ভাসমান পেয়ারা বাগানে একদিন
– অাফিয়া ইবনাত
“ধান নদী খাল
এই তিনে বরিশাল”
ভাল কিছু পেতে কঠিন সিদ্ধান্ত নিতেই হয়। হয়ত সল্প ক্ষনের ছিল সে দুর্লভ মুহূর্ত তবে আনন্দটা অমলিন। বংশ পরম্পরায় জন্ম, বাসস্থান পুরোটা বরিশালে তবু সৌন্দর্যময় এ অঞ্চলের খ্যাতি অর্জন করা পেয়ারা বাগান আর আমড়ার বনে যাওয়ার সৌভাগ্য কিছু ভ্রমন প্রিয় বন্ধুদের জন্যই স্বম্ভব হলো। দশদিক থেকে জড়ো হওয়া পাগলগুলো হ্যাঁ পাগলই নয়তো এত ঝুঁকি নিয়ে কেউ অমন ভটভট করা অটো, মাহিন্দ্র করে কুরিয়ানার যাত্রা শুরু করে না। যাওয়ার রাস্তাটা যেন ডিজে পার্টির ঝিকমিকে আলো, শরীরের হাড্ডির অস্তিত্বের জানান দেয় উঁচু নিচু পথ। বেশ কিছুদিন থেকেই অামাদের প্লান চলছে ঘুরতে যাব কিন্তু ক্লাসটেস্ট, প্রাইভেট ছাপিয়ে অার কোথাও যাওয়া হয় না। অবশেষে সীদ্ধান্ত নিলাম একদিন ক্লাস ফাঁকি দিয়েই যাবো কুরিয়ানা পেয়ারা বাগানে।
থাইল্যান্ডের ফ্লোটিং মার্কেট দেখে মনে মনে হয়তো অনেকেই ভাবে অামাদের দেশে এমন কেন নাই। তাদের জন্য সুখবর হচ্ছে ঝালকাঠী জেলা শহর থেকে প্রায় ১৫ কিলোমিটার দূরে ভিমরুলি গ্রামের আঁকাবাঁকা ছোট্ট খালজুড়ে সপ্তাহের প্রতিদিনই সকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত চলে বিকিকিনি। হাটটি সারা বছর বসলেও প্রাণ ফিরে পায় পেয়ারা মৌসুমে৷
বরিশাল শহরের চৌমাথা থেকে মাহিন্দ্র রিজার্ভ করে অামারা গেলাম ভিমরুলি, কুরিয়ানা। খালের মোহনায় বসে ভিমরুলি হাট। তিন দিক থেকে তিনটি খাল এসে মিশেছে এখানে। ভিমরুলির আশপাশের সব গ্রামেই অসংখ্য পেয়ারা বাগান। অটো থেকে নামতেই দেখি দু’ চারটা নৌকা অাস্তে অাস্তে এসে জড়ো হচ্ছে বাজারে। নৌকা ভর্তি সবুজ পেয়ারা। অামরা কয়েকজন মিলে নৌকার কাছে গেলাম দেখতে। নৌকায় বসা লোকেরা তখন অামাদের দিকে পেয়ারা ছুঁড়ে দিল খাওয়ার জন্য। বাজারের পাশেই ছোট একটা ব্রিজ। ব্রিজের উপর থেকে এ ভাসমান পেয়ারা বাজারের দৃশ্য খুব সুন্দর ভাবে দেখা যায়। সবাই মিলে সেখানে গিয়ে কিছু ছবি তুলে অাবার নৌকার কাছে এলাম। এক মাঝির সাথে কথা বলে বড় দেখে একটা নৌকা ঠিক করলাম বাগান ঘুরে দেখার জন্য। বৈঠায় ছলাৎ ছলাৎ শব্দ তুলে মাঝি নৌকা চালানো শুরু করল। পানি অার নদীর দেশে বড় হওয়ায় মোটমোটি সবাই সাঁতার জানত তাই তেমন ভয় কারও মনেই ছিল না। নির্দ্বিধায় নৌকার দু’পাশে পানিতে পা ভিজিয়ে নৌকা ভ্রমন উপভোগ করতে ছিলাম সবাই। পুরো গ্রামটা যেন সবুজের সমারোহে পূর্ণ। চারপাশে পেয়ারা, অামড়া, সুপারির বাগান অাবার কোথাও কোথাও রয়েছে হোগলারর বন। এসব বাগান থেকে চাষীরা নৌকায় করে বাগানের ফল সরাসরি এই বাজারে নিয়ে আসে। অামাদের উল্টো পথে অনেক নৌকাই দেখছিলাম পেয়ারা বোঝাই করে নৌকায় নিয়ে যাচ্ছে। রবীঠাকুরের সোনার তরী কবিতার লাইনটা তখন বারবার মনে পড়ছিল,
“ঠাঁই নাই ঠাঁই নাই ছোট সে তরী
অামার-ই সোনার ধানে (সবুজ পেয়ারায়) গিয়াছে ভরি”
ঝালকাঠি, বরিশাল আর পিরোজপুরের সীমান্তবর্তী এলাকার ২৬ গ্রামের প্রায় ৩১ হাজার একর জমির উপর গড়ে ওঠেছে পেয়ারা বাগান। আর এ পেয়ারা চাষের সঙ্গে প্রায় ২০ হাজার পরিবার সরাসরি জড়িত। ঝালকাঠী জেলা শহর থেকে প্রায় ১৫ কিলোমিটার দূরে ভিমরুলি গ্রামের আঁকাবাঁকা ছোট্ট খালজুড়ে সপ্তাহের প্রতিদিনই সকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত চলে বিকিকিনি। হাটটি সারা বছর বসলেও প্রাণ ফিরে পায় পেয়ারা মৌসুমে৷ বর্ষায় কানায় কানায় ভরে যাওয়া খালে বসে ভাসমান বাজার।
প্রায় ঘন্টা খানেক নৌকায় করে ঘোরার পর একটা বাগানে নিয়ে গেল মাঝি মামা। বাগানের মধ্যে যেতে যেতে মনে হল গভীরতম সৌন্দর্যের গহীনে প্রবেশ করছি। ছোট ছোট নালা অার অাইল (স্থানীয় শব্দ) করে পেয়ারা গাছ লাগানো। এক পাড়া থেকে অন্য পাড়ায় যাওয়ার জন্য অাবার সাঁকো দেওয়া। স্লপ আকৃতির পাহাড়সম সাঁকো পার হয়ে আবার কখনও হনুমান লম্ফ দিয়ে বাগানে ঘোরাঘুরি করে ইচ্ছামত পেয়ারা খেলাম সবাই। সবাই এত উৎফুল্ল ছিলাম যেন গেছো বানরের স্বভাবটা গাছ দেখে হঠাৎ আবার জেগে উঠছে। বাগানেরর মালিকদের একজনের সন্তান ছিল অামাদের গাইড হিসেবে। পিচ্চির নাম সৌরভ, গাইডের দায়িত্ব পেয়ে সেও ছিল যথেষ্ট প্রফুল্ল। ঘুরে ঘুরে কোন গাছের পেয়ারা কতটা মিষ্টি তাই বলছিল অামাদের বারবার। বাগান ঘোরা শেষ হলে অাবার নৌকায় ফিরে এলাম। নৌকায় করে ফিরে অাসার সময় দেখা হলো অারো কিছু ভ্রমণপিপাসুর সাথে। একগ্রুপ দেখলাম বিশাল সাউন্ডবক্সে উচ্চ ভলিউমে গান বাজিয়ে উন্মাদ নিত্য করে যাচ্ছে। ছোট ছোট দুইটা নৌকায় কপোত কপোতি অার ফটোগ্রাফার বিশেষ বিশেষ পোজে ছবি তোলায় ব্যস্ত। সিলেটের রাতারগুলের স্বপ্নে যারা বিভোর কুরিয়ানা, অাটঘর কিংবা ভিমরুলির এই নদীতে সেই স্বপ্ন বাস্তবায়িত করতে পারবেন অনায়াসেই। সময় বয়ে যায় অামাদের সময়ও ফুরালো, নটে গাছটি মুড়ালো। ফেরার পথে বাসে করে অাসলাম যাতে লক্কর ঝক্কর অটোতে না অাসতে হয়। তবে মজার বিষয় বাসায় অাসার সময় অামদের কারোরই পেয়ারা অানার কথা মনে ছিল না। সময়টা খুব কম হলেও অানন্দের রেস এখনো রয়ে গেছে মনে।
বিশেষ কিছু সতর্কতা:
১. সাঁতার না জানলে লাইফ জ্যাকেট পরে নেওয়া ভালো
২. নদীকে ময়লা অাবর্জনা না ফেলবেন না
৩. মালিকরে অনুমতি ব্যতীত পেয়ারা না ছেঁড়া
যেভাবে যাবেন:
ঢাকা থেকে নৌপথে লঞ্চে বা স্থলপথে বাসে করে বরিশাল। বরিশাল থেকে বাসে বা অটো/ মাহিন্দ্র করে কুরিয়ানা।
তথ্য: নিজ ভ্রমণ, ইন্টারনেট
ইশ! পেয়ারা না নিয়েই চলে এলেন?
আপনার এই ভ্রমণ কাহিনী পড়ে ওই ভাসমান পেয়ারার হাট দেখার ইচ্ছে জাগলো।
এমন একটা ভ্রমণে যেতে পারলে বেশ হতো। আরেকটু দীর্ঘ করলে আরও সুন্দর হত লেখাটা। শুভকামনা।
ভাল -ভালো
হয়ত-হয়তো
ক্ষনের-ক্ষণের
ঝালকাঠী- ঝালকাঠি
ইস রে এটা পড়ে পেয়ারা খেতে মনে চাচ্ছে। ২/নদীতে ময়লা আবর্জনা না ফেলবেন না। এইখানে না দুইবার ব্যবহার হয়েছে, যা একবার দিলেই সুন্দর দেখায়। আর কিছু বানান ভুল ছিল বলে দিলাম দেখে নিবেন, শুভ কামনা রইল
চমৎকার লিখেছেন।
ভাসমান পেয়ারা সম্পর্কে।
বরিশালের একটি জায়গা সম্পর্কে জানলাম।
ভ্রমণ কাহিনি পড়লেই ইচ্ছে জাগে ঘুরার।
বানান কিছু ভুল আছে।
শুভ কামনা রইলো।
আসসালামু আলাইকুম।
ভালোই লেগেছে পড়ে। আরো একটা জায়গা সম্পর্কে জানতে পেরে ভালো লাগলো। তবে বানানে কিছু কিছু ভুল রয়েছে। নিচে লক্ষণীয় :
ভাল – ভালো
হয়ত – হয়তো
ক্ষনের – ক্ষণের
ভ্রমন – ভ্রমণ
স্বম্ভব – সম্ভব
প্লান – প্ল্যান
মোটামোটি – মোটামুটি
করতে ছিলাম – করছিলাম
গড়ে ওঠেছে – গড়ে উঠেছে
ইচ্ছামত – ইচ্ছা মতো
এত – এতো
বাগানেরর – বাগানের
একগ্রুপ – এক গ্রুপ
ভ্রমনপিপাসু – ভ্রমণ পিপাসু
রবীঠাকুরের – রবী ঠাকুরের
শুভ কামনা।
একদম নতুন একটা জায়গা সম্মন্ধে জানলাম। বেশ ভালো লাগলো। যেভাবে বর্ণনা করেছেন, ভালো না লেগে উপায় নেই।
পেয়ারা বাগান আমাদের এলাকাতেও বেশ কয়েকটা আছে, কিন্তু আপনার বর্ণনা শুনে মনে হচ্ছে, আমাদের এলাকার পেয়ারা বাগান কিছুই না।