লেখা:হাসিনা ইসলাম
,
বারান্দায় ইজি চেয়ারে বসে দোল খাচ্ছে আর বাম হাতে সিগারেট টানছে বাদশা মিয়া। চারদিকে এখন তার রাজত্ব। মানুষের টাকা দিয়ে ঢাকাসহ দেশের সব বড় শহরে বড় বড় বাড়ি করেছে। ব্যাংকে গচ্ছিত আছে কোটি টাকা। তার জন্য কাজ করে অনেক চামচা, এরা সবাই মাদক ব্যবসায়ী। মদ, গাঁজা, ইয়াবা, ফেনিসিডিল ও হেরোইনের বড় ব্যবসা। কোন এক অদৃশ্য শক্তির কারনে এখনও ধরা ছোঁয়ার বাইরে এরা। ডান হাতে মদের বোতল বাদশার , সেখান থেকে ক্ষণে ক্ষণে চুমুক দিচ্ছে। আহ! কী শান্তি!
-মকবুল, এই মকবুইল্লা…
হাঁপাতে হাঁপাতে মকবুল দৌড়ে এলো,
-ডাকছেন , সাব…
-ডাকছেন সাব , বলে ভেংচিয়ে উঠল বাদশা। বলি থাকস কোথায়? ডাকন লাগবো কেন তোরে? সেই কখন থেকে বসে আছি। জমিদারী পাইছ নাকি? শিঘ্রই এক কাপ চা নিয়ে আয় , যা।
-যাইতাছি…
এক মিনিটের মাথায় চা নিয়ে হাজির হলো মকবুল।
-তা খবর কিরে? মাষ্টার টাকা দিতে রাজি হইলো?
-না সাব, উনি টাকা দিবেন না। সাফ জানিয়ে গেছেন। ওনার পরিশ্রমের টাকা আপনাকে মদ খাওয়ার জন্য দিবে না।
-কী? এত্তো বড় সাহস! আমার সাথে বেয়াদবি! ওরে উচিত শিক্ষা দিব আমি। লাশ চাই , লাশ! যা রতন, রাজুরে ডেকে আন।
-একটা কথা কই সাব, মাষ্টারকে আপনে একবার বলে দেখেন। উনি এলাকার গণমান্য লোক। লাশ বানাইলে আপনের বিপদও হইতে পারে। সবাই উনারে ভাল মানুষ হিসেবে চিনে।
-হা হা হা। আমার হইবো বিপদ! শোন , এমন কোন শক্তি নাই এই বাদশার একটা পশম ছিড়বো। আমার এখন রাজত্ব চলছে। সবাই আমার কথায় উঠবে বসবে।
তবু তুই যখন বললি, যা মাষ্টারকে ডেকে আন।
,
-ডাকছ নাকি বাদশা মিয়া? কিছু বলবা?
– আরে মাষ্টার আইছো। বসো বসো। তা তোমার এত দেমাগ ক্যা? তুমি নাকি আমার কথা অমান্য কর। এত সাহস পাও কই?
-আমি তোমার থেকে অনেক বড় বাদশা, সম্মাণ দিয়ে কথা বলবা। ৩৮ বছর চাকরি করছি। খেয়ে না খেয়ে দিন কাটাইছি। কোনদিন অন্যায়ভাবে একপয়সা রোজগার করি নাই। এখন শেষ বয়সে পেনশনের টাকা কয়টা দিয়ে বাড়িটা করে একটু শান্তিতে থাকব তা তুমি দিতে চাও না কেন? তুমি কি মরবা না? খুন-খারাবি আর চাঁদাবাজি আর কতকাল করবা? তোমারে তিনলাখ টাকা দিলে তো আমার আর বাড়ি করা সম্ভব হবে না। এই শেষ বয়সে নিজের বাড়িতে একটু শান্তিতে থাকবো, সারা জীবন তো ভাড়াই থাকতেছি। তুমি কতু বেশি বাড়াবাড়ি করতেছ। আল্লাহ সহ্য করবে না। আল্লাহর গজব পড়বে, গজব!
-চুপ মাষ্টার চুপ! জ্ঞাণ দিও না একদম। এক্কেরে খুলি ফুটা কইরা দিমু। আমি একবার ঠুস কইরা দিলে , কে তোমরে বাঁচাইব? শোন একটা প্রস্তাব দেই। তোমার মাইয়্যাডারে আমার লগে বিয়া দেও। হে হে … তাইলে আর আমারে টাকা দেওন লাগব না, উল্টা তোমার বাড়ি করার সব খরচ আমি দিমু।
-বাদশা মিয়া! তোমার এত বড় সাহস! তুমি কীভাবে কল্পন করো তোমার মত একজন চাঁদাবাজ খুনির সাথে আমি আমার মেয়ের বিয়ে দেব?
-মুখ সামলে কথা ক মাষ্টার। কার লগে কী কস? আমার ক্ষমতা জনোস? তোরে এমন করতে পারি , দুনিয়ার বুকে তোর কোন অস্তিত্ব থাকব না। একটা পখিও টের পাইব না।
-তোর এত অহংকার আল্লাহ চাইলে ধূলায় মিশিয়ে দিতে পারেন। নিজের কৃতকর্মের শাস্তির জন্য তৈরী হ। আমার আল্লাহ আছেন ।
-এই , তোরা কইরে… মাষ্টাররে একটা ডলা দে তো। বাড়ছে বেশি।
বলতেই দুই চামচা এসে ইচ্ছে মত মারতে লাগলো লতিফ মাষ্টারকে।
-আমি তোর নামে মামলা করব বাদশা। এত অন্যায় সহ্য করা যায় না।
-হা হা হা। মামলা করবি? মামলা নিব কেডা? সব পুলিশ, ডিসি , এসপি আমার বাম পকেটে থাকে।
-আল্লাহ তোর বিচার করবে। তোর দিন বোধহয় শেষ হয়ে এসেছে। জুলুমের তো একটা মাত্রা থাকে । তুই সব ছাড়িয়ে গেছস।
-আর কথা কইয়ো না মিয়া, কাল সকাল ১০টা পর্যন্ত টাইম দিলাম। এর মধ্যে হয় তিনলাখ টাকা দিবা নয় মাইয়্যা দিবা। নইলে তোমার ঘাড়ে মাথা থাকব না। এই তোরা যা, ওরে বাড়িতে দিয়ে আয়।
,
-হায় আল্লাহ! তোমার এমন অবস্থা কে করল? সালমা কই রে… দেখ তোর বাবার অবস্থা।
– সালমার মা, এত উতলা হইয়ো না, মেয়েটা টেনশন করব। বাদশার জুলুম আর সহ্য হচ্ছে না গো…
– কি আর করবা! সব বড় নেতারা ওর পক্ষে । ক্ষমতা পেয়েই তো এত জুলুম করে। আল্লাহ ওর বিচার করব। চলো গরম পানি করে শরীরটা মুছিয়ে দেই। ইস রে! কনুই এর কাছটা কেটে রক্ত বের হচ্ছে।
-সবার উপরই জুলুম করে। বাধ্য হয়ে সবাই মেনে নেয়। আমি নিব না সালমার মা, কালকে সকাল ১০টার মধ্যে তিনলাখ টাকা দিতে হবে নয়তো সালমাকে দিতে হবে। এটা কী মেনে নেবার মতো?
– বলো কী! হায় হায়, এখন কী হবে?
-আহা কান্না করো না। আল্লাহ নিশ্চই একটা উপায় বের করবেন। জুলুমবাজদের জুলুম বেশিদিন টিকে না। আল্লাহ মজলুমের দোয়া কবুল করেন।
-দোকান দিলে চাঁদা, জমি কিনলে চাঁদা, বাড়ি করতে চাঁদা… এত কষ্টের টাকা তোমার । আল্লাহ এর বিচার করো , মাবুদ।
-আল্লাহ ঠিক বিচার করবে দেখবা। কয়দিন আগে রমিজ শেখের দোকান থেকে ৫০ হাজার টাকা চাঁদা চাইছে। বেচারা ছোট ব্যবসা করে। এত টাকা হুট করে কোথায় পাবে? এজন্য সেই যে রাতের বেলা ওকে কারা যেন ধরে নিল ,আর ফিরে এলো না। আহারে! দুইটা বাচ্চা নিয়ে বউটা সরাদন কান্না-কাটি করতেছে। আমাদের কী হবে আল্লাহই ভালো জানেন।
-আল্লাহই তো এখন আমাদের ভরসা।
,
লতিফ মাষ্টারের আঘাত ততটা গুরুতর ছিল না। দুইটা পেইনকিলার খেয়ে শুয়েছিল রাতে , এতেই ব্যথা মোটামুটি কমে গেছে। কিন্তু মনের মধ্যে চিন্তার ঝড়। বাদশা তো আজকে আর ছেড়ে দেবে না। রাতে ঔষধের ক্রিয়ায় ঘুমিয়ে গেলেও ফজরের আযানের পরপরই ঘুমটা ভেঙ্গে গেল। উঠে অযু করে নামাজ পড়লেন। এরপর বাইরে হাঁটতে বের হলেন। এসে দেখেন তার স্ত্রী ঘুমিয়ে গেছেন।
সারারাত আল্লাহর দরবারে কান্নাকাটি করে নফল নামাজ পড়লেন, তিনি জানেন আল্লাহর কাছে চাইলে আল্লাহ কখনোও নিরাশ করেন না।ফজরের নামাজ পড়ে ঘুমিয়ে গিয়েছিলেন সালমার মা।
তাকে ঘুমাতে দেখে আবার বেড়িয়ে গেল মাষ্টার। মিনহাজ স্যারের সাথে একটু আলোচনা করা দরকার । কিন্তু যাবার পথে একটা খবর শুনে দৌড়ে বাসায় ফিরে এলেন।
-কই গো সালমার মা শুনছ?
