গল্প
———–
বিয়ে বাড়ি এসে চোখ জুড়িয়ে গেল চম্পার। কি বিশাল বাড়ি। সে তো আসতেই চাইছিলোনা।
জহির সকালে ফোনে জানাল –
— হ্যালো, একটা কাজ এসে গেছে , তোকে যেতে হবে।
— আমি পারবোনা। শরীর খারাপ।
— আরে বিয়ে বাড়ি, মওকার অভাব হবেনা।
— আচ্ছা, ঠিকানা লিখে দে মেসেজে।
— ম্যাসেজ নয় এসে প্ল্যান করছি, রেডি হ তুই।সেই ঠিকানা মত চাচাত বোনের ননদের লতাপাতার পরিচয়ে বিয়ে বাড়ি ঢুকল চম্পা।
কত সুন্দর ফুল দিয়ে সাজিয়েছে বাড়িটা। একতলা – দোতলা মিলিয়ে পুরোটাই ওদের। ঢুকতেই বা’পাশে প্যাঁচানো সিঁড়ি। তাতে কাঁচের রেলিং দেয়া। ড্রয়িং রুমে বিশাল ঝাড়বাতি দেখে চম্পা মুগ্ধ। প্রচুর কারুকার্য করেছেন বাড়ির মালিক। প্রতিটা বেডরুমের পাশে লাগোয়া বারান্দা,
বাড়ির চাকচিক্যে চম্পার মনের ভেতরের বাসনাটা নড়েচড়ে বসল।
না এখনি কিছু নয়, সবাই আনন্দ করছে নতুন বরকে নিয়ে,
সেই আনন্দ অনুষ্ঠানে সেও গা ভাসিয়ে দিলো।
বিয়ে শেষ হতেই খেতে বসল সবাই।
চম্পা বসল একজন মোটা মহিলার পাশে, বেশ সুন্দরি, চুল বেঁধেছেন উঁচু করে চুমকি বসানো জর্জেট শাড়ি পরনে। গা ভরা গহনা, চোখে রোদ চশমা কিন্তু আভিজাত্য নেই তাতে, ভ্যানিটি ব্যাগের বাহারে উল্টো হাসি পাচ্ছে, তাকে দেখেই বোঝা যায় মাছ, মুরগি, খাসি কেউ রেহাই পাবেনা এনার খাবারের মেন্যু থেকে।
চম্পার খাবারের প্রতি মন নেই। সে সুযোগ খুঁজছে, কোনমতে দুটো খেয়ে উঠে পড়ল।
টেবিল ছেড়ে দু’পা এগিয়ে যেতে মিষ্টি সুরে ফোনের আওয়াজ।
মোটা মহিলাটির ফোন এল, খাবার হাতে খুব কসরৎ করে ফোন ধরে কার সাথে কথা বলছেন–
হ্যাঁরে এসেছি ঠিকমত,
— খেতে বসেছি, খুব ক্ষিদে পেয়ে গেছিল। এত দেরিতে খাবার দিল এরা।
— হুম, আরে কিছুই খেতে পারছিনা।
চম্পার পেট পেটে হাসি পেল মহিলার ফোনালাপে। এত খেয়ে বলছে খেতে পারছিনা, খেতে পারলে না জানি কি হত!
— ধেত্তেরি , এই ফোনতো বন্ধ ও করতে পারছিনা। কি যে পাঠাল ছেলেটা বিদেশ থেকে””
কথাটা শুনে চম্পা চোখের পাওয়ার বাড়িয়ে দিল। কোণার দিকে সরে এসে খেয়াল করল – আরেব্বাস এযে আইফোন!!!!
আচ্ছা এখানেই কাজ শুরু করতে হবে। জহিরকে ফোন দিল।
– কিরে চম্পা মিশন কদ্দুর হল?
–একজন খদ্দের পেয়েছি, দেখি কি করা যায়,
–আমি কাছাকাছি আছি, আসব?
–আচ্ছা তুই বাইরের গেটের পাশে এসে দাঁড়া,
মালটা রেডি হলে ডেলিভারি দেব।
জহির মুখ দিয়ে আনন্দের শীস দিয়ে ফোন কেটে দিল।
আভিজাত্যহীন মহিলাটি উঠে পড়েছেন, বেশি খেয়ে হাঁটতে পারছেননা, চম্পা পিছু নিল তার।
একটি চেয়ার এগিয়ে বলল – আন্টি এখানে বসুন।
— দাও দাও বসি,
— পান খাবেন আন্টি?
— হ্যাঁ, আমিতো পানের টেবিলে যাবো ভাবছিলাম, হাঁটতে কষ্ট লাগছে,
— আচ্ছা, আপনি বসুন, আমি নিয়ে আসছি।
পান আনার ফাঁকে মহিলাটি বেশ ক’জন মহিলার সাথে আলাপ জমিয়ে ফেলল।
ধুর, ভুল হয়ে গেল এত মানুষের মাঝে কি করে কাজটা করি?
— আন্টি পান নিন,
— এই যে মেয়ে তুমি পান নিয়ে এলে, কি ভালো মেয়ে দেখুন না, পরিচয়ের পর থেকে সাহায্য করছে আমাকে। এরপর আবারও সবাই নিজেদের গল্পে মেতে উঠল।
চম্পা কেবল ভাবছে কি করে কাজটা করবে।
বর – বৌ এর ছবি তুলছে সবাই, মহিলাটি বলল – আমি একটা ছবি তুলতে চেয়েছিলাম, চম্পা শুনতে পেয়ে এগিয়ে এল।
— আন্টি ছবি তুলবেন? ঠিক আছে, আপনি স্টেজে উঠুন, আমি তুলে দিচ্ছি।
নিজেই নিয়ে মহিলাকে ধরে স্টেজে উঠিয়ে দিলো।
হাসিমুখে বউ এর পাশে বসলেন তিনি। এরপর ছবি তোলা শুরু।
অনেকেই নতুন বউ বরের ছবি তুলছে, খুব ধাক্কাধাক্কি। জহির অপেক্ষা করছে অনেকক্ষণ। মনে হতেই সুযোগ বুঝে পিছিয়ে এল চম্পা। তারপর দ্রুত ভিড়ের মাঝে হারিয়ে গেল।
বেলা শেষ হয়ে এল। বরপক্ষ দেরি করতে চাইছেনা এবার যাবার জন্য পিড়াপিড়ি করছে। কনে বিদায় পর্বে সবাই কাঁদছে, সেই মহিলাটিও কাঁদছেন তবে চম্পাকে খুঁজে না পেয়ে যে তার আইফোনটা নিয়ে চম্পট দিলো।
লেখিকাঃ
নুশরাত রুমু
fantastic apu
দারুণ হয়েছে বুবু..মজা পেলাম খুব