গল্প লেখকঃ
নূর-এ-জাহান বিলকিছ
(ফেব্রুয়ারী’১৮)
………………
বিশেষণ
নাফাদ: ‘তুমি অনেক গুণবতী মেয়ে। অসাধারণ তোমার লেখনী। কি করে পারো এতো?যে ছেলে তোমায় বিয়ে করবে,তার তো রাজ কপাল!’
কথা গুলো শুনে নিতু একবার চোখ বন্ধ করে। ভেতরকার কষ্ট আর সমাজের প্রতি যে ঘৃণাবোধ নাড়া দিয়ে উঠছে,তার তীব্রতা অনেক। কিছুক্ষণ চুপচাপ কাটে,তারপর নিষ্পলক তাকিয়ে সে প্রশ্ন করে- ‘বিয়ে করবেন আমায়?’
নাফাদ ভাবতে পারেনি নিতু এমন করে বলবে। অবাক হয়ে বলে – ‘আমি?’
-‘হুম,আপনি। করবেন??’
নাফাদ ইতস্ততা বোধ করে। প্রশংসা টা কি বেশি হয়ে গেলো? মনে মনে চিন্তা করে। না,নিতু সত্যি গুণবতী মেয়ে,এতে সন্দেহ নেই। কিন্তু বউ হিসেবে নাফাদের কল্পলোকে যে বাস করে তার চামড়ার রঙ এমন বেঢপ মার্কা কালো না, উচ্চতায়ও মানানসই। মনোলোকের সাথে বাস্তবতার বিরোধ নিয়ে একটা জীবন কাটবে না। নিজের মনের আলোচনা থামিয়ে নাফাদ বলে- ‘শোনো নিতু,যে যার যোগ্য না তাকে সেই আসন দিও না। তুমি অনেক গুণবতী মেয়ে, স্মল ব্ল্যাক ডায়মন্ড বলা হয় তোমাকে! তুউউমি ভালো ছেলে পেয়ে যাবে। আমার মতো সৃষ্টি ছাড়া মানুষ,তোমার যোগ্য হবে না।’
নিতু উচ্চস্বরে হাসে। হাসতে হাসতে বলে- ‘তোমার মতো কতজন এমন কথা বলেছে, জানো?’ এরপর জিজ্ঞাসু চোখে বোধহীন নাফাদের ঠোঁট জোড়া ভালো করে দেখে।
না,নাফাদের কাছে কোনো উত্তর নেই। যেমন উত্তর নেই বৈষম্যভেদ্য প্রকৃতির কাছেও! নিতু অবাক হয়নি। স্বাভাবিক ভাবেই বাড়ি ফিরে আসে।
আজ নিতুর একটা কবিতা পত্রিকায় ছাপা হয়েছে। বাংলাদেশের নামী পত্রিকা। সম্পাদক সাহেব ফোন করে বললো- ‘তুমি অনেক ভালো লেখো,অসাধারণ প্রতিভা তোমার। তুমি তো অনেক গুণবতী মেয়ে! রিয়েলি ইউ আর এ স্মল ব্ল্যাক ডায়মন্ড।’
নিতু ফোন কেটে দেয়। সৌজন্যবোধের ধন্যবাটুকুও দেয়নি। ‘স্মল ব্ল্যাক ডায়মন্ড’ শব্দটা আগে কানে বাজতো, ভালো লাগতো। এখন নিউরনে এসে আঘাত করে। ডায়মন্ড শব্দের আগে ছোট ছোট বিশেষণ,নিষ্পেষণ করে অপূর্ণতা কে।
তাই এমন প্রশংসায় নিতু কেবল হাসে।
নিয়মমতো নিতুর এখনও হাসা উচিত। বীভৎস হাসি, সমাজ ও প্রকৃতির প্রতি, ঘৃণাময় হাসি। কিন্তু নিতু হাসতে পারছে না। ফ্যাকাসে মুখ নিয়ে তাকিয়ে আছে আয়নার ব্ল্যাক এন্ড স্মল প্রতিবিম্বর দিকে……
অনবদ্য রচনা।
ভালো লাগলো, কঠিন বাস্তবতা ফুটে উঠেছে।
অনেক ভালো লিখেছেন আপু, আপনার লেখার হাত চমৎকার।
গল্পটি বেশ ভালো লাগলো।