আহমেদ জনি
কয়েক বছর আগের কথা। দিনটি ছিল রবিবার। সকালে ঘুম ভাঙ্গে রাব্বির ফোনে। কল ধরতেই সে বলতে লাগলো ব্যাগ নিয়ে প্রস্তুত হতে পিকনিকে যাবে। (কিছুদিন আগে কয়েকজন বন্ধরা মিলে পিকনিকে যাবো বলে আলোচনা করছিলাম। কিন্তু কোথায় যাবো তা ঠিক করি নি।) তাই একটু চমকে যাই আর মনে মনে বলতে থাকি ওরা কাজটা ভালো করে নি, আমাকে না জানিয়ে সব ঠিক করে ফেললো। যাই হোক পিকনিকে যাবো এটাই বড় কথা তাই ব্যাগে জামা-কাপর ছাড়াও ব্যবহারিক জিনিসপত্র গুছিয়ে নিলাম। হালকা নাস্তা করে মাকে বলে বাড়ী থেকে রওনা দিলাম। কিছুক্ষনের মধ্যে বন্ধুরা একত্র হলাম। তখন জানতে পারলাম আমাদের পিকনিক হচ্ছে পদ্মার একটি চরের মধ্যে। সেখানে যেতে হবে নৌকায় করে। আমি এক কথায় বলে দিলাম আমি যাবো না। বন্ধুরাও বললো দেখি তুই পিকনিকে না গিয়ে এখান থেকে কোথায় যাস। অনেকবার না করার পর ও বাদ্দ হয়ে অনিচ্ছাকৃত যেতে হচ্ছে। আমরা গজারিয়া নামক লঞ্চঘাট থেকে নৌকায় উঠি। নৌকাটি ছিল বেশ বড় এবং মজবুত তাই ভয়টা কিছু কমে যায়। সময়টা ছিল শরৎের দিকে তাই নদীও ছিল একটু শান্ত। আমাদের নৌকা যাত্রা শুরু হয় সকাল ৯টায়। ছোট ছোট ঢেউয়ে নৌকা দুলছিল। প্রথমে একটু ভয় পাই, তারপর সব ঠিক হয়ে যায় এবং আনন্দ করতে থাকি। নৌকার মাঝে মাদুর বিছিয়ে তাতে শুয়ে পড়লাম ঠিক তখনি নজরে পরলো শরৎের নীল আকাশ। এতো নীল আকাশ যা আমি আগে কখনো খেয়াল করি নি। নীল আকাশের নিচ দিয়ে সাদা সাদা তুলোর মতো মেঘ বাতাসে ভেসে যাচ্ছে। কিছু দূর থেকে দেখা যাচ্ছে আকাশে পাখির সারি। গাঙচিল, মাছরাঙা, বক সারি ভেদে আকাশে উড়চ্ছে। আমাদের নৌকার কিছু দূর দিয়ে ভট ভট শব্দ করে ট্রলার, লঞ্চ, স্পিডবোট যাচ্ছে। আমাদের নৌকার মাঝি ছিলো খুব দক্ষ তাই সে খুব দ্রুত ও সুন্দর করে নৌকা বেয়ে চলছে। চারপাশের দৃশ্য দেখে মনে হচ্ছে আমি কোন বইয়ে আঁকা দৃশ্য দেখছি। হঠাৎ রাব্বি মাঝি ভাইকে বললো আপনার নৌকায় পাল নেই কেনো? মাঝি ভাই বললো ছিলো কিন্তু ওটা নষ্ট হয়ে গেছে। আমরা ওকে দমক দিয়ে বলি তোমার এতো কিছু লাগে কেনো!!! নৌকা যখন গ্রামের পাশ দিয়ে যাচ্ছে তখন ছোট ছোট দোকান, হাট-বাজার, ঘর-বাড়ী, গাছপালা দেখতে পেলাম। নদীর ঘাটে কেউ কাপড় ধুচ্ছে, কেউ বা ঘোমটা দিয়ে হাড়ি-পাতিল মাজছে, কেউ বা ছোট ছোট বাচ্চাদের গোসল করাচ্ছে। ছেলেরা নদীতে লাফালাফি করছে, সাঁতার কাটছে। জেলেরা জাল বাইছে। একটু সামনে যেতেই নজরে পড়ে অনেকগুলো সারিবদ্ধ নৌকা। কোনো কোনো নৌকা থেকে ধোঁয়া উড়ছে। কোন নৌকার ছাইয়ের উপর কাপড় রৌদে দিয়েছে। প্রথমে বুঝতে পারি নি কিসের নৌকা কিন্তু যখন কাছে যাই তখন বুঝতে একটু ও কষ্ট হয় নি যে এগুলো বেদেদের নৌকা। মিনিট ৩০ পর আমরা চরের কাছাকাছি পৌঁছে যাই। চরের পাশে দেখি অর্ধ ভাসা ধানখেত, কচুরিপানা আর জলজ উদ্ভিদ। পাশেই শুনতে পাই ডাহুক আর পাতি হাঁসের ডাক। চরের মধ্যে নৌকা ভিড়ায়। নৌকা থেকে নামতেই সর্ব প্রথম চোখে পরে সাদা সাদা কাশফুল। আমাদের চেয়েও বড় কাশফুল আর বিভিন্ন ঘাস গাছ। সেই কাশবাগানের মাঝেই হচ্ছে পথ। সেই পথ দরে সামনে যাই এবং সুন্দর একটি পরিবেশে আমরা তাবু স্থাপন করি। সেখানেই নিজেরা খাবার তৈরি করি। মাদুর বিছিয়ে আমরা খাবার খাই এবং অনেকক্ষন ঘুরাঘুরি করি। তারপর আমরা পূর্নরায় নৌকায় আসি। তারপর বাড়ীর উদ্দেশ্যে রওনা দেই। বাড়ীতে আসতে আসতে সন্ধা হয়ে যায়। সেই দিনের অনিচ্ছাকৃত নৌকা ভ্রমন আমায় খুব আনন্দ দেয়। প্রায় সেই দিনের কথা মনে পরে এবং আবারো নৌকা ভ্রমনে যেতে ইচ্ছা করে।
অত্যন্ত দারুণভাবে আপনি বাংলার প্রাকৃতিক রূপ-সৌন্দর্যের একটা বিরাট দিক তুলে ধরেছেন। আমি পড়ে মুগ্ধ হয়েছি। মনের ভেতর নৌকা ভ্রমণের একটি সুপ্ত ইচ্ছা ছিলো আপনার লেখা পড়ে তা আরো তীব্র হয়ে উঠেছে।
বানানে কিছু ভুল আছে। সম্ভবত টাইপিং মিস্টেক।
বন্ধরা- বন্ধুরা।
বাদ্দ- বাধ্য।
দমক- ধমক।
দরে- ধরে।
পূর্নরায়- পুনরায়।
সন্ধা- সন্ধ্যা।
ভ্রমন- ভ্রমণ।
শুভ কামনা।
নদীমাতৃক দেশের নদী অার শরৎ প্রকৃতি অাপনার বর্ণনায় বেশ সুন্দর ভাবে ফুটে উঠেছে। ভ্রমণ কাহিনী একটু তথ্যবহুল হলে অারো অাকর্ষণীয় হয়। বেশ কিছু শব্দে ভুল অাছে দেখে নিবেন। শুভ কামনা অাপনার জন্য।
বন্ধরা- বন্ধুরা
কাপর- কাপড়
শরৎের- শরতের
বাদ্দ- বাধ্য
দমক- ধমক
রৌদে- রোদে
দরে- ধরে
পূর্নরায়- পুনরায়
সন্ধা- সন্ধ্যা
ভ্রমন- ভ্রমণ