বশিপুর মন্দির
প্রকাশিত: অক্টোবর ৩, ২০১৮
লেখকঃ augustmault0163

 1,380 বার দেখা হয়েছে

এই লেখক এর আরও লেখা পড়ুনঃ augustmault0163

সাকি সোহাগ

খুব তাড়াহুড়া করে এসেও ট্রেন মিস করলাম। তখন ঘড়িতে সময় সন্ধ্যা ৭টা বাজে। পরবর্তী ট্রেন আসবে রাত্র ৯টায়। কি করবো এই সময় এখানে বসে বুঝতে পারছি না। তাই আমার ভালোবাসার মানুষটাকে, মানে সুমিকে কল করলাম। কথা বলে সময় কাটাবো বলে। কিন্তু দুর্ভাগ্য সে কল রিসিভ করছে না। মনটা খারাপ হয়ে গেলো। কিছুক্ষণের জন্য চুপ হয়ে গেলাম। হঠাৎ মোবাইলের স্কিনের দিকে দেখে আতকে উঠলাম। দেখি সুমির মিস কল উঠে আছে।
সাথে সাথেই কল ব্যাক করলাম। এবং মধুর আলাপন চলতে থাকলো অবিরত।
আমি বর্তমান বগুড়ার সান্তাহারে চাকরি করছি। আমার বাড়ী বগুড়ার সোনাতলা থানায়। সান্তাহার থেকে সোনাতলা আন্তঃনগর ট্রেনে যেতে সময় লাগে দের ঘন্টা। তাই বৃহস্পতি বার অফিস শেষ করে বাড়ী আসি এবং শুক্রবার সন্ধ্যা পোনে সাতটার লোকাল ট্রেনে আবার সান্তাহার চলে আসি।
কিন্তু আজ ট্রেনটা মিস করার জন্য ৯টায় আরেকটা লোকাল ট্রেন আছে। সেটাতে যেতে হবে।
অনেক অপেক্ষার পর ৯টা ৭ মিনিটে ট্রেন আসলো। ট্রেনে উঠলাম। আর একটা কথা বলাই হয়নি। এতক্ষণ শুধু সুমির সাথে কথাই বললাম। টিকিট করা হয়নি। অবশ্য অবহেলা করেই করিনি। ভাবলাম ট্রেনে উঠে করে নিবো।
‘হেলার ঠেলা আছে’ বুঝতে পারলাম পরে।
ট্রেনে উঠে ২৫ টাকার টিকিট কিনলাম ৩০ টাকা দিয়ে।
নিজেকে বল্লাম, ‘যা ব্যাপার না,তাও ভালো ভাবে যা।’
যেহেতু লোকাল ট্রেন সুতরাং সব স্টেশনেই থামছে। সোনাতলা থেকে বগুড়া এসে ট্রেনটা দুই নং লাইনে উঠলো। ক্রসিং হবে।
তখন সময় ১০টা ৪০ মিনিট। লোক মুখে জানতে পারলাম সোনাতলার দিক থেকেই আন্তঃনগর আসছে সান্তাহারের উদ্দেশ্যে। ভাবলাম ওই ট্রেনেই যেতে হবে, তাহলে আগে যেতে পারবো। কারণ সান্তাহারে নতুন থাকি তো একটু ভয়ও হচ্ছে। কে কখন ধরে! দেশে তো চোর-ছেচ্চর এর অভাব নাই। তাছাড়া সান্তাহার থেকে আমার বাসায় যাওয়ার রাস্তাটা একটু নির্জন। আগে যেতে পারলে ভালো হবে। ভাবতে ভাবতেই ট্রেন চলে আসলো। টিকিট না করেই তাড়াহুড়া করে উঠে পরলাম। যদিও আমি আজই প্রথম দু’টো ট্রেনেই টিকিট ছাড়া উঠলাম। বগুড়া থেকে ট্রেন ছাড়লো প্রায় রাত ১১ টায়।
কিছুদূর যেতেই টিটি চলে এলো। টিকিট না দেখাতে পেরে ৫০ টাকা ঘুষ দিতে হলো । আর মনে মনে বললাম, ‘আজ আমার কপাল খারাপ।’
যা হোক সান্তাহার এসে পৌঁছালাম রাত ১১টা ৪২ মিনিটে। রাস্তার মোড়ে এসে দেখি রিক্সা মাত্র দুইটা। প্রথম রিক্সাওয়ালা আপন মনে সিগারেট খাচ্ছে। আর দ্বিতীয় জন রিক্সার বসে তন্দ্রায় আছে। কাকে ডাক দিবো বুঝে উঠার আগেই দ্বিতীয় রিক্সাওয়ালা চোখ ডলতে ডলতে বলছে, ‘কোথায় যাবিন বারে?’
বললাম, ‘কলোনিতে।’
বললো, ‘উঠিন বা।’
১৫ টাকার ভাড়া চাইলো ৫০ টাকা। আমি চল্লিশ টাকা দিতে চাইলাম, তিনি রাজি হয়ে রিক্সা টানতে শুরু করলো। আমি যখন রিক্সায় উঠলাম তখন আমার মোবাইলের ঘড়িতে সময় দেখলাম ১১টা ৫৬ মিনিট। তারপর রিক্সা নিয়ে বাসার দিকে যেতে লাগলাম। প্রায় ১৫ কি ২০ মিনিট পর লক্ষ্য করলাম, আমি অচেনা এক রাস্তায়। আমি কিছু বললাম না। চুপ করে বসে থাকলাম। আরো প্রায় ১০ মিনিট গেলো। কিন্তু বাসায় যাচ্ছি না। কোথায় যাচ্ছি সেটাও বুঝতে পারছি না। ১০ মিনিটের রাস্তা,অথচ ৪০ মিনিট হয়ে যাচ্ছে আমি বাসায় যেতে পারলাম না। রিক্সাওয়ালা মুরুব্বী টাইপের। ভদ্রলোক ভালোই জোরে রিক্সা চালাচ্ছে, তারপরেও বাসার কাছে আসতে পারছি না। এবার আমার একটু ভয় হতে লাগলো। আমি সাহসী হয়ে রিক্সাওয়ালা চাচাকে বললাম, ‘কি ব্যাপার চাচা, আপনি কোথায় যাচ্ছেন আমাকে নিয়ে? এতক্ষণ লাগে এইটুকু রাস্তা যেতে?এখন কত বাজে?’
বলেই মোবাইলের দিকে তাকালাম, দেখি রাত ১টা ৭ বাজে। মোবাইল থেকে চোখ সরাতেই বুকের মাঝে ধুক করে উঠলো। দেখি রিক্সা খুব দ্রুত গতিতেই যাচ্ছে। কিন্তু ড্রাইভার চাচা ছাড়ায়। রিক্সাওয়ালা রিক্সায় নেই। কয়েক সেকেন্ডের মধ্যে কোথায় গেলো! ভাবতেই শরীরের লোম শিউরে উঠলো।
ভাবলাম চিৎকার করবো। কিন্তু আশপাশ জনমানব শূন্য। রাস্তার দুই পাশে ঝাউ ছাড়া আর কিছু চোখে পরে না। আমার পানি খেতে ইচ্ছে করছে। কলিজা তৃষ্ণায় কাঠ হয়ে যাচ্ছে । এমন সময় নিচে তাকিয়ে দেখি রিক্সা রাস্তায় নেই। শূন্যে চলছে। মাটি দেখতে পেলাম না। আমার ভয়ে শরীর ঘেমে উঠলো। কি করবো বুঝতে পারার আগেই হঠাৎ করে রিক্সাটি ব্রেক করলো। আমি সঙ্গে সঙ্গে ছিটকে পরলাম রিক্সা থেকে। তারপরে আর কিছু মনে নেই।
যখন জ্ঞান ফিরলো তখন দেখি এক হিন্দু মাসির বাসায় আমি শুয়ে আছি। আমার আশপাশ লোকে লোকারণ্য সবাই আমাকে দেখতে এসেছে। মাসি ঠাণ্ডা পানি খেতে দিলো। পর পর তিন গ্লাস পানি খেলাম।
তারপর মাসি যা বললো, আমাকে নাকি বশিপুর কালি মন্দিরে সিজদা করা অবস্থায় দেখে খুব ভোরে। প্রথমে ভয় ও পরে অবাক হয় আমাকে দেখে। কাঁধেচাপা ব্যাগ শার্ট প্যান্ট পরে ইন করা। পায়ে কালো সু। এমন অবস্থায় আমি কেন পূজা দিচ্ছি?
তাও আবার এত সকালে? অনেকক্ষণ অপেক্ষা করার পরেও আমি যখন উঠিনি, তখন উনি আমার গায়ে হাত দেয়। আমি নাকি সঙ্গে সঙ্গে মাটিতে শুয়ে পরে যাই। তারপর সবাই এসে আমাকে পাঁজাকোলা করে ধরে ওই মাসির বাসায় নিয়ে আসে। অনেক চেষ্টা করছে আমার জ্ঞান ফিরানোর জন্য। কিন্তু পারেনি। প্রায় দের দিন পরে আজ আমার জ্ঞান ফিরলো।
আমার সাথে কেন এমন হলো? বুঝে উঠার আগেই মনে পরলো,আমার ব্যাগে মা গরুর গোস্ত রান্না করে বাটি ভরে দিয়েছিল। সঙ্গে সঙ্গেই মাসির থেকে ব্যাগ নিয়ে ব্যাগের তালা খুলে বাটি বের করলাম।
কিন্তু অদ্ভুত ব্যাপার হচ্ছে বাটিতে মায়ের দেওয়া গোস্তের একটি টুকরোও নেই। অথচ ব্যাগে তালা দেওয়া ছিল।

সম্পর্কিত পোস্ট

যদি পাশে থাকো

যদি পাশে থাকো

তাসফিয়া শারমিন ** আজকের সকালটা অন্য রকম। সাত সকালে আম্মু বকা দিলো। মানুষের ঘুম একটু দেরিতে ভাঙতেই পারে। তাই বলে এত রাগার কী আছে ?একেবারে যে দোষ আমারও তাও নয়। মানুষ ঘুম থেকে উঠে ফোনে বা দেওয়াল ঘড়িতে সময় দেখে। কিন্তু আমি উঠি জানালার পর্দা সরিয়ে বাইরের আলো দেখে।কে জানে...

কুড়িয়ে পাওয়া রত্ন

কুড়িয়ে পাওয়া রত্ন

অনন্যা অনু 'আমিনা বেগম' মেমোরিয়াল এতিমখানার গেট খুলে ভেতরে ঢুকতেই ওমরের বুকটা ধুক ধুক করতে শুরু করে। ওমর ধীর গতিতে ভেতরে প্রবেশ করে। চারদিকে তখন সবেমাত্র ভোরের আলো ফুটতে শুরু করেছে। ওমর গত রাতের ফ্লাইটে আমেরিকা থেকে এসেছে। সে এসেই সোজা আমিনা বেগম মেমোরিয়াল এতিমখানায়...

দাদাভাইকে চিঠি

দাদাভাইকে চিঠি

প্রিয় দাদাভাই, শুরুতে তোকে শরতের শিউলি ফুলের নরম নরম ভালোবাসা। কেমন আছিস দাদাভাই? জানি তুই ভালো নেই, তবুও দাঁতগুলো বের করে বলবি ভালো আছি রে পাগলী! দাদাভাই তুই কেন মিথ্যা ভালো থাকার কথা লেখিস প্রতিবার চিঠিতে? তুই কি মনে করিস আমি তোর মিথ্যা হাসি বুঝি না? তুই ভুলে গেছিস,...

৬ Comments

  1. আফরোজা আক্তার ইতি

    গল্পটা পড়তে খুবই ভালো লাগল। উপস্থাপন ও বর্ণনাভঙ্গি অত্যন্ত সুন্দর ছিল। পাঠকক পড়তে পড়তে গল্পের মাঝে হারিয়ে যাবে আর শিহরিত হয়ে উঠবে। তবে গল্পটা আমার কাছে ভ্রমণকাহিনীরর মত লাগে নি। অনেকটা ভৌতিক বা রহস্যজনক গল্পের মত লেগেছে। ভৌতিক গল্প হিসেবে এটি চমৎকার।
    বানানে বেশ কিছু ভুল আছে। সংশোধন করে দিচ্ছি। দয়া করে দেখে নিবেন।
    স্কিন- স্ক্রিন।
    আতকে- আঁতকে।
    বাড়ী- বাড়ি।
    পোনে- পৌঁনে।
    রিক্সার- রিক্সা।
    কিন্তু ড্রাইভার চাচা ছাড়ায়- এই কথার মানে বুঝলাম না। রিক্সার মধ্যে ড্রাইভার চাচা আসবে কোত্থেকে?
    দের- দেড়।
    আন্তরিক শুভ কামনা রইল।

    Reply
  2. মাহফুজা সালওয়া

    শিহরণ জাগানো একটা গল্প।
    তবে এটা কি আদৌ ভ্রমণকাহিনীর মাঝে পড়ে?
    আমার মনে হয় এটা ঠিক না হরর বা থ্রিলার গল্পের কাতারে পড়বে। আপনার উচিত ছিলো এটা গল্প বিভাগে জমা দেয়া।
    কিন্তু উপস্থাপনভঙ্গি বেশ ছিলো।
    বানান ভূল চোখে পড়েছে।
    শুভকামনা।

    Reply
  3. Tasnim Rime

    গল্প বিভাগে দিলে ঠিক ছিল কিন্তু ভ্রমণকাহিনী হিসেবে এটা একদমই ভুল বিবেচনা তাই বলার কিছু নাই তেমন। কয়েকটা বানান ঠিক করে নিবেন
    রাত্র ৯টায়- রাত ৯ টায়
    কি করবো- কী করব
    স্কিনের- স্ক্রিনের
    অাতকে- আঁতকে
    দের ঘন্টা- দেড় ঘন্টা
    বাড়ী- বাড়ি

    Reply
  4. SHAFIUR RAHMAN

    লেখকের ভৌতিক সৃজনশক্তি বাক্য তৈরিতে বেশ প্রভাব ফেলেছে লক্ষ করেছি। তাই ভ্রমনকাহিনীতে ভৌতিকতা তুলে ধরেছেন।
    তবে ভ্রমনকাহিনী কিরূপ হয় সেটা জানার জন্য তার সমন্ধে লেখকে আরো বই পড়ার জন্য আহবান জানাই।

    Reply
  5. Rifat

    বাড়ী — বাড়ি
    দের — দেড়
    ইংরেজি শব্দের ব্যবহার একটু কম করবেন।
    লেখাটা অনেক সুন্দর ছিল। তবে এটা ভ্রমণ কাহিনী হয়নি।
    শুভ কামনা।

    Reply
  6. shahrulislamsayem@gmail.com

    খুব ভালো বর্ণনা কিন্তু এটা পড়ার সময় ভ্রমণকাহিনী মনে হয়নি বা ভ্রমণকাহিনীর স্বাদ পাইনি…………আর বানান………’দের’ -‘দেড়’

    Reply

Submit a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *