বরকে চিঠি
প্রকাশিত: জানুয়ারী ২২, ২০১৯
লেখকঃ augustmault0163

 2,918 বার দেখা হয়েছে

এই লেখক এর আরও লেখা পড়ুনঃ augustmault0163

রোখসানা আক্তার

 

প্রিয় বর,
পত্রের শুরুতে আমার নরম ভালোবাসা মিশ্রিত কণ্ঠের সালাম নিও। কেমন আছো? এই বিরক্তিকর কথা জিজ্ঞেস করবো না। কারণ, আমার মতো লক্ষ্মী আদুরে বউ পেয়ে তুমি কতটা ভালো থাকবে সে আমার মন জানে।
এই,
নিজের প্রশংসা করছি বলে আবার মুখ ভেংচি দিও না। বুঝোই তো তোমার হৃদয়ে আমি আমৃত্যু রাজরানী হয়ে থাকতে চাই। তোমার চোখ শুধু আমাতে বিভোর থাকবে। শুধু আমাকেই খুঁজবে কারণে অকারণে। এই তো মুচকি হেসে পাগলী ভাবছো। আমার কাছে তো তোমার এই পাগলী ডাকটাই অতুলনীয় মোহময় লাগে! কিন্তু তা কখনোও প্রকাশ করিনি । জানোই তো আমার অপ্রকাশ্য ভালোবাসায় তোমায় ঘিরে রেখেছি। আমার যে প্রকাশ শক্তিটা খুব হীন।
ভালোবাসা শুভেচ্ছা কিছু না দিয়ে বকবক করতে শুরু করেছি। তোমার কানের তেরোটা বাজাবো বলেই তো আজীবনের লাইসেন্স নিয়ে নিয়েছি। সেই লাইসেন্সকে পুঁজি করে তোমার কানের শুড়ঙ্গ দুইটাকে খুব যত্ন করে আদর দিবো। আরে কোন আদর বুঝতেছো না? কথার আদর। যেই আদরে অতিষ্ঠ হতে বাধ্য হবে। কিন্তু সাবধান একটুও রাগ প্রকাশ করতে পারবে না। চোখ রাঙিয়ে বলতে পারবে না। তুমি কী এখনও বাচ্চা মেয়ে! যদি এই টাইপের কথাগুলো তিন বারের বেশি বলো তাহলে নগদ বাপের বাড়ির মাঝ পথে গিয়ে দাঁড়িয়ে থাকবো! ভেবো না বাপের বাড়ি যাবো হুহু
তুমি সেই মাঝ পথের কিনারের ঘাসগুলো তুলে ঘাসের নুপূর পায়ে পরিয়ে আমার অভিমান ভাঙিয়ে নিয়ে যাবে। ঠিক আছে তো?
এই,
আমার মনের ছোট্ট সিন্ধুক থেকে বিশাল ভালোবাসা গুলোর একটু একটু করে ছুঁয়ে পড়া আদরের শুভেচ্ছা নিও। তুমি তো কথার শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত একটা কথাই গেঁথে রাখো। তোমায় নাকি একটুও ভালোবাসি না! মাঝে মাঝে না এমন কথাগুলোর জন্য প্রচুর রাগ হয়। যে রাগের পরিধি আমার জানা নেই। তখন ইচ্ছা করে……… থাক বলবো না। লোকে মন্দ বলবে। বরকে মারা নাকি ভালো না।
আবার মাঝে মাঝে হাসিও পায়! খুব হাসি পায়। কিন্তু প্রকাশ করি না। আস্কারা পাবে বলে। হাসি পাওয়ার একটাই অর্থ আমার মতো একটা অগোছালো উদ্ভট টাইপ মেয়েকে যে নিজের বরটা এতো ভালোবাসে। তা আমার সারাজীবনের প্রাপ্তি। নিজেকে আবার অনেক কিছু মনে করো না হুহ
আমার কৃতকর্মের কারণেই পাচ্ছি। জীবনে যে একজনকে চেয়েছি। হাজার জনকে উপেক্ষা করে একজনেতেই মজেছি। তবে আমার স্বার্থকতা এখানেই। যোগ্য এবং পরিপূর্ণ একজনকেই সারা জীবনের পথ পাড়ি দিতে পেয়েছি। তাহলে কেন নিজেকে ভাগ্যবতী ভাববো না! হ্যাঁ আমি ভাগ্যবতী।
তোমার মা-বাবা মানে আমার শ্বশুর-শাশুড়ি মতো দুইজন মানুষ পেয়ে মনে হচ্ছে উনাদের মতো শ্বশুর শাশুড়ি কোন মেয়েই পায়নি। বিয়ের দ্বিতীয় দিন বলা আব্বার সেই কথাটা এখনও কানে আবছা ভেসে আসে। “রোকসানাকে জামা বানিয়ে দে, মেয়েটা কখন আবার কাপড় পেঁচিয়ে উস্টা খেয়ে পা ভাঙে।” হয়তো আমার উড়াধুড়া হাঁটা দেখেই এ কথা বলেছে। গ্রামে সচরাচর কোন শ্বশুর এভাবে নিজের ছেলেকে বলে না। ভাগ্য আমার অনুকূলে ছিলো না বলে ছয় মাস পর হারিয়ে ফেললাম প্রিয় মানুষটা কে। অল্প সময়ে যে খুব প্রিয় হয়ে গেছে। জানোই তো, কেউ আমার একটু ভালোবেসে আদর করে কথা বললে তার ভক্ত হয়ে যাই! আর উনি তো আমার নিজের শ্বশুর ছিলেন। আমার এখনও মনে হয় উনি আমাদের চারপাশে ছায়া হয়ে আছে। আর আম্মার কথা কী বলবো! তা তো তুমি বেশ জানো। আমার মায়ের সমান জানি উনাকে। আমি কিন্তু আম্মাকে অনেক ভালোবাসি। সেটাও তুমি বুঝো। এমন শাশুড়ি এ যুগে তেমন একটা মিলে না। আমি চাই উনি বেঁচে থাকুক। আমাদের সব গুলো সুখ শান্তি যেনো দেখে যেতে পারেন। উপভোগ করতে পারেন। নিজেকে তৃপ্তি দিতে পারেন।
অনেক কথার মাঝে এটাই চিরসত্য আমি সবার মাঝে বেঁচে থাকতে চাই। তাই তুমি ছাড়া কাউকে কঠোর কথা বলতে পারি না। সবার সব আঘাত নিমিষেই ভুলে যাই।
সব শেষে একটাই কথা বলতে চাই।
তোমার সাথে বুড়ি বয়সটা কাটাতে চাই। হায়াত মউতের মালিক আল্লাহ্। কিন্তু তবুও একটা কথা বলে যাই এই চিঠিতে। আমি বেঁচে না থাকলে, তোমার বুড়ো বয়সটা অন্য কারো সাথে পার করবে না। আমার কথা ভেবেই কাটিয়ে দেবেে শেষ সময়টা,  কেমন?   আমার দাদা দাদুর ভালোবাসার বিশালতা দেখে এই আকাঙ্ক্ষা মনে রোপন হয়েছে । আশা করি এই আবদারটাও রাখবে।
ইতি,
তোমার অবাধ্য বউ

সম্পর্কিত পোস্ট

যদি পাশে থাকো

যদি পাশে থাকো

তাসফিয়া শারমিন ** আজকের সকালটা অন্য রকম। সাত সকালে আম্মু বকা দিলো। মানুষের ঘুম একটু দেরিতে ভাঙতেই পারে। তাই বলে এত রাগার কী আছে ?একেবারে যে দোষ আমারও তাও নয়। মানুষ ঘুম থেকে উঠে ফোনে বা দেওয়াল ঘড়িতে সময় দেখে। কিন্তু আমি উঠি জানালার পর্দা সরিয়ে বাইরের আলো দেখে।কে জানে...

কুড়িয়ে পাওয়া রত্ন

কুড়িয়ে পাওয়া রত্ন

অনন্যা অনু 'আমিনা বেগম' মেমোরিয়াল এতিমখানার গেট খুলে ভেতরে ঢুকতেই ওমরের বুকটা ধুক ধুক করতে শুরু করে। ওমর ধীর গতিতে ভেতরে প্রবেশ করে। চারদিকে তখন সবেমাত্র ভোরের আলো ফুটতে শুরু করেছে। ওমর গত রাতের ফ্লাইটে আমেরিকা থেকে এসেছে। সে এসেই সোজা আমিনা বেগম মেমোরিয়াল এতিমখানায়...

দাদাভাইকে চিঠি

দাদাভাইকে চিঠি

প্রিয় দাদাভাই, শুরুতে তোকে শরতের শিউলি ফুলের নরম নরম ভালোবাসা। কেমন আছিস দাদাভাই? জানি তুই ভালো নেই, তবুও দাঁতগুলো বের করে বলবি ভালো আছি রে পাগলী! দাদাভাই তুই কেন মিথ্যা ভালো থাকার কথা লেখিস প্রতিবার চিঠিতে? তুই কি মনে করিস আমি তোর মিথ্যা হাসি বুঝি না? তুই ভুলে গেছিস,...

৩ Comments

  1. halima tus sadia

    খুব সুন্দর একটি চিঠি।

    আদর্শ স্বামী পাওয়া ভাগ্যের ব্যাপার।
    ছয় মাস পর বউকে রেখে প্রবাসে পাড়ি জমিয়েছে।
    ভালোবাসাগুলো অন্তরে জমা থাকুক।
    প্রিয়জনকে নিয়ে সবাই সুখে থাকুক।

    আর শ্বশুর শ্বাশুড়ি ভালো হলেতো কথাই নাই।
    বাকি জীবনটা তাদেরকে নিয়ে সুখে কাটানো যায়।

    শুভ কামনা রইলো।

    Reply
  2. আফরোজা আক্তার ইতি

    রোকসানা আপু হচ্ছেন চিঠির শ্রেষ্ঠা। আর কেউ মানুক চাই না মানুক এটা আমি মানি যে তার চেয়ে সুন্দর করে চিঠি আর কেউ লিখতে পারে না। কতটা আবেগ আর ভালোবাসা থাকলে এমন চমৎকার আর প্রেমময় চিঠি লেখা যায়! যেখানে রয়েছে শুধু শুদ্ধতা আর প্রিয়জনের প্রতি রাগ-অভিমান-আদর মেশানো তীব্র ভালোবাসা। এমন চিঠি পড়লে কেউ দূরে থাকতে পারবে? সেই স্বামী ভাগ্যবতী যে এমন আদুরে বউ পায় ল।
    তবে চিঠিটি তে প্রবাসের কোনো বিষয় উল্লেখ ছিল না। কিন্তু নিয়ম এটাই ছিল প্রবাসী কাউকে চিঠি লিখতে হবে। তাই এক্ষেত্রে মনে হচ্ছে প্রবাসের কিছু কথা উল্লেখ থাকলে চিঠিটা পূর্ণতা পেত।
    বানানে কোন ভুল নেই। অনেক অনেক শুভ কামনা আপু।

    Reply
  3. Md Rahim Miah

    কারণ, আমার-কারণ আমার(মাঝখানে কমা হবে না, এতে পড়তে বাঁধা পাওয়া যাই)
    আমৃত্যু -অমৃত্যু (এটা হবে হয়তো)
    রাজরানী-রাজরাণী
    কী-কি(যেহেতু প্রশ্ন হ্যাঁ কিংবা না বুঝিয়েছে)
    ছোট্ট-ছোট
    ভালোবাসার গুলোর-ভালোবাসাগুলোর(গুলো শব্দের সাথে বসে)
    পায়-পাই (যেহেতু নিজের কথা বলেছে)
    কোন-কোনো (কোন দিয়ে প্রশ্ন বুঝায়)
    মানুষটা কে-মানুষটাকে(কে শব্দের সাথে বসে, তবে প্রশ্ন বুঝালে আলাদা বসে)

    বাহ্ চমৎকার লিখেছো বোন। পড়ে অনেক অনেক ভালো লেগেছে। তবে একটা বড় ধরনের ভুল করে ফেললে যে। যার কারণে চিঠিটা প্রতিযোগিতার ভিতরে নাও পড়তে পারে। প্রতিযোগিতার জন্য চিঠি লিখতে বলা হয়েছে এটাকে কেন্দ্র করে। যে বিদেশের কাউকে উদ্দেশ্য করে দেশের থেকে লিখতে হবে। অথবা দেশের কাউকে উদ্দেশ্য করে বিদেশের কাউকে চিঠি লিখতে হবে। কিন্তু পুরা চিঠি পড়ে মনে হলো না প্রবাসী স্বামীকে পাঠিয়েছো। চিঠি লেখার সময় প্রবাসীর কথাটা মনে রাখার উচিত ছিল বোন। যাইহোক অনেক ভালো লিখেছো আর অনেক অনেক শুভ কামনা রইল।

    Reply

Leave a Reply to আফরোজা আক্তার ইতি Cancel reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *