যা কিছু অমূলক
প্রকাশিত: জানুয়ারী ৯, ২০১৯
লেখকঃ augustmault0163

 2,739 বার দেখা হয়েছে

এই লেখক এর আরও লেখা পড়ুনঃ augustmault0163

লেখাঃ আবিদা সুলতানা উমামা

১.
আমরা যখন কোনো কাজ করি কিংবা করার ইচ্ছা পোষণ করি, সেই কাজ যেন সফল হয় সেটা অবশ্যই কামনা করি। কিন্তু আমাদের মধ্যে বেশিরভাগ মানুষই এই চাওয়ার আদব বা শরীয়তের বিধান সম্পর্কে সচেতন কিংবা যত্নবান নন।
যে কোনো বৈধ কাজের শুরুতে শরীয়ত আল্লাহর যিকর এর নির্দেশ দিয়েছে। অর্থাৎ, কাজের শুরুতে “বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহীম” বলে কাজ শুরু করা মাসনূন বা মুস্তাহাব। বিধানগত বিচারে এই আমল মুস্তাহাব হলেও এর তাৎপর্য অত্যন্ত গভীর।
“বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহীম ” পাঠ করার মাধ্যমে বান্দা তার প্রভুর সাথে “ইয়্যাকানা’বুদু ওয়া ইয়্যাকা নাসতা’য়ীন” এর অঙ্গীকারে নতুন করে আবদ্ধ হয়।
তাছাড়া কাজের শুরুতে “বিসমিল্লাহ” পাঠ করা সেই কাজের খায়র ও বরকতের উসিলা বা মাধ্যম হয়।
কিন্তু, অত্যন্ত পরিতাপ ও আক্ষেপের বিষয় হচ্ছে, আমরা অনেকেই এই গুরুত্বপূর্ণ আমলটি এমনভাবে করে থাকি যেন এটি একটি অতিরিক্ত কাজ। অত্যন্ত দায়সারাভাবে কেবল “বিসমিল্লাহ” বলেই আমরা যেন বিশাল কিছু করে ফেলি। অথচ দুনিয়াবি অন্য যে কোনো কাজের চেয়েও গুরুত্বপূর্ণ কাজ হচ্ছে কাজের শুরুতে আল্লাহর যিকর করা। অর্থাৎ, পূর্ণ “বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহীম” পাঠ করা।
এক্ষেত্রে অনেকেই একটি ভিত্তিহীন বিদআত মূলক কাজ করে থাকেন। তা হচ্ছে, “বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহীম” এর পরিবর্তে “৭৮৬” লিখেন কিংবা বলেন অনেকেই। আবজাদ হিসেবে অর্থাৎ আরবী অক্ষরের সাংখ্যিক মান হিসেবে ‘৭৮৬’ হচ্ছে “বিসমিল্লাহ”র অক্ষরগুলোর সাংখ্যিক মানের সমষ্টি। যারা ‘৭৮৬’ লিখে বা বলে থাকেন, তারা মনে করেন- এর দ্বারাই “বিসমিল্লাহ” বলা বা লেখার কাজ হয়ে যায়। অথচ এটি সমাজে বহুল প্রচলিত একটি বিদ’আত বৈ কিছুই নয়।
অত্যন্ত দুঃখজনক ব্যাপার হচ্ছে, মাদরাসা পড়ুয়া অনেককেই এমনটা লিখতে দেখা যায়। এই অংকগুলোকে কেবল “বিসমিল্লাহ”র চিহ্ন মনে করা যেতে পারে। কিন্তু সরাসরি পূর্ণ “বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহীম” এর বিকল্প মনে করা সম্পূর্ণ ভুল। এটা শরীয়তের দৃষ্টিতে কখনোই গ্রহণযোগ্য নয়।
ইসলামী শরীয়ত কখনো বিধানাবলীর ক্ষেত্রে কোনো বিদ’আতকে সমর্থন করে না।
অতএব, প্রতিটি কাজের শুরুতে যথাযথ গুরুত্বসহকারে এই আমল পালন করতে হবে। বিদ’আত পালন করা যাবে না। অর্থাৎ ‘৭৮৬’ বা শুধু “বিসমিল্লাহ” না বলে বা লিখে পূর্ণ “বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহীম ” ইখলাস ও তাজভীদের সাথে পাঠ করতে হবে।
