গল্প লেখকঃ
নুশরাত রুমু
(এপ্রিল – ২০১৮)
—————-
মা— ও মা ভীষণ খিদে পেয়েছে।
বাড়ি ফিরেই চিৎকার করে মাকে খিদের খবর জানালো খলিল। রান্নাঘর থেকে একরকম দৌড়ে বেরিয়ে এলো মা হানিফা বেগম।
–এইতো বাপ রান্না শেষ, তুই হাতমুখ ধুয়ে খেতে আয়।
ছোটবেলার কুড়ানো ছেলে নিয়ে তার ভালোবাসার অন্ত নেই।
একটু পরেই ছেলেকে খেতে বসালেন।
আহা তিন সপ্তাহ রেঙ্গুনে ঘুরে ছেলের চেহারাটা শুকিয়ে আমসি হয়ে গেছে। তালপাতার পাখা দিয়ে বাতাস করে যাচ্ছেন অবিরত।
পালিত বাবা গফুর চালের আড়ত থেকে বাড়ি ঢুকছিলেন এমন সময় বিকট শব্দে একটা বিমান উড়ে গেল, মনে হলো কাছেই কোথাও বিধ্বস্ত হয়েছে।
ভাত রেখেই উঠে পড়ল খলিল।
— কি করিস বাপ
–বিমানটার কি হলো দেখে আসি মা।
মায়ের নিষেধ না শুনে আর বাবাকে পাশ কাটিয়ে দ্রুত বেরিয়ে গেল সে।
প্রায় দেড় কিলোমিটার দূরে বিমানটি বিধ্বস্ত হয়েছে।
অনেকটা এলাকা জুড়ে কালোধোঁয়ায় ভরে গেছে।
চরের মানুষ ভয় পেয়ে বিমানের কাছে গেলো না।
সাহসী যুবক খলিল এগিয়ে গেল। দরজার পাশে দু’জন মানুষ ছিন্ন- বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়ে আছে। পাইলট তখনো জীবিত।
হাততুলে অস্পষ্ট স্বরে কি যেন বলছিলো। ঝুঁকে পড়ে শুনতে চাইছিলো সে, কেবল টাকা শব্দটি কানে এলো। মুহূর্তেই সতর্ক হয়ে গেল সে, রোমকূপে একটা শিহরণ বয়ে গেল। এ যেন তারে তারে আনন্দের ঝংকার। দ্রুত বিমানের ভেতরে ঢুকে কয়েকটি ব্যাগ দেখে বুঝতে পারলো এখানেই টাকাগুলো আছে।
ছোটবেলা থেকে দ্বারে দ্বারে ঘুরেছে, কত কষ্ট করেছে। এখনো পরের ঘরে আশ্রিত। না সে আর ফিরবে না সেই ঘরে।
বিমান থেকে টাকার ব্যাগ নিয়ে নামার সময় দেখলো পাইলটের দেহটা নিথর হয়ে গেছে।
পড়িমরি করে সে তার হাত থেকে বাহারী ঘড়িটা খুলে নিলো। রাস্তায় নেমে চারদিকে ভালো করে দেখে উল্টোপথে হাঁটা দিল খলিল।
এদিকে মা ভাতের থালা নিয়ে বসে থাকে, অনেক রাতে একজন এসে খবর দিলো খলিল বাড়ির উল্টোপথে চলে গেছে। কান্নায় ভেঙে পড়ে মা হানিফা বেগম।
টাকার কথা পাঁচকান হবার ভয়ে বাড়ি ফেরেনি খলিল। নিজের চাতুরতা দিয়ে টাকাকে কায়দামত কাজে লাগিয়ে দ্রুত বড়লোক হয়ে গেলো সে। তবে থাকার জন্য দূরের একটি এলাকা বেছে নিলো যেখানে সবাই তাকে মিঞা সাহেব নামে চেনে এখন।
টাকার জোরে সে এখন এলাকার চেয়ারম্যানের মেয়েজামাই।
বেশকিছু বছর পার হয়ে গেছে এর মাঝে। একদিন খবর পেলো মায়ের শেষ অবস্থা, দ্রুত রওনা হলেও জীবিত দেখতে পেলো না। গাড়ি থেকে নেমেই শুনতে পেলো একটিবার ছেলেকে দেখার আক্ষেপ ছিলো হানিফা বেগমের।
গ্রামের মানুষ প্রথমে চিনতেই পারেনি খলিলকে।
আজ সে সম্ভ্রান্ত একজন মানুষ। ইস্ত্রি করা পাঞ্জাবী, যত্নে পাট করা চুলে আভিজাত্যের ঝিলিক। গলায় মোটা সোনার চেইন। হাতে পাইলটের সেই ঘড়ি। ৮ আঙুলে পাথর বসানো আংটি। চারিদিকে তার সম্মানের ছড়াছড়ি। যেদিকেই হাঁটছে লোকজন সরে দাঁড়াচ্ছে।
ফেরার পথে নজরে পড়ল সেই দোকান যেখানে গফুর সাহেব তাকে কুড়িয়ে পেয়েছিলো।
সেই সরল হাসি আজ কপটতার আড়ালে চাপা পড়েছে। হায় টাকা — সবই তোমার মহিমা।
অসাধারণ লিখেছেন প্রিয়। মনমুগ্ধকর কল্পনাশক্তি আপনার, বাহ্
মুগ্ধ হলাম পড়ে,এই রকম গল্পই মানুষকে কিছুনা কিছু শিখায়।
হায়রে টাকা, একপাশ ভরে তো আরেক পাশ করে ফাঁকা।দারুণ শিক্ষণীয় লেখা।ধন্যবাদ লেখককে এমন সুন্দর একটি লেখা আমাদের উপহার দেয়ার জন্য।সৃষ্টিশীল লেখায় তার সাফল্য কামনা করছি।
চমৎকার লেখনী
অসাধারণ গল্পের কথা।
অসাধারন
অসাধারণ লিখুনি