বিষাদভরা জীবন
প্রকাশিত: জুলাই ১৭, ২০১৮
লেখকঃ augustmault0163

 2,933 বার দেখা হয়েছে

এই লেখক এর আরও লেখা পড়ুনঃ augustmault0163

লেখা: তানজিনা তানিয়া
.
মায়ের আদর-স্নেহ কোনদিন কপালে না জুটলেও তীব্র শাসনটা ঠিকই জুটেছে নিপার। কারণ, মা টা যে সৎ মা। নিপার ভাগ্যটা এতই খারাপ যে, জন্মের সময় সে জন্মদাত্রীকে হারিয়েছে। জন্মের পর একটা সাদা তোয়ালেতে পেঁচিয়ে নার্স নিপাকে তুলে দিয়েছিলো তার বাবার কোলে। নিপার বাবা প্রথম সন্তানের মুখ দেখে আনন্দে আত্নহারা হয়ে গিয়েছিলেন, কিন্তু যখনি নার্সের কাছে নিজের স্ত্রী এর কথা জিজ্ঞাসা করায় নার্স মাথা নীচু করে সরি বলেছিলো তখনই নিপার বাবা জাভেদ সাহেবের চোখ থেকে নীরবে দু ফোঁটা জল গড়িয়ে পরেছিলো নবজাতক নিপার মুখের উপর। আর সাথে সাথেই শান্ত মেয়েটি তার কচি চিবুকে নোনা জলের স্পর্শ পেয়ে হাত পা ছুঁড়ে চিৎকার করে উঠেছিলো। পৃথিবীতে সবচেয়ে নিরাপদ ছুড়ি যেমন ডাক্তারের ছুড়ি, ঠিক তেমনি সবচেয়ে ভয়ংকর সরি হচ্ছে ডাক্তারের সরি। পিচ্চি বাচ্চাটা কী নোনা জলের স্পর্শে কেঁদেছিলো নাকি সেই ভয়ংকর সরি শুনেই কেঁদেছিলো কে জানে?ফেরেশতা মানুষ! সরির অর্থটা বুঝলেতো বুঝতেও পারে।
জন্মের সময়েই যে মা হারায়, তার চেয়ে কপাল পোড়া আর এ জগতে কে? যখন মেয়েটার মায়ের কোলে বড় হওয়ার কথা তখন তার ঠাঁই হয় দোলনা আর খাটে। শুয়ে থাকতে থাকতে পিঠটা শক্ত হয়ে গিয়েছিলো। যখন নিপার বয়স দেড়, তখনই সৎ মায়ের আগমন। সৎ মায়েরা কেমন হয় তার সাক্ষীতো আমরা ইতিহাস থেকেই পাই। যদিও দু একজন সৎ মা চিরাচরিত নিয়মের বিপরীত হয়, কিন্তু নিপার সৎ মা সেরকম হলো না।নিপার দিকে তার কোন নজর ছিলোনা। নিপার ব্যস্ত বাবারও মেয়ের দিকে খেয়াল ছিলোনা। জাভেদ সাহেবের কাছে অতি অল্প দিনেই নতুন স্ত্রী হয়ে উঠেছিলো কলিজার একপাশ। কোন একদিন যে তার আরও একজন স্ত্রী ছিলো সেটা যেনো বেমালুম ভুলে গেছেন। বর্তমানের জাভেদ সাহেবকে দেখলে বোঝার কোন উপায়ই নেই যে, সে একদিন কারোর মৃত্যুতে এক নবজাতকের চিবুকে নিজের অজান্তেই দুই ফোঁটা চোখের জল ফেলেছিলেন। আসলে মুনীর চোধুরী বলে গিয়েছেন না? যে, মানুষ মরে গেলে পঁচে যায়, বেঁচে থাকলে বদলায়। কারণেঅকারণে বদলায়। ঐ বাণীরই প্রতিফলন ঘটেছিলো সম্ভবতো জাভেদ সাহেবের বেলায়।
নিপার বয়স যখন তিন বছর, তখনি তার সৎ মায়ের কোল আলো করে এলো এক ছেলে। পুত্রসন্তান লাভের আনন্দে জাভেদ সাহেব বুঝি ভুলতেই বসেছিলেন যে, তার আগের পক্ষের একটি ফুটফুটে কন্যসন্তান রয়েছে। পুত্রসন্তানকে মা অনেক আদর যত্ন করে খাওয়াতো। নিপা ভাঙা ভাঙা পায়ে মায়ের রুমে গেলে মা
