বঙ্গবন্ধু, স্বাধীনতা ও বাংলাদেশ।
বাংলাদেশ শুধু একটি শব্দ নয়, একটি ইতিহাস। এই শব্দটির সাথেই মিশে হাজার বছরের ইতিহাস-ঐতিহ্য এবং সংস্কৃতি। সর্বশেষে আছে স্বাধীনতা এবং বঙ্গবন্ধু। চাঁদ-সূর্য ছাড়া যেমন পৃথিবী কল্পনা করা যায় না; নারী-পুরুষ ছাড়া যেমন সংসার অকল্পনীয় ঠিক তেমনই “বাংলাদেশ”-এর সাথে আষ্টেপৃষ্ঠে মিশে আছে বঙ্গবন্ধু এবং স্বাধীনতা।
স্বাধীনতা কথাটি যখন আসে তখন সবার আগে এর মাহাত্ম্য আমাদের জানতে হবে, চিন্তা করতে হবে এর গভীরতা। স্বাধীনতা একটি শর্ত, যেখানে একটি জাতি, দেশ, বা রাষ্ট্র বা জায়গা যেখানে জনগণ থাকবে, নিজস্ব শাসনব্যবস্থা, এবং সাধারণত কোনো অঞ্চলের সার্বভৌমত্ব থাকবে। স্বাধীনতার বিপরীত হচ্ছে পরাধীনতা. স্বাধীনতা মানে কিন্তু যা খুশি তা করা নয়। স্বাধীনতা দীর্ঘ বিপ্লব বা সহিংসতার প্রশ্নে বিতর্ক যেভাবেই হোক, সার্বভৌমত্ব অর্জন যদিও কিছু বিপ্লবের উদ্দেশ্য এবং লক্ষ্য জাতীয় স্বাধীনতা অর্জন; অন্যদের শুধুমাত্র ক্ষমতা লাভের উদ্দেশ্য, যেখানে মুক্তির উপাদান থাকে, যেমন একটি দেশের মধ্যে গণতন্ত্রায়ন, যেখানে সীমানায় কোনো পরিবর্তন হয় না। জাতি-রাষ্ট্র কোনো বিপ্লবী কর্মকাণ্ড ছাড়া স্বাধীনতা দিয়েছে। উদাহরণস্বরূপ, রাশিয়ার অক্টোবর বিপ্লব,জাতীয় স্বাধীনতার উদ্দেশ্যে হয়নি। (যদিও এর মাধ্যমে রুশ সাম্রাজ্যে ক্ষমতার পালা বদল হয়েছিল, যদিও এর ফলে পোল্যান্ড, ফিনল্যান্ড, লিথুয়ানিয়া, লাতভিয়া এবং ইস্তোনিয়া স্বাধীনতা লাভ করে). যাইহোক, আমেরিকার স্বাধীনতা যুদ্ধ শুরু থেকেই স্বাধীনতার উদ্দেশ্যই ছিল। স্বায়ত্তশাসন বলতে এক ধরনের স্বাধীনতা বুঝায়, যেখানে কেন্দ্রীয় কর্তৃপক্ষ অনেক কিছু নিয়ন্ত্রণ করে এবং নিজের কতৃত্বও বজায় থাকে।
ঐতিহাসিকভাবে, সেখানে স্বাধীনতা ঘোষণার প্রধান তিনটি সময়কাল পর্যন্ত আছে।
১৭৭০-এর দশকে শুরু হয়ে আমেরিকার স্বাধীনতা যুদ্ধ ১৮২০-এর দশক পর্যন্ত চলে; যখন রাজকীয় দুর্গের পতন ঘটে, স্প্যানিশ আমেরিকান যুদ্ধের মাধ্যমে; প্রথম বিশ্বযুদ্ধের ফলাফলস্বরূপ উসমানীয় সাম্রাজ্য এবং
অস্ট্রিয়া-হাঙ্গেরি সাম্রাজ্যের পতন ঘটে; এবং ১৯৪৫ থেকে ১৯৭৯ সাল পর্যন্ত ইউরোপীয় ঔপনিবেশিক সাম্রাজ্য থেকে ৭০ টি নতুন রাষ্ট্র স্বাধীনতা পায়।
একটি দেশের বা রাজ্যের স্বাধীনতা লাভের অনেক উদ্দেশ্য থাকে। স্বাধীনতা লাভের উপায়গুলোর মধ্যে শান্তিপূর্ণ প্রতিবাদ যেমন ভারতের স্বাধীনতা আন্দোলন থেকে, সহিংসতা যেমন গৃহযুদ্ধ হতে পারে। ভারতের শাসন ব্যবস্থা করা হয়েছে ।
বাংলার ইতিহাস বলতে অধুনা বাংলাদেশ, পশ্চিমবঙ্গের ত্রিপুরা ও আসামের বারাক উপত্যকার বিগত চার হাজার বছরের ইতিহাসকর্ম বোঝায়। গঙ্গা ও ব্রহ্মপুত্র নদ এক অর্থে বাংলাকে ভারতের মূল ভূ-খণ্ড থেকে বিচ্ছিন্ন করে রেখেছিল। কিন্তু তা সত্ত্বেও ভারতের ইতিহাসে বাংলা এক গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা গ্রহণ করে। প্রাচীন রোমান ও গ্রীকদের কাছে এই অঞ্চল গঙ্গারিডাই নামে পরিচিত ছিল। চার হাজার বছর পূর্বে বাংলায় সভ্যতার ক্রমবিকাশ শুরু হয়। দক্ষিণ এশিয়ার ইতিহাসে বাংলা বরাবরই গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছে। প্রাচীন বাংলা কয়েকটি জনপদে বিভক্ত ছিল এবং বেশ কিছু প্রাচীন শহর বৈদিক যুগে পত্তন হয়েছিল বলে ধারণা করা হয়। প্রাচীন বাংলার অধিবাসীরা ভারত মহাসাগরে অবস্থিত বিভিন্ন দ্বীপে উপনিবেশ স্থাপন করেছিল। পারস্য, আরব ও
ভূ-মধ্যসাগরীয় অঞ্চলের সাথে বাংলাত দৃঢ় বাণিজ্যিক সম্পর্ক ছিল। এই অঞ্চল মৌর্য ও গুপ্ত সাম্রাজসহ আরও অনেক ভারতীয় সাম্রাজ্যেএ অংশ ছিল। বাংলা বিভিন্ন সময়ে আঞ্চলিক শাসকদের রাজধানী হিসেবে স্বীকৃতি পেয়েছিল। প্রাচীন দূর্গ শহর গৌড় বহু বছর ধরে বাংলার রাজধানী ছিল। বৌদ্ধ শাসক পাল আমলে এবং হিন্দু শাসক সেন আমলে বাংলার রাজধানী ছিল গৌড়। এই সময়ে বাংলা ভাষা, সাহিত্য, সঙ্গীত, কলা ও স্থাপত্যের প্রভূত উন্নতি হয়। ১২শতকের পর এই অঞ্চল মুসলমান সুলতান, বারো ভুঁইয়া এবং হিন্দু রাজন্যবর্গের দ্বারা শাসিত হয়েছিল। ১৬শতকের শেষে এবং ১৭শতকের শুরুতে ঈশা খাঁ নামের একজন মুসলিম রাজপুত্র বারো ভুঁইয়াদের নেতৃত্ব দেন। এরপর বাংলা মুঘলদের অধিকারে চলে যায়। মুঘল আমলে বাংলা ছিল সবচেয়ে সম্পদশালী প্রদেশ। সেই আমলে সুবাহ বাংলা সমগ্র সাম্রাজ্যের মোট জিডিপি-এর শতকরা ৫০ভাগ যোগান দিত। বাংলা সমুদ্রগামী জাহাজ ও বস্ত্র শিল্পের জন্য বিখ্যাত ছিল। ক্রমে মুঘল শাসন দুর্বল হয়ে পড়লে মারাঠা আক্রমণের পর বাংলার প্রায় স্বাধীন-নবাবদের শাসন প্রতিষ্ঠিত হয়। এরপর বাংলা ইস্ট-ইন্ডিয়া কোম্পানীর শাসনে চলে যায়। ১৮শতকের দ্বিতীয় ভাগে বৃটিশরা সমগ্র বাংলার সম্পূর্ণ নিয়ন্ত্রণ গ্রহণ করে। ১৭৫৭সালে পলাশীর যুদ্ধ ও ১৭৬৪সালে বক্সারের যুদ্ধের পর কোম্পানী বাংলার পূর্ণ নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠা করেছিল। বাংলায় বৃটিশদের লুট তরাজ তৎকালীন বৃটেনে শিল্প বিপ্লবে উল্লেখযোগ্য ভূমিকা পালন করেছিল। বাংলা থেকে নিয়ে যাওয়া পুঁজি বৃটেনে বিভিন্ন শিল্পে বিশেষ করে বস্ত্র শিল্পে বিনিয়োগ করে বৃটিশরা প্রভূত সম্পদের অধিকারী হয়েছিল। একই সাথে এই লুট তরাজের ফলে বাংলায় শিল্পায়ন ব্যাহত হয় এবং দুর্ভিক্ষ দেখা দেয়। ১৯৪৭সালে ভারত-পাকিস্তানের স্বাধীনতার সময়ে দ্বি-জাতি তত্ত্বের ভিত্তিতে বাংলাকে দুই ভাগ করা হয়। বাংলার পশ্চিম অংশ ভারতের একটি রাজ্যে পরিণত হয় আর পূর্ব বাংলা(বাংলাদেশ) পাকিস্তানের সাথে যুক্ত হয়। বৃটিশরা চলে যাবার পরও বাংলাদেশ শোষণের বেড়াজাল থেকে মুক্তি পাচ্ছিল না। তৎকালীন পশ্চিম পাকিস্তানের ছোবল থেকে ২৪বছর পর ১৯৭১ সালে দীর্ঘ নয় মাস জুড়ে রক্তক্ষয়ী যুদ্ধের মাধ্যমে জয়লাভ করে বাংলাদেশ নামে একটি স্বাধীন রাষ্ট্র হিসেবে আত্মপ্রকাশ করে।
আর এখানে উজ্জ্বল নক্ষত্রের মতো জ্বলজ্বল করে বঙ্গবন্ধু-র নাম। যিনি আমাদের মুক্তির পথ দেখিয়েছেন সুন্দর করে। একদল স্বাধীনতা পিয়াসু জনতার অন্তর গহীনে প্রেরণার বারুদ জ্বালিয়ে দিয়েছিল। যার ফলস্রুতিতে পরাধীনতার দেয়াল ভেঙে পৃথিবীর মানচিত্রে স্বাধীন দেশ হিসবে বাংলাদেশ জায়গা করে নেয়।
বাঙালী জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ফরিদপুর জেলার গোপালগঞ্জ মহকুমার (বর্তমানে জেলা) টুঙ্গিপাড়া গ্রামে এক সম্ভ্রান্ত মুসলিম পরিবারে ১৯২০ সালের ১৭ মার্চ জন্মগ্রহণ করেন। তাঁর জন্মদিন বর্তমানে জাতীয় শিশু দিবস হিসেবে পালিত হয়। শেখ লুৎফর রহমান ও মোসাম্মৎ সাহারা খাতুনের চার কন্যা ও দুই পুত্রের মধ্যে তৃতীয় সন্তান শেখ মুজিব। বাবা-মা ডাকতেন খোকা বলে। খোকার শৈশবকাল কাটে টুঙ্গি-পাড়ায়।
