ বাবার কাছে মেয়ের চিঠি।
প্রিয় বাবা,
পত্রের শুরুতেই আমার সালাম নিবেন।আমি জানি আমার চিঠিটি হাতে নিয়ে আপনি কাঁদছেন। বাবা আমার জন্য কাঁদবেন না অনুরোধ রইল।
ছোটবেলা থেকে আপনাকে আমি কখনোই কাঁদতে দেখিনি। সুতরাং আমি চাইনা আপনি কাঁদেন।
বাবা আপনার মনে অনেক প্রশ্ন তাইনা? সব প্রশ্নের উত্তর আমি লিখে দিয়েছি।
আমার জন্মের পরই তো আমার মা মারা যান। তার আদর থেকে আমি বঞ্চিত হই।আমার ছোট জীবণে আপনিই আমার পাশে গাছের ছায়ার মতো হয়ে দাঁড়ান। আপনি আমার কথা ভেবে কখনো বিয়ে করেননি আমার কষ্ট হবে ভেবে। বাবা আপনাকে আমি শুধু আমার বাবা ভাবিনি। মায়ের আসনেও আপনাকে বসিয়েছি।
আপনার মনে আছে? একদিন স্কুলে আমাকে মাকে নিয়ে তিন-চার লাইনের গল্প লিখতে বলা হয়েছিল।
আর সেখানে আমি লিখেছিলাম,
জন্মের পরে আমি আমার মাকে হারিয়েছি। আমার মা আমাকে রেখে অনেকদূরে না ফেরার দেশে চলে গিয়েছেন।মায়ের মমতা পাওয়ার ভাগ্য নিয়ে আমি জন্মাই নি।
তবে ছোটবেলায় যখন আমার মাকে ছাড়া আমি কাঁতরাতাম। তখন আমার বাবা আমার মা হয়ে ছায়ার মতো পাশে দাঁড়ান। আর আমাকে মায়ের মতো করে ভালোবাসা দিয়ে আগলিয়ে রাখেন।
আমার লিখা পড়ে সেদিন সবাই কত কেঁদেছিল তাইনা বাবা? আমাকে শ্রেষ্ঠ পুরষ্কার ও দিয়েছিল।
আজ আমার খুব মনে পরছে আপনার কথা। আপনি সবাইকে বলতেন আমি আপনার রাজকন্যা। বেঁচে থাকার উৎস।
আমাকে আপনি পড়াশোনা করিয়ে একটা ভালো ঘরে বিয়েও দিয়েছেন। আপনি ভেবেছিলেন যে বড়লোক ঘরে বিয়ে দিলে আমি সুখী হবো।
তবে সব বাবা-মায়েরা চায় তার মেয়ে সুখী হোক। স্বামী, শ্বশুর-শাশুড়িকে নিয়ে সুখে সংসার করুক। কে জানে এতো শখ একদিন কাল হয়ে দাঁড়াবে!
বাবা আমি আপনার মান রাখার জন্য মুখ বুজে ওদের নির্যাতন সহ্য করতাম। ওরা বড়লোক হলেও ওদের মন বলতে যে কিছুই নেই। ওরা বড়লোক হয়েছে ঠিকই। কিন্তু ওদের যেন আরো চায়।ওদেরকে কুকুরের সাথেও তুলনাও করা যায় না। বিয়ের একবছর খুব ভালো ছিলাম। সবার মনও জয় করে ফেলেছিলাম।
কিন্তু একদিন..
আমাকে বলল বাবার বাড়ি থেকে যেনো দুইলাখ টাকা এনে দিই। কিন্তু আমি মানা করাতে ওরা আমাকে নানানভাবে নির্যাতন শুরু করে।নানান ভাষায় গালিগালাজ করেন।
আপনার মনে আছে একদিন আমি হুট করে বাসায় চলে গিয়েছিলাম। আর আপনি আমাকে প্রশ্ন করেছিলেন।আমি আপনাকে চিন্তিত করতে চাইনি বলে মিথ্যে বলেছিলাম।কিছুদিন থেকে তারপর সেই নরকে চলে গিয়েছিলাম। আমি ভাবিনি যে, এটা আমার শেষ যাওয়া। বাবা আমি পারতাম আপনাকে সবটা বলতে। কিন্তু বলেনি কারণ যতদিন আমি আপনার কাছে ছিলাম ততদিনই দাদি-চাচিরা বলতেন,
মাকে তো ছোট থাকতে খেয়েছি। আমার চিন্তা করতে করতে হয়তো বাবাকেও খেয়ে ফেলবো। তাই কিছু বলার সাহস হয়নি বা হয়ে উঠেনি।
ওরা আমাকে দিয়ে সকাল-রাত অবদি কাজ করাতো। জানেন বাবা মাঝেমাঝে হাত কেঁটে বা পুঁড়ে গেলেও কেউ ব্যান্ডেজ করে দেয় না। বরং আরো কাজ জুরে দিয়ে বলে ফকিরনির মেয়েদের দুই একটু এমন হয়ই। আবার বলতো
কতটাকা এনেছ বাবার কাছ থেকে? যার জন্য আমরা তোমার সেবা করবো? বাবার জমানো টাকা কাকে দিবে শুনি?
আমি প্রতিবাদ করলে ওরা কাঁটা হাতে চেপে ধরে বলতো “এই রক্ত তো কিছু না।এর চেয়ে বেশি রক্ত ঝরাবো।”
তখনই আপনার কথা মনে পড়তো। একবার হাঁড়িপাতিল দিয়ে খেলার সময় বটিতে কাঁটতে গিয়ে হাত কেঁটে গিয়েছিল।
আর আপনি দেখে কতই না রেগে গিয়েছিলেন। তখন মনে হয়েছিল আপনিই ব্যথা পেয়েছেন বেশি।
পৃথিবীতে আপনার মতো বাবা পাওয়া আমার ভাগ্য। বাবা আমি জানি আমাকে ছাড়া আপনি বাঁচতে পারবেন না। কিন্তু আপনাকে বাঁচতে হবে।আমার খুনীদের শাস্তি আপনাকেই দিতে হবে।
বাবা আমাকে আজ নাকি ঝুলিয়ে মারবে। আমি ওদের কথা শুনেছি বাবা!
ওরা বলছিল,
আমার শরীরের মাংস জায়গা জায়গা থেকে কেঁটে ফেলবে।তারপর আঙুলগুলো কাঁটবে। আমার নাকি অনেক মুখ চলে।তাই আমার মুখে আগুনের কাঠ ঢুকিয়ে দিবে। তারপর আমাকে রশিতে ঝুলিয়ে দিবে। আমার গোঙানির আওয়াজ ওরা কান পেতে শোনবে।
আমি ওদের কথা শুনে পালিয়ে যেতে চেয়েছিলাম।কিন্তু ওরা আমাকে দেখে ফেলে। আমাকে ধরে চুলের মুঠি ধরে টানতে টানতে আমার স্বামী ঘরের ভিতরে দিয়ে যায়। বাবা খুব ব্যথা পেয়েছি আমি। এখনো সারা শরীর কাঁপছে।আপনাকে শেষবারের মতো দেখার ইচ্ছে জেগেছে।
চোখ আবছা হয়ে আসছে।
বাবা ওরা আসছে…
বাবা আমার খুনীদের বিচার করবেন। আর প্রতিটা বাবা-মাকে বলবেন তারা যেন বড়লোকদের সাথে তাদের মেয়েকে বিয়ে না দেয়। বড়লোকরা মানুষকে মানুষ ভাবেন না।
ইতি
আপনার মেয়ে
অন্যরকম একটা চিঠি পড়লাম। প্রথম দিকটা যেমন বিষাদের ঘেরা ছিল তেমনি শেষের টুকুও ছিল শিউরে উঠার মতো। বাস্তবটাই তুলে ধরলেন যেন। তবে চিঠিটাপ্রবাসী বাবার উদ্দেশ্যে লেখা বলে মনে হলো না।
বানানে কিছু ভুল আছে।
জীবণে- জীবনে।
বুজে- বুঁজে।
শুভ কামনা রইল অজস্র।
চাইনা-চাই না(না আলাদা বসে যেহেতু শব্দ)
তাইনা-তাই না
জীবণে-জীবনে
জন্মাই নি-জন্মাইনি(নি শব্দের সাথে বসে)
লিখা-লেখা
তাইনা-তাই না
মনে পরছে-মনে পড়ছে
মাঝেমাঝে -মাঝে-মাঝে
পুঁড়ে-পুড়ে
জুরে-জুড়ে
ফকিরনির-ফকিন্নির
বাহ্ চিঠি তো অসাধারণ লিখেছেন। পড়ে অনেক অনেক ভালো লেগেছে। বাবার কাছে মেয়ের আর্তনাদ। আর আমাদের সমাজে আসলেই কিছু মানুষ অনেক খারাপ। যারা টাকার জন্য ছেলের বউয়ের উপরে অনেক অত্যাচার করে। চিঠির মাঝে বাস্তবতার দিক ফুটে উঠেছে। তবে শেষের যুক্তিটা দেওয়া একদম ঠিক হয়নি। যার কারণে চিঠির সুন্দর্য্য নষ্ট হয়ে গেছে। হাতের পাঁচ আঙুল যেমন সমান নয়, তেমনি সব বড়লোক এক নয়। আসলে মানুষের মাঝে ভিন্নতা আছেই। তাই সবাইকে এক নজরে দেখা ঠিক নয়। কিন্তু চিঠিতে সব বড়লোক এক নজরে দেখিয়েছে যা চরম ভুল।যাইহোক কিছু বানান ভুল ছিল আগামীতে সেইগুলো খেয়াল রাখবেন আশা করি। আর চিঠিটা নিয়ম মেনে লেখা হয়নি মনে হচ্ছে। কারণ নিয়ম ছিল বিদেশের কাউকে উদ্দেশ্য করে চিঠি কিংবা বিদেশ থেকে দেশের কাউকে উদ্দেশ্য করে চিঠি। অনেক শুভ কামনা রইল।
দারুণ লিখেছেন।
চিঠিটা পড়ে খারাপও লাগলো।
মানুষ কতোটা খারাপ হলে এভাবে নির্যাতন করতে পারে।
মা মরা মেয়েটা কোথাও শান্তি পেলো না।
কপালে সুখ না থাকলে এমনই।
শুভ কামনা রইলো।