Barisal Bm college.
কিছুতেই এই বুড়ো লোকটি এর সাথে সারা জীবন ঘর করা সম্ভব নয়, সারা জীবন কেনো! এক মুহুর্তও সম্ভব না। ঘরে আসার সাথে সাথে স্ট্রেইট ঘর থেকে বিদেয় করে দিতে হবে। সেটা যে ভাবেই হোক,, বিড়বিড় করে বলছে ঊর্মি।
আজ রোদেলা ঊর্মি এর বাসর রাত, বর এর নাম ইয়াকুব, বয়স সাঁইত্রিশ, সিভিল ইঞ্জিনিয়ার।
এক প্রকার জোর করে ঊর্মিকে এই বিয়েতে বসানো হয়েছে, ছেলের নাম আর বয়স দুইটাতেই সমস্যা ঊর্মির। ঊর্মি বাসায় বারবার বলেছে, সে এই বিয়েতে কিছুতেই রাজিনা। এই বুড়োকে কোন ভাবেই বিয়ে করা তার পক্ষে সম্ভব না। ছেলে তার থেকে ষোল বছরের বড়! তারপর কি একটা নাম, ইয়াকুব! তার ফ্রেন্ডদের কে এই ছেলের নাম অব্দি বলা যাবে না। বয়স ত বাদ ই দিলাম! ইয়াকুব, নাম বললেই ফ্রেন্ডরা হাসতে হাসতে বলবে বেকুব। বাসার কেউ ঊর্মির কোন কথা শুনলোই না, তাদের একটাই কথা ছেলে শিক্ষিত ভদ্র, বাবা মা কেউ বেঁচে নেই, ছেলের সব কিছু আছে। রাজি ঊর্মিকে হতেই হবে। আর বয়স এর কথা বলতেই বলল, এখন নাকি প্রতিষ্ঠিত হতে একটু সময় লাগেই। উদাহরণ হিসেবে তারা রেল মন্ত্রী এর কথাই বলে ফেলল। তার মতো বুড়ো এর সাথে অই বয়সের মেয়ে বিয়ে করতে পারলে সে কেন পারবেনা! তার থেকে তো এই ছেলের বয়স বেশিনা।ঊর্মি আর কিছুই বলেনি। এরপর রুমে গিয়ে ফোন দিল তার বয়ফ্রেন্ড এর কাছে। ঊর্মি ফোনে পালিয়ে বিয়ে করার কথা বলতেই তার বয়ফ্রেন্ড বললো, “না এখন এইটা কিছুতেই সম্ভব না, তুমি আমায় একমাস সময় দাও। এরপর পালিয়ে বিয়ে করে ফেলবো। তুমি এখন রাজি হয়ে যাও, ওই ছেলেকে ধারে কাছে আসতে দিবে না, একমাস পর আমরা পালিয়ে বিয়ে করবো।”
এভাবেই ঊর্মির বিয়া করা এই ইয়াকুব কে।
অনেকক্ষন একা নিরিবিলি বসে থাকাতে এখন সব কিছুতে বিরক্তি চলে এসেছে। আবার অনেক ঘুমও পাচ্ছে। কয়টা বাজে তা দেখার ও কোন উপায় নেই। হাতের মোবাইল টাও আসার আগে ভেঙে ফেলেছে।
এই ঘরে যে একটা ঘড়ি আছে, সে ঘড়িতে বাজে পাঁচটা সাতান্ন, এর মানে ঘড়ি অনেক আগেই নষ্ট হয়ে গেছে কিন্তু এই দিকে কারো কোন ভ্রুক্ষেপ নেই।
ঊর্মির নীররবতা ভাঙে ইয়াকুব সাহেবের দরজা খোলার আওয়াজে।
ইয়াকুব সাহেব রুমে এসে ঊর্মির পাশে রুমাল মুখে দিয়ে বসে আছেন। ঊর্মির তা দেখে মেজাজ টা আরো বেশি খারাপ হয়ে গেলো। যেখানে বউ এর মুখ ঢেকে বসে থাকার কথা তা নয়, সেখানে বর রুমাল মুখে নিয়ে বসে আছেন।
বুড়োর কতো লজ্জা আর তা সে এই রুমাল দিয়ে ডেকে রেখেছে সযত্নে! মেজাজটা খারাপ করে দেয় বুইড়া খাটাস।
ইয়াকুব একটু নড়েচড়ে বসা মাত্র ঊর্মি চেঁচিয়ে উঠলো,,,,
– খবরদার আর একটু ও আগাবেন না, আগালে নির্ঘাত ছুরি দিয়ে আপনাকে খুন করে ফেলবো।
ইয়াকুব কিছু না ভেবেই বলে ফেলল,
আপনার হাতে তো আমি চুড়ি দেখছি, ছুরি তো দেখছিনা, তাহলে কিভাবে মারবেন?
– দেখেন আপনি একদম চালাকি করার চেষ্টা করবেন না, বিয়ে করেছি শুধু কাগজে কলমে, মন থেকে আমি কিছুতেই এই বিয়ে মানিনা। আমি একজন কে ভালোবাসি আমি, তার কাছেই আমি চলে যাবো।
– আমার কি অপরাধ বলবেন কি?
– আমায় আপনি বিয়ে করছেন, এর থেকে বড় অপরাধ আর কি হতে পারে! আপনার মতো বুড়োকে আমি কখনোই স্বামী হিসেবে মেনে নিবো না।
আর শুনুন আপনি হয় নিচে শোবেন নয় তো আমি ঘর থেকে বের হয়ে যাবো। আপনার সাথে একসাথে থাকা আমার পক্ষে সম্ভব না। আপনি কখনো ধারে কাছে আসবেন না আমার। একদম সহ্য হয় না আপনাকে।
ইয়াকুব সাহেব বিরস মুখে তাকিয়ে আছে তার সদ্য বিবাহ করা রুপবতী বউ এর দিকে। তার তখন দুইটা লাইন বারবার মনে পড়তে লাগলো কার লেখা মনে নাই, মনে হচ্ছে শামীম দেওয়ান এরই লেখা হবে হয়তো,
তোমায় পাওয়া হলো ঠিকই, কিন্তু তোমার মনটা, সেই অধরাই রয়ে গেল।।
ঊর্মির বাবা আর ভাই দুইজন এসে অনেক বুঝানোর পরও সে তার বাপের বাড়ি তাদের সাথে যায়নি। ঊর্মির একটাই কথা, সে আর কিছুতেই তার বাপের বাড়ি যাবে না, সে এখানে চিরদিন এর জন্যই চলে এসেছে সব সম্পর্ক চুকিয়ে। তাই যাওয়ার আর কোন প্রশ্নই আসেনা।
ইয়াকুব সাহেব দশদিন ছুটি এনেছিল অফিস থেকে, বিয়ে আর হানিমুন এ যাবে বলে। কিন্তু তার কাছে এখন এই ছুটি মুল্যহীন হয়ে গেছে। হানিমুন এর জন্য হোটেল অব্দি বুক হয়ে গেছে, না গেলে টাকাটা পুরোই জলে যাবে।
এখন ব্যাপারটা ঊর্মিকে বলবে কিনা সে দ্বিধায় পড়ে গেছে। আচ্ছা, একটা সবুজ কালারের শাড়ি, আর সবুজ চুড়ি কিনলে কেমন হয় ঊর্মির জন্য, তাহলে যদি মন টা গলে।
ঊর্মির সামনে নতুন মোবাইল, শাড়ি আর চুড়ি নিয়ে দাঁড়িয়ে আছে ইয়াকুব সাহেব,
-ঊর্মি তোমার জন্য নিয়ে এসেছি দেখো ভালো লাগে কিনা?
-আপনি আমায় একদম তুমি করে ডাকবেন না,আর শুনুন আপনার দেওয়া জিনিস আমি কোন ভাবেই নিবোনা।
-কেন নিবেন না, আপনার কি পছন্দ হয়নি?
– পছন্দ অপছন্দ কিছু না, আপনার জিনিস নিবো না এইটাই ফাইনাল, যদি নেই মোবাইলটা নিবো তাও ধার হিসেবে।
-ধার হিসেবে কেন!
– আমার ফোন নেই তাই এখন ধার হিসেবে নিবো,যেদিন আমি চলে যাবো সেদিন আবার ফেরত দিয়ে যাবো।
ইয়াকুব সাহেব কি বলবেন বুঝতে পারছেন না, তাই চুপ করে আছে।
ঊর্মির মন মেজাজ দুইটাই আজ সকাল থেকেই খারাপ। কোথায় একটু মন ভাল করার জন্য এতদিন পর এফবি তে আসলো,অমনি ফ্রেন্ডরা সবটা মাটি করে দিলো।
সবারটা বাদই দিলাম। লামিয়া তার এতোদিনের ক্লোজ ফ্রেন্ড হয়ে কিভাবে তার কস্টে মজা নিতে পারলো! ঊর্মির তা মাথায়ই আসছে না।
সকালের ঘটনা,,,
লামিয়া: কিরে কই আছিস তুই?
ঊর্মি: এইতো রুমে আছি।
লামিয়া: বিয়ে করেছিস, বললিও না তো!
ঊর্মি: হুম, হুট করে হয়ে গেছে,তাই কাউকেই বলতে পারিনি।
লামিয়া: শুনলাম তোর বরের নাম নাকি বেকুব সাহেব, ওহ! না ইয়াকুব সাহেব হবে।
বলেই তিন টা হাসির রিয়েক্ট।
ঊর্মি: হুম তো কি হইছে?
লামিয়া: এই পিচ কই পাইলি মামা?
ঊর্মি: পিচ কই পাইলাম মানে! কি বলতে চাস?
লামিয়া: রাগ করিস কেন ইয়ার। শুনলাম তোর জামাই নাকি বুইড়া! টাকা পয়সা নাকি অনেক!
ঊর্মি: তোর উনারে নিয়ে চিন্তা না করলেও হবে।
লামিয়া: তোর যেই রাগ, বুইড়া জামাই পারবে তো সামলাইতে? বলেই আবার অনেকগুলো হাসির রিয়েক্ট,,,
ঊর্মি আর রাগ কন্ট্রোল করতে পারলো না, কোন কথা বলার সুযোগ না দিয়েই লামিয়া কে এবার ব্লক করে দিল।
যা, আর ফেইসবুকেই যাবো না। সবাইকে চেনা হয়ে গেছে আমার, সব কয়টা সেলফিস। বিপদটা কাটুক তখন দেখিয়ে দিবো সব কয়টাকে।পরপর কয়েকদিন ফ্লোরে ঘুমানোর জন্য ইয়াকুব সাহেব এর ভয়াবহ রকমের ঠান্ডা লেগে গেছে। ঠিক মতো কথাই বলতে পারছেন না। কথা বলতে গেলেই বুকের ভিতর থেকে ঘড়ঘড় আওয়াজ হচ্ছে। ডাক্তার দেখে বলে গেছেন কোন প্রকার ঠান্ডা লাগানোই যাবে না, লাগালেই ভয়াবহ বিপদ।
ঊর্মি যেহেতু রাতে একা থাকতে ভয় পায়, তাই ঊর্মি ইয়াকুব সাহেব কে আপাতত খাটেই ঘুমোতে বলেছে। তবে মাঝখানে কোলবালিশ দেওয়া থাকবে। বাম পাশে ঊর্মি ডান পাশে ইয়াকুব সাহেব ঘুমোবেন। কোন ভাবেই কোলবালিশ এর এপাশে আসা যাবে না। কড়া ভাবে ইয়াকুব সাহেব কে বলে দিয়েছে ঊর্মি।
রাতের বেলা:
জানালার পাশের চাঁদের আলোয় ঊর্মির মুখ টা স্পষ্ট দেখা যাচ্ছে। ইয়াকুব সাহেব পাশে শুয়ে ফ্যালফেলিয়ে তাকিয়ে আছে ঊর্মি এর দিকে। অসম্ভব রুপবতী একটা মেয়ে। যে কেউ একবার দেখলে বারবার দেখতে চাইবে, আর এখানে তো সে স্বামী।
সাত পাঁচ ভাবতে ভাবতে ঊর্মি যে তাকে দেখে ফেলেছে তা তিনি খেয়াল করতে পারেননি।
ঊর্মি: সমস্যা কি আপনার?
ইয়াকুব : চমকে গিয়ে, কই কিছু না তো।
ঊর্মি: একদম ন্যাকামি করবেন না। বেহায়া এর মতো তাকিয়ে ছিলেন কেনো?
ইয়াকুব: ইয়ে মানে, ইয়ে কেন দেখছিলাম ভুলে গেছি।
ঊর্মি: একদম চালাকি করবেন না। আমার দিকে একদম এভাবে তাকিয়ে থাকবেন না। অসহ্য লাগে আমার।
ইয়াকুব : জ্বি,আপনি যা বলবেন তাই হবে। আর তাকাবো না।
ঊর্মি: মনে থাকে যেন, এখন ঘুমান।
এভাবেই চলতে থাকলো তাদের বিবাহিত জীবন। ইয়াকুব সাহেব এখন আর আগের মতো ফ্যালফেলিয়ে তাকিয়ে থাকেন না। এখন তাকান আড়চোখে। তাও কম। কারণ তাকাতে গেলেই তার বুকে ধুকধুকানি শুরু হয়ে যায়, মনে হয় কে বা কারা যেন তার বুকে হাতুরিপেটা করছে। এমনটা কেন হয় তিনি বুঝতে পারছেন না। হয়তো তার রাগ করা বউটাকে অনেক ভালোবেসে ফেলেছেন বলে।
এভাবেই রাগ অভিমানে চলতে থাকলো দিন এরপর দিন।
এক মাস দশ দিন পর :
ঊর্মি: কাব্য আমি এই বুইড়াটাকে জাস্ট নিতে পারতাছিনা আর। কবে আমায় বিয়ে করবে বলো?
কাব্য: ঊর্মি তোমায় বিয়ে করা সম্ভব না আমার পক্ষে।
ঊর্মি: সম্ভব না মানে! কি বলতে চাচ্ছ তুমি?
কাব্য: বিবাহিত মেয়েকে বিয়ে করা আমার পক্ষে সম্ভব না, এইটা হয়না।
ঊর্মি: থাপরাইয়া তোমার সব কয়টা দাঁত ফেলে দিবো। বিয়েটা তো তোমার কথাই করেছিলাম। এখন আমার দোষ দিচ্ছ কেন?
কাব্য: তোমায় নিয়ে পালালে সবাই আমারে দেইখা বলবে, ওই দেখ বুইড়ার বউ নিয়া পালাইছে; যা আমি নিতে পারবো না।
ঊর্মি: কাব্য তুমি আমায় ভালোবাসো, তুমি আমায় ছেড়ে থাকতে পারো না।
কাব্য: তোমায় বিয়ে করলে, আমার পরিবার আমার ফ্রেন্ড সার্কেল সবার সামনে হাসির পাত্র হয়ে যাবো।
তাই এটা সম্ভব না ভুলে যাও সব।
বলেই ফোনটা রেখে দিলো কাব্য।
ঊর্মিও কারো পা ধরার মতো মেয়ে না, কি ভেবেছে কাব্য!
সে ভাল থাকতে পারলে ঊর্মি কেন পারবে না। সেও দেখিয়ে দিবে যে ভালো আছে।
দরজায় টোকার আওয়াজ হচ্ছে,, ঊর্মি আমি কি আসবো ভিতরে? ইয়াকুব সাহেব অসহায় এর মতো দাঁড়িয়ে আছে।
ঊর্মি: আসুন, কিছু কি বলবেন?
ইয়াকুব: আপনি সকাল থেকে কিছুই খাননি, আপনার জন্য বসে আছি।
ঊর্মি: আপনায় কে বসে থাকতে বলেছে? আপনার ক্ষুধা লাগলে খেয়ে নিলেই তো পারেন। আমাকে কেন ডাকতে আসছেন?
ইয়াকুব: আপনি না খেলে আমিও খাবো না।
ঊর্মি : একদম নেকামি করবেন না। আপনাকে আমার একদম সহ্য হয়না। আমার জন্য সারাদিন না খেয়ে ছিলেন নাকি আপনি?
ইয়াকুব: জ্বী।
ঊর্মি: আমি কি বলেছি আপনায় না খেয়ে থাকতে?
ইয়াকুব :বলেননি। তবুও বিয়ের পর থেকে আপনি খাওয়ার পরই আমি খাই, তার আগে না।
বলেই চলে গেলো ইয়াকুব।সকাল ছয়টা আটত্রিশ,,
ভয়াবহ রকমের জ্বর নিয়ে ঊর্মিকে শেরে বাংলা মেডিকেল এ ভর্তি করা হয়েছে। ইয়াকুব সাহেবকে মেডিকেল এর করিডরের এ প্রান্ত থেকে ওই প্রান্ত পাইচারি করতে দেখা যাচ্ছে দিশেহারা ভাবে।
সামনে এক ডাক্তার দেখতেই,
ইয়াকুব : স্যার, আমার স্ত্রী’র অবস্থা খুবই খারাপ একটু আসবেন প্লীজ।
ডাক্তার: কি হয়েছে আপনার স্ত্রী’র?
ইয়াকুব : ভয়াবহ রকমের জ্বর।
ডাক্তার: বলেন কি! জ্বর কতো এখন?
ইয়াকুব : ১০৯ ত হবেই। আঙুলে হাতই দেওয়া যায় না, পুড়ে উঠে।
ডাক্তার: আঙুল মানে! কপালে হাত দিয়ে দেখেন নাই আপনি?
ইয়াকুব: উনার অনেক রাগ, তাই সাহস করে উঠতে পারিনি, যদি এ নিয়ে আবার রাগ করেন।
ডাক্তার: বলছেন স্ত্রী, আবার বলছেন রাগ করবে।, মানে টা কি? বেকুব নাকি আপনি?
ইয়াকুব: না, না, বেকুব না, ইয়াকুব আমার নাম।
ডাক্তার: (বিরক্তি ভাব নিয়ে) জ্বর কি মাপাইছেন?
ইয়াকুব : (থতমতো খেয়ে) না।
ডাক্তার : আন্তাজে এইভাবে ১০৯ বলে বলে ফেললেন!
আর কখনো এভাবে আন্তাজে ডাক্তারদের কিছু বলবেন না।
চলেন পেশেন্টকে এডমিট করাই। পরে যা লাগবে আমরাই দেখবো।
ঊর্মিকে ভর্তি করে বেডে দেওয়া হয়েছে। স্যালাইন দেওয়া হয়েছে ঊর্মিকে। ডাক্তার পরীক্ষা নিরীক্ষা করে বলেছেন আপাতত ভয়ের কিছুই নেই। জ্বর অনেকটাই কমে এসেছে। শারীরিক দুর্বলতার জন্য বেশি অসুস্থ্য হয়ে পড়েছেন। এছাড়া আর অন্য কোন সমস্যা নেই। দুইদিন থাকলে ঠিক হয়ে যাবে।
ঊর্মির বাবা মা ও এর মধ্য চলে এসেছেন। ঊর্মির না করা সত্তেও ইয়াকুব সাহেব তাদের ফোন করে আসতে বলেছেন। আসার পর অবশ্য ঊর্মি এই নিয়ে ইয়াকুব সাহেবকে আর কিছু বলেনি।
বরং, ঊর্মি তার মাকে অনেকদিন পর কাছে পেয়ে, মায়ের গলা ধরে ফুঁপিয়ে ফুঁপিয়ে কাঁদতে শুরু করলো। তার মা তাকে নানা ভাবে শান্ত করার চেস্টা করছে। এরপর ও সে কেঁদেই যাচ্ছে। ইয়াকুব সাহেব হাঁ করে তাকিয়ে আছেন ঊর্মির দিকে।
ইয়াকুব সাহেব অবাক হচ্ছেন, ঊর্মির মতো এতো রাগি আর কঠিন মানুষ এভাবে বাচ্চাদের মতো কাঁদতে পারে সেটা তার ধারনাই ছিলো না।
ঊর্মির বাবা মা এর শারীরিক অবস্থা আর বয়স এর কথা চিন্তা করে ইয়াকুব সাহেব এক প্রকার জোর করেই উনাদের বাসায় পাঠিয়ে দিলেন এই বলে যে, সে সব টা সামলাতে পারবে। চিন্তার এখন আর কিছুই নেই।
ঊর্মির বাবা মা চলে যাবার পর,
ইয়াকুব সাহেব কেবিনের বাইরে থেকে উঁকিঝুঁকি দিয়ে দেখার চেস্টা করছেন ঊর্মি কি করছে। তিনি ঠিক ভাবে দরজার পাশ থেকে দেখতে পারছিলেন না, তাই ভালোভাবে দেখার জন্য যখনই তিনি অনেকটা দরজার সামনে চলে আসলেন তখনই ঊর্মির কাছে তিনি ধরা পড়ে গেলেন। ঊর্মি তাকে দেখে ফেলেছে সে এভাবে উঁকিঝুঁকি দিচ্ছে। অনেকটা বিড়ালের কাছে ইঁদুর ধরা পড়ার মতো অবস্থা। এখানে ইঁদুর ইয়াকুব সাহেব আর বিড়াল ঊর্