মুদ্রার এপিঠ ওপিঠ
– তাসনিম রিমি
গ্রামাঞ্চলে ছোটবেলার পুতুল খেলার বয়স থেকেই দেখা যায় বর-বৌ খেলা কিংবা পুতুলের বিয়ে দেয়া এমন সব খেলার প্রচলন। প্রযুক্তির উন্নতির সাথে সাথে ডিস এন্টেনার ব্যবহার বহুল হারেই বেড়েছে শহরের সাথে গ্রাম গঞ্জেও। একদিক থেকে মানুষ যেমন উপকৃত হচ্ছে তথ্য, উপাত্ত পেয়ে অপরদিকে কোন অংশেই ক্ষতির পরিমান কম নয়। পশ্চিমা সংস্কৃতি অামাদের যুব সমাজের সাথে সাথে অাবালবৃদ্ধবনিতা সকলেরই নৈতিক অবক্ষয়ের কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে।
এক সময় অবসর সময়ে মা- বোনেরা অবসর সময়ে নকশীকাঁথা, হাতের কারুকাজ করে ঘর সাজিয়ে রাখত। অার এখন সময় পেলেই তারা বসে যায় টিভি সিরিয়াল দেখাতে। অামাদের মতো উন্নয়নশীল দেশে পশ্চিমা অপসংস্কৃতি হাওয়া লাগা কতটা ভয়াবহ তা বর্তমানে চোখ বুজেও লক্ষ্য করা যায় কেননা এসব অামাদের দেশের পোশাক পরিচ্ছেদ থেকে শুরু করে সাহিত্যচর্চা, সামজিক জীবনেও নেতিবাচক প্রভাব ফেলছে। ফলে বাড়ছে মাদকাসক্তি, খুন, ধর্ষণ, রাহাজানি। পরিবারের সদস্যদের উচ্চাকাঙ্খা মিটাতে শহরগামী হচ্ছে পরিবারের কৃষক কর্তা। অাশানুরূপ উপার্জন করতে না পারায় বাড়ছে দূরত্ব ফলে সম্পর্ক নষ্ট হয়ে যাচ্ছে প্রিয় জনদের সাথে।
এ তো গেল এক শ্রেণীর মানুষের কথা। উচ্চবিত্ত পরিবারগুলোতেও একই ঘটনা দেখা দিচ্ছে তবে তা হয়তো ভিন্ন অাঙ্গিকে। পশ্চিমা সংস্কৃতি অনুকরণ করতে গিয়ে শিক্ষিত হচ্ছে ঠিকই মানুষ বাড়ছে জ্ঞানের প্রসার। সেই সাথে নিজেকে সাবলম্বি করে তুলতে গিয়ে বয়সের হিসেব অার খেয়াল নেই। মেয়েরা পঁচিশ, তিরিশ বয়সে বিয়ে করতে গিয়ে সাংসারিক ভাবনা অার হয়ে ওঠে না। কর্পোরেট জীবনে তখন কেবল উপরে ওঠার তাড়া। ভালো জব, ফ্ল্যাট, বাড়ি, গাড়ি হয়ে হয়তো সন্তান জন্মদানের মতো সুন্দর এক অভিজ্ঞতাই তাদের হয় না। শারীরিক দূরত্বের নাথে বাড়ে মনের দূরত্বও। চাকরিজীবি মায়েদের সময় নাই সন্তানের জন্য। বাবার বিজনেস মায়ের অফিস সামলে ক্লান্ত তারা সন্তান বেড়ে ওঠে একাকী কিংবা কোন নার্সিং কেয়ারে। মাদকের করল গ্রাসে অন্ধকারে হারিয়ে যায় জীবন। বৈরাগ্যভাব অাসে অাবার হাতের মুঠোয় ইন্টারনেট সুবিধা পাওয়াতে পর্ণগ্রাফিতে অাসক্ত হয়ে পরে অল্প বয়সেই। অাল্লাহ্ তায়ালা এ প্রসঙ্গে বলেন, ‘যিনার কাছেও যেয়ো না। নিশ্চয়ই তা অশ্লীলতা ও বিপথগামীতা।’ সূরা অাল – ইসরা; ১৭: ৩২।
কখনও কখনও উচ্চ শিক্ষায় শিক্ষিত হতে গিয়ে দেখা যায় অনেকেই পরিবারের এমন অবস্থা দেখে বিয়ে থেকে মুখ ফিরিয়ে নিয়ে সন্ন্যাসব্রত পালন করে।
অথচ বিয়ে হচ্ছে এমন একটা সামাজিক বন্ধন যা দুইজন মানুষেরর মধ্যে দাম্পত্য সম্পর্ক স্থাপন করে। রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ইরশাদ করেন, ‘বিয়ে হলো আমার সুন্নাত যে ব্যক্তি আমার সুন্নাত তরিকা ছেড়ে চলবে সে আমার দলভুক্ত নয়।’ (বুখারি)
