ভিডিও
-স্বাধীন পারভেজ
উঠনের কোনে জটলা পাকিয়ে আমার আত্মীয় স্বজনেরা সমালোচনায় মেতে উঠেছে। প্রবল উত্তেজনায় সবার চেহারা অন্য রকম দেখাচ্ছে । কে কার চেয়ে বেশি রাগ দেখাতে পারে তার একটা প্রতিযোগিতা চলছিল যেন! ছোট মামা ও পক্ষের অভিভাবক মেয়ের চাচাকে ডেকে দু’তিন বার ধমকেছেন। ওদের দিক থেকে পরিবেশ একদম শান্ত । চুপচাপ । লজ্জা আর অপরাধবোধে ঢাকা এবাড়ির প্রতি টা মানুষের চেহারা ।
একটু আগে পাত্রী মেয়েটিকেও দেখেছিলাম ঠিক এই রকম ভীত চেহারায় শুকনো চোখে তাকিয়ে থাকতে। তখন ভেবেছিলাম বিষয়টা স্বাভাবিক। পরপুরুষ পাত্র আর একগাদা অপরিচিত লোকের সামনে এই টুকুন মেয়ে! একটু তো ঘাবড়ে যাবেই।
পাশে বসে আমার সেজ বোন কিছু প্রশ্ন করে তাকে অন্দর মহলে পাঠিয়ে দিয়েছিলেন । ঠিক সেই সময় অদ্ভুত একটা বিষয় ঘটেছিলো । খুব সম্ভবত আর কেউ বিষয়টা খেয়াল করেনি। তবে আমি দেখেছি, মেয়েটি চেয়ার থেকে উঠে যাবার সময় করুন চোখে আমার দিকে তাকিয়েছিল কয়েক মুহুর্ত । তখন ওর ঠোঁট কাপছিল। যেন কিছু বলতে চাইছিল আমাকে । এমনকি ঘরে ঢোকার পরও দরজার আড়াল থেকে কয়েক বার মুখ বের করে আমায় দেখছিল সে। চোখে সেই আকুলতা। এতে বেশ সন্দেহ হয় আমার। কৌতুহল বাড়ে। প্রব্লেম কি মেয়েটার?
কিছুক্ষণের মধ্যেই কৌতুহল মিটে যায়। খাবার খাচ্ছিলাম তখন আমরা । প্রীতিভোজ! ঠিক তক্ষুনি ঘটে গেলো অপ্রীতিকর ঘটনাটি। মেয়ের প্রতিবেশীদের কানাঘুষা থেকে আমাদের দলের এক মহিলা জানতে পেরেছেন- এ মেয়ের কলংক আছে। ভয়ানক কেলেঙ্কারি। নগ্ন ভিডিও আছে এই মেয়ের! শোনা মাত্রই খাওয়া ফেলে পড়িমরি করে ছুটে এসেছে সে, বাইরের ঘরে। যেখানে আমরা পুরুষেরা খাচ্ছিলাম।
মুহুর্তে ই সব ওলট পালট হয়ে যায় । ক জন খাওয়া শেষ করে, বাকিরা না খেয়েই উঠে আসে । ছি ছি! এ কি কান্ড! এত বড় কলংক গোপন করে কি কেউ মেয়ে বিয়ে দেয়?
কত বড় কলংক?
ফিসফিসিয়ে নয়, বেশ উচ্চস্বরেই কথা গুলো কানে আসে আমার। মেয়েটি গোসল করছিলো । নিজের বাড়ির আঙিনায়, কলপাড়ে। এক বখাটে ছেলে মোবাইলে সে চিত্র ধারণ করে নিয়ে যায়। তারপর মোবাইল থেকে কম্পিউটারে। এক সময় ইন্টারনেটে ছড়িয়ে পড়ে ভিডিও টি । গ্রামেও অনেকের মোবাইলে ঘুরতে থাকে এই গোসল চিত্র ।
মেয়েটির কলেজ যাওয়া বন্ধ হয়ে যায় । অথচ সামনেই ওর ইন্টার পরিক্ষা । ধুত্তেরি, পরিক্ষা জাহান্নামে যাক, মেয়েটির বেঁচে থাকাই দায় হয়ে ওঠে । তড়িঘড়ি করে বিয়ে দেয়ার চেস্টা চলে । পারিবারিক সচ্ছলতা আর চেহারা ভালো হওয়ায় পাত্রও আসে বেশ। কিন্তু শেষ অব্দি বিয়ে পর্যন্ত আর গড়ায় না!
টানা দেড় মাসে ছয়জন পাত্র হাতছাড়া হয়েছে। আমি সপ্তম ।
একটি চার মিনিটের ভিডিও যেন মেয়েটির নাকের ওপর অসহ্য দেয়াল তৈরী করে দিয়েছে । ও দম ছাড়তে পারছেনা ঠিক ভাবে । এক পৃথিবী মানুষ যেন একটা “মেয়ে শরীর” হিসাবে আলাদা করে ফেলেছে ওকে।
প্লাস্টিকের চেয়ারে কাঠাল গাছ তলায় বসে হাতপাখা চালাতে থাকি আমি। বড্ড গরম পড়েছে আজ। নিজেই নিজেকে বাতাস করতে থাকি। এ বাড়ির কেউ আর আমার কাছে ঘেসছে না। কেনো? নিশ্চয় ভয়ে। পেছনে ফিরে তাকাই। দু স্থানে জটলা করে আমাদের পক্ষের নারী পুরুষেরা এবাড়ির লোকেদের অবিবেচনাপ্রসূত কাজের সমালোচনা করে চলছে লাগাতার ।
আমি অন্য হিসাব মেলাতে থাকি। যতদুর জানি মেয়েটির বয়স বিশ বাইশ বছর । শরীরের শিশুত্ত্ব পেরিয়ে গেছে … তা ও দশ বারো বছর হবে। এই দশ বারো বছরে মেয়েটি ধীরে ধীরে পরিপুর্ন মেয়ে হয়ে উঠেছে। দিনের হিসাবে তা প্রায় চার হাজার দিন!
কপালে তিন খানা ভাজ ফেলে ভ্রুকুটি করে ভাবতে থাকি আচ্ছা, এই চার হাজার দিনেই তো মেয়েটিকে গোসল করতে হয়েছে । যেভাবে আমি গোসল করি। যেভাবে আমার বোন গোসল করে। এমন কি আমার আম্মাজিও!
গায়ে পানি ঢেলে । শরীর কচলে। কাপড় খুলে ।
খুব কি সহজ না, চিত্রটা ভিডিও করা? আমরা কি সংরক্ষিত কোন গোপন কুঠুরিতে গিয়ে গোসল করতে পারি? রোজ রোজ?
একবার দেখে ফেললেই শরীরটা পচে যায়? নষ্ট হয়ে যায়? অচ্ছুত হয়ে পড়ে?
আমার মাথা ঘুরতে থাকে ।
মেয়েটির করুন মুখটা চোখে ভেসে ওঠে । যে ছেলেটা ওর গোসলের ভিডিও ধারণ করে ছড়িয়ে দিয়েছে তার চেহারায় নিশ্চয়ই এমন কোনো আকুলতা থাকবে না । তার বিয়েও নিশ্চয়ই আটকাবে না আমাদের এই সভ্য সমাজ। যে মানুষগুলোর মোবাইলে ওই ভিডিও টি ঘুরে ঘুরে বেরাচ্ছে তারাও অনুশোচনায় মুখ কালো করবে না কোনদিন। যেমনটা এবাড়ির লোকগুলো করছে। পুরো পরিবারটি যেন জামা কাপড় খুলে রাস্তায় এসে দাড়িয়েছে । অসীম লজ্জায় হাত দিয়ে মুখ ঢেকে রেখেছে, কিন্তু শরীরের নগ্নতা ঢাকতে পারছে না কিছুতেই । সমাজ যেন ওদের পোশাক আশাক খুলে নিয়ে রাস্তায় এনে দাড় করিয়ে দিয়েছে ।
ধুর! সমাজ তো আমরাই তৈরি করি!! এমনকি আমিও!!!
নড়েচড়ে উঠি। ঝড়ের গতিতে সিদ্ধান্ত সাজাতে থাকি মাথায়। পেছনে ফিরে তাকাই । দুটো সাদা মাইক্রোবাসের পেটে চেপে আসা আমাদের পক্ষের একগাদা লোকের ভিড়ে আমি মানুষ খুজতে থাকি। যে মানুষগুলো ঘাড় ঘুরিয়ে বলবে-আরে ধুর! এইটা কোন বিষয় হলো নাকি? মেয়েটি তো স্রেফ গোসল করছিলো । গোসল করা দোষ নয় । দোষ হলো কারো গোসলের ভিডিও ধারণ করে তা ছড়িয়ে দেয়া । যে অন্যায় করেছে তাকে গিয়ে ধরুন । এই মেয়ের কোন দোষ নাই। আমাদের বাড়ির মেয়েরাও রোজ গোসল করে। এই মেয়ের মতোই। কোন সমস্যা নেই ।
আমরা এখানেই ছেলে বিয়ে করাবো। হুম।
দুম করে চেয়ার ছেড়ে উঠে দাড়াই। সম্মুখের জনস্রোত থেকে মানুষদের আলাদা করে দল বানাতে হবে। কেউ আমার সংগে না এলেও সমস্যা নেই । সংসার টা আমিই করবো । সিদ্ধান্তটা আমার একার হলেও ক্ষতি নাই । নিজের সিদ্ধান্ত কে যেহেতু সম্মান করি সুতরাং জিতেই ছাড়বো ইন্ শা আল্লাহ!
আচমকা দেহমনের শক্তি বেড়ে দশ গুণ হয়ে যায় । খানিকটা এগিয়ে যেতেই দরজার আড়াল থেকে করুণ মুখটা উঁকি দেয়! আমি থমকে দাড়িয়ে চেয়ে থাকি। আহা! দু’দিন বাদে যখন বিয়ে করা বউ হিসাবে নতুন শাড়িতে জড়ানো এই মানুষটার মুখোমুখি হবো তখন ওর অনুভুতি কেমন হবে? কতটা খুশি উপচে পড়বে ওই চাঁদ মুখ দিয়ে? ভাবতেই আমার চোখের সামনে এক নিস্পাপ আনন্দ মাখা মুখচ্ছবি ভিডিও চিত্রের মতো ভাসতে থাকে ।
ইশ!
এই খুশির ভিডিও টি যদি সবার মোবাইলে ছড়িয়ে দিতে পারতাম!!!
মনে মনে আক্ষেপ করতে থাকি….।
-তেজগাও, ঢাকা থেকে।
মুহুর্ত-মুহূর্ত*
ক জন-ক’জন*
পরিক্ষা-পরীক্ষা*
চেস্টা-চেষ্টা*
সচ্ছলতা-স্বচ্ছলতা*
নিস্পাপ-নিষ্পাপ*
ইত্যাদি! বানানের দিকে নজর দিন।শব্দসং্খ্যা কম ছিল।শুভ কামনা।
কোনে→ কোণে
সেজ→ সেজো
মুহুর্ত→ মুহূর্ত
নি শব্দের সাথে বসে
ছি ছি → ছিঃ
পরিক্ষা→ পরীক্ষা
চেস্টা→ চেষ্টা
তা ও→ তাও
পচে→ পঁচে
দাড়াই→ দাঁড়াই
খুজতে→ খুঁজতে
টি শব্দের সাথে বসে। যেমন – আমটি, চোখটি।
নিস্পাপ→ নিষ্পাপ
আরো কিছু বানান ভুল আছে।
তাছাড়া গল্পের থিম সুন্দর হলেও সাজাতে পারেননি আপনি। এজন্য প্রয়োজন বেশি বেশি গল্প পড়া। এরপর চর্চা করা। লেখাটা মনে হচ্ছে আনাড়ির ছোঁয়া। তবে এভাবেই লিখতে লিখতে আপনি বড় কিছু লিখে ফেলবেন এমনটাই মনে করি।
কিন্তু এ গল্পটি সে কাতারের নয়। গল্পের উপস্থাপনে অনেক সমস্যা আছে।
আপনার আগামী ভবিষ্যত ভালো হোক, কলম চালিয়ে যান।
শুভ কামনা
কিছু বাস্তবধর্মী কথা তুলে ধরেছেন।
একটা মেয়ে শুধু গোসল করছে।খারাপ কাজতো করে নাই।যে ভিডিও করছে তার অন্যায়।তার জন্য মেয়েটার বিয়ে ভেঙ্গে যায়।সত্যিই মেয়ে মানুষের জীবনটা বড় কষ্টের।সবকিছুতেই ভাবতে হয়।
তবে ছেলেটা বুঝতে পারছে মেয়ের অনুভূতিগুলো।
বানান ভুল আছে।
উঠনের-উঠানের
কজন-ক’জন
পরিক্ষা -পরীক্ষা
সচ্ছলতা-স্বচ্ছলতা
চেস্টা-চেষ্টা
নিস্পাপ-নিষ্পাপ
মুহুর্ত-মুহূর্ত
খুজতে-খুঁজতে
কাঠাল-কাঁঠাল
এবাড়িতে- এ বাড়িতে
সেজ–সেজো
কাপছিল-কাঁপছিল
তা ও -তাও
কোনে-কোণে
তৈরী-তৈরি
যতদুর-যতদূর
বানানের প্রতি যত্নশীল হবেন।
শিক্ষনীয় ছিল বটে।
শুভ কামনা।
অনুভুতি-অনুভূতি
দাড়িয়েছে-দাঁড়িয়েছে
দাড়াই-দাঁড়াই
সংগে–সঙ্গে