ঘুম ঘুম চোখে লাফ দিয়ে উঠলেন আয়েশা বেগম।
-কী হইছে সালমার বাবা? তুমি কই যাইতাছো? টাকাই নিয়া যাও। ওরে দিয়া আস। আমার মেয়ে আমি ওই বদমাইশের কাছে দিব না। আল্লাহ এ কোন পরীক্ষায় ফালাইলা!
-আহা , শান্ত হও সালমার মা। আল্লাহ যা করেন ভালোর জন্যই করেন। আলাহ মজলুমের ফরিয়াদ শুনেছেন, কবুল করেছেন। আলহামদুললাহ!
– কী বলতেছো এসব? টাকা নিয়া এখনই যাইবা? পাঞ্জাবী পরছো যে?
-হা এখনই যাচ্ছি। তবে টাকা নিয়ে নয়, টাকা ছাড়াই। আল্লাহ উত্তম বিচারক। জুলুম আর কতদিন বলো? আল্লাহ চাইলে এক সেকেণ্ডে সব ধ্বংস করে দিতে পারেন। দুনিয়াতে এসে মানুষ দুই দিনের বাদশাহ হয়ে যায়, সে স্মরণ রাখে না তাকে যে একদিন মরতেই হবে। মিথ্যা অহংকারে মাটিতে পা পড়ে না, কিন্তু একদিন এই মাটির কাছেই তাকে ফিরে যেতে হয়। দুই দিনের এই দুনিয়ায় বেঁচে থাকতে হলে ভাল কাজ করতে হয়। তাহলে দুনিয়তেও শান্তি মেলে। গতরাতে কারা যেন বাদশাকে মেরে রেখে গেছে। তুমি টুপিটা দেও। বাদশার জানাজার নামাজটা পড়ে আসি।
সুন্দর হয়েছে। সময়ের অভাবে লিখতে পারলাম না
ফেনিসিডিল- ফেন্সিডিল*
শিঘ্রই -শীঘ্রই*
জ্ঞাণ-জ্ঞান*
কতু-কিন্তু*
শব্দসং্খ্যা আর সৃজনশীলতা কম ছিল। তবে ভাল ছিল। শুভ কামনা 🙂
বেড়িয়ে→ বেরিয়ে
গণমান্য→গণ্যমান্য
বাকি বানান গুলো আগের কমেন্ট এ উল্লেখ আছে।
গল্পটায় সৃজনশীলতা বা নতুনত্ব কোনোকিছুর আভাষ পাওয়া যায়নি সিনামাটিক গল্প হয়ে গেছে, এমন দৃশ্য বাংলা সিনেমায় অনেক দেখা গেছে, তবে সাজানো গুছানো লেখাছিলো। কাহিনি একটা ঘটনাকেন্দ্রিক হয়ে যাওতে একমুখী গল্প হয়ে গেছে। আরো ভালো প্রত্যাশা করি ♥ শুভকামনা
ফেনিসিডিল→ ফেন্সিডিল
ডাকন লাগবো তোরে? জমিদারী পাইছ নাকি?→ তোরে বলে পাইছ কথা বেমানান
ছিড়ব→ ছিঁড়বো
কতু→ কিন্তু
সম্মাণ→সম্মান
সারদিন→ সারাদিন
কান্না-কাটি→ কান্নাকাটি
আরো কিছু ভুল আছে। দেখে নিবেন।
গল্পটা মোটামুটি ভালো হলেও ফুটে ওঠেনি। মনে হচ্ছে একটা সিনেমা চলছে, যা ছোটবেলায় দেখেছি।
তবে গল্পে একটা শিক্ষা আছে। জুলুমের বিচার হবেই।
ভালো লিখতে পারেন বটে তবে আরো চর্চা করতে হবে।
শুভ কামনা
ভালো লিখেছেন।
খারাপ মানুষরা দুনিয়াতে যতই টাকার বাহাদুরি করুক না কেনো একদিন এই দম্ব ভেঙ্গে যায়।
বাদশার ও ভেঙ্গে গেছে।
অত্যাচারীর বিচার একদিন করেই মহান আল্লাহ তাআলা।তিনি বসে বসে সবকিছুই দেখেন।
গল্পটা সিনেমার কাহিনির মতো হয়ে গেছে।
আরেকটু বাড়িয়ে সুন্দর করে লিখতে পারতেন।
বানানে ভুল আছে
ফেনিসিডিল-ফেন্সিডিল
দুনিয়তে-দুনিয়াতে
সরদিন-সারাদিন
গনমান্য-গন্যমান্য
কতু-কিন্তু
শিঘ্রই–শীঘ্রই
কান্না কাটি–কান্নাকাটি
সম্মাণ–সম্মান
বানানের প্রতি যত্নশীল হবে।
যথাস্থানে দাড়ি কমা দিবেন।লেখার সৌন্দর্য বৃদ্ধি পাবে।
শুভ কামনা রইলো।