অন্য হাদিসে এসেছে- ‘হে যুবসমাজ! তোমাদের মধ্যে যারা বিয়ের সামর্থ্য রাখে, তাদের বিয়ে করা কর্তব্য, কেননা বিয়ে দৃষ্টি নিয়ন্ত্রণকারী, যৌন অঙ্গের পবিত্রতা রক্ষাকারী।’ (মিশকাত)
তিনি আরো ইরশাদ করেন, ‘হে যুব সম্প্রদায়! তোমাদের মধ্যে যারাই স্ত্রীর অধিকার আদায়ে সামর্থ্য রাখে, তারা যেন অবশ্যই বিয়ে বন্ধনে আবদ্ধ হয়।’ (বুখারি)
ইসলামে বৈরাগ্যবাদে স্থান নেই। তাই মানুষ যতক্ষণ পর্যন্ত বিবাহ না করে ততক্ষণ পর্যন্ত পূর্ণাঙ্গ মুসলমান হতে পারে। হাদিসে এসেছে- ‘যখন কোনো বান্দা বিবাহ করলো তখন সে তার ঈমানের অর্ধাংশ পূর্ণ করল। (মিশকাত) ‘ইসলামে বৈরাগ্যতা নেই এবং বৈরাগ্য জীবনযাপন করাকে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম নিষেধ করেছেন।
একইসাথে তালমিলিয়ে বাড়ছে বিবাহ বিচ্ছেদের হার। নারীর ক্ষমতায়ন যেমন নারীকে সাবলম্বি করছে তেমনি অহংকারীও করে তুলেছে। অাবার কোন কোন পরিবারে নারীর এমন স্বাধীনতা বা উগ্রতা মেনে নিতে পারে না। ফলে বিয়ে ভেঙে যাচ্ছে। অধিক বয়সে বিয়ে বা বাল্য বিয়ে বয়সের পার্থক্যের কারনে ছেলে মেয়ের দূরত্ব থেকেই যায় এসব কারনেও বাড়ছে বিবাহ বিচ্ছেদ। কিন্তু ইসলাম বিধি নিষেদ মেনে চললে কতটা শান্তির জীবনই না যাপন করতে পারত। ইসলাম এমনই এক পূর্নাঙ্গ জীবন বিধান। রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, ‘আল্লাহ তাআলা তালাকের চেয়ে অধিক ঘৃণ্য কোনো জিনিস হালাল করেননি।’ (আবু দাউদ) তালাকের ভয়াবহতা সম্পর্কে হজরত আলি (রাঃ) এর বর্ণনায় এসেছে, প্রিয়নবি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, ‘তোমরা বিয়ে কর কিন্তু তালাক দিয়ো না। কেননা তালাক দিলে তার দরুণ আল্লাহর আরশ কেঁপে ওঠে।’ (তাফসিরে কুরতুবি)।
অাবার পশ্চিমা সংস্কৃতি অনুকরনে দেখা যায় বিয়ের পরেও পরকীয়া করে বেড়ায় পুরুষ, স্ত্রী দু’জনেই। একাধিক সম্পর্কের ফলে সামাজিক ভাবে অপদস্থ করে মানবিক জীবন। দাম্পত্য জীবনের ভারসাম্যতা বজায় রাখতে প্রিয় নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ঘোষণা করেন, ‘তোমরা বিয়ে কর কিন্তু তালাক দিয়ো না। কেননা আল্লাহ তাআলা সে সব স্বামী-স্ত্রীকে পছন্দ করেন না; যারা নিত্য নতুন বিয়ে করে স্বাদ গ্রহণ করতে অভ্যস্ত।’ (আহকামুল কুরআন)
এতসব অপসংস্কৃতির মধ্যেও অাছে ভালো দিক। ইসলামিক সংগীত, কুরঅান ও সীরাতের অালোচনা, বিভিন্ন সামাজিক কর্মকান্ড প্রচারনার জন্যও এসব সামাজিক মাধ্যম, ইন্টার্নেট, ডিস এন্টেনা বেশ সক্রিয় ভূমিকা রাখে। বাগে ভ্রাতৃত্ববোধ, সৌহার্দ্যপ্রীতি। মুদ্রার একপিঠে অালো অন্যপাশে অন্ধকার বরাবরই থাকে, অাছে, থাকবে। তবে অন্ধকার থেকে অালোতে অাসার জন্য সঠিক দিক নির্দেশনা বা পথ প্রদর্শক হচ্ছে ইসলামিক জীবন বিধান।
(তথ্যসূত্র : ইন্টারনেট)
বিয়ে নিয়ে নবী করবম (সঃ) এর হাদীসগুলো উল্লেখ করে ভালো করেছো। সংস্কৃতি অপসংস্কৃতি বিষয়ক একটা প্রবন্ধ জমা পড়েছে এবার। সেটার সাথে তোমার কন্টেন্টের অল্প মিল আছে। ওটা আর এটা দুটো প্রবন্ধই আমার খুব ভালো লেগেছে। আপু, বৌ বানানটা বর্তমান বানানরীতিতে বউ হয়। শুভকামনা রইলো তোমার জন্য।
ধন্যবাদ অাপু
পরবর্তীতে খেয়াল রাখবো
মুদ্রার একপাশে অন্ধকার অন্য পাশে আলো থাকবে। তবে অন্ধকার থেকে অালোতে অাসার জন্য সঠিক দিক নির্দেশনা বা পথ প্রদর্শক হচ্ছে ইসলামিক জীবন বিধান। ভালো লেগেছে।
ধন্যবাদ অাপু
হ্যাঁ ইসলাম সত্যিই পূর্নাঙ্গ এক জীবন বিধান
বৌ-বউ
দেখাতে-দেখতে
কেননা-কেন না
ওঠার -উঠার
কেননা-কেন না (না আলেদা বসে)
কারনে-কারণে
ওঠে-উঠে
বাহ্ ভালো ছিল, তবে আরেকটু লিখলে ভালো হতো। আর দুখের কথা কি আর বলবো ২১বছর পার হয়ে গেল। অথচ আব্বু বিয়ে কথা বলেই না আর নিজেও একা কিছু করতে পারি না। যাইহোক পড়ে অনেক কিছু জানলাম আর ভালো লেগেছে। সামান্য কিছু বানান ভুল ছিল ঠিক করে দিলাম, শুভ কামনা রইল।
আসসালামু আলাইকুম। কেননা এইভাবেই হবে। না আলাদা বসে তা ঠিক। তবে কেন না আর কেননা শব্দ দুটি ভিন্ন মানে বোঝায়। লাইন অনুযায়ী কেননা বানানটাই ঠিক।
আর ওঠে বানানটাও লাইন অনুসারে ঠিকই আছে। রিপ্লে দেওয়ার জন্য আমি দুঃখিত।
ধরতে গেলে একটা ইসলামিক প্রবন্ধ লিখেছেন। সুন্দর লিখেছেন।
অপসংস্কৃতি যেমন ভাবে সমাজ কে নষ্ট করছে। তেমনি ভাবে ইসলাম থেকেও দূরে সরিয়ে দিচ্ছে। অপসংস্কৃতি এড়াতে ইসলাম সর্ব্দায় এগিয়ে, যদি পালন করা যায়। ভালো লাগল।
আসসালামু আলাইকুম।
ভালো লিখেছেন। শিক্ষণীয় একটা দিক তুলে ধরেছেন। তবে বানানে বেশ ভুল রয়েছে। ভুলগুলো না থাকলে আরও সুন্দর হতো। নিচে ভুলগুলো লক্ষণীয় :
বৌ – বউ
কোন – কোনো
পরিমান – পরিমাণ
রাখত – রাখতো
টিভি সিরিয়াল দেখাতে – টিভি সিরিয়াল দেখতে
মিটাতে – মেটাতে
নাথে – সাথে
সময় নাই – সময় নেই
পরে – পড়ে
কখনও কখনও উচ্চ শিক্ষায় শিক্ষিত হতে গিয়ে…. – কখনো কখনো উচ্চ শিক্ষায় শিক্ষিত হতে গিয়ে…
দুইজন – দু’জন/দুই জন
যুবসমাজ – যুব সমাজ
তাই মানুষ যতক্ষণ পর্যন্ত বিয়ে না করে ততক্ষণ পর্যন্ত পূর্ণাঙ্গ মুসলমান হতে পারে। – তাই মানুষ যতোক্ষণ পর্যন্ত বিয়ে না করে ততোক্ষণ পর্যন্ত পূর্ণাঙ্গ মুসলমান হতে পারে না।
জীবনযাপন – জীবন যাপন
একইসাথে – একই সাথে
তালমিলেয়ে – তাল মিলিয়ে
কারনে – কারণে
রাসুলুল্লাহ – রাসূলুল্লাহ
ডিস এন্টেনা – ডিশ এন্টেনা
আগামীতে বানানের দিকে খেয়াল রেখে লিখবেন আশা করি। আর চিহ্নের ব্যবহারেও সচেতন হবেন।
আপনার জন্য অনেক অনেক শুভ কামনা।