Chainiz Alomgir
মা আমাকে বলতেন আমার চোখে নাকি জল নেই। জন্মের পর আমি কেঁদেছি কিন্তু চোখ দিয়ে জল আসেনি। যত বড় হতে লাগলাম বুঝতে পারলাম শুধু জল না, আসলে আমি কাঁদতেই জানি না। আরব আমিরাতের শারজাহ শহরের এক হাসপাতালে আমার জন্ম। হাসপাতালের নিয়ম অনুযায়ী আমাকে রেখে মা’কে বাসায় পাঠিয়ে দেয় এবং বলে দুই দিন পর এসে আমাকে নিয়ে যাবার জন্য। একদিন পরেই মা হাউমাউ করে কেঁদে হাসপাতালে আসেন আর বলেন আমার ছেলে’কে ছাড়া আমি আর এক সেকেন্ড থাকতে পারব না। আমার বাবা সহ হাসপাতালের সবাই হার মানে মায়ের কাছে এবং মা আমাকে নিয়ে বাসায় চলে আসেন। আমি কলেজ হোস্টেলে থাকতাম। ছুটিতে বাসায় যখন আসতাম আমি আর মা সারারাত জেগে গল্প করতাম। আমার জীবনের সব গল্প মা জানতেন। প্রথম গার্লফ্রেন্ড থেকে শুরু করে বন্ধুদের সাথে আড্ডায় সিগারেট খাওয়ার গল্প, সব গল্প। মা সব সময় একটা কথা বলতেন তোকে ছেড়ে আমি ভাল থাকব না। তখন বুঝতাম না মা আসলে কেন এই কথা বলতেন।
হঠাৎ বাবা ফোন দিয়ে যখন বললেন হাসপাতালে আসার জন্য তখনো আমি কিছুই জানিনা। মায়ের পাশে বসে আমি মা মা বলে ডাকছি। মা চোখ বন্ধ করে শুয়ে আছেন। মা তাকাচ্ছেন না, কথা বলছেন না, মা আমাকে আদর করছেন না। মা নাকি আমাকে ছেড়ে চলে গেছেন। মা’কে কবরে রাখতে গিয়ে আমি চিৎকার করে কেঁদেছি। মা’কে যে আর বাসায় গিয়ে খুজে পাব না। মা আমার সাথে আর কথা বলবে না। আমার জীবনের গল্প রাত জেগে শুনবে না। আমি এখন খুব কম কথা বলি মা। তোমার মত কেউ মন দিয়ে আমার কথা শুনে না। রাতে কেউ ফোন দিয়ে বলেনা তাড়াতাড়ি বাসায় আসার জন্য। রাত জেগে তোমার অপেক্ষা করি; তুমি আসোনা। খাবার টেবিলে তোমার চেয়ার খালি দেখে খেতে পারিনা। শরীরের হাড় গুলো দেখা যায় কেউ খেয়াল করে না। তুমি বলতে আমার চোখে জল নেই। আসলে চোখে জল ছিল কিন্তু তোমার ভালবাসার জন্য চোখ দিয়ে জল বের হত না মা। আমি যে তোমার কবরের পাশে বসে হাজারটা গল্প বলি তুমি কি শুনতে পাও। তোমাকে স্বপ্নে দেখে চোখের জলে বালিশ ভিজিয়ে ফেলি তুমি কি বুঝতে পারো। তুমি বলতে আমাকে ছাড়া তুমি ভাল থাকবে না কিন্তু দেখ মা আমি ও যে ভাল নেই তোমাকে ছাড়া। প্রতি ঈদে যখন বেহেশত খুঁজি তখন তোমার পা খুজে পাই না মা। এর চেয়ে হৃদয়বিদারক আর কি হতে পারে।
০ Comments