পতিতা পল্লী
প্রকাশিত: ফেব্রুয়ারী ৪, ২০১৮
potita polli
লেখকঃ vickycherry05

 3,236 বার দেখা হয়েছে

এই লেখক এর আরও লেখা পড়ুনঃ vickycherry05

গল্প লেখকঃ
Muhammad Xunaid
(ফেব্রুয়ারী)
………………

-আশরাফ সাহেব কাজ শেষ হয়েছে?
-‎জি ভাই এই শেষ হলো মাত্র!আপনি এখনো বাসায় গেলেন না যে?
-‎এইতো কিছু কাজ বাকি ছিল সেগুলো সেরে নিলাম। তো আপনার তো কাজ প্রায়-ই শেষ হয়ে গিয়েছিল এতক্ষণ ধরে বসে রইলেন কেন?
-‎এমনি কালকের জন্য একটু চাপ কমিয়ে রাখছি,বাসায় গিয়েও বা কি করব?
-‎কেনো ভাবির সাথে গল্প করবেন আর….।

রফিক সাহেবের বাসা থেকে ভাবি কল দিয়েছে বোধয়।
-তুমি কোথায়? রাতের ১০ টা বাজে খেয়াল আছে? বাসার পথ ভুলে গেছো?
-‎আরেহ কাজ শেষ না করে কি আসা যায়? এইতো কাজ শেষ হলো মাত্র, দাঁড়াও বের হচ্ছি আসছি।
-‎নেহা কান্না করছে তাড়াতাড়ি এসো।
-‎হ্যাঁ আসছি। বেশিক্ষণ লাগবে না।

আশরাফ সাহেব আমি তাহলে আসি। বাসায় আপনার ভাবি আর নেহা অপেক্ষা করছে।
আচ্ছা কাল দেখা হচ্ছে বলে, দুজনে-ই অফিস বন্ধ করে বেরিয়ে পরলাম।
বাসায় যাওয়ার একদম-ই ইচ্ছা নেই। ব্যাগে এখনো এক পেকেট গোল্ডলিফ আছে বোধহয়। হ্যাঁ কাল ৩ পেকেট কিনেছিলাম আর ১ পেকেট রয়ে গেছে। একটা ধরালাম, যাক একটু হলে ভালো লাগছে। আজ মনটাও খারাপ। পতিতা পল্লীর দিকে একবার যাব ভাবছি। যা হবার হওয়ার তা তো হয়ে গিয়েছে এখন আর বসে থেকে কি হবে? এখান থেকে বেশি দূরে নয়, হেটে হেটে যাওয়া যাবে। হাটতে হাটতে গোল্ডলিফ ৪টা শেষ, আরেকটা ধরাবো ভাবছি।
না কাছে-ই চলে এসেছি এখন ধরানোটা ঠিক হবে না।
১১:৩০ বেজে গেছে, বরাবর দেড় ঘন্টা লেগেছে। ইদানিং সরদারটা আমার বেশি আসা যাওয়াটা সুবিধার চোখে দেখছে না। কেমন যে বড় বড় চোখ করে তাকিয়ে থাকে। এখানের সবচেয়ে পুরানো পতিতা রোখছানা বেগম। তার কাছে-ই আমার সবসময় যাওয়া। একেকদিন একেক ঘটনা বলে। ঠিক বলে না অনেক অনুরোধের পরে-ই বলেন। তার জীবনটা অনেকটা কাব্যগ্রন্থের মতো। নেশার জন্য ১৩ বছর বয়সের রোখছানা বেগম কে ৬হাজার টাকার বিনিময়ে এই পতিতালয়ের সরদারের কাছে বিক্রি করে দেন বাবা। এরপর থেকে তার প্রতি রাতে খুন হওয়া। আজ বলেছিলো তার জারজ সন্তানের বাবার সম্পর্কে বলবে।
গিয়ে দেখি তিনি বিছানার শুয়ে আছেন। কপালে হাত দিয়ে দেখি ভিষণ জ্বর। ভাবছি আজ তাহলে আর কিছু বলার জন্য জোর করব না।
-আশরাফ তুমি? কখন এলে?
-‎এইতো মাত্র, আপনি শুয়ে থাকেন না। আপনার তো দেখি অনেক জর। ব্যাগে একটা নাপা আছে বোধয়। নিন এটা খেয়ে নিন।
ঔষধটা খেয়ে তিনি বসে পড়লেন, নিজ থেকে তার সন্তানের বাবার কথা বলতে লাগলেন।
-তুমি না নাজের এর কথা জানতে চেয়েছিলে। শুন তাহলে, একদিন অন্য কাস্টমারদের মতো নাজেরও এসেছিলো। এরপর থেকে প্রতিদিন ও আমার কাছে আসত। একদিন ও আমাকে আশ্বাস দিল বিয়ে করবে বলে। এখন আমরা স্বামী স্ত্রীর মতো থাকি। ও সরদারকে টাকা দিয়ে আমাকে নিয়ে যাবে বলে কথা দিল। আমি যেনো ওকে একটা বাচ্চা দি। আমিও স্বপ্ন দেখতে শুরু করেছিলাম। হঠাৎ করে ও আসা বন্ধ করে দিল। সরদার থেকে মোবাইল নিয়ে কল দিলে ও বলে একটু কাজে ব্যস্ত আছে শেষ হলেই আসবে। এরপর থেকে সে আর আসে না। বাচ্চাটা পেটে তখন ৯ মাস তাই আর নষ্ট করাও হয় না। একটা লোক নিয়ে গিয়েছিল আমার সন্তানকে। কে জানে এখন কোথায় আছে? কেমন আছে? দৌ কি বেঁচে আছে?

চোখ দিয়ে পানি চলে আসল। আসলে-ই তো তিনি স্বপ্ন দেখেছিল এই জাহান্নাম থেকে বের হয়ে মুক্ত পাখি হয়ে উড়ে বেড়াবে।কিন্তু এ স্বপ্নের বদলে তো তিনি তার সন্তানকেও একটা বিভৎস জীবন উপহার দিলেন।

-আচ্ছা এগুলো ছাড়ো এখন। তোমার কথা বলো। তুমি এভাবে এখানে আসো যে তোমার বউ কিছু বলে না?
-‎বউ থাকলে-ই তো বলবে। সে তো অনেক আগে-ই চলে গেছে।
-‎কেনো কি হইছে?
-‎একদিন এখানে আসার সময় আমার শশুরমশাই দেখেন। তারপর অনেক অপমান করল, সবার সামনে জুতো দিয়ে পেটাল।কিন্তু তখনো বউ চলে যায়নি।
-‎তাহলে কেনো গেলো,কখন গেলো?
-‎আমি এরপরো আরো অনেকবার আপনার সাথে দেখা করতে এখানে এসেছি,তখন-ই হয়তো দেখেছে। এইতো কিছুদিনের মধ্যে ডিভোর্স পেপার চলে আসবে। এখন বাবার বাসায়।
-‎তোমার বউ আছে পরিবার আছে। বাবা-মা আছে। তাহলে তুমি এখানে কেনো আসো? কোনো আবদার তো রাখো না তাহলে এখানে কেনো আসো? আর আমার সম্পর্কে তুমি কোথা থেকে জানলে যে আমার থেকে প্রতিদিন জীবনের গল্প শুনতে ছুটে আসো?
-‎ওইতো সূর্য উঠতে শুরু করে দিয়েছে। ভোর হলে গেলো বলেই আচ্ছা আমি তাহলে আজ বেরোই।

হ্যাঁ সূর্যটা উঠা শুরু করে দিয়েছে। এখনো পেকেটে আরো ২ টা গোল্ডলিফ রয়ে গেছে। একটা ধরালে মন্দ হয় না। ধরিয়ে মাত্র আবার হাটতে শুরু করলাম। হঠাৎ করে-ই ইচ্ছা হলো চিৎকার করে কান্না করি। এরপর থেকে আর পতিতা পল্লী যাব কি করে?আর গেলেইবা কি বলব রোখছানা বেগম কে?

কি করে বলব আমি, আমার কোনো পরিবার নেই।
কি করে বলব আমি, আমার স্ত্রী আর আমার হবে না। তার অন্যকারোর সাথে বিয়ে ঠিক হয়ে গেছে।
কি করে বলব, আমার কোনো বাসা বাড়ি নেই ছোট বেলা থেকে একজন মানুষের বাড়িতে বড় হয়ে এসেছি।
কি করে বলব,আমি পতিতা রোখছানা বেগমের জারজ সন্তান।

আমি কি বলতে পারব?
“মা ওমা, আমি তোমার সেই পেটে ধরা সন্তান, আমি সেই আশরাফ যাকে সবাই জারজ বলে আক্ষায়িত করে, সেই নাজের জালেম এর সন্তান যাকে একজন ছোট বেলায় নিয়ে গিয়ে বড় করেছে!!
মা মা জানো আমি না এখন চাকরি করি, চলোনা মা এখান থেকে বের হয়ে দুজনে মিলে আমাদের দুনিয়াটাকে সুন্দর করে সাজাই!”

সম্পর্কিত পোস্ট

ঈদের ঈদ

ঈদের ঈদ

লেখক: রাসেল আহমদ রস (জুন - ২০১৮) ............ মেয়ে: আব্বু এই নতুন জামা আমার জন্য? বাবা: হ্যাঁ মা, এইটা তোমার জন্য! সুন্দর না? মেয়ে: তোমারটা আর আম্মুরটা কই? বাবা:...

আপনাকে কি “বাবা” ডাকতে পারি?

আপনাকে কি “বাবা” ডাকতে পারি?

লেখকঃ Shopno Balika (এপ্রিল - ২০১৮) ............... অনেকদিন হলো রিকশা চালাই। নানা রকম প্যাসেঞ্জার ওঠে। মাঝে মাঝে খুব অদ্ভুত প্যাসেঞ্জার পাই। এই যেমন গত বছরের ঘটনা। সীটে বসেই কেমন অস্থির হয়ে গেলো মানুষটা। মনে হচ্ছিলো কিছু একটা নিয়ে খুব পেরেশানিতে আছে বেচারা। প্রায়...

স্বপ্নার স্বপ্ন

স্বপ্নার স্বপ্ন

গল্প লেখকঃ Md Si Rana (এপ্রিল - ২০১৮) ............... বিলাশপুর গ্রামের এক দরিদ্র ভ্যানচালকের মেয়ে স্বপ্না। প্রচণ্ড বুদ্ধিমত্তার অধিকারী স্বপ্না। ছোটবেলা থেকেই ওর স্বপ্ন ডাক্তার হওয়া। এত গরিব ঘরের মেয়ে হয়েও এই ডাক্তার হওয়ার স্বপ্ন দেখার জন্যই মূলত ওর ডাকনাম স্বপ্না।...

০ Comments

Submit a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *