জান্নাতুল_নাঈমা
আসসালামু ‘আলাইকুম যায়নাব আপু,
সমস্ত প্রশংসা সেই মহান স্রষ্টার,যিনি বিশ্বজগতের প্রতিপালক। সালাত ও সালাম হযরত মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম,তাঁর অনুসারী এবং পরিবারবর্গের প্রতি। বিশ্ব মুসলিম ভ্রাতৃত্বের বন্ধন রাহমানের করুণায় সিক্ত হোক,আ-মীন। সেই সাথে আরো দু’আ করি,এই চিঠি এবং প্রেরক-প্রাপক উভয়কেই আল্লাহ্ সুবহানাহু ওয়া তা’আলা কবুল করে নিন,আ-মীন।
.
ﺣَﺴﺒﻨﺎ ﺍﻟﻠﻪ ﻭ ﻧﻌﻢ ﺍﻟﻮﮐﯿﻞ
ﻧﻌﻢ ﺍﻟﻤﻮﻟﯽ ﻭ ﻧﻌﻢ ﺍﻟﻨﺼﯿﺮ
“Hasbun Allahu wa ni’mal wakeel” – “Allah suffices me and He is the best…”
ফোনে তুমি কাঁদছিলে! দিল্লী মেডিকেল কলেজের এসোসিয়েট প্রফেসর ভাইভা পরীক্ষায় তোমার নিক্বাবের অজুহাতে ফেইল করিয়ে দেবার হুমকি দিয়েছেন। চিন্তা কোরো না,ইন-শা-আল্লাহ্,তুমি ফোর্থ ইয়ারে প্রমোশন পেয়ে যাবে। তাওয়াক্বুল রাখো।
জানো আপু,ড. আবু আমীনাহ বিলাল ফিলিপস এর ‘স্রষ্টা ধর্ম জীবন’ বইতে পড়েছি,” যদি ইসলামে বিশ্বাসী কোনো ব্যক্তির জীবনে কোনো সমস্যা না থাকে তাহলে বুঝে নিতে হবে যে,কোথাও ভুল হচ্ছে। এমতাবস্থায় একজন প্রকৃত বিশ্বাসীকে অবশ্যই সময় নিয়ে তার জীবনের বাস্তবতাগুলো খতিয়ে দেখতে হবে। হয় তার পরীক্ষাগুলো স্পষ্ট নয় এবং সেগুলো সম্পর্কে সে সচেতন নয়,অথবা সে সঠিক পথ থেকে দূরে সরে গেছে।”
এছাড়া,মহান আল্লাহ্ তা’আলা বলেন,
“মানুষ কি মনে করে,”আমরা বিশ্বাস করি” একথা বললেই কোনো পরীক্ষা না করেই তাদের ছেড়ে দেওয়া হবে? এদের পূর্ববর্তীদেরও আমরা পরীক্ষা করেছি। আল্লাহ্ অবশ্যই সত্যবাদী আর মিথ্যাবাদীদের সুস্পষ্টভাবে জেনে নেবেন।”
(আল ‘আনকাবূত,২৯:২-৩)
এবার তো ‘আলহামদুলিল্লাহ্’ বলো আপু? রাব্বে কারীম তোমার ঈমানের পরীক্ষা নিচ্ছেন! এর মাধ্যমে হিদায়াতের পরিপূর্ণ স্বাদ আস্বাদন করার তাওফিক্ব তুমি পাবে,ইন-শা-আল্লাহ্। হৃদপিন্ডের চার প্রকোষ্ঠ জুড়ে জমে থাকা সমস্ত নীল রক্তধারা পরিশুদ্ধ হয়ে যাক তোমার,কায়মনোবাক্যে এই প্রার্থনা করি।
.
“বিধান একমাত্র আল্লাহরই। তাঁরই ওপর আমি ভরসা করি এবং ভরসাকারীদের কেবল তাঁরই ওপর ভরসা করা উচিত।”
(ইউসুফ,১২:৬৭)
বিপদের সময় আল্লাহর ওপর পূর্ণ আস্থা রাখার মাধ্যমেই প্রকৃত ধৈর্য অর্জিত হয়। ‘ধৈর্য’ নামক উত্তম আত্মিক গুণটি বিকাশের মূল ভিত্তি হচ্ছে,নানা রকম বিপদ-আপদ ও বিপর্যয়। আর এ কারণেই,ন্যায়নিষ্ঠ ব্যক্তিরাই জীবনে বেশি দুঃখকষ্ট ও কঠিন পরীক্ষার সম্মুখীন হয়। সুনান আত-তিরমিযি’র ২য় খণ্ডের ২৮৬ পৃষ্ঠায় সা’দ রাদ্বিয়াল্লাহু ‘আনহু বর্ণনা করেন,তিনি নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম- কে জিজ্ঞেস করছিলেন যে মানুষের মধ্যে কারা সবচেয়ে বেশি পরীক্ষার সম্মুখীন হয়। উত্তরে তিনি বলেন, ” নবীগণ,এরপর যারা তাদের ঘনিষ্ঠ অনুসারী তারা,এরপর যারা তাদের ঘনিষ্ঠ অনুসারী তারা। মানুষকে তার ঈমানের স্তর অনুযায়ী পরীক্ষা করা হয়। ঈমান যত দৃঢ় হয় তার পরীক্ষা তত কঠিন হতে থাকে। আর দূর্বল ঈমানের লোকদেরকে তাদের স্তর অনুযায়ীই পরীক্ষা করা হয়।”
আল্লাহর প্রতি অকৃত্রিম বিশ্বাসের ওপর গড়ে ওঠা ধৈর্যের প্রতিদান নিশ্চিতভাবেই জান্নাত। আল্লাহ তা’আলা বিশ্বাসীদের এই পুরস্কারের কথা জানিয়ে বলেছেন,
“সুসংবাদ দাও সেইসব ধৈর্যশীলদের যারা বিপদ এলে বলে,আমরা তো আল্লাহরই এবং তাঁরই কাছে আমরা ফিরে যাবো।”
(আল বাকারাহ,২:১৫৫-১৫৬)
কেমন আপু? সিজদায় লুটিয়ে পড়ার মতো একটি আয়াত না? তোমার সমস্ত অভিযোগ স্বলাতে আল্লাহর সমীপে অর্পণ করো,অশ্রুর বন্যা বইয়ে দাও,প্রাণখুলে কথা বলো। আমরা তো আল্লাহরই!
.
শুহাইব ইবনু সিনান রাদ্বিয়াল্লাহু ‘আনহু বর্ণিত একটি হাদীস খুব মনে পড়ছে। তিনি বলেন,”আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন,মুমিনের বিষয়টা খুব চমৎকার! তার পুরো জীবনটাই কল্যাণময়,আর এটা শুধুই মুমিনের জন্য। যখন তার ভালো সময় আসে তখন সে আল্লাহর প্রতি কৃতজ্ঞ হয়। তাই এটা তার জন্য কল্যাণকর। আর খারাপ সময় আসলে সে ধৈর্য ধারণ করে,এটাও তার জন্য কল্যাণকর।”
(সহীহ মুসলিম,চতুর্থ খণ্ড,পৃষ্ঠা ১৫৪১,হাদীস নাম্বার ৭১৩৮)
কী মিষ্টি একটা হাদীস! আমার রাসূল (সাঃ) স্বয়ং তোমায় সার্টিফিকেট দিয়ে দিলেন আপু! তবে আর থমকে যাওয়া কেনো?
.
চিঠির সাথে একটা বই দিলুম। মুহাম্মাদ বিলাল লাখানি’র ‘একুশ শতকের মুসলিম’। বইতে খুব সুন্দরভাবে ফুটিয়ে তোলা হয়েছে, সুখ এবং দুঃখের সময়ে একজন প্রকৃত মুসলিমের কী কর্তব্য এবং কেনো। শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত অন্তরের চোখ জোড়া মেলে পড়ে যাও,ইন-শা-আল্লাহ্, ফোটায় ফোটায় শুভ্র শিশিরের স্পর্শে তোমার বাগান সজীবতায় ভরে যাবে, মুখরিত হবে পাখপাখালির যিকর্ ধ্বনিতে, কিয়ামুল লাইলের ফুটফুটে জ্যোৎস্নায় নুয়ে
আসবে যূথী-বকুলের শাখারাও!
.
এবার তোমাকে একটু চমকে দেই,কেমন? সামনের ফেব্রুয়ারিতে একুশে বইমেলায় আমার একটা যৌথ গল্পগ্রন্থ বের হচ্ছে,ইন শা আল্লাহ্।
‘আঁধারে আলোর গল্প’, আওয়ার ক্যানভাস প্রকাশনী। বাংলাদেশের চৌষট্টি জেলার চৌষট্টি জন লেখকের চৌষট্টি টা শিক্ষণীয় গল্পের এক অপূর্ব সমন্বয়। আন্দাজ করতে পারো,আমি কী গল্প লিখেছি? আপু,আমি আমার জীবনের সত্যি গল্প লিখেছি। গল্পটি একইসাথে বেদনার এবং আনন্দের। আর বেশি কিছু বলবো না,তুমি বুঝে যাবে। ফেব্রুয়ারি’র অপেক্ষায় থাকো।
.
বেশ অবাক হলে বুঝি? একুশ শতকে তোমায় চিঠি দিলুম! কী জানো আপু, আমি ফোনে গুছিয়ে বলতে পারি না। যার সাথে কথা বলছি,মানুষটার এক্সপ্রেশান দেখা ছাড়া আলাপ জমাতে আমার অস্বস্তি হয়। হেসো না,প্লিজ। আমি জানি,তুমি খিলখিলিয়ে হাসছো। কী করবো,বলো! তুমিও চিঠি দিও।
.
এখানেই শেষ করছি।
বাড়ির সবাই ভালো আছেন,আলহামদুলিল
্লাহ্।
জাযাকিল্লাহু খঈরন।
ইতি
তোমার জান্নাত।
১০ জানুয়ারী,২০১৯।
কক্সবাজার,বাংলাদেশ।
চমৎকার একটা চিঠি পড়লাম। একবোনের কাছে তার আরেক বোন সমস্যার সমাধান করে দিয়ে কতো সুন্দরভাবেই না একটি চিঠি লিখেছে। আসলেই ভাই বোন বন্ধুর মতো হয়। তবে আমার জানামতে চিঠি সহজ সাবলীল ও প্রাঞ্জল ভাষার হয়, এক্ষেত্রে চিঠিতে অতিরিক্ত হাদীসের প্রয়োগে সেটি ক্ষুণ্ণ হয়েছে বলে আমার মনে হচ্ছে।
তবে এটা মানতেই হয় চিঠিটা বেশ ভালো ছিল। অনেক শুভ কামনা আপনাকে।
আসসালামু ‘আলাইকুম,বোন। আল্লাহ্ আপনাকে উত্তম জাযা দিন। চিঠিটা পড়ে যদি উপকৃত হয়ে থাকেন,এতেই আমি খুশী। আপনার উপদেশ স্মরণে রাখবো,ইন-শা-আল্লাহ্। তবে যে মানুষ ক্বুরআন-হাদীসের বাণিতে অশ্রুজল মুছে নেবার শক্তি ফিরে পায়,তাকে মুভড-অন করবার আর কোনো পদ্ধতি আমার জানা নাই।
দু’আ -দোয়া
আ-মীন-আমীন(মাঝখানে আবার এটা- হবে কীভাবে?)
কোরো না-করো না
কেনো-কেন
দিলুম-দিলাম
কেনো-কেন
দিলুম-দিলাম
বাহ্ চিঠি তো বেশ ভালো লিখেছেন। অনেককিছু জানতে পারলাম পড়ে।বোনকে বিশ্বাসী করে গড়ে তুলার মতো চিঠি। কিন্তু আমার মনে হয় চিঠিটা আরেকটু সহজ ভাষাতে লেখার উচিত ছিল । তবে চমৎকার ছিল চিঠিটা।বানানে কিছু ভুল আগামীতে খেয়াল রাখবেন আশা করি। অনেক অনেক শুভ কামনা রইল।
১.আরবি বর্ণমালার ২৬ নাম্বার বর্ণটির উচ্চারণ কিছুটা চাপা। দু’আ শব্দটি এজন্যেই এভাবে লিখা হয়েছে। বিভিন্ন ইসলামিক বইগুলোতে দেখুন,রেফারেন্স পেয়ে যাবেন।
২.আ-মীন> সেইম। আ’মীন- এভাবেও লিখা হয়,আবার এভাবেও (আ-মীন)।
৩. বাংলা চলিত সাহিত্যে বিভূতিভূষণ সহ আরো অনেকে কখনো কখনো একটু বেশি আন্তরিকতা বুঝাতে ‘কোরো’ শব্দ ব্যবহার করেছেন। আমিও তাই করেছি।
৪.দিলুম>সেইম।
আশা করি বুঝতে পেরেছেন,ভাই। চিঠিতে বড় বোনের মাইন্ড সেট আপ করতে হাদিসের রেফারেন্সের মাধ্যমে তার মুড অন করার চেষ্টা করা হয়েছে। যে ক্বুরআন-হাদীসের বাণিতে মুভড অন হয়,সে আর কিছুতে কীভাবে নিজের অশ্রুর মুছে নেবার শক্তি পায়?
আপনার উপদেশ পরবর্তীতে স্মরণে থাকবে ইন-শা-আল্লাহ্।
আল্লাহ্ আপনাকে উত্তম প্রতিদান দিন।
আসসালামু ‘আলাইকুম।
ভালো লিখেছেন।
এক বোন আরেক বোনের কাছে পরামর্শ চেয়েছে।
তবে অনেক হাদিস দিয়েছেন,চিঠিতে এতো হাদিস না দিয়ে আরেকটু সহজ ভাষায় লিখতে পারতেন।
শুভ কামনা রইলো।