কুসুমির রক্তজবা
প্রকাশিত: মার্চ ৬, ২০১৮
লেখকঃ vickycherry05

 3,734 বার দেখা হয়েছে

এই লেখক এর আরও লেখা পড়ুনঃ vickycherry05

গল্প লেখকঃ
মোঃ ইব্রাহিম ইবি
(মার্চ- ২০১৮)
…………

রাস্তা ধরে হাটছে রমজান। হাতে একটা চিকন লাঠি। সোবলদের ঘরটার সামনে এসে দাঁড়াল। বাজারের সামনের রাস্তায় বিকট শব্দ করে তিনটি জীপগাড়ি এসে থামল। রমজান এর আগে কখনো এমন গাড়ি দেখেনি। গাড়ি থেকে অনেকগুলো মিলিটারি নেমে পড়ল। সবার হাতে বড় বড় বন্দুক। কিছু বুঝে উঠার আগেই ঠাস ঠাস ভয়ংকর শব্দ করে গুলি চালাতে লাগল দানবের মত বন্দুক দিয়ে হানাদাররা।বাজারে যারা ছিল সবাই দৌড়াতে লাগল। কেউ কেউ চিৎকার করতে করতে বলতে লাগল “মিলিটারি আইসা পড়ছেরে মিলিটারি আইসা পড়ছে।” রমজান পলকেই দেখতে পেল মিলিটারিদের গুলিতে ঝাঁঝরা হয়ে গেছে আবুল ভাই এর দেহ। রমজান দেখতে লাগল মিলিটারিরা গুলি চালাতে চালাতে এদিকেই আসছে। সোবলদের ভাঙা টিনের ঘরের একটা ছোট্ট ঝুপরির ভিতরে গিয়ে লোকাল রমজান। দুই হাত দিয়ে চোখে মুখে ধরে রেখেছে সে। পাশ থেকে আসছে মিলিটারিদের বুটের আওয়াজ। রমজান কিছুই ভাল করে দেখতে পাচ্ছিলনা বাইরের। তবে সে অনুভব করতে পারছিল যে, মিলিটারিরা হয়ত সবাইকে মেরে ফেলছে। সব কিছু যখন শান্ত হয়ে এল, রমজান তখন বের হয়ে দেখতে পেল পূর্ব পাশের রহিম চাচার দোকানটায় আগুন জ্বলছে। চারিদিকে অনেকগুলো লাশ! রাস্তায় এখনো মিলিটারিদের জীপগুলো দাড় করানো। মনে হয় তারা গ্রামের সবাইকে মেরে ফেলবে আজ। রমজান বাজারের মাঝখানে এসে দাঁড়াল। বাজার পুরুটাই এখন স্তব্ধ। কেউ সচল নেই। যারা ছিল তারা মিলিটারিদের বুলেটে ইতিমধ্যেই মারা গেছে। মিলিটারিদের এই বিভৎসতা দেখে রমজান অবাক হয়ে গেল। রমজান তার পায়ের নিচে তাকিয়ে আবিষ্কার করল কুসুমির রক্তাক্ত দেহ। নিশ্চল কুসুমির নিথর দেহ রক্তে লাল হয়ে আছে। কুসুমির টকটকে লাল রক্তগুলো দেখে রমজানের মনে হতে লাগল এইগুলো সদ্য গাছ থেকে পেড়ে আনা রক্তজবা।
রক্তজবা কুসুমির খুব প্রিয় ফুল। এইতো গতকাল কুসুমি চারটে রক্তজবা এনেছিল। দুইটি রমজানকে দিয়েছিল, আর দুইটি নিজের কাছে রেখে দিয়েছিল। তবে রমজান কে ফুল গুলো মোটেই বিনামূল্যে সে দেয়নি। রমজান তাকে লাটিম খেলা শিখাবে এই কথা দিয়ে সে ফুলগুলো রমজানকে দিয়েছিল। লাটিম ঘোরানো শেখার খুব ইচ্ছে ছিল কুসুমির। রমজান যখন লাটিম ঘোরাত কুসুমি তখন মুগ্ধ চোখে অপলক তাকিয়ে থাকত। কুসুমির চোখগুলো পেচার চোখের মত বড় বড় ছিল। ঠোটে সারাক্ষণ এক চিলতে হাঁসি যেন লেগেই থাকত। কিছুদিন আগে রমজান কয়েকজনের সাথে বাজি ধরে পাঁচটা আকাশ মরিচ খেয়েছিল। ঝালে যখন চোখ দিয়ে টকটকে পানি ঝরছিল কুসুমি তখন হাসতে হাসতে শেষ। কুসুমি হাসলে তার গালে টোলপড়ে। রমজান কুসুমির সেই টোলপড়া হাসি দেখতে বড্ড ভালবাসত। আজও রমজানের চোখে পানি। কিন্তু কুসুমির সেই টোলপড়া হাসিটা নেই।মলিনতার ছাপ এঁকে গেছে তার চোখে মুখে। রক্তে টগবগ করছে তার দেহ। রমজান তার সমস্ত কল্পনা একে দিয়েছে কুসুমির অবয়বে। সে খেয়াল করেনি মিলিটারিরা এসে পড়েছে। পিছন থেকে হায়েনার মত একটা বুলেট এসে বিধল রমজানের পিঠে,মাটিতে লুটিয়ে পড়ল সে। ক্ষনিকের জন্য সে দেখতে পেল কুসুমি তার গায়ের লাল রক্তজবা গুলো রমজানকে দিয়ে দিচ্ছে, আর রমজান তা নিজের দেহে মেখে চিরতরে ঘুমিয়ে পড়ল।

সম্পর্কিত পোস্ট

অঘোষিত মায়া

অঘোষিত মায়া

বইয়ের প্রিভিউ ,, বই : অঘোষিত মায়া লেখক :মাহবুবা শাওলীন স্বপ্নিল . ১.প্রিয়জনের মায়ায় আটকানোর ক্ষমতা সবার থাকে না। ২.মানুষ কখনো প্রয়োজনীয় কথা অন্যদের জানাতে ভুল করে না। তবে অপ্রয়োজনীয় কথা মানুষ না জানাতে চাইলেও কীভাবে যেন কেউ না কেউ জেনে যায়। ৩. জগতে দুই ধরণের মানুষ...

আমার জামি

আমার জামি

জান্নাতুল না'ঈমা জীবনের খাতায় রোজ রোজ হাজারো গল্প জমা হয়। কিছু গল্প ব্যর্থতার,কিছু গল্প সফলতার। কিছু আনন্দের,কিছু বা হতাশার। গল্প যেমনই হোক,আমরা ইরেজার দিয়ে সেটা মুছে ফেলতে পারি না। চলার পথে ফ্ল্যাশব্যাক হয়। অতীতটা মুহূর্তেই জোনাই পরীর ডানার মতো জ্বলজ্বলিয়ে নাচতে...

ভাইয়া

ভাইয়া

ভাইয়া! আবেগের এক সিক্ত ছোঁয়া, ভালবাসার এক উদ্দীপনা, ভাইয়া! ভুলের মাঝে ভুল কে খোঁজা, আর ভালবাসার মাঝে ভাইকে খোঁজা, দুটোই এক কথা! ভুল তো ভুল ই তার মাঝে ভুল কে খোঁজা যেমন মূর্খতা বা বোকামি। ঠিক তেমনি ভালবাসার মাঝে ভাইকে খোজাও মূর্খতা! আমার কাছে ভাইয়া শব্দটাই ভালবাসার...

০ Comments

Submit a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *