যখন পাঠ্য বইয়ের দু-চারখানা ছড়া-কবিতা ছেলেমেয়েরা কন্ঠস্থ,মুখস্থ ও ঠোটস্থ করিয়া কন্ঠে, মুখে, ঠোটে ফুটাইয়া তোলে, ঠিক তখনই অভিভাবকগন মনে মনে ভাবিতে থাকেন পড়ালেখায় আমার সন্তানের ঢের ভালো মাথা রহিয়াছে।ভালো মাথা থাকিবার সুবাদে অভিভাবকগন দিন-কয়েক এর মধ্যেই ছেলেমেয়েদের লেখাপড়ার ঘরোয়া পরিচর্যা হইতে ক্রমে ক্রমে নিস্তেজ হইয়া পড়েন এবং একটা পর্যায়ে আসিয়া অবসরকে চির-বরন করিয়া লন। ছেলেমেয়েদের লেখাপড়ায় মূলত: ঘরোয়া পরিচর্যার গুরুত্ব অপরিসীম,যাহা হইতে শিশু বয়সেই শিশুরা চরম বঞ্চিত হইয়া থাকে, আর এই বঞ্চিত হওয়া হইতেই শিশুদের শিক্ষাজীবনের গলদ শুরু হইয়া থাকে। কিন্তু ছেলেমেয়েদের নিয়মিত স্কুলে পাঠাইবার ব্যাপারে অভিভাবকগনের তেজ যাহা রহিয়াছে,তাহা একেবারে কমও নয় বটে। আবার অনেক সময় দেখিতে পাওয়া যায় যে অভিভাবকগন নানা অভাব অনটনের মধ্যে জীবনযাপন করা সত্বেও ছেলেমেয়েদের জন্য অন্যের দেখাদেখি দু-চারখানা প্রাইভেট পড়া ঠিক করিয়া দিয়া যথাসাধ্য খরচ বহন করিতে থাকেন। প্রাইভেট পড়া হইতে ছেলেমেয়েরা কি অর্জন করিতেছে, প্রাইভেট পড়া ছেলেমেয়েদেরকে কি দিতেছে এ বিষয়ে অভিভাবকগনের খোজ-খবর রাখিবার ইচ্ছে একেবারেই যেন হুশহীন। তাহারা ভাবিয়া থাকেন যে ছেলেমেয়েদের লেখাপড়া করাইবার জন্য নিয়মিত খরচ বহন করিলে, প্রাইভেট পড়া ও স্কুলে পাঠাইলেই তাহাদের সমস্ত দায়িত্ব-কর্তব্যর অবসান হইয়া থাকে। তাহারা এ ও ভাবিয়া থাকেন যে নিয়মিত শ্রেণি বদল করিয়া ও কোন রকম পাশ করিয়া কয়েকখানা সনদপত্র জোগাড় করিতে পারিলেই সে বিদ্যান হইয়া থাকে,কিন্তু পাশ করিলেই যে বিদ্যান হওয়া যায় না এমনটা তাহারা মানতেই নারাজ। এহেন পরিস্থিতিতে এটা বলিতে পারিতেছি যে “কড়াইতে তৈল রাখিয়া, চুলা সাজাইয়া, আগুনের ব্যবহার না করিয়াই ফসফস শব্দ শুনিবার আশে মন আগ্রহ ভরে ধীর অপেক্ষা করিতেছে।” অনেক অভিভাবকগন আবার স্ব-ইচ্ছায়ই মেয়েদেরকে নামমাত্র লেখাপড়া করাইবার জন্য স্কুলমুখী করিয়া থাকেন। কোন মতে শ্রেণী বদল করিয়া মোটামুটি একখানা সনদপত্র জোগাড় করিবার আশে। কারন,ঐ সনদপত্র নামক কাগজখানার দোহাই দিয়া ভালো ঘরের কোন পাত্রে সহিত নিজেদের কন্যার সমন্ধ ঘটাইবার ফন্দি আটার কৌশলমাত্র।ছেলেদের ক্ষেত্রেও নানান অদ্ভুত উদ্দেশ্য মনে সঞ্চার করিয়া অভিভাবকগন প্রায় ৪০ শতাংশ শিশুদেরকেই নামমাত্র স্কুলমুখী করিয়া থাকেন।
বাস্তবতা
অশেষ ধন্যবাদ