লেখিকা ; তাসফিয়া শারমিন
,,
মনের মধ্যে খুব খুশি খুশি লাগছে। কারণ আগামীকাল আমাদের স্কুলে পিকনিক। পিকনিকে যাবে রবীন্দ্রনাথ কুঠিবাড়ি শিলাইদহ। সে যেখানেই যাক না কেন গেলেই হলো।আমার কত দিনের ইচ্ছে পিকনিকে যাওয়া।আমি এবার ক্লাস সেভেনে পড়ি। আগে কখনো যেতে দেয়নি আব্বা পিকনিকে।যেতে দেয়নি বললে ভুল হবে আসলে যাবার সামর্থ্য ছিলোনা আমাদের। আমরা অনেক গরীব বাবার দিন মজুরী করে। তার সামান্য টাকা দিয়ে কোনো মতে আমাদের চার জনের সংসার চলে যায়।আমি মা,বাবা আর আমার ছোট ভাই মেজবা।মেজবা কেবল ক্লাস থ্রিতে পড়ে। আমার নাম তাসফিয়া।হাই স্কুলে উঠার পর উপবৃত্তির টাকা জমিয়ে ৬০০ টাকা পিকনিকের জন্য জমা দিয়েছি।কিন্তু মনটা একটু খারাপ হয়ে গেলো স্কুল ড্রেসের জন্য।আমার স্কুল ড্রেস একটু ছিঁড়ে গেছে আর পুরানো হয়ে গেছে। স্যারেরা বলেছে সবাইকে স্কুল ড্রেস পরেই যেতে হবে।কাছে মাত্র আর ৩০ টাকা আছে এই টাকা থেকে যদি ৫ টাকা দিয়ে জামা সেলাই করি দর্জির কাছে তাহলে কাল পিকনিকে গিয়ে হাত খরচার টাকা কই পাবো। তাই মায়ের কাছে বললাম হাতেই সুঁচ দিয়ে সেলাই করে দিতে।মা সেলাই করে দিলো। মায়ের মন খারাপ কারণ আমাকে ২০ টা টাকাও দিতে পারছেনা কারণ যদি ২০ টাকা দেয় তাহলে কালকের খাবারের জন্য চাউল কিনা হবে না কম পরে যাবে।আমার কাছে যে ৩০ টাকা আছে আমি তাতেই মহা খুশি।ভেবেই পাচ্ছিনা এতো টাকার কি কিনে খাবো। কি করে এতো টাকা খরচ করবো।সকাল ৮ টার আগে স্কুলে পৌঁছাতে হবে।খুব সকালে ঘুম থেকে উঠে পড়লাম। মা অল্প বাসি ভাত ছিল সেইটা কাঁচা মরিচ আর পেয়াজ লবণ দিয়ে মেখে খাওয়াই দিলো।
স্কুল ড্রেস পড়ে ৮ টার আগে স্কুলে চলে আসলাম।আসার সময় ছোট ভাই মেজবা বলেছে তার জন্য যেন মিষ্টি কিনে নিয়ে যায় শিলাইদহ থেকে।দুইটা বাস নিয়েছে।এক বাসে ছেলেরা আর এক বাসে মেয়েরা।মেয়েদের বাসে উঠে দেখি সবাই যে যার ছিটে বসে গেছে। আমার খুব ইচ্ছে ড্রাইভারের পিছের ছিটে বসা। ড্রাইভারের পিছের ছিট টা ফাঁকা আছে কেউ বসেনি। আমি খুশিতে লাফাতে লাফাতে ওই ছিটে গিয়ে বসলাম।আশেপাশে দেখি সব ছেলে মেয়েদের বাবা মা বাসে তুলে দিতে এসেছে।যার যার ছেলে মেয়েদের কত খাবার জিনিস কিনে দিচ্ছে যাতে বাসে যেতে যেতে খেতে পারে।মনের
মধ্যে কেমন যেন লাগলো। ইস যদি আমার বাবাও আমায় দিতো। কিন্তু এতো টাকা কোথায় পাবে।স্যারের ডাকে ভাবনার অবসান হলো।
_তুমি একটু পিছের ছিটে গিয়ে বসো তাসফিয়া এখানে অন্য জন বসবে।(স্যার)
,,
স্যারের কথাটা শুনে মন খারাপ হয়ে গেলো। কেন আমি কেন পিছে যাবো।যার বসার সে তো পিছে গিয়েও বসতে পারে।কিন্তু স্যারের মুখের উপর তো কিছু বলতে পারিনা তাই আমি একদম পিছের ছিটে গিয়ে উপর ক্লাসের ৪ টা মেয়ের সাথে বসলাম। একটু পর দেখি আমি যেখানে বসে ছিলাম সেখানে আমাদের ক্লাসের ১ রোল তানহা বসছে আর আরেকটা মেয়ে।ওহ ওরা বড় লোকের মেয়ে আর ক্লাসে ফাস্ট বলে হয়তো প্রথম ছিটে স্যার ওদের জন্য জায়গা রেখেছে।
সবার উঠা শেষ হলে বাস চলা শুরু করলো। এই প্রথম বাড়ি থেকে দূরে কোথাও যাচ্ছি।জানালা দিয়ে তাকিয়ে দেখছি বাইরের পরিবেশ। লোকের মুখে নাম শুনেছি পাকশী হাডিংব্রিজের নাম আর তার পাশে লালন সেতু।আমাদের বাস এখন লালন সেতুর উপর দিয়ে যাচ্ছে।হেড স্যার বাস আস্তে চালাতে বললেন আর সবাইকে বললো জানালা দিয়ে হাডিংব্রিজ আর পদ্মা নদী দেখতে।হাডিংব্রিজের উপর দিয়ে ট্রেন যাচ্ছে অনেক ছোট দেখা যাচ্ছে ট্রেন।আমি এই প্রথম ট্রেন দেখলাম।খুব মজা লাগছে।বাস এসে দাঁড়ালো রবীন্দ্রনাথ কুঠিবাড়ির সামনে রাস্তায়।সবাই নামলাম বাস থেকে নামলাম।স্যারেরা আগে থেকেই ৩ টা রুম ভাড়া নিয়ে রেখেছিলো। বাস থেকে নামার পর সবাই কে নাস্তা করতে দিলো একটা কেক একটা কলা আর একটা বিস্কুটের প্যাকেট।
স্যার আর ম্যাডামেরা সবাইকে বললো এই বাউন্ডারির ভিতরেই খেয়ে নিতে তারপর এক সাথে ঘুরতে যাবো।খাচ্ছিলাম সবাই এমন সময় কোথা থেকে কয়েকটা ছোট ছোট ছেলে মেয়ে এসে সবার থেকে খাবার চাচ্ছিলো।কেউ হাফ খেয়ে দিয়ে দিচ্ছে আবার কেউ তাড়িয়ে দিচ্ছে দুরদুর করে।একটা ছোট ছেলে এসে আমার থেকে খাবার চাইলো। তখন মনে পড়ে গেলো মেজবার কথা।এক সেকেন্ডের জন্য মনে হলো এটা আমার ভাই মেজবা।আমার হাতে হাফ কলা আর কেক ছিলো।আমি সেগুলো ছেলেটা কে দিয়ে দিলাম।ছেলেটা সেগুলো নিয়ে অন্য দিকে গিয়ে বসে বসে খাচ্ছিলো।ম্যাডাম আর এক লোক মিলে সব বাচ্চা গুলো আমাদের মধ্যে থেকে বের করে গেট আটকিয়ে দিলো। কেমন নির্বাক চোখে গেটের ফাঁক দিয়ে তাকিয়ে দেখছিলো ওরা আমাদের।একদিকে কয়েকজন লোক নিয়ে আর বাবুর্চি নিয়ে সবার জন্য রান্না বসালো আর আমাদের নিয়ে স্যার ম্যাডামেরা কুঠিবাড়ি ঘুরতে নিয়ে গেলো। টিকিট কেটে ঢুকতে হবে।হেড স্যার সবার এক স্কুলের নাম দিয়ে একটা টিকিট করে নিলো। তারপর দুই তিনটা গ্রুপে ভাগ করে দিলো সবাইকে।সবাই কুঠিবাড়ির মধ্যে ঢুকলাম।সিঁড়ি বেয়ে দ্বিতীয় তলা উঠলাম। দেওয়ালে ঝুলানো রয়েছে রবীন্দ্রনাথের অনেক ছবি আর তার নিজে লেখা রয়েছে কোন সময়ের তোলা।এক রুমে সোফা,টেবিল,চেয়ার,সিন্দুক টুকিটাকি জিনিসে ভরা আর তাতে চিকন দড়ি দিয়ে একটু প্যাঁচানো আর সাইনবোর্ড দেওয়া ধরা নিষেধ। আরেক রুমে রয়েছে একটা পালংকো।দ্বিতীয় তলার বারান্দায় রয়েছে একটা বোট যে টায় করে রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর নাকি তার গড়া শানবাঁধানো পুকুরে বসে কবিতা লিখতেন।তৃতীয় তলায় সিঁড়ির সামনে একটা ছোট গেট করা আর তাতে তালা দেওয়া।উপরে যাওয়া নিষেধ। সবাই নিচে নেমে এলাম।কুঠিবাড়ির সামনে রয়েছে রবীন্দ্র শ্রদ্ধাঞ্জলি, রবীন্দ্র মঞ্চ, সুন্দর ফুলের বাগান আর হাতের বামে একটা সুন্দর পুকুর। চারিদিক একটা করে ঘাট করা।মনে হচ্ছে মেলা বসেছে।আমাদের মত আরো অনেক লোকজন ঘুরতে এসেছে।কেউ কেউ ঘোড়ার পিঠে চড়ে পুকুরের চারপাশে একটা চক্কোর দিচ্ছে।এক বার ঘুরে আসলে ২০ টাকা দিতে হবে।আমার খুব ইচ্ছে করছিলো ঘোড়ায় চড়তে কিন্তু আমার কাছে তো ৩০ টাকা আছে ২০ টাকা একবারে খরচ করবোনা। তাই ঘোড়ায় চড়লাম না।অনেকেই কচি ডাব খাচ্ছিলো আমিও এগিয়ে গেলাম। জিজ্ঞেস করলাম একটা ডাব কয় টাকা। ডাবওয়ালা বললো একটা ডাব ৪০ টাকা।মনটা খারাপ হয়ে গেলো। চলে আসলাম সেখান থেকে।পাশেই দেখলাম ঝালমুড়িওয়ালা সেখান থেকে ৫ টাকার ঝালমুড়ি কিনে নিলাম।ঝালমুড়ি খাওয়ার সময় মেজবার কথা মনে হলো। তাই ওর জন্যও ৫ টাকার নিয়ে ব্যাগে রেখে দিলাম।দুপুর ২:৩০ বাজে।সবাই কে খেতে ডাকছে।যে বাড়িতে রুম ভাড়া নিয়েছে সেই বাড়ির টানা বারান্দায় নিচে চট পেতে সবাই কে খেতে দিলো। প্রথমে ভাত তারপর একটা ডিম তারপর মাংস দিলো। বাড়িতে কতদিন আব্বা মাংস কিনে না।শুধু কুরবানির ঈদে খাওয়া হয়।আমি এখানে খাবো কিন্তু আমার আব্বা মা আর মেজবা তো খাবে না।তাই সবার চোখের আড়ালে একটা পলিথিন কাগজ বের করলাম ব্যাগ থেকে। তারপর টুপ করে তিন চার টুকরা মাংস আর ডিমের হাফ পলিথিনে তুলে নিয়ে ব্যাগে রেখে দিলাম।খাওয়া শেষ করে সব কিছু গুছিয়ে নিয়ে সবাই কে নিয়ে আবার বাসে উঠলো বাড়ির উদ্দেশ্যে।একটু তাড়াতাড়ি বেড়িয়েছে কারণ যাবার পথে লালন শাহ্ মাজার দেখাবে সবাই কে।লালন শাহ্ মাজার দেখার পর বাড়ি ফিরতে ফিরতে রাত ১০ টা বেজে গেছে।বাস এসে দাঁড়িয়ে স্কুল মাঠে।সবার মা অথবা বাবা নিতে এসেছে।আমি এদিকওদিক তাকালাম আমার আব্বা বা মাকে দেখলাম না।আমাদের পাড়ার একজনের সাথে বাড়ি চলে আসলাম।এসে দেখি সবাই ঘুমের দেশে হারিয়ে গেছে দরজা ধাক্কা দিলাম আর মাকে ডাকলাম।মা দরজা খুলে দিয়ে একটা হাসি দিলো আর ভেতরে যেতে বললো।আমার কথা শুনে মেজবাও জেগে গেছে ঘুম থেকে।উঠেই বলতে শুরু করলো আপু আমার জন্য কি এনেছিস। ব্যাগ থেকে ঝালমুড়ির প্যাকেট বের করে দিলাম মেজবা কে আর মাংসের প্যাকেট মায়ের হাতে দিলাম।মেজবা ঝালমুড়ি পেয়ে খুব খুশি। প্যাকেট ছিঁড়ে খেতে লাগলো। মা পলিথিন খুলে দেখে পাঁচ টুকরা মাংস আর হাফ ডিম।মেজবা মাংসের গন্ধ পেয়ে লাফ দিয়ে বিছানা থেকে নেমে মায়ের হাত থেকে নিয়ে এক টুকরা মাংস মুখে পুড়ে নিলো।
মনে মনে ভাবলাম আল্লাহ কেন আমাদের এতো গরীব করেছে।তখনি মনে হলো আমাদের চেয়ে তো শিলাইদহের ওই বাচ্চা গুলো আরো গরীব। ওদের চেয়ে তো আমরা বেশি ভালো আছি।যখন আমাদের চেয়ে উপর মহলের দিকে তাকায় তখন মনে হয় আমাদের চেয়ে গরীব আর কেউ নেই কিন্তু যখন আমাদের চেয়ে বেশি নিচ মহলের দিকে তাকায় তখন মনে হয় দুনিয়ার সব চেয়ে বেশি বড় লোক আমরা।আল্লাহ যেমন রাখছে তেমনি যেন খুশি থাকি।
যদি পাশে থাকো
তাসফিয়া শারমিন ** আজকের সকালটা অন্য রকম। সাত সকালে আম্মু বকা দিলো। মানুষের ঘুম একটু দেরিতে ভাঙতেই পারে। তাই বলে এত রাগার কী আছে ?একেবারে যে দোষ আমারও তাও নয়। মানুষ ঘুম থেকে উঠে ফোনে বা দেওয়াল ঘড়িতে সময় দেখে। কিন্তু আমি উঠি জানালার পর্দা সরিয়ে বাইরের আলো দেখে।কে জানে...
যে কোন লেখার সুন্দর শিরোনাম থাকা উচিত এখানে শিরোনামেই ভুল
রবীন্দ্রনাথ কুঠিবাড়ি – রবীন্দ্রনাথের কুঠিবাড়ি
লেখার মধ্যে বাক্য গঠনেও বেশ সমস্যা ছিল। যতিচিহ্নের পরে স্পেস দিবেন।
বাবার দিনমজুরি করে – বাবা দিনমজুরি করে
পিছে – পিছনে
সামনে রাস্তায় – সামনের রাস্তায়
নামলাম দুইবার ব্যবহার না করে একবার দেয়া যেত।
নিজে- নিচে
যে কোন ভ্রমণ কাহিনী মানেই ব্যক্তিগত অভিজ্ঞতা শেয়ার করা। অাপনার গল্পে কেন জানিনা কিছুটা কল্পনার অাশ্রয় মনে হয়েছে অার তা যদি না হয়। দিনমজুর বাবার সপ্তম শ্রেণি পড়ুয়া মেয়ের স্মার্ট ফোন ব্যবহার একটু অকল্পনীয় অামার কাছে।
শুভ কামনা
ভ্রমণকাহিনীটা অনেকটাই গল্পের কাতারে পড়ে গেছে। কেন যেনো ভ্রমণের কোনো স্বাদ পেলাম না। ভ্রমণকাহিনী শুরুতে কিছু ব্যক্তিগত কথা তুলে ধরেছেন এতে কিছুটা একঘেয়ে লেগেছে। এছাড়াও ভ্রমণকাহিনীর মাঝে অন্য কিছু টেনে না আনাই ভালো। তবুও খুব সুন্দর লিখেছেন। রবীন্দ্রনাথের কুঠিবাড়ির অনেকটা বর্ণনা লেখায় উঠে এসেছে। পড়ে ভালো লাগলো।
বানানে কিছু ভুল আছে।
কাছে আর ৩০টাকা আছে- আমার কাছে আর ৩০ টাকা আছে।
পিছের ছিটে- পিছনের সিটে।
ফাস্ট- ফার্স্ট।
দুরদুর- দূরদূর।
নিজে- নিচে।
পালংকো- পালঙ্কো।
শুরুতেই ভুল দিয়ে গল্পটি শুরু হয়েছে। আমি এটা ভ্রমণ কাহিনী বলতে পারছি না।
ভ্রমণ কাহিনী সম্পর্কে লেখকের আরও পড়া উচিৎ ছিল। আশা করি আপনি ভ্রমণ কাহিনী লেখার আগে অবশ্যই এ ধরনের বই পড়বেন।
শুভ কামনা।