তাহসিন হাসান
.
অসহায় জাতি মরিছে ডুবিয়া, জানেনা সন্তরণ,
কাণ্ডারি! আজ দেখিবো তোমার মাতৃমুক্তি পণ !
বিংশ শতাব্দীকালে শ্রদ্ধেয় নজরুল ইসলাম যে কান্ডারির ভাবমূর্তি তুলে ধরেছিলেন তা আজ চাক্ষুষ। গান্ধীজী, তিতু, শরীয়ত, প্রীতিলতা, সূর্যদা, মুজিবের মত আপোষহীন নেতৃত্বের পরও কেন যে তিনি মাতৃমুক্তির চরণ বুনে গেলেন তা আজও আমার কাছে অধরা ! অবশ্য তিনি মুজিবের বজ্রকঠিন হুংকার শুনেননি, শুনলে হয়তোবা চরণের ধার কিছুটা শিথিল হত বটে তবে মুজিবের গড়া বাঙালিকে দেখে মরচেধরা চরন যে আবার তেজিযোদ্ধার তলোয়ারের মত চিকচিক করে উঠতো তা অবিসংবাদিত।
.
সন্দেহাতীতভাবে আজ আমরা উন্নতির উচ্চশিখরে ধাবমান। অথচ প্রত্যহ এমনকি প্রতিটা মুহূর্তে আমরা আমাদের নেতৃত্বগুনে কুঠারাঘাত করছি। আজ আমরা উন্নতির জন্য শিক্ষাকে হাতিয়ার করেছি, কিন্তু মানবিক মূল্যবোধ বিকাশে শিক্ষার মধ্যে কি পথ খুঁজেছি? নিজেকে চেনার জন্য কি শিক্ষার ধারস্থ হয়েছি? এর উত্তরে “না” না বললেও “হ্যাঁ” বলার মত সাহসী পাওয়া যে দুস্কর। আজ আমরা মাকাল ফলের ন্যায় রূপের বন্দনা করছি, হাসিলের জন্য মরীচিকার পিছু ছুটছি। যদি কেউ জিজ্ঞেসা করে কেন এত আহাজারি? উত্তরটা হবে, অমুকে করে তাই আমিও করি। আজ আমরা যে স্বকীয়তা বিসর্জন দিয়েছি, আমাদের এহেন কর্মই তার উজ্জ্বল প্রমাণ।
এতক্ষণে পাঠক সমাজের মনে একটা প্রশ্ন অবশ্যই উঁকি দিয়েছে, প্রাবন্ধিক নিজে কি এহেন অবস্থায় নিমজ্জিত নয়? বিশ্বাস করুন আমি আপনার সহোদর না হতে পারি সাহজাত তো বটেই। তাহলে কিরূপে নিজ জাতির অবমাননা করি? বর্তমানে আমার অন্তরাত্মা, আমার পরিবার, আমার সমাজ, আমার রাষ্ট্র সবাই পুঁথিগত বিদ্যার বন্দনা করে। সমাজ এখন এমন যে, “প্রাইমারির গন্ডি না পেরোনো পন্ডিত সাহেব তার পাশের বাড়ির মাধ্যমিক পেরোনো ছেলেটাকে কটু কথা শোনাতে দ্বিধা করে না। তার অপরাধ সে উচ্চ মাধ্যমিকে তথাকথিত জিপিএ-৫ ধারী হতে পারে নি।” কারো অবজ্ঞার্থে উপমা নয়, আমরা নিন্দায় যতটা সোচ্চার এর শতভাগের একভাগও যদি বাস্তবতা উপলব্ধিতে হতাম !!
আজ আমাদের কাছে বাহিরের রূপটা ম্যান্ডেটরি, ভেতর হলেই হলো একটা !! আজ আমাদের জ্ঞানেন্দ্রিয় সতেজ, অর্থনীতির চাকা সচল।
কিন্তু পঞ্চইন্দ্র কি সতেজ ? দিনমজুর লোকটার ঘরের বাতিটা রাতের আঁধার কাটানোর জন্য যথেষ্ট তো?
যদি সামনে চলে হাতি,
পিপীলিকা তার পাছে।
কিভাবে বুঝবে অন্যসকল
পিছনে কেউ আছে?
-আপনি তো দেখছি বাঙালিকে একেবারেই হেনস্তা করছেন ব্যাপার কি?
-একটু সবুর করুন। এটা তো শুধু বাঙালির বরঅঙ্গের খুঁত টা দেখার প্রয়াস। বিশ্বাস করুন আমি মনে প্রাণে বাঙালি, আমার জাতি আমার গর্ব, আমি নিজেও চাইনা বাঙালি হেনস্তা হোক। আমি চাই বাঙালি আবার বিশ্বে উঁচু করুক শির ! একেবারে নিখুঁতভাবে। আসলে বাঙালির দূর্বলতা গুলো আমাদের সবারই কমবেশি জানা। তবুও আমরা ভুলেই অনড়। মহীয়সী রোকেয়া কি আর এমনিতেই বলেছিলেন,
সর্ব অঙ্গে ব্যথা,
ঔষধ দিব কোথা?
আমার মনে হয় বাস্তবিক শিক্ষাই এর মোক্ষম দাওয়া। আমাদের ভুলগুলকে শুধরে নিতে হবে, আবার ঐক্যবদ্ধ হতে হবে, কাঁধে কাঁধ রেখে চলতেই হবে। আমার নেতৃত্বগুনকে আরো বলিষ্ঠ করতে হবে। একজন গান্ধীজী বা মুজিব যে আজ আমাদের বড্ড প্রয়োজন। যে শত কষাঘাত সয়ে ন্যায়কে সালাম জানাবে।
আমি বিশ্বাস করি প্রতিটা বাংলামায়ের সন্তান এক একজন মুজিব। তাদের নেতৃত্ব দেয়ার বলিষ্ঠ ক্ষমতা আছে, ন্যায়ের উপর পাহাড়ের মত অনড় থাকার সাহস আছে, বজ্রের মত প্রতিবাদী কন্ঠ আছে । কিন্তু সব যেন আজ শিকলে আবদ্ধ। বাংলার প্রতিটা সন্তানের সুপ্ত প্রতিভাগুলোকে বিকশিত হতে দিন, বিশ্বাস করুন বিশ্ব আমাদের নমস্কার করবে।
নিজেকে ছোট করতে জানতে হবে। সমাজের সবাই ভালো শুধু আমি ছাড়া এ মনোভাব দিলে থাকতে হবে। নিজের আমিত্ববোধকে বিসর্জন দিতে হবে।
একচোখে নিজের দোষ অপর চোখে অন্যের গুন দেখার মনোভাব তৈরী করতে হবে, তবেই সমাজ আমাদের সাদুবাদ জানাবে।
তিতু, শরীয়ত যে মাতৃমুক্তি পণ করেছিলো, তা আমাদের নবপ্রজন্মের আদর্শ হতে হবে। কারাবদ্ধ নজরুলের আগুনঝরা বিদ্রোহী কন্ঠ আমাদের আদর্শ হতে হবে। অন্যায়ের প্রতি মুজিবের ক্ষোভ আমাদের আদর্শ হতে হবে। তবেই বাংলার প্রতিটা সন্তান এ ধরিত্রীর আদর্শ হবে।
নিজের আত্মাকে নূতন করে আবিষ্কার করতে হবে, সকল জরাজীর্ণ ব্যর্থতা মুছে প্রবলভাবে সামনে এগিয়ে যাওয়ার ক্ষমতা রাখতে হবে। শত সহস্র মেকি, মিথ্যে ক্লান্তি ডিঙানোর প্রবণতা থাকতে হবে। বাধা-বিপত্তিকে গ্রাস করার মানসিকতা থাকতে হবে। সমাজ আমাকে সমর্থন না করলে একাই পথ চলার হিম্মত থাকতে হবে। তবেই সম্ভব।
স্বীয় স্থানে থেকে নির্ভীক হয়ে, মাতৃমুক্তির পণ করে, সত্যকে নমস্কার করে, পিছুটানকে উপেক্ষা করে, আদর্শকে আঁকড়ে ধরে, বজ্রের ন্যায় গর্জন করতে হবে,
আমি বিশ্ব ছড়ায়ে উঠিয়াছি একা,
চির-উন্নত শির !!
যদি পাশে থাকো
তাসফিয়া শারমিন ** আজকের সকালটা অন্য রকম। সাত সকালে আম্মু বকা দিলো। মানুষের ঘুম একটু দেরিতে ভাঙতেই পারে। তাই বলে এত রাগার কী আছে ?একেবারে যে দোষ আমারও তাও নয়। মানুষ ঘুম থেকে উঠে ফোনে বা দেওয়াল ঘড়িতে সময় দেখে। কিন্তু আমি উঠি জানালার পর্দা সরিয়ে বাইরের আলো দেখে।কে জানে...
০ Comments