লেখাঃ পুলক মন্ডল।
বিরাটাকার বাড়িটা থেকে যখন বেরুলাম, রাত প্রায় ন’টা বাজে। এত দেরী হবার কথা নয়। আটটার দিকেই সাধারণত বাচ্চাদের পড়িয়ে বেরিয়ে যাই। আজকের বিষয়টা অন্য। ক্লাস ফাইভে পড়ুয়া অথৈ এর পরীক্ষা সামনে। সেইজন্যে একে একটু বেশি সময় নিয়ে পড়াতে হচ্ছে।
সরকারী কোয়ার্টারে থাকে, এই পরিবারটা। ঘরের দরজা পেরুলেই বড় খোলা জায়গা। সেই খোলা জায়গায় বাচ্চাদের দোল খাওয়ার মত আরো কিছু খেলনা। অন্ধকারে সেইসব স্পষ্ট দেখা যায় না। আমি কোয়ার্টার থেকে বেরোবার গেইটের দিকে যাই।
গেইট থেকে বেরুলে হাইওয়ে। সাই সাই করে গাড়ি ছোটে। হাইওয়ে পার হয়ে আমার বাড়ির পথ ধরতে হয়। খানিকটা যেতে হাইওয়ের পাশে ফুটপাতের উপর কয়েকটা দোকান। খাবার, বিস্কুট, মিষ্টি, এমনকি মাংসের দোকান। এইসব দোকানের পাশ দিয়ে যাবার সময় হঠাতই কে যেন বললো,
“এই যে ভাই, এই…”
আমি প্রথমে কানে তুলি না। এই এলাকাটা আমার বাসা থেকে বেশ খানিকটা দূরে। এখানে আমার পরিচিত কারো থাকার কথা নয়। এরপরই আবারও সেই একই গলা। এবার পেছনে ফিরে তাকালাম। মিষ্টির দোকানের সামনে দাঁড়িয়ে এক লোক আমার দিকে তাকিয়ে আছেন। আমি তার কাছে গেলাম। বেঁটে খাটো মানুষ। গায়ের রঙ কুচকুচে ধরনের কালো। মানুষটার মুখ হাসি হাসি। বললাম,
“কিছু বলবেন ভাই?”
লোকটা বললো,
“প্রতিদিন দেখি আপনারে এই রাস্তা দিয়ে আসা-যাওয়া করেন। একদিন ভাবলাম ডাকি, কথা বলি। একটা মানুষরে প্রতিদিন দেখলাম, অথচ কথা বললাম না- বিষয়টা কেমন না?”
একটু হাসলাম আমি।
“এইদিকে একটা বাসায় পড়াতে আসি তো। সেইজন্যে দেখেন প্রতিদিন। আপনি কি এখানেই থাকেন?”
“হাঁ। এই দোকানেই থাকি। নাইলে তো দেখতে পারতাম না।”
লোকটা একথা-সেকথার পর আমাকে ভেতরে গিয়ে বসতে বললো। রাত প্রায় সাড়ে ন’টার মতো বেজে গেছে। এই সময়ে একটা অপরিচিত লোকের দোকানে বসে থাকতে ইচ্ছে আমার হলো না। বললাম,
“পরে একদিন আসবো ভাই। আজকে যাই, রাত হয়ে গেছে।”
লোকটা ঘাড় কাত করলো। বললো,
“এরপর দিন বসতে হবে।”
এই থেকে শুরু। সে প্রায় প্রতিদিন আমার যাওয়া-আসার রাস্তাটায় দাঁড়িয়ে থাকে, দোকানের গেইট ধরে। কি আশ্চর্যের ব্যাপার। একটা মানুষ আমাকে চেনে না, আমি কেমন কিচ্ছু জানে না। অথচ প্রতিদিন একই সময়ে দোকানের বাইরে দাঁড়িয়ে থাকে, আমার সঙ্গে কথা বলবার জন্য। প্রথমে কিছু দিন কিছু মনে না হলেও বিষয়টা একসময় আমাকে বিরক্তির পর্যায়ে নিয়ে যায়। ঢাকা শহর। কত অসংখ্য মানুষ প্রতিদিন এই রাস্তা ধরে যাওয়া-আসা করে, কে কার খবর রাখে? অথচ এই লোকটা বিনা কারনে আমার দিকে নজর রাখছে।
একদিন আমি বলেও ফেললাম। সেদিন রাতের বেলা পড়িয়ে বাসায় ফিরছি। লোকটা যথারীতি দাঁড়িয়ে। আমাকে ডাকলো। বললো,
“আজ ভাই বসতে হবে। আসেন, দোকানে আসেন। আরে জুতা নিয়েই আসেন, সমস্যা নাই।”
প্রতিদিন ব্যস্ততা কিংবা রাত হয়ে যাওয়ার অজুহাত দেবার পর আমার কাছে বলবার মতো নতুন আর কিছু ছিলো না। অতএব দোকানে ঢুকতে হলো। দেখি, সে একটা ছোট্ট পিরিচ পরিষ্কার করছে। তারপর সেটা হাতে নিয়ে সাজিয়ে রাখা মিষ্টিগুলির শেলফে এগিয়ে যাচ্ছে। বললাম,
“কী করছেন ভাই? আমি কিছু খাবো না এখন।”
আমার গলা বোধহয় কিছুটা অস্থির শোনালো। লোকটা থমকে দাঁড়ালো। তারপর বললো,
“কিছু তো খাইতে হবে। দোকানে আসছেন, খালি মুখে চইলা যাবেন- এইটা কেমন কথা ভাই?”
“দোকানে তো কত কাস্টমার আসে, আপনি কি সবাইকে ডেকে নিয়ে খাওয়ান না-কি ভাই?”
লোকটা একটু হাসলো। পিরিচটা রেখে দিলো তারপর। আমি প্রসঙ্গ পাল্টাতে জিজ্ঞেস করলাম,
“নাম কী আপনার?”
“হাশেম আলী।”
“এই দোকান কি আপনার ভাই?”
সে হাসে।
“না রে ভাই। অত টাকা-কড়ি আমার নাই। তবে যা আছে আল্লায় ভালোই রাখছে। আসলে কি জানেন ভাই, টাকা-কড়ি কিচ্ছু না। সুখটা হইলো গিয়া মনে। এই যে, এই দোকানটা যার, সে দুই দিন পর নতুন নতুন মিষ্টির দোকান দেয় নানান জায়গায়। টাকার অভাব নাই। তবে মনে তার সুখ নাই। বউটার সাথে ছাড়াছাড়ি, বাচ্চা-কাচ্চা নাই। অথচ আমারে দেখেন। অল্প ক’টা টাকা পাই। সেই টাকায় ছোট ভাইটা পড়াশোনা করে। মা আর ভাইটারে নিয়ে থাকি। সুখ হইলো ভাই মনের ভিতরে।”
আমার এই রাত্রি বেলায় অপরিচিত একজনের সাথে বসে সুখের উৎস খুঁজতে ইচ্ছে করছিলো না। বললাম,
“আপনার কথা সত্যি ভাই। তবে রাত হয়ে যাচ্ছে, আমি আসি আজকে। পরে একদিন আসবো।”
হাসেম আলী বললো,
“আপনার কথাটাতে খারাপ লাগছে ভাই। একটা মিষ্টি খাইলেও পারতেন। আপনি আমাকে ভরসা করতে পারেন নাই হয়তো।”
আমি জবাব দিলাম না। একটু হাসি দিয়ে দোকান থেকে বেরিয়ে গেলাম। এই হাসির অর্থ তার বুঝতে পারার কথা। আমি সত্যিই তাকে ভরসা করতে পারি নি। এই শহর একজন অপরিচিত মানুষকে ভরসা করার মতো জায়গা না।
কিছুদিন পর। এক বিকেলে রেণু হঠাত ফোনে বললো, তার সঙ্গে দেখা করতে হবে। রেণুর সবসময় দেখা করবার মতো সময় হয় না। সে থাকে তার ফ্যামিলির সঙ্গে। চাইলেই হুটহাট বেরোনো যায় না। সে তার বাসায় কোনো একটা অজুহাত দিয়ে দেখা করতে চাইলো।
বিকেলে বের হলাম। পরনে তার দেয়া পাঞ্জাবী। রেণু প্রতিবছর আমাকে একটা করে ড্রেস গিফট করে, সেটা অবশ্যই পাঞ্জাবী। আমি বলি, ‘কখনো কখনো শার্ট-প্যান্ট তো দিতে পারো! ক্লাসে দু’একদিন পরে যাবার মতো কিছু হয় তাহলে।’ সে এরপর দিনই শার্ট-প্যান্ট কিনে দেয়। এরপর আবার যথারীতি পাঞ্জাবী।
আমি আর কিছু বলি না। তবে রেণু একদিন বলে,
“সামনে কী আছে, কেউ জানি না। ধরো তোমার সঙ্গে আমার বিয়েটা হলো না। তোমাকে বরের সাজে দেখতে পেলাম না। এইজন্যে এখনই পাঞ্জাবি পরিয়ে দেখে নিতে দাও।”
রেণু এসব রসিকতা করে বলে, না সত্যিই- আমি বুঝতে পারি না। আমি চুপ করে থাকি।
বিকেলে বেরোবার পর ঠান্ডা বাতাস বইতে শুরু করলো। বিরাট বড় মেঘের একটা চাঁই এসে যেন পুরো আকাশটাকে ঢেকে দিলো। মেজাজটা এত্ত খারাপ হলো আমার। রেণুকে দেখলাম হাইওয়ের পাশে ফুটপাতে দাঁড়িয়ে। তাকে দেখে বৃষ্টি নিয়ে তেমন চিন্তিত মনে হলো না। সে হাসি হাসি মুখ নিয়ে দাঁড়িয়ে আছে। আমি বললাম,
“এমন দিনে বের হতে চাইলে, সেদিনও বৃষ্টি।”
রেণু হাসলো। বললো,
“যদি বলি, বৃষ্টি বলেই এমন দিনে বেরুতে চাইলাম?”
কথা শেষ করে সে আমার হাত তার হাতের মুঠিতে নিলো। এই জিনিসটা আমাকে বিব্রত করে। আমাকে রেণু ওর হাত ধরতে দেয় না, অথচ ও আমার হাত ধরবে। রাস্তাঘাটে একটা মেয়ে এইভাবে শক্ত করে ছেলের হাত ধরে আছে দেখলে মানুষ কেমন করে জানি তাকায়। রেণুকে জিজ্ঞেস করলে বলে,
“তুমি তো আমার হাত খুবই ঢিলে ভাবে ধরো, যেকোনো সময় ছুটে যেতে পারে। সেইজন্যে দেখো না, আমি কত্ত শক্ত করে ধরে রাখি। তুমি চাইলেও ছাড়িয়ে নিতে পারবে না।”
বড় বড় ফোঁটা টুপটুপ করে পড়া শুরু করেছে। আমি রেণুকে নিয়ে ফুটপাতের পাশেই এক দোকানের নিচে দাঁড়াই। বৃষ্টি থামে খানিক পর। থামে বলতে পুরোপুরি নয়। ঝিরিঝিরি বৃষ্টি যাকে বলে। দু’জন বেরিয়ে হাটতে থাকলাম। কোথায় যাবো, কী করবো জানি না। আমাদের দেখা করার কোনো প্ল্যান হয় না। রেণু করতে দেয় না। এমনও সময় গেছে, দু’জন একসঙ্গে বের হয়ে হাঁটছি আর হাঁটছি। তেজগাঁও ধরে ফার্মগেইট হয়ে সংসদ ভবনের সোজা চওড়া রাস্তায়। ঘন্টা দুয়েক হাঁটার পর আমি জিজ্ঞেস করলাম,
“আমরা এইভাবে হাঁটছি কেন?”
রেণু বললো,
“হাঁটলে ব্লাড সার্কুলেশন ভালো হয়। হৃদপিন্ড সুস্থ থাকে। দুজন একসঙ্গে হেঁটে হৃদপিন্ড সুস্থ করে নিচ্ছি। জানো তো, সুস্থ হৃদপিন্ডে সুন্দর ভালোবাসা।”
বলে সে খিল খিল করে হাসতে থাকলো।
আজ এই ঝিরঝির ধরনের বৃষ্টিতে সে সেই দিনের মতোই হাঁটছে। আমি কিছু বলবো বলবো ভেবেও চুপ করে আছি। আমার কথা সে হেসে উড়িয়ে দেবে। রেণু গিয়ে থামলো একটা মিষ্টির দোকানের সামনে। দোকানের উপরের অংশে সাইনবোর্ড টানানো, ‘পদ্মা সুইটস’। আমি বিস্ময় নিয়ে লক্ষ্য করলাম, এই দোকানের লোকটার সঙ্গেই আমার পরিচয়। তবে রেণু একে কি করে চেনে? আমাকে সঙ্গে নিয়ে ভেতরে ঢুকলো রেণু।
হাশেম আলীকে সে সালাম করলো। লোকটা আমাকে দেখে মৃদু হাসলো, কিছু বললো না। রেণু একটা প্লাস্টিকের টুলে বসলো। দীর্ঘ সময় হাঁটার ক্লান্তিতে তার মুখ লালচে দেখাচ্ছে। সে বললো,
“এই যে লোকটা দেখছো, এর সাথে পরিচয় করিয়ে দিতে নিয়ে এসছি তোমাকে।”
আমি একে চিনি। হাশেম আলী আমাকে চেনে। তবে আমার ইচ্ছে হলো না কথাটা বলতে। কে জানে, লোকটাকে হয়তো চিনিই না আমি। দু’দিন পাশে বসে গল্প করলেই কি সকলকে চেনা যায়?
প্রত্যেকটা মানুষ উপন্যাসের পাতার মতো। এই উপন্যাসের পাতাগুলো অন্যে খুলে নিয়ে পড়তে পারে না। সে যতটুকু উলটে দেয়, অন্যে ততটুকুই দেখে, পড়ে।
বাইরে বৃষ্টি তার গতি বাড়িয়েছে। রেণু সেদিকে তাকিয়ে থেকে বললো,
“হাশেম ভাই, আজ কতো বছর হলো?”
ওপাশ থেকে জবাব এলো,
“চার বছর।”
তারপর রেণু আমার দিকে তাকালো। বললো,
“হাশেম ভাই থাকতেন আমাদের গ্রামের পাশে। পদ্মার পাড়ে। আজ থেকে ঠিক চার বছর আগে এক রাতের কথা। সবাই ঘুমাচ্ছিলো। পদ্মার শোঁ শোঁ শব্দে হঠাত সবার ঘুম ভেঙে যায়। টিনের চাল, মাটির ভিটি দেয়া বাড়ির বাইরে এসে সকলে দেখে পদ্মা তার কূল ভাঙতে ভাঙতে বাড়ির উঠোনে এসে পড়েছে। আরো একটা বড় স্রোত এসে আছড়ে পড়ার সঙ্গে সঙ্গে বাড়িটা নদীর বুকে বিলীন হয়ে যায়। এরপর কী হয় জানো? এরপর সকলের খেয়াল হয়, সকলেই বাড়ির বাইরে- শুধু ছোট ভাই কাশেম নেই। এরপর দিন সকালে কাশেমের মৃতদেহ ভেসে ওঠে পদ্মায়।”
রেণু এতটুকু বলে থামলো। আমি হাশেম আলীর মুখের দিকে তাকালাম। কালো কুচকুচে গায়ের রঙ তার। থ্যাবড়ানো নাকের দুই পাশে কুতকুতে ধরনের ছোট ছোট চোখ। সেই চোখ দিয়ে পানি পড়ছে কি-না, জানতে ইচ্ছে হলো। তবে মেঘলা দিনের আবছা আলোয় বুঝতে পারলাম না।
রেণু দোকানের বাইরের দিকটাতে গিয়ে দাঁড়ালো। হাত বাড়িয়ে দিলো ঝুম বৃষ্টির ভেতর। তার হাত ভেজাতে ভেজাতে সে বললো,
“এরপর থেকে এই মানুষটা তার ছোট ভাইয়ের মতো কাওকে দেখলে এত মায়ায় পড়ে যায়। সেই অপরিচিত একটা মানুষকে ডেকে নিয়ে কথা বলে, গল্প করে- যেন কতদিন চেনা, আপন। তার গল্পের পুরোটাতেই থাকে সেই না থাকা ছোট্ট ভাইটা। ”
রেণু হাত ভেজানো থামিয়ে আমার দিকে তাকিয়ে জিজ্ঞেস করলো, “আশ্চর্য না বিষয়টা? মানুষের আপন মানুষটা নেই, অথচ সেই একজনের মতো অন্য সকলকেই ভালোবাসে।”
আমি মাথা ঝাঁকাই। সত্যিই আশ্চর্য।
এরপর, বেশ ক’দিন পর পড়াতে যাচ্ছি।ক’দিন ঈদের ছুটি ছিলো, এইদিকটায় আসা হয়নি। একটু সময় নিয়ে বেরিয়েছি আজ। ভাবছি হাশেম আলীর দোকানটাতে বসবো খানিকক্ষণ। ‘পদ্মা সুইটস’ এর ভেতরে উঁকি দিলাম। সম্পূর্ণ অপরিচিত এক অল্প বয়স্ক ছেলে। জিজ্ঞেস করলাম,
“তুমি কি নতুন এখানে? আগে যে কাজ করতো সে কোথায়?”
ছেলেটা কিছুক্ষণ আমার মুখের দিকে তাকিয়ে রইলো। তারপর যেন কি মনে হতেই বললো,
“আপনের জন্য একটা জিনিস আছে। ভেতরে বসেন, নিয়া আসতেছি।”
আমি বসলাম।
ছেলেটা কোত্থেকে যেন একটা ভাঁজ করা কাগজ নিয়ে এলো। আমি খুললাম। আঁকাবাঁকা অক্ষরে কিছু লেখা তাতে।
“ভাইজান, আমি পড়াশোনা জানি না তেমন। হাতের লেখা বুঝতে পারার কথা না। তাও লিখলাম,আমার ধারনা আপনে ঠিক আমার মনের কথা বুঝতে পারবেন। কেন এই ধারনা জানি না। তাও। আমি এই দোকানে আর আসব না কখনো। আপনারে দেখতে আমার সেই ছোট ভাইয়ের মতো লাগতো। আপনে আমাকে পছন্দ করেন না, বুঝতাম। তবু ডাকতাম। এত মায়া লাগতো দেখতে আপনারে। তবে এই ঘটনাটা আপনারে বলতে চাই নাই। কষ্টের ঘটনা মানুষকে বলতে নাই। মানুষ কষ্ট বুঝে না, খালি দয়া-মায়া দেখায়। জানি, আপনেও এখন তা-ই করতেন। একসময় আমার হাতে দেয়া মিষ্টি আপনে বিশ্বাস করে খান নাই, আজকে ঘটনাটা জানার পর আপনে দোকানে এসে বসছেন। এই দয়া আমার ভাল্লাগেনা। আমার ছোট একটা ভাই চাইছিলাম। যে আমারে বড় ভাইয়ের মত বিশ্বাস করবে। পাই নাই। মানুষ তো, সবকিছু যে পাবো তা তো না। তবে কারো দয়া, করুনা চাই না। তাই দোকানটা ছাইড়া দিলাম। ভালো থাকেন ভাইজান। আর একটা কথা। দুইটা আম আপনের জন্যে রাখা আছে। কাশেম আম খাইতে খুব পছন্দ করতো। আমগুলা আমাদের বাড়ির গাছের। গাছটা পদ্মায় নেয় নাই। আমি না থাকলেও আম দুইটা নিয়েন ভাইজান। মনে হবে আমার ছোটভাইকে দিলাম।”
চোখ দু’টা ঝাপসা হয়ে আসে আমার। সেই ঝাপসা চোখে সামনে তাকিয়ে দেখি, অল্পবয়স্ক ছেলেটার হাতে ধরা দু’টো আম।
চিঠি আর আম গুলো হাতে নিয়ে বেরিয়ে পড়ি। আজ আর পড়াতে যেতে ইচ্ছে করছে না। সন্ধ্যা নেমে আসছে। হাঁটতে ইচ্ছে করছে।
ফুটপাত ধরে হাঁটছি। সামনে ফুটপাতের উপর খালি গায়ে কয়েকটা বাচ্চা খেলছে। ওদের সঙ্গে একটা রাস্তার হাড় জিরজিরে কুকুর। আমার ইচ্ছে হলো এই শিশুদের একটা আম দিয়ে দিই। দিলাম। বাচ্চাটা হাসিমুখে নিলো। আমি তাকিয়ে রইলাম। তাকিয়ে তাকিয়ে দেখলাম, সে আমটা ছিলে নিয়ে কুকুরের মুখের কাছে ধরছে। কুকুরটা পরম তৃপ্তিতে জিভ দিয়ে চেটে খাচ্ছে সেটা। আমার হঠাত মনে হলো কুকুরটা কী সহজ-সরল বিশ্বাসে খাচ্ছে। ছোট্ট শিশুটা কী সরল মনে কুকুরের মুখের সামনে নিজের হাতটা তুলে ধরেছে।
আমার কেমন যেন অনুভূতি হলো, জানি না। চোখ ফিরিয়ে নিলাম।
হাতের আমটার দিকে তাকালাম। বেশ ক’দিন রেখে দেয়া হয়তো। পঁচে গিয়ে নরম হয়ে গেছে। এক ধরনের গন্ধ এর গায়ে। আচ্ছা, মানুষের মনও কি নষ্ট হয়ে যায়? সেই নষ্ট মন কি দুর্গন্ধ ছড়ায়?
আমার হাতে নষ্ট আমটার দিকে তাকিয়ে হঠাত আফসোস হয় খুব। যদি সবকিছুর মতো নষ্ট হয়ে যাওয়া মনটাও ফেলে দেয়া যেতো।
যদি যেতো…
ভাললেগেছে! শেষটাও সুন্দর। আসলেই প্রিয় মানুষ এর চলে যাওয়া খুব কষ্টের। আর যে চলে যায় তার জায়গা পূরণ করার মত খুব কম মানুষকেই পাওয়া যায়।শুভ কামনা।
এরপর দিব বসতে হবে→ এরপরের দিন.
কি আশ্চর্যের ব্যাপার। → কী আশ্চর্যের ব্যাপার!
নি মূল শব্দের সাথে বসে
হঠাত→ ৎ হবে
হৃদপিন্ড→ হৃৎপিণ্ড
ছিলে→ ছিঁলে
গভীর ভাবনায় হারিয়ে গেছিলাম। আহ! কী চমৎকার থিম! উপস্থাপনও ভালো ছিল। সব মিলিয়ে গল্পটা ভালোই লেগেছে। যদিও বা মাঝে একটু একঘেয়েমি এসেছিল। কিন্তু এই গল্পের মর্মার্থ বুঝে সে রেশ কেটে গেছে। ভালোই লেগেছে গল্পটি।
লেখকের জন্য অনেক শুভেচ্ছা।
আপনার লেখার হাত পাকা। একটু যত্ন নিয়েন।♥
অসাধারণ লিখেছেন।
অন্য রকম একটা গল্প পড়লাম।
ভালো লাগলো।
হাশেম মিয়া হয়তো তার ছোট ভাই মনে করে মিষ্টি দিত।কিন্তু ছেলেটা হয়তো ভালো মনে করে নাই।
সত্যিই আমাদের সমাজে এখনো এমন সহজ সরল মানুষ আছে।তাদের প্রতি মায়া হয়।
বানানে ভুল আছে
দেরী-দেরি
সরকারী-সরকারি
বলবার-বলতে
করবার-করতে
শুভ কামনা রইলো।
অসাধারণ লিখেছেন।
অন্য রকম একটা গল্প পড়লাম।
ভালো লাগলো।
হাশেম মিয়া হয়তো তার ছোট ভাই মনে করে মিষ্টি দিত।কিন্তু ছেলেটা হয়তো ভালো মনে করে নাই।
সত্যিই আমাদের সমাজে এখনো এমন সহজ সরল মানুষ আছে।তাদের প্রতি মায়া হয়।
থিমটা ভালো ছিলো।
সুন্দর করে বর্ণনা করেছেন।
বানানে ভুল আছে
দেরী-দেরি
সরকারী-সরকারি
বলবার-বলতে
করবার-করতে
শুভ কামনা রইলো।