ধমক দিয়ে তাকে রুম থেকে বের করে দিতো। বাচ্চা মেয়েটা যখন পাঁচে পা দিলো তার সৎ ভায়ের বয়স তখন এক বছর পেরিয়ে দুই চলছিলো। ছেলেকে খাওয়ানোর জন্য মায়ের কত প্রচেষ্টা ছিলো, তবুও ছেলে খেতে চাইতোনা। আর নিপা ক্ষুধাতুর দৃষ্টি নিয়ে মুখে একটা আঙ্গুল দিয়ে তাকিয়ে থাকতো তার ছোট ভাইকে খাওয়ানো খাবারের দিকে। মাঝে মাঝে নিপার বাবা তাকে নিজ হাতে খাইয়ে দিতো, কিন্তু ব্যবসার কাজে তিনি বাড়িতে খুব কম সময়ই দিতে পারতেন।
নিপা কেন উনার ছেলের খাওয়ার সময় ড্যাব ড্যাব করে তাকিয়ে থাকে এজন্য সৎ মা এ কথা বলতেও ছাড়েননি যে, এই পিচ্চি মেয়েটা নজর দিয়েছে তার ছেলের খাওয়ায়। সেজন্য তার পিচ্চি ছেলে সাদ আর খেতে চায়না। আর এই নজর দেয়ার অপরাধে নিপাকে সৎ মা নামক মহিলার হাতের থাপ্পড়ও খেতে হয়েছে। কখনও যদি একটা গ্লাস প্লেট নিপার হাত থেকে পড়ে ভেঙ্গেছে তাহলে আর রক্ষা ছিলোনা মেয়েটার। নিপার সৎ মা তার বাবাকে যেভাবে বুঝাতেন সেভাবেই বুঝতো জাভেদ সাহেব। পিচ্চি মেয়েটার দোষত্রুটি দিয়ে জাভেদ সাহেবের কান বিষিয়ে তুলেছিলেন সৎ মা নামক মহিলাটি। নিজের বাড়িতেই একজন কাজের মেয়েরুপে আবির্ভূত হয় নিপা।
নিজের বাড়িতেই বৈষম্যের বেড়াজালে বেড়ে উঠা নিপা যখন যৌবনে পা দিলো তখন সে কিছুটা সুখ খুঁজে পেলো। তবে
সেটা ঘরে নয়। ঘরের বাহিরে। হয়তো পার্কে না হয় কলেজ ক্যাম্পাসে প্রিয় মানুষটির হাতে হাত অথবা কাঁধে মাথা রেখে।
কথায় আছে দেয়ালেরও কান আছে আর আকাশে চাঁদ উঠলে নাকি সবলোকে দেখে। নিপার ক্ষেত্রেও তাই হলো। প্রিয় মানুষের সাথে পা মিলিয়ে চলার খবরটা সৎ মায়ের কানে চলে আসে। রাত ভর বাবা-মা দুজনের হাতেই বেধড়ক মার খাওয়ার পর সকালেই ছেলেটির মেসের সামনে গিয়ে দাঁড়ালো। ছেলেটি নীচে নেমে আসতেই তাকে জড়িয়ে ধরে বোবা কান্না শুরু করলো নিপা।
নাহ্! ছেলেটি তাকে ফেরায় নি। সেদিনই চল্লিশ টাকা রিক্সা ভাড়া দিয়ে কাজী অফিসে গিয়ে কাজীর মোটা খাতাটায় সাইন করে আর তিনবার কবুল বলেই নিপাকে নিজের করে নিয়েছিলো নিপার প্রিয় মানুষ সৌদ। কাজীর মোটা খাতাটায় সাইন করার আগে খুব কাঁদছিলো নিপা। তার হাতটা ঠক ঠক করে কাঁপছিলো।সৌদ তখন চুপিচুপি ফিসফিসিয়ে নিপার কানে বলেছিলো
-ভয় পাবার কিচ্ছু নেই। কোন এক ঝড়ো দিনে বৃষ্টিতে ভিজতে ভিজতেই তোমার ভেজা খোঁপায় কদম গুঁজে দেয়ার জন্য হলেও এই পাগলটাকে আপন করে নাও।
সৌদ কয়েকটা টিউশনী করাতো। দুজনে মিলে ছোট একটা রুম ভাড়া করে নিলো। সুখেই কাটছিলো তাদের দিন। দুটো বাবুই পাখির সংসারে টাকাপয়সার একটু অভাব থাকলেও ভালোবাসার কোন ঘাটতি ছিলোনা। নানান দুষ্টুমি, ফাজলামো অার খুনসুটিতে ভরপুর ছিলো দুজনের জীবন।
প্রথমে সৌদের বাড়ির লোকজন নিপাকে মেনে নিতে রাজি না হলেও পরে সৌদের জেদের মুখে মেনে না নিয়ে পারলো না। কিন্তু সৌদের বাড়ি যাওয়ার পর অভাগী নিপার জীবনে নতুন এক যন্ত্রনার অধ্যায় শুরু হলো। আমাদের দেশে বেশিরভাগ ছেলেদের বাবা-মায়েরা তাদের ছেলের বৌদের আদর করেন বৌয়ের বাবার দেয়ার বিষয়টার উপর নির্ভর করে। বৌ’র বাবার বাড়ি থেকে যত দিবে, বৌ’র অাদরও তত বাড়বে অার যদি না দিতে পারে তবে অনেক কথা শুনতে হবে বৌয়ের। নিপার যেহেতু সৎ মা ছিলো সংসারে, তাই তার বাড়ি থেকে কিছু আসতো না শ্বশুড় বাড়িতে। একদিকে নিপার সৎ মা তাকে পালিয়ে বিয়ে করার জন্য কথা শুনাতো অার অন্যদিকে শ্বাশুড়ীর কাছে সবসময় শুনতে হয়, ছোটলোকের ঝি, বাপ তো বেঁচেই গেছে মেয়ে বিদায় হওয়াতে।
নিপার তার শ্বাশুড়ীর বিরুদ্ধে কোন অভিযোগ ছিলো না, কারণ সে তার শ্বশুর বাড়ির মানুষজনদের নিয়ে তার বাবার বাড়ি যাওয়ার সাহস করতে পারে না। একবার গিয়েছিলো, শ্বশুড়-শ্বাশুড়ী অার নিজের স্বামীর সামনে তার সৎ মা তাকে নানান কথা শুনিয়েছে। সেদিন লজ্জ্বায় নিপার মরে যেতে ইচ্ছা হয়েছিলো। এরপর থেকে নিপার শ্বশুড় বাড়ির কেউ অার নিপাদের বাড়ি যায়না। ঈদ এলে নিপার জা’র বাড়ি থেকে নিপার শ্বশুড় পরিবারের সবার জন্য গিফ্ট অাসতো, কিন্তু নিপার বাবা কিছুই পাঠাতো না। হয়তো সৎ মায়ের জন্য পেরে উঠতো না। এটা নিয়ে নিপাকে যে কত কথা শুনতে হতো তার শেষ নেই।
নিপার জীবনে অারেকটা দুর্বিষহ নেমে এলো সৌদ বিদেশে চলে যাবার পর। নিপাকে দুই মাসের অন্তঃসত্তা রেখে নিপার স্বামী সৌদ চলে গেলো পয়সা উপার্জনের জন্য। নিপার সব দুঃখ-কষ্ট ঢেকে রাখতো সৌদ। সেই সৌদ চলে যাবার পর তার শ্বাশুড়ীর অত্যাচার অারও বেড়ে গেলো। নিপাকে দিয়ে প্রচুর কাজ করানো হতো কিন্তু তার প্রয়োজনীয় জিনিসপত্রগুলো সে ঠিকমত পেতো না। এমনকি তার শ্বাশুড়ী তাকে ঠিকমত খেতে পর্যন্ত দিত না। ভাত দিতো মেপে মেপে। কান্না তার নিত্যদিনের সঙ্গী হয়ে দাঁড়ালো। নিপা তার জীবনের চরম ধাক্কাটা খেলো সেদিন যেদিন তার শ্বাশুড়ী গভীর রাতে তাকে ডেকে নিয়ে বললো
-শুনো বৌ, আমার ছেলে রুজি রোজগারের ধান্দায় দেশ ছেড়ে বিদেশ গেলো মাত্র। তাকে একটু সোজা হতে দাও আগে তারপর না হয় নতুন কেউ অাসুক।
কথাটা শুনে মুহুর্তেই আঁৎকে উঠে নিপা। বিষ্ময় ভরা কণ্ঠে বলে
-মা, আপনি কী বলতে চাইছেন?
-কী বলতে চাইছি বুঝতে পারছো না? বাংলা বুঝ না? পেটের বাচ্চাটা নষ্ট করে ফেলো। সৌদের কামাই রুজী বাড়লে পরে বাচ্চা-কাচ্চার কথা ভাবা যাবে।
কথাটা শুনে নিপা মাথা ঘুরে পড়ে যায়। নিপার যখন জ্ঞান অাসে তখন সে শুনে তার শ্বাশুড়ী চিল্লাপাল্লা করছে। নিপা নাকি অভিনয় শিখে গেছে। তার শ্বাশুড়ীকে কলঙ্ক দেবার জন্যই নাকি সে এমন ভাব ধরেছে। নিপা অাসল ঘটনা অার কাউকে বলতে পারলো না। কেবল নীরবে কাঁদলো কতক্ষণ। নিপা নিজের পেটে হাত রেখে হাউমাউ করে কেঁদে উঠে।
নিপার উপর ক্রমশই বাচ্চাটা নষ্ট করার তাগাদা পড়তে থাকে। বিদেশে যাবার পর সৌদও কেমন যেন পাল্টে গেছে। প্রথম প্রথম ফোনে নিপার খোঁজ-খবর নিলেও এখন অার নেয় না। এদিকে দিনের পর দিন নিপার উপর শ্বশুড় বাড়ির অত্যাচার বেড়েই চলছে। সৌদের সাথে বাচ্চার ব্যাপারে কথা বলায় সৌদ সোজাসাপ্টা উত্তর দিলো যে, তার মা যা ভালো মনে করে নিপা যেন তাই করে। নিপার মাথায় যেন আকাশ ভেঙে পড়লো। জন্মের পর সে খুব আপন করে কাউকে পায় নি। এই একটা মানুষের হাত ধরে সে বাকীটা জীবন শান্তিতে বাঁচতে চেয়েছিলো; কিন্তু মানুষ এতো দ্রুত বদলে যায় সেটা নিপার জানা ছিলো না। নিপা বুঝে যায় যে এই পৃথিবীতে এতো মানুষ থাকতেও সে একা, বড় একা!
একদিন রাতের অাঁধারে নিপা পালিয়ে যায় শ্বশুড় বাড়ি থেকে। সে যে করেই হোক, তার গর্ভের সন্তানকে পৃথিবীর আলো দেখাবে। ঢাকা গিয়ে নিপা গার্মেন্টসে চাকুরি নেয়। একদিন তার কোল আলো করে অাসে একটি ফুটফুটে মেয়ে। এই চাঁদের মত মেয়েটাকে তার শ্বাশুড়ী মেরে ফেলতে বলেছিলো! ভাবতেই নিপার শরীর কাঁটা দিয়ে উঠে। ধীরে ধীরে দিন গড়ায়। নিপার মেয়ের বয়স পাঁচ বছর পূর্ণ হয়। সৌদও নিপার অার কোন খোঁজ নেয়নি। নিপা শুনেছে সৌদ নাকি দেশে এসেছে। তার মা নাকি তাকে বিয়ে করানোর জন্য মেয়ে দেখছে। নিপা রাতে নীরবে বালিশে মুখ চেপে কাঁদে। নিপার মেয়ে সে কান্না টের পেয়ে মায়ের চোখ মুছতে মুছতে বলে
-মা, তুমি কাঁদো কেন? তোমার কি অসুখ?
নিপা তার মেয়েকে শক্ত করে বুকের সাথে জড়িয়ে ধরে বলে
-হ্যাঁ মা, আমার অসুখ। প্রচুর অসুখ।
-মা, তোমার কি জ্বর হয়েছে?
জিজ্ঞাসা করেই মেয়েটা নিপার কপালে হাত রাখে। নিপার কলিজাটা ভরে উঠে। জন্মের এতোদিন পর তার মনে হয়, সে আর এখন একা না। তাকে নিঃস্বার্থভাবে ভালোবাসার মত কেউ অাছে।
অার সেটা তার মেয়ে।
হঠাৎ করেই একদিন নিপার পুরাতন পেট ব্যথাটা বেড়ে যায়। ডাক্তার দেখিয়ে সে জানতে পারে যে, তার দুটো কিডনিই নষ্ট হয়ে গেছে।
এ খবর শুনে নিপা প্রচুর ভেঙ্গে পড়ে। নিজের জন্য তার কোন কষ্ট নেই। তার কষ্ট তার মেয়েটার জন্য। কেবল মা না থাকার কারণে নিপাকে যে ভোগান্তিটা ভুগতে হয়েছে জীবনে, তার মেয়েকেও কী তবে সেটা ভোগতে হবে?
নিপার বাচ্চা মেয়েটা অতকিছু বোঝে না। সে কেবল বোঝে তার মায়ের অসুখ। চিকিৎসা করতে অনেক টাকা লাগবে।
একদিন গার্মেন্টস থেকে ফিরে নিপা তার মেয়েকে কোথাও খুঁজে পেলো না। সে অস্থির হয়ে মেয়েকে খুঁজতে শুরু করলো। মেয়েকে না পেয়ে নিপার পাগলপ্রায় অবস্থা। নিপা যে বাড়িতে থাকে সে বাড়ির পিছনে অবস্থিত একজন দোকানীকে জিজ্ঞাসা করে সে জানতে পারলো যে, তার মেয়ে নিউমার্কেটের দিকে গেছে। নিপা দৌড়ে নিউমার্কেটের দিকে গিয়ে যে দৃশ্য দেখলো, সেটা দেখে তার বুক ফেঁটে কান্না এলো। তার মেয়েটা লোকের কাছ থেকে কান্নাকাটি করে করে দশ-পাঁচ টাকা করে নিচ্ছে মায়ের চিকিৎসা করাবে বলে। মেয়েটা টাকা চাইছে অার কান্না করছে। নিপা দৌড়ে গিয়ে মেয়েকে বুকে জড়িয়ে ধরলো।
রাতে নিপা মেয়েকে বুকে জড়িয়ে শুয়ে অাছে। হঠাৎই তার মেয়েটা বলে উঠলো
-মা, মানুষ মারা গেলে কোথায় যায়?
-আল্লাহ’র কাছে।
-মা, আল্লাহ’র কাছে গেলে কী অার ফিরে আসা যায় না?
-না, মা।
-মা, আমরা যদি অনেক টাকা যোগাড় করতে না পারি তাহলে কী আল্লাহ তোমাকে নিয়ে যাবে?
নিপা এবার হাউমাউ করে কেঁদে দিয়ে বললো
-চুপ কর মা, চুপ কর। আমি সব সময় তোর সাথেই থাকবো। তোকে ছেড়ে কোথাও যাবো না।
-সত্যি যাবে না তো মা? তাহলে পাশের বাসার অান্টি যে বলে টাকা না হলে তোমাকে আল্লাহ্ নিয়ে যাবে!
-মিথ্যা বলে মা। ওরা মিথ্যা বলে।
-মা, আমি একটা বুদ্ধি বের করেছি।
-কী বুদ্ধি?
-অাল্লাহ যদি তোমাকে নিয়ে যায় তাহলে আমি নামাজ পড়ে আল্লাহর কাছ থেকে তোমায় চেয়ে নিয়ে আসবো অাবার। পাশের বাসার আন্টি অারও বলেছে, আল্লাহর কাছে কোনকিছু চাইলে, সেটা তিনি কবুল করেন। মা, তুমি জানো? অাজ আমি আল্লাহর কাছে নামাজ পড়ে কী চেয়েছি?
-কী চেয়েছিস মা?
-আল্লাহকে বলেছি, তিনি যেন তোমাকে আমার কাছ থেকে না নিয়ে যায়। তোমাকে নিয়ে গেলে আমাকে কে ভাত খাইয়ে দিবে? কে গোসল করিয়ে দিবে?
নিপা আর নিজেকে নিয়ন্ত্রন করতে পারে না। শব্দ করে কাঁদতে থাকে।
নিপা যেদিন মারা গেলো সেদিন সকালে তার মেয়েটা মায়ের কাছে বসে খুব কাঁদছিলো আর বলছিলো, তুমি খুব পঁচা মা। তুমি না বলেছিলে অামাকে ছেড়ে যাবে না, তাহলে এখন চলে গেলে কেন?
নিপার লাশের কাছে থাকা সবাই এই বাচ্চা মেয়েটির কথা শুনে নীরবে চোখের পানি ফেলছিলো। হয়তো মায়ের মতই একটা বিষাদভরা জীবন অপেক্ষা করছে নিপার মেয়েটার জন্য। সেই বিষাদ! যেই বিষাদ নিয়ে বেঁচে ছিলো নীপা!

সম্পর্কিত পোস্ট

যদি পাশে থাকো

যদি পাশে থাকো

তাসফিয়া শারমিন ** আজকের সকালটা অন্য রকম। সাত সকালে আম্মু বকা দিলো। মানুষের ঘুম একটু দেরিতে ভাঙতেই পারে। তাই বলে এত রাগার কী আছে ?একেবারে যে দোষ আমারও তাও নয়। মানুষ ঘুম থেকে উঠে ফোনে বা দেওয়াল ঘড়িতে সময় দেখে। কিন্তু আমি উঠি জানালার পর্দা সরিয়ে বাইরের আলো দেখে।কে জানে...

কুড়িয়ে পাওয়া রত্ন

কুড়িয়ে পাওয়া রত্ন

অনন্যা অনু 'আমিনা বেগম' মেমোরিয়াল এতিমখানার গেট খুলে ভেতরে ঢুকতেই ওমরের বুকটা ধুক ধুক করতে শুরু করে। ওমর ধীর গতিতে ভেতরে প্রবেশ করে। চারদিকে তখন সবেমাত্র ভোরের আলো ফুটতে শুরু করেছে। ওমর গত রাতের ফ্লাইটে আমেরিকা থেকে এসেছে। সে এসেই সোজা আমিনা বেগম মেমোরিয়াল এতিমখানায়...

দাদাভাইকে চিঠি

দাদাভাইকে চিঠি

প্রিয় দাদাভাই, শুরুতে তোকে শরতের শিউলি ফুলের নরম নরম ভালোবাসা। কেমন আছিস দাদাভাই? জানি তুই ভালো নেই, তবুও দাঁতগুলো বের করে বলবি ভালো আছি রে পাগলী! দাদাভাই তুই কেন মিথ্যা ভালো থাকার কথা লেখিস প্রতিবার চিঠিতে? তুই কি মনে করিস আমি তোর মিথ্যা হাসি বুঝি না? তুই ভুলে গেছিস,...

৬ Comments

  1. Halima Tus Sadia

    গল্পটি পড়ে খুব খারাপ লাগলো।
    আমাদের সমাজে নিপার মতো এমন সৎ মা অহরহ আছে।ছোট শিশু নিপা।
    তার সৎ মা পারতো তাকে আদর যত্ন করে বড় করতে।কিন্তু তা করলো না। কিছু সৎ সা এমনই কখনো সৎ মেয়েকে ভালো চোখে দেখে না।সবসময় ত্রুটি খুঁজে।এটা ভাবে না তারাতো শিশু।তাদের এ তো মন চায় মায়ের ভালোবাসা পেতে।সৎ মা খুব কম ভালো হয়।
    আর বাবাগুলো ও কেমন বদলে যায়।মেয়ের প্রতি খেয়াল রাখে না।ভালো চোখে দেখে না।বউ পাগলা হয়ে যায়।
    ভালো মন্দ বিচার করে না।
    আল্লাহ সবাইকে সঠিক জ্ঞান দান করুক।

    বানানে তেমন কোনো ভুল চোখে পড়েনি।

    মুহুর্তেই-মুহূর্তেই
    বিষ্ময়-বিস্ময়
    নিয়ন্ত্রন-নিয়ন্ত্রণ
    পায় নি একসাথে হবে।
    লেখিকার জন্য অনেক শুভ কামনা রইলো।

    Reply
    • Mohasina Begum

      ধন্যবাদ

      Reply
  2. Anamika Rimjhim

    কারণেঅকারণে —কারণে-অকারণে*
    মুহুর্ত-মুহূর্ত*
    সবলোকে-সব লোকে*
    নিয়ন্ত্রন-নিয়ন্ত্রণ*
    গল্প বরাবরেই মতই সুন্দর আপু।কিন্তু এই গল্পে তেমন নতুন কিছু পেলাম না।আপনার গল্পের নিয়মিত পাঠক হিসেবে একটু হতাশ হয়েছি বলতে পারেন। যাই হোক,শুভ কামনা।

    Reply
  3. শুভ

    ????????????????

    Reply
  4. Jannatul Ferdousi

    যখনি→ যখনই

    স্ত্রী এর→ স্ত্রীর

    ছুড়ি→ ছুরি

    কন্যসন্তান→ কন্যাসন্তান

    মেয়েরুপে→ রূপে

    নি মূল শব্দের সাথে বসে।

    ঠক ঠক→ ঠকঠক

    মত→ মতো
    ভেঙ্গে→ ভেঙে

    নিয়ন্ত্রন→ নিয়ন্ত্রণ

    ….
    গল্পটা মোটামুটি ট্র্যাজেডি হলেও একদম সাদামাটা ছিল। তবে আপনার লেখার হাত ভালো আছে। চর্চা করলে আরো এগিয়ে যাবেন।
    গল্পটা নিয়ে বেশি কিছু বলার নেই। তবে আপনার হাতেই হবে অনেক ভালো গল্পের সৃষ্টি।
    শুভ কামনা।

    Reply
  5. Sajjad alam

    ভালো লেগেছে

    Reply

Leave a Reply to Halima Tus Sadia Cancel reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *