গল্প লেখকঃ
জেলী আক্তার
(ফেব্রুয়ারী’১৮)
…………
বিশ্ববিদ্যালয়ের কেমিষ্ট্রি ডিপার্টমেন্টের মেধাবী মুখ আকাশ। ভার্সিটির শিক্ষক ও ছাত্র ছাত্রীরা এক নামেই চেনে তাকে জিনিয়াস আকাশ ভাই হিসেবে। এক বন্ধুর মাধ্যমে বিবিএ ডিপার্টমেন্টের জুনিয়র ছাত্রী শশী পরিচিত হয় আকাশের সাথে৷ তারপর আকাশের ফেসবুকে যুক্ত হয় শশী৷ ম্যাসেঞ্জারে মাঝে মাঝে হাই হ্যালো বা দু চারটা কথা আদান প্রদান হয়৷ একটু একটু যোগাযোগে উভয়ের মধ্যে ভাবের গভীরতা লক্ষ করা যায়৷ এভাবে দু’বছর কেটে যায়।
একদিন বিকেলে শশী ক্যাম্পাস থেকে বাড়ী ফিরছিলো, হঠাৎ খুব অসুস্থ হয়ে পড়ে। লোকজন নিয়ে যায় ডাক্তারের কাছে। সমস্ত টেস্ট করার পর শশীর জ্ঞান ফিরলে ডাক্তার শশীকে বলে বাড়ীর লোক কোথায়? শশী ডাক্তারকে অনুরোধ করে যা বলার তাকে বলার জন্য৷ ডাক্তার বলতে চাইল না৷ শশী বলল, প্লিজ আমার কাছে কিছু লুকাবেন না, আপনি আমাকে বলুন।
ডাক্তারের বলা একটা বাক্যে শশীর সমস্ত পৃথিবীটাই যেন বদলে গেল৷ এরপর আর শশী আকাশের সঙ্গে নিয়মিত দেখা করতো না, ঠিক করে কথা বলতো না। শশীর আর আকাশের মাঝে তৈরী হয় একটা কাচের দেয়াল৷ যে দেয়ালের এক পাশে আকাশ অপর পাশে শশী। শশী আকাশের কষ্ট অনুভব করতে পারে, বুঝতে পারে৷ কিন্তু কাছে আসার কোনো সুযোগ নেই।
আকাশ একদিন শশীকে বলেছিলো শশী তুমি কি আমায় আগের ভালোবাসো না?
শশীর না বোধক উত্তরে বদলে যায় আকাশের পৃথিবী৷ শশীর আকস্মাৎ ইউটার্ণে জিনিয়াস আকাশের অবস্থান পরিবর্তন হয়৷ ক্যাম্পাসের প্রিয় মুখটা সকলের কাছে দিনদিন অপ্রিয় হতে থাকে৷ আকাশের মত একটা উজ্জ্বল নক্ষত্রের অধঃপতন সহ্য করতে না পেরে একদিন রাতে আকাশকে ফোন দেয় শশী৷ এশত তেষট্টি বারে ফোন রিসিভ করে বড্ড অভিমানি আকাশ৷ কিছুতেই রাজী হচ্ছিলনা দেখা করতে! কিন্তু শশী শেষ বারের মত শুধু একবার দেখা করতে জোর অনুরোধ করেছিল৷ শশী বলেছিলো যে, আমার দেয়া টি শার্ট আর কালো প্যান্ট পরে আসবে। তবে আয়নার সামনে দাড়াবা না। অবশেষে রাজী হয় আকাশ৷
পরদিন সকালে শশী সেজে নেয় আকাশের পছন্দ মত৷ লাল একটা বেনারশী, লাল টিপ, কাচের চুড়ি, পায়ে নুপুর, একদম আকাশের নতুন বউ এর সাজে৷ দুজনেই ঠিক সময়ে উপস্থিত৷ শশী আকাশের হাতে একটা কোর্ট ফাইল তুলে দেয়৷ কৌতুহল নিয়ে সেটা দেখে আকাশ নির্বাক হয়ে যায়৷ আকাশ বুঝতে পারে ক্যান্সারে আক্রান্ত শশী পৃথিবীতে আর মাত্র কয়েক দিনের অথিতি। এতদিন শশী কেন আকাশকে দূরে ঠেলে দিতে চেয়েছিল তা বুঝতে পেরে আকাশের অনুশোচনা হল৷ আকাশের বুকে যেন পাথর বসে যায় চোখ দিয়ে নিরবে জল গড়িয়ে পড়ে৷ কোনো কথা বলার আগেই শশী আকাশকে শেষ বারের মত জড়িয়ে ধরে কাদতে থাকে। আকাশের চোখের জল গড়িয়ে পরতে থাকে শশীর পিঠের ওপর, শশী দুহাতে চোখ মুছে বলে আকাশ তোমায় আয়নার সামনে যেতে বাড়ন করেছিলাম না! তুমি আমার চোখে শেষ বাড়ের মত তাকাও। আকাশ তাকিয়ে দেখে হৃদয় যেখানে ঠিক সেই খানে টি-শার্টের লেখা নতুন করে বাঁচতে শেখো। আকাশ শশীকে কথা দেয় আর নেশা করবে না৷ নতুন করে জীবন শুরু করবে৷ দুই দিনপর শশী মারা যায় আর আকাশ হয়ে যায় বোবা৷ এখন আকাশ শুধু গিটার বাজায়, সুর ওঠে৷ আকাশ অপলক দৃষ্টিতে তাকিয়ে থাকে, মনে হয় শশীর চোখে চোখ রেখে আছে।
Jelly Akhter
০ Comments