লেখিকা-উম্মে কুলসুম সুবর্ণা
এই তো সেদিন মেলা থেকে বাসার ছোট্ট ছেলেটা আমাকে কিনে এনেছিলো। তখন তো ছানা পাখি ছিলাম এখন বুড়ো হয়েছি।
বাসায় মোট ছয়জন থাকে। আগে ভাবতাম দুই রুমের ক্ষুদ্র ফ্ল্যাট এ এত গুলো মানুষ কিভাবে থাকতে পারে। পরে বুঝলাম এই সব কিছু ছেলের বউয়ের চমৎকার। অনেক গুণ তার বৃদ্ধা আর বৃদ্ধকে বৃদ্ধাশ্রমে পাঠিয়ে দুই ছেলেমেয়ে সহ দিব্যি ঘুরে বেড়াচ্ছে চোখের সামনে। এই তো সেদিন বৃদ্ধার চিঠি এলো বৃদ্ধ নাকি মারা গেছে। ছেলে তো যতই হোক মা-বাবার জন্য একটু হলেও মায়া আছে।মা যখন আঁচল দিয়ে মুখ ঢেকেছিলো ছেলের তখন চোখে জলে ছেয়ে গিয়েছিলো। তাই মাকে আর ফেলে দিয়ে আসতে পারেনি ঘরেই নিয়ে এসেছিলো সেদিন। মার পরনে শাড়ি নোংরা,মুখে গন্ধ এই সব দেখে ছেলের বউ ছিঃ ছিঃ করেছিলো তাই বান্ধবীর সামনে মায়ের পরিচয় হলো বাড়ির কাজের খালা।
মরার ক’দিন আগে বৃদ্ধা বিছানায় সারতো সব কাজ। তার টয়লেটে উঠে যাবার মত শক্তি ছিলো না।
এই দেখে বাড়ির বউ ঘৃণা দেখালো।এই তো সেদিন বৃদ্ধার জায়গায় হলো রান্না ঘরে। মা বলল-“আল্লাহ অভিশাপ দিবে দেখো”। অভিশাপ লাগার আগেই বৃদ্ধার হলো ন্যাচারাল ডেইথ।শুধু আমি তো দেখেছিলাম মরার তিন দিন আগের থেকে বৃদ্ধাকে খাবার দেয়া বন্ধ হয়ে গিয়েছিলো।
যেদিন বৃদ্ধা মারা গেল সেদিন থেকে আমারো খাবার দেয়া বন্ধ হয়ে গেল। খাঁচায় থাকতে থাকতে আমি হয়ে গেলাম রোগা,হাড্ডিসার।
যেখানে মায়ের দেখা শোনা হলো না। সেখানে আমার দেখা শোনা কি হবে।ছোট ছেলেটা এখন পান-সিগারেট খায় আর ছোট মেয়েটার বাচ্চা হয় না আজ চার বছর হলো।
এইদিকে বৃদ্ধা মরে যাবার পর ছেলের বিজনেস এ ভাঁটা পরল । বাড়ির বউ এখন আর হন্যে হয়ে পার্লার কিংবা শপিংমলে ঘুরে বেড়ায় না।ছোট মেয়েটার জন্য মানত করে দিন রাত আল্লাহর দরবারে।
০ Comments