লেখা : জুয়াইরিয়া জাহরা হক (জুলাই, ১৮)
একটা হলুদ ফর্সা – আরেকটা লাল।
দাদি যেহেতু হলুদ সুন্দর, আমার গায়ের রঙটাও সেরকম হওয়া খুব অবান্তর ছিলো না। এই নিয়ে দাদুর সাথে প্রতি কিস্তিতে একবার করে আফসোস অনুষ্ঠান করতাম। বলতাম দাদির মতন গায়ের রঙ পেলে আমি আজকে নায়িকা ফিল সুন্দরী হতাম !
তৃপ্তি করে শেষে বলতাম “ দাদু, তরকারি অনেক মজা হয়েছে! মজার রান্না করার জন্য আমার দাদি হওয়া অব্দি অপেক্ষা করতে হবে। রান্না ভালো হওয়ার জন্য বয়স একটা বিষয়। “ শুনে মুচকি হাসতেন। জোর করে ধরে আরেকটা মাছের খন্ড প্লেটে দিয়ে দিতেন। একটা খাবার তাকে আমি একা শান্তি করে খেতে দেখি নি। সবাইকে দিয়ে খেতেন। এক টুকরা মাংস ভেঙে পাশের জনকে না দিলে উনি খেয়ে শান্তি পেতেন না । পুরান আমলের বাড়ি বিধায় সিস্টেম খুব গুছানো না হওয়ায় সারাটা দিন কাজ করতেন। এটা সেটা গোছাতে গোছাতে দিন পার করে দিতেন। ৫০/৬০ বছর আগের এক শো কেইস পরম যত্নে শাড়ির আঁচল দিয়ে মুছতেন। বলতেন, ‘ তোমার দাদার স্মৃতি।’
বই পড়তেন। একটা বই হাতে না নিলে তাঁর চোঁখে ঘুম আসতো না। একবার দুইজনে মিলে এক মনীষীর জীবনি পড়ছিলাম। সবার আগে বিয়ের অংশ পড়েছি ! হেসে কুটিকুটি হয়েছি।
রাতে গলা জড়িয়ে ধরে ঘুমিয়েছি। আমি বলতাম ‘ দাদু, আপনাকে কোলবালিশ বানাই?’
ঈদগাহে গিয়ে একসাথে ইদের নামাজ আর তারাবিহ পড়েছি কত্তবার!
মিশুক- হাসি খুশি মানুষ। সবার বড় প্রিয় ছিলেন। আশেপাশের বাচ্চারা দাদুকে ডাকতো ‘পিঠার দাদু’!
আমি বেয়াদব। ফোন দেয়ার কথা মনে থাকতো না। রাগ করতেন। বলতেন আমি তাকে চিনি না। টিউশনির টাকায় একটা শাড়ি কিনেছি।সবাইকে ডেকে ডেকে বলতেন- দেখাতেন। পছন্দ করেছিলেন খুব।
আব্বু নরসিংদী থেকে বাসায় ফিরলে মনে করে কিছু দিতেন আমার নাম করে। চালতার আচার – আমসস্ব – হাঁসের মাংস – জামার কাপড়- পুতুল খেলার ঘর।
আস্তে করে হাতে টাকা গুঁজে দিতেন। টিফিনের টাকা! “চুপ চুপ! আম্মুকে বল না! বকা দিবে !”
পিঠ আর পায়ের ব্যাথায় খুব কষ্ট পয়েছেন। পা টিপে দিলে বলতেন আমার হাতের তালু নাকি গরম! এক রাতে আমি তাকে ব্যাথায় পাগলের মতন করতে দেখেছি!এই দৃশ্য আমার পক্ষে ভুলে যাওয়া অসম্ভব!
বিচার দিতাম। আব্বু বকে। আব্বু রাগ হয়।
বাড়ি গেলে কাঁদতেন দুইবার। একবার বাড়িতে ঢুকলে, আরেকবার বের হলে। তখন বুঝতাম না। ভাল্লাগতো না । বলতাম ‘ দাদু, কাঁদেন কেন ?” তারপর দেখা যেত নিজেই কাঁদতে কাঁদতে ফিরছি ।
কতগুলো দিন চলে গেল মানুষটা চলে গিয়েছেন । মনে হয় যেন এক পলকেই চলে গেল এতোগুলো সময়!
দাদুবাড়িতে যেতে আগের মতন আগ্রহ পাই না। কষ্ট লাগে, মনে হয় আগের মতন ফেরার সময় মূল দরজায় আর কেউ ভেজা চোঁখে উঁকি দিয়ে তাকিয়ে থাকবে না! বলবে না , “ পরিক্ষা শুরু হলে আমাকে বলবে। আমি তোমার জন্য সুরা ইয়াসিন পড়বো ‘ ।
প্রিয়জনেরা এমনই হয়। কখনো হারায় না, বুকের একপাশে থেকেই যায়।
পয়েছেন-পেয়েছেন*
পরিক্ষা-পরীক্ষা*
নিয়মের চেয়ে শব্দসং্খ্যা অনেক কম ছিল।
গল্পটা বেশ কষ্টের।শুভ কামনা।
খন্ড→ খণ্ড
দেখি নি→ দেখিনি
চোঁখে→ চোখে
ব্যাথা→ ব্যথা
পরিক্ষা→ পরীক্ষা
…..
খুবই হার্ট ট্যাচি লেখা। ভালো লেগেছে। তবে গল্পের ভেতর টুইস্ট কম পেয়েছি। মনে হচ্ছে কিছু মিসিং। আপনার লেখার হাত ভালো। অনেকদূর এগিয়ে যেতে পারবেন, শুধু চর্চার প্রয়োজন।
পরিশেষ, শুভ কামনা।
????
প্রিয়জনদের কথা মনে পড়লে খুবই কষ্ট হয়।সত্যিই দাদা দাদু জীবনের একটা অংশ জুড়ে থাকে।নাতি নাতনীদের প্রতি কতো মায়া করে।
যাদের নেই তারা কখনো বুঝবে না।
পরম স্নেহ মমতায় জড়িয়ে রাখে।
নিজের খাবার থেকে রেখে দেয়।
গল্পটা ছোট হয়ে গিয়েছে।
শব্দ সংখ্যা কম।
প্রতিযোগিতার গল্প আরো বড় করতে হবে।
ব্যাথায়–ব্যথায়
পয়েছেন–পেয়েছেন
পরিক্ষা –পরীক্ষা
দেখ নি –দেখেনি(নি মূল শব্দের সাথে বসবে।
শুভ কামনা রইলো।