৭ বছর বয়সে গিমাডাঙ্গা প্রাইমারি স্কুলে পড়াশোনা শুরু করেন। নয় বছর বয়সে গোপালগঞ্জ পাবলিক স্কুলে তৃতীয় শ্রেণীতে ভর্তি হন। পরে তিনি স্থানীয় মিশনারি স্কুলে ভর্তি হন। ১৪ বছর বয়সে বেরিবেরি রোগে আক্রান্ত হলে তার একটি চোখ কলকাতায় অপারেশন করা হয় এবং চক্ষুরোগের কারণে তার লেখাপড়ার সাময়িক বিরতি ঘটে। চক্ষুরোগে চার বছর শিক্ষাজীবন ব্যাহত হওয়ার পর শেখ মুজিব পুনরায় স্কুলে ভর্তি হন।
১৮ বছর বয়সে বঙ্গবন্ধু ও বেগম ফজিলাতুন্নেছার বিয়ে সম্পন্ন হয়। তারা দুই কন্যা শেখ হাসিনা, শেখ রেহানা ও তিন পুত্র শেখ কামাল, শেখ জামাল ও শেখ রাসেল এর জনক-জননী।
১৯৩৯ সালে অবিভক্ত বাংলার মুখ্যমন্ত্রী শেরে বাংলা একে ফজলুল হক এবং হোসেন শহীদ সোহরাওয়ার্দী গোপালগঞ্জ মিশনারি স্কুল পরিদর্শনে এলে বঙ্গবন্ধু স্কুলের ছাদ দিয়ে পানি পড়ত তা সারাবার জন্য ও ছাত্রাবাসের দাবি স্কুল ছাত্রদের পক্ষ থেকে তুলে ধরেন।
শেখ মুজিব নিখিল ভারত মুসলিম ছাত্র ফেডারেশনে যোগদান করেন এবং এক বছরের জন্য বেঙ্গল মুসলিম ছাত্র ফেডারেশনের কাউন্সিলর নির্বাচিত হন। তাকে গোপালগঞ্জ মুসলিম ডিফেন্স কমিটির সেক্রেটারি নিযুক্ত করা হয়।
সক্রিয় রাজনীতিতে জড়িয়ে পড়েন ১৯৪৩ সালে এবং মুসলিম লীগের কাউন্সিলর নির্বাচিত হন।
১৯৫৫ সালে ৫ জুন বঙ্গবন্ধু গণপরিষদের সদস্য নির্বাচিত হন। আওয়ামী লীগের উদ্যোগে ১৭ জুন ঢাকার পল্টন ময়দানের জনসভা থেকে পূর্ব পাকিস্তানের স্বায়ত্তশাসন দাবি করে ২১ দফা ঘোষণা করা হয়। ২৩ জুন আওয়ামী লীগের কার্যকরী পরিষদে সিদ্ধান্ত গৃহীত হয় যে, পূর্ব পাকিস্তানের স্বায়ত্তশাসন প্রদান করা না হলে দলীয় সদস্যরা আইনসভা থেকে পদত্যাগ করবেন।
২১ অক্টোবর আওয়ামী মুসলিম লীগের কাউন্সিল অধিবেশনে দলের নাম থেকে ‘মুসলিম’ শব্দ প্রত্যাহার করা হয় এবং বঙ্গবন্ধু পুনরায় দলের সাধারণ সম্পাদক নির্বাচিত হন।
১৯৫৭সালে সংগঠনকে সুসংগঠিত করার উদ্দেশ্যে ৩০ মে দলীয় সিদ্ধান্ত অনুযায়ী শেখ মুজিব মন্ত্রীসভা থেকে পদত্যাগ করেন। ৭ আগস্ট তিনি চীন ও সোভিয়েত ইউনিয়নে সরকারি সফর করেন।
১৯৫৮সালে ৭ অক্টোবর পাকিস্তানের সামরিক বাহিনী প্রধান মেজর জেনারেল আইয়ুব খান সামরিক শাসন জারি করে রাজনীতি নিষিদ্ধ ঘোষণা করেন। ১১ অক্টোবর বঙ্গবন্ধুকে গ্রেফতার করা হয় এবং একের পর এক মিথ্যা মামলা দায়ের করে হয়রানি করা হয়। প্রায় চৌদ্দ মাস জেলখানায় থাকার পর তাকে মুক্তি দিয়ে পুনরায় জেলগেটেই গ্রেফতার করা হয়। ১৯৬১
৭ ডিসেম্বর হাইকোর্টে রিট আবেদন করে তিনি মুক্তি লাভ করেন। সামরিক শাসন ও আইয়ুব বিরোধী আন্দোলন গড়ে তোলার লক্ষ্যে বঙ্গবন্ধু গোপন রাজনৈতিক কর্মকাণ্ড পরিচালনা করেন। এ সময়ই বঙ্গবন্ধু বাংলাদেশের স্বাধীনতা সংগ্রামের লক্ষ্যে কাজ করার জন্য বিশিষ্ট ছাত্র নেতৃবৃন্দের দ্বারা ‘স্বাধীন বাংলা বিপ্লবী পরিষদ’ নামে একটি গোপন সংগঠন প্রতিষ্ঠা করেন।
১৯৬৩ সালে সোহরাওয়ার্দী অসুস্থ হয়ে চিকিৎসার জন্য লন্ডনে অবস্থানকালে বঙ্গবন্ধু তার সঙ্গে পরামর্শের জন্য লন্ডন যান। ৫ ডিসেম্বর সোহরাওয়ার্দী বৈরুতে ইন্তেকাল করেন।
১৯৬৯ সালের ৫ জানুয়ারি ৬ দফাসহ ১১দফা দাবি নিয়ে আন্দোলন হয়। ২২ ফেব্রুয়ারি জনগণের অব্যাহত চাপের মুখে কেন্দ্রীয় সরকার আগরতলা ষড়যন্ত্র মামলা প্রত্যাহার করে বঙ্গবন্ধুসহ অন্যান্য আসামিকে মুক্তি দানে বাধ্য হয়। ২৩ ফেব্রুয়ারি রেসকোর্স (সোহরাওয়ার্দী উদ্যান) ময়দানে কেন্দ্রীয় ছাত্র সংগ্রাম পরিষদের উদ্যোগে বঙ্গবন্ধুকে সংবর্ধনার আয়োজন করা হয়। প্রায় ১০ লাখ ছাত্র জনতার এই সংবর্ধনা সমাবেশে শেখ মুজিবুর রহমানকে আনুষ্ঠানিকভাবে ‘বঙ্গবন্ধু’ উপাধিতে ভূষিত করা হয়। বঙ্গবন্ধু রেসকোর্স ময়দানের ভাষণে ছাত্র সমাজের ১১ দফা দাবির প্রতি পূর্ণ সমর্থন জানান।
৭০’র নির্বাচনে বঙ্গবন্ধুর নেতৃত্বে সাধারণ নির্বাচনে আওয়ামীলীগ বিপুল ভোটে জয়লাভ করতে পশ্চিম পাকিস্তানের শাসকগোষ্ঠী ক্ষমতা হস্তান্তর করতে আপত্তি জানায়। ১৯৭১সালের ১লা মার্চ ইয়াহিয়া খান অনির্দিষ্টকালের জন্য জাতীয় পরিষদের বৈঠক স্থগিতের ঘোষণা দিলে সারা বাংলায় প্রতিবাদের ঝড় ওঠে। বঙ্গবন্ধুর সভাপতিত্বে আওয়ামী লীগ কার্যকরী পরিষদের জরুরি বৈঠকে ২ মার্চ দেশব্যাপী হরতাল আহ্বান করা হয়। ৩ মার্চ সারা বাংলায় হরতাল পালিত হবার পর বঙ্গবন্ধু অবিলম্বে ক্ষমতা হস্তান্তর করার জন্য প্রেসিডেন্টের প্রতি দাবি জানান।
৭ মার্চ রেসকোর্সের জনসমুদ্র থেকে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ঘোষণা করেন ‘এবারের সংগ্রাম আমাদের মুক্তির সংগ্রাম, এবারের সংগ্রাম স্বাধীনতার সংগ্রাম, জয় বাংলা’। বঙ্গবন্ধু ২৫শে মার্চ রাত ১২টা ২০ মিনিটে বাংলাদেশের স্বাধীনতা ঘোষণা করেন :
২৬ মার্চ চট্টগ্রাম স্বাধীন বাংলা বেতার কেন্দ্র থেকে চট্টগ্রামের আওয়ামী লীগ নেতা এম এ হান্নান বঙ্গবন্ধুর স্বাধীনতা ঘোষণাপত্রটি পাঠ করেন। ১০ এপ্রিল বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে রাষ্ট্রপতি করে বিপ্লবী সরকার গঠিত হয়। ১৭ এপ্রিল মেহেরপুরের বৈদ্যনাথতলার আম্রকাননে (মুজিবনগর) বাংলাদেশ সরকারের শপথ গ্রহণ অনুষ্ঠিত হয়। বঙ্গবন্ধু রাষ্ট্রপতি, সৈয়দ নজরুল ইসলাম অস্থায়ী রাষ্ট্রপতি এবং তাজউদ্দিন আহমদ প্রধানমন্ত্রী নির্বাচিত হন। প্রবাসী বাংলাদেশ সরকারের পরিচালনায় মুক্তিযুদ্ধ শেষে ১৬ ডিসেম্বর ঐতিহাসিক রেসকোর্স ময়দানে পাকিস্তান বাহিনীর আত্মসমর্পণের মধ্য দিয়ে মুক্তিযুদ্ধে বিজয় অর্জিত হয়। বাংলাদেশ লাভ করে স্বাধীনতা।
১৯৭২সালের ৮ জানুয়ারি পাকিস্তান সরকার আন্তর্জাতিক চাপে বঙ্গবন্ধুকে মুক্তি দেয়। জুলফিকার আলী ভুট্টো বঙ্গবন্ধুর সাথে সাক্ষাৎ করেন। সেদিনই বঙ্গবন্ধুকে ঢাকার উদ্দেশ্যে লন্ডন পাঠান হয়। ৯ জানুয়ারি লন্ডনে ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী এডওয়ার্ড হীথের সাথে সাক্ষাৎ হয়। লন্ডন থেকে ঢাকা আসার পথে বঙ্গবন্ধু দিল্লি−তে যাত্রা বিরতি করেন। বিমানবন্দরে ভারতের রাষ্ট্রপতি ভি. ভি. গিরি ও প্রধানমন্ত্রী মিসেস ইন্দিরা গান্ধী বঙ্গবন্ধুকে স্বাগত জানান।
জাতির জনক বঙ্গবন্ধু ১০ জানুয়ারি ঢাকায় পৌঁছলে তাকে অবিস্মরণীয় সংবর্ধনা জ্ঞাপন করা হয়। বঙ্গবন্ধু বিমান বন্দর বন্দর থেকে সরাসরি রেসকোর্স ময়দানে গিয়ে লক্ষ জনতার সমাবেশ থেকে অশ্রুসিক্ত নয়নে জাতির উদ্দেশ্যে ভাষণ দেন।
১৯৭৪ সালের ২২শে ফেব্রুয়ারি বাংলাদেশকে স্বাধীন রাষ্ট্র হিসেবে স্বীকৃতি জানায় পাকিস্তান।
১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্টের ভোরে হাজার বছরের শ্রেষ্ঠ বাঙালি বাংলাদেশের স্থপতি বাঙালি জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান নিজ বাসভবনে সেনাবাহিনীর কতিপয় উচ্চাভিলাষী অফিসার বিশ্বাস ঘাতকের হাতে নিহত হন। সেদিন বঙ্গবন্ধু পরিবারের ১৬ জন সদস্য ও আত্মীয়স্বজনকে ঘাতকরা হত্যা করে। বিদেশে থাকায় প্রাণে বেঁচে যায় বঙ্গবন্ধুর আদরের দুই মেয়ে শেখ হাসিনা ও শেখ রেহানা।
বিশ্বে মানবাধিকার রক্ষার জন্য হত্যাকারীদের বিচারের বিধান রয়েছে কিন্তু বাংলাদেশে জাতির জনকের আত্ম-স্বীকৃত খুনিদের বিচারের হাত থেকে রেহাই দেবার জন্য এক সামরিক অধ্যাদেশ জারি করা হয়। জেনারেল জিয়াউর রহমান সামরিক শাসনের মাধ্যমে অবৈধভাবে ক্ষমতা দখল করে পঞ্চম সংশোধনীর মাধ্যমে ইনডেমনিটি অর্ডিন্যান্স নামে এক কুখ্যাত কালো আইন সংবিধানে সংযুক্ত করে সংবিধানের পবিত্রতা নষ্ট করে। খুনিদের বিদেশে অবস্থিত বিভিন্ন দূতাবাসে চাকরি দিয়ে পুরস্কৃত করে।
১৯৯৬ সালের ২৩ জুন বঙ্গবন্ধু কন্যা শেখ হাসিনার নেতৃত্বে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আসার পর জাতীয় সংসদ কুখ্যাত ইনডেমনিটি অর্ডিন্যান্স বাতিল করে।
১৫ আগস্ট জাতির জীবনে একটি কলঙ্কময় দিন। এই দিবসটি জাতীয় শোক দিবস হিসেবে বাঙালি জাতি পালন করে।
এই বাংলাকে স্বাধীন করতে বহু বীর তাঁদের জীবন দিতে কুণ্ঠাবোধ করেননি। অতঃপর এখন আমরা বাংলাদেশ নামক একটি স্বাধীন দেশে বাস করছি।
তথ্যসূত্র: বঙ্গবন্ধুর জীবনী, বাংলার কতকথা, স্বাধীনতার পেছনের কথা, উইকিপিডিয়া।
written by: আরাফাত তন্ময়।
বঙ্গবন্ধুকে নিয়ে সাহস করে প্রবন্ধ লেখার জন্য ধন্যবাদ। জাতির পিতার প্রতি শ্রদ্ধা আছে বলেই হয়তো এমনটা সম্ভব হয়েছে। চেনা কথাগুলো পড়তেও বিরক্ত লাগছিল না।
ধন্যবাদ প্রিয়। সব ভুলে আশা করি সম্পর্কটা আগের মতোই সাবলীল হবে।
বাংলার স্বাধীনতায় শেখ মুজিবের অবদান অপরিসীম। যতটুকই বলা যায়, কম হবে। শেখ মুজিব ছাড়া স্বাধীন বাংলার স্বাদ পাওয়া হয়ত সম্ভব হত না।
সুন্দর লিখেছেন।
বানান…
কতৃত্ব~ কর্তৃত্ব
বঙ্গবন্ধুকে নিয়ে প্রবন্ধ।
অনেক কিছু জানলাম।এ দেশের জন্য কতো বীবের জীবন দিতে হলো।
তাদের জীবনের বিনিময়েই স্বাধীন দেশে বাস করতে পারছি।
তাদের অবদান অনেক।
শুভ কামনা রইলো।
বৃটেনে- ভূটানে
১৯৬১-১৯৬১সালে
বাবা রে এই দেখছি আগে পরে সব ইতিহাস লেখা হয়ে গিয়েছে। অথচ প্রবন্ধের নাম দিয়েছেন বঙ্গবন্ধু, স্বাধীনতা ও বাংলাদেশ। আর যাইহোক অনেক ভালো লিখেছেন। বানান দুই-একটা মনে হয় ভুল আছে। তবে শেখ মুজিবকে ভুলার নই। উনি যা করেছে বিশ্বের অন্য কোনো নেতা করতে পারেনি। শুভ কামনা রইল প্রিয় অনেক
আসসালামু আলাইকুম।
ভালোই লিখেছেন। খারাপ না। চালিয়ে যান।
শুভ কামনা।