২.
সমস্ত ক্ষমতা ও শক্তির একচ্ছত্র অধিপতি একমাত্র মহান আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তা’আলা। তিনিই সকল মুশকিল আসানকারী। আর তিনিই সমস্ত মুসীবত থেকে নাজাত দানকারী। কিন্তু অনেক সাধারণ মুসলমান এটা জানা সত্ত্বেও ভারী কোন বস্তু উঠাতে বা এক জায়গা থেকে আরেক জায়গায় নিতে “ইয়া আলী; ইয়া আলী” বলে থাকেন। তারা মনে করে হযরত আলী রাযিয়াল্লাহ আনহু যেহেতু বড় বাহাদুর এবং শক্তিশালী ব্যক্তি ছিলেন, তাই তাঁকে ডাকলে তাদের মাঝে শক্তি সৃষ্টি হবে অথবা সাহায্য পাওয়া যাবে। (নাঊযু বিল্লাহ)
এহেন ধারণা ও কাজ শুধু বিদ’আতই নয় ; বরং শিরকেরও অন্তর্ভুক্ত।
সকল প্রকার সাহায্য প্রদানকারী এবং ফরিয়াদ পূরণকারী একমাত্র আল্লাহ তা’আলা। আল্লাহ ব্যতীত অন্য কারো কাছে মাধ্যম ও উপকরণের উর্ধ্বের কোনো বিষয়ে সাহায্য কামনা করা তো আল্লাহর সাথে অন্য কারো শিরক করারই শামিল।
অতএব, কোন কাজের ক্ষেত্রে হযরত আলী রাযিয়াল্লাহু আনহুকে ডাকার পরিবর্তে তাঁর এবং কুল-মাখলুকাতের সৃষ্টিকর্তা আল্লাহ রাব্বুল আলামীনকে ডাকা উচিত। আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তা’আলাই একমাত্র সাহায্যকারী।
৩.
একটি কু-রসম
ইসলাম নারীকে তার প্রাপ্য মর্যাদা দিয়েছে। কন্যা, বোন, মাতা এবং স্ত্রী হিসেবে স্বতন্ত্র অধিকার দান করেছে। দিয়েছে মীরাস তথা উত্তরাধিকার বন্টনের ক্ষেত্রে ভিন্ন ভিন্ন নির্দিষ্ট অংশ।
কিন্তু এটি অতীব বেদনাদায়ক বিষয় যে, আমাদের দেশে এই মীরাস সম্পর্কিত একটি জাহেলী রসম এখনও বিভিন্ন অঞ্চলে প্রচলিত রয়েছে। রসমটি হচ্ছে, বোনেরা পিতা-মাতার রেখে যাওয়া সম্পত্তি থেকে কোনো অংশ পায় না। ভাই তো নিজে বোনের অংশ তাকে বুঝিয়ে দেয়ই না, আর বোনও প্রাপ্য অংশ দাবি করার সাহস রাখে না।
যদি নিজের প্রাপ্যাংশ নিয়ে যায় তবে ভাইদের কাছে আর আসা যাওয়া করতে পারে না। অর্থাৎ কেউ কেউ এটাকে নীতি বানিয়ে নিয়েছেন যে, মীরাসের নির্ধারিত অংশ গ্রহণ করার মানে এই সিদ্ধান্তে উপনীত হওয়া যে, আত্মীয়তার দায়বদ্ধতা থেকেও মুক্ত হয়ে যাওয়া। অনেক ‘দ্বীনদার’ পরিবারেও এ ধরণের মানসিকতা লক্ষ্য করা যায়। অথচ আত্মীয়তার দায়িত্ব পালন করা-এটি স্বতন্ত্র বিষয়। মীরাসের অংশের সাথে আত্মীয়তার দায়বদ্ধতা থেকে মুক্ত হওয়ার কোনো সম্পৃক্ততা নেই।
মূলত ঈমানী দূর্বলতা ও শরীয়তের বিধানের প্রসার না থাকার কারণে মুসলিম পরিবারে এই কু-প্রথা অনুপ্রবেশের সুযোগ পেয়েছে। এটি শুধু একটি কু-রসমই নয় বরং জঘন্য রকমের জাহেলী প্রথা। সকলকে এ ব্যাপারে সতর্ক হতে হবে।
মহান আল্লাহ তা’আলা আমাদের সকলকে দ্বীনের সহীহ বুঝ দান করুক। সকলকে দ্বীনি আহকাম ও বিদ’আতের মধ্যবর্তী পার্থক্য বুঝার তাওফীক দিক!

সম্পর্কিত পোস্ট

যদি পাশে থাকো

যদি পাশে থাকো

তাসফিয়া শারমিন ** আজকের সকালটা অন্য রকম। সাত সকালে আম্মু বকা দিলো। মানুষের ঘুম একটু দেরিতে ভাঙতেই পারে। তাই বলে এত রাগার কী আছে ?একেবারে যে দোষ আমারও তাও নয়। মানুষ ঘুম থেকে উঠে ফোনে বা দেওয়াল ঘড়িতে সময় দেখে। কিন্তু আমি উঠি জানালার পর্দা সরিয়ে বাইরের আলো দেখে।কে জানে...

কুড়িয়ে পাওয়া রত্ন

কুড়িয়ে পাওয়া রত্ন

অনন্যা অনু 'আমিনা বেগম' মেমোরিয়াল এতিমখানার গেট খুলে ভেতরে ঢুকতেই ওমরের বুকটা ধুক ধুক করতে শুরু করে। ওমর ধীর গতিতে ভেতরে প্রবেশ করে। চারদিকে তখন সবেমাত্র ভোরের আলো ফুটতে শুরু করেছে। ওমর গত রাতের ফ্লাইটে আমেরিকা থেকে এসেছে। সে এসেই সোজা আমিনা বেগম মেমোরিয়াল এতিমখানায়...

দাদাভাইকে চিঠি

দাদাভাইকে চিঠি

প্রিয় দাদাভাই, শুরুতে তোকে শরতের শিউলি ফুলের নরম নরম ভালোবাসা। কেমন আছিস দাদাভাই? জানি তুই ভালো নেই, তবুও দাঁতগুলো বের করে বলবি ভালো আছি রে পাগলী! দাদাভাই তুই কেন মিথ্যা ভালো থাকার কথা লেখিস প্রতিবার চিঠিতে? তুই কি মনে করিস আমি তোর মিথ্যা হাসি বুঝি না? তুই ভুলে গেছিস,...

৩ Comments

  1. Halima Tus sadia

    খুব সুন্দরভাবে গুছিয়ে লিখেছেন।
    বেশ ভালো লাগলো।

    হ্যাঁ,আমারা অনেকেই বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহীম না লিখে ৭৮৬ লিখি।
    আগেও লিখতাম।তবে এখন লিখি না।
    আসলেই এটা ভুল,সংক্ষীপ্ত রূপ হিসেবে ব্যবহার করতে পারি।তবে কোনো সওয়াব নেই।

    মহাল আল্লাহ আমাদের সৃষ্টিকর্তা।
    তাই সকল বিপদে আপদে তাকেই ডাকতে হবে।তিনিই রক্ষাকারী।

    আর বর্তমানে কিছু পরিবারে আছে বোনদের সম্পদের অংশ থেকে দিয়ে দিলে আর সম্পর্ক রাখে না।
    খুব ভালো কিছু কথা তুলে ধরেছেন।

    আনুমানিকভাবে–আনুমাণিকভাবে

    শুভ কামনা।

    Reply
  2. আফরোজা আক্তার ইতি

    প্রবন্ধটি অত্যন্ত শিক্ষামূলক এবং তথ্যভিত্তিক ছিল। প্রবন্ধটি পড়ে অনেককিছুই জানতে পারলাম। প্রতিটি কাজের শুরুতে আল্লাহকে স্মরণ করা এবং “বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহীম” বলার কোনো বিকল্প থাকতেই পারে না। এর পরিবর্তে যে অনেকেই ভুলবশত ৭৮৬ লিখে তা আজকে জানতে পারলাম!
    হ্যাঁ, অনেক ভাই-ই মনে করে বোন স্বামীর হক থেকে সম্পত্তি পাচ্ছে, এবং বোনেরাও তাদের নিজের অধিকার দাবি করে না। কিন্তু আমাদের ইসলামে ছেলে ও মেয়ে উভয়কেই সমান চোখে দেখতে বলা হয়েছে। অত্যন্ত সুন্দর লিখেছেন। আল্লাহ আপনাকে উত্তম প্রতিদান করুক।
    শুভ কামনা অনেক।

    Reply
  3. Md Rahim Miah

    কোন-কোনো (কোন দিয়ে প্রশ্ন বুঝায়)
    ধরণের-ধরনের
    এত তাড়াতাড়ি শেষ হয়ে গেল। ইশ রে আরেকটু লিখলে আরো ভালো লাগতো। কারণ যত পড়ছিলাম তত ভালো লাগছিল। চমৎকার ছিল লেখাটা আর ভুলের মানও কম। অনেককিছু জানতে পারলাম পড়ে। আসলে যেকোনো কাজ শুরুতে বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহীম বলার উচিত মনে করি। কিন্তু কয়জন বা সেটা মনে রাখে। প্রবন্ধটি বলা যায় শিক্ষামূলক আর সবাইকে পড়ার উচিত। একমাত্র আল্লাহ্‌র কাছেই সাহায্য চাওয়ার উচিত। কারণ তিনি তার বান্দাদের কখনো নিরাশ করে না। আর হ্যাঁ আমাদের সমাজে এটা অবশ্যই কিছু প্রচারিত আছে বোনকে বাবার সম্পদের অংশ না দেওয়ার। তবে সবার ক্ষেত্রে না। আমি দেখেছি অনেকে আবার তাদের বাবার সম্পদের ভাগ নিতে সক্ষম। তবে আপনেও কিছুই বলেছেন গ্রামে ।যাইহোক ভালোই লিখেছেন , অনেক অনেক শুভ কামনা রইল।

    Reply

Submit a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *