লেখা : তামান্না স্নিগ্ধা
.
সিঁথি আপা যে দেখতে কী সুন্দর! ইচ্ছে করে খালি চাইয়া চাইয়া দেখি। আর মনডাও সেইরাম ভালো। সেইদিন কচুপাতা রঙের একটা শাড়ি দিয়ে কইলো, ‘নে শিউলি। এইটা তুই পরিস।’
শাড়িডা গত বছর ভাইজান আপারে কিনে দিছিলো। সেইদিন কী ঝগড়া ঝাটি করছিলো দুইজনডাই আল্লারে!
আপাও চিতকুর পারে, ভাইজানও থালাবাসন আছাড় মারে। আমি ভয়ে বাঁচিনা। শেষে বুদ্ধি করে ছোট মেডামরে কোলে কইরে তাড়াতাড়ি রান্নারঘরে ঢুকে দরজা আটকায়ে থুইছিলাম। ঝগড়াঝাঁটি বন করলে তারপর বেরাইছি।
সিঁথি আপা খালি কয় ছোট মেডামের নাম ধরে ডাকতি। ওইসব আংরেজি নাম টাম আমার মুখ থেকে বাইর হইতে চাইনা। তাও আপায় আমারে শুদ্ধ কইরে কথা কওয়া শিখায়। রুনার বাপ তো এখনে আমার ‘শিকখিত’ কয়ে ক্ষেপায়। আপায় কয় আমি এমুন গেরাম্মো ভাষায় কথা কইলে সেইডা ‘ছোট মেডাম’ নাকি শিখে ফেলবো। আমি রুনারেও ছোট মেডামের মত কথা শিখাইতে টেরাই করি। রুনা খালি হাসে।
.
আজ সিঁথি আপার মনডা মনে হচ্ছে খারাপ। রাতের বেলা ভাইজানের সাথে ঝগড়া করছে কিনা কে জানে! আমাকে ডাইকে ছোট মেডামের এক গাদা জামাকাপড় দিয়ে কইলো, ‘এইগুলা তোর মেয়েকে দিস।’
ছোট মেডামের পুরনো জামা পরলে রুনারে বড়লোক বড়লোক দেখা যায়। আমি খুশি খুশি গলায় কইলাম, ‘আপা আমারে তাইলে আজকে আগে ছুটি দিতে হবে কইলাম। রুনারে এই জামাগুলান পড়ানোর জন্য আমার আর তর সইতেছে না।’
অন্যদিন হইলে আপায় হাসতো নাইলে আমার সাথে মশকরা কইরতো কিন্তু আইজ একটা কথাও কইলো না।
হাতে বেতনডা ধরায়ে দিয়ে কইলো, ‘কয়দিনের জন্য আমি বাবার বাড়িতে যাচ্ছি, আমি বাসায় ফিরলে তোকে খবর দিব। এই কয়দিন তোর আর আসা লাগবে না। ‘
কোন একটা গোন্ডগোল হইছে, মনে
হয় ভাইজানের সাথে আপা রাগ কইরে বাপের বাড়ি যাইতেছেগা এই ভাইবে আমি চুপ করে গেলাম।
.
আজ দুপুরবেলা বাড়ি আসতে দেখে রুনার আর খুশি ধরে না। মা আইছে, মা আইছে কইরে ধূলোমুলো মাইখেই গায় উঠে পড়ছে। মাইয়াডা আমার বড় ন্যাওটা। সারা ঘরের অবস্থা কেরোসিন। এখেনে ওখেনে সব জিনিস ছিটিবিটি করে রাখা। আমি পরের বাড়ি গোছগাছ কইরে রাখি আর আমার বাড়ি এই হাল হইয়া থাকে।
হ্যারে রুনা, ‘তোর বাজানে দুপুরে খাইতে আসছে নি?’
‘আইছিলো। ভাত নষ্ট হই গেছে। পানি ঢাইলে থুয়ে গেছে গা।’ আমার শাড়ির আচঁল ধইরে ঝুলতে ঝুলতে রুনা কইতে লাগলো।
ঘর ঝাট দিচ্ছি আর মাইয়ের কথা শুনতেছি। নিজের ঘরের কাজ করতিও আরাম লাগে। পরের কাজ করে কোন শান্তি নেই।
‘মা তুমি পুটিলার মধ্যি করে কী নিয়াসছো?’
‘তোর বাজান আসুক দেখিসেনে।’
.
রাত দশটা পার হয়ে এগারোটা বাজতে থাকে রুনার বাপ আর আসে না। চিন্তাই চিন্তাই আমার মাথা খারাপ হয়ে যাচ্ছে। বারোটার দিকে টলতে টলতে কোন রকমে ঘরে ঢুকলো একটা মানুষকে কান্ধে কইরে। বস্তির মাইনষের ঘরে সাহেব মানুষ! তাড়াতাড়ি মুখে পানি দিবার লাগি নিয়ে যায়ে দেখি ওমা এ যে ভাইজান!
ছুরি মাইরে রাস্তায় ফেলায় থুয়ে গেছিলো কারা যেন। লোকজন সব দাড়ায়ে থাইকে তামাশা দেখতেছিলো। রুনার বাপ ভাইজানরে চিনতে পাইরে নিয়ে আসছে।
বস্তির ডাক্তারসাব আইনে, সারা রাত সেবা যত্ন কইরে সকালের দিকে ভাইজানের মাথায় পানি দিচ্ছি। রুনার বাপ কেবল কপালে হাত দিয়ে কইতেছে জ্বর কুইম্মা গেছে। এমন সময় দেখি ছোট ম্যাডামরে কোলে করে আপায় আসতেছে।
আপারে খবর দিল কেডাই?
আপা ভাইজানের হাত ধইরে বসে রইছে। আপা এত কানতেছে তাও কি সুন্দর দেখাইতেছে আপারে!
ভাইজানের মাথার কাছে ছোট ম্যাডামের হাত ধরে রুনা দাঁড়ায় আছে। মনে হইতেছে বড়লোকের মাইয়াদুইটা এই বস্তির ঘরে কি করে। ভাইজান ঘুমের ঘোরে রুনারে ছোট ম্যাডাম মনে করে কাছে টাইনে নিলো। আহারে! আমার মাইডারে কী সুন্দরী না লাগছে, এক্কেরে পরীর লাহান।
যদি পাশে থাকো
তাসফিয়া শারমিন ** আজকের সকালটা অন্য রকম। সাত সকালে আম্মু বকা দিলো। মানুষের ঘুম একটু দেরিতে ভাঙতেই পারে। তাই বলে এত রাগার কী আছে ?একেবারে যে দোষ আমারও তাও নয়। মানুষ ঘুম থেকে উঠে ফোনে বা দেওয়াল ঘড়িতে সময় দেখে। কিন্তু আমি উঠি জানালার পর্দা সরিয়ে বাইরের আলো দেখে।কে জানে...
আহা আমার মাইয়াডারে কি সুন্দরী না লাগছে, এক্কেরে পরীর লাহান।
এই লাইনটা লিখে আমিও তৃপ্তি পেয়েছি। 🙂
ভাষা ব্যবহারে কিছু কিছু জায়গায় একটু বেমানান হয়ে গেছে আপু।২/১ টা বানান ও ভুল আছে। শব্দ সংখ্যাও কম।আর সত্যি বলতে আপনার থেকে আরও ভাল আশা করি। আপনার গল্পের পাঠক হিসেবে বলতে পারি, এই গল্প পড়ে শান্তি পেলাম না।আপনি আরও বেটার লিখেছেন আগে।শুভ কামনা।
আঞ্চলিক ভাষার প্রয়োগ এর কারিনে কোনটা বানান ভুল আর কোনটা সঠিক বুঝতে সমস্যা হচ্ছে! গল্প খুব তাড়াতাড়ি শেষ হয়ে গেছে গভীরতা কম, আর খুব একটা পরিপাটি ছিলোনা। শুভ কামনা♥
ঝগড়া ঝাটি→ ঝগড়াঝাঁটি
ছুটি দিতে হবে→ ছুটি দেওন লাগবে (যেহেতু আঞ্চলিক ভাষা)
ছিটিবিটি করে রাখা। →রাইখা দিছে
খারাপ হয়ে যাচ্ছে→ যাইতাছে
পানি দিচ্ছি→ দিতাছি
….
আসলে গল্পটা পড়ে আমি ভিতরের রস খুঁজে পাইনি। তাছাড়া সমস্যা হচ্ছে আপনি একবার আঞ্চলিক আরেকবার চলিত এইভাবে লিখে গেছেন। যা গল্পের মূল সৌন্দর্য নষ্ট করে ফেলেছে।
সেজন্য আঞ্চলিক লিখতে গেলে অনেক বুঝে শুনে লিখতে হয়।
এমনি বানান ভুল তেমন নেই। তবে দুই এক জায়গায় ওই আঞ্চলিকতার একটু সমস্যা পেয়েছি। আর গল্পটিকে একটু রস বা টুইস্টিং কিছু দিলে ভালো লাগত।
আপনার জন্য শুভ কামনা।
ছুটি দেওন লাগবো
কথ্য ভাষা পুরোটা ব্যবহার না করার কারণটা কিন্তু আমি গল্পেই ক্লিয়ার করে দিয়েছি হয়ত আপনাদের অনেকের চোখে এড়িয়ে গেছে। যাই হোক এখানে আবার ক্লিয়ার করে দিচ্ছি। 🙂
গল্পের যেই দম্পতির বর্ণনা করা হয়েছে তারা তাদেরয় কাজের মহিলার সংগে খুবই মানবিক আচরণ করে এটা তো গল্প পড়েই বোঝাই যাচ্ছে প্লাস তাদের বাচ্চাকে যেহেতু ওই মহিলা বাড়ির কাজের পাশাপাশি বেবিসিটিং করে সেহেতু তাকে দিয়ে সবসময় শুদ্ধ ভাষা বলানোর চেষ্টা করে যাতে তার ভাষার প্রভাব বাচ্চার উপর না পরে। কারন বাচ্চারা অনুকরণ প্রিয় তারা যা শুনবে তাই শিখবে। এজন্যই গল্পে আমরা আঞ্চলিক আর শুদ্ধভাষার মিশ্রন দেখতে পেয়েছি।
ধন্যবাদ আপনার মন্তব্যের জন্য।
আঞ্চলিক ভাষায় লেখার কারণে গল্পটা তেমন বুঝলাম না।
সবাই আঞ্চলিক ভাষা বুঝতে পারে না।পাঠকদের মনে তৃপ্তি জাগে না।
যারা বড়লোকের বাড়িতে কাজ করে তারা বড় লোকেরা কিছু দিলে কি খুশি হয়।
তেমনি রুনাও খুব খুশি হইছিলো।
মাইয়াডারে কি সুন্দরী না লাগছে পরীর লাহান।
ভালো লাগছে লাইনটা।
শুভ কামনা রইলো।
ধন্যবাদ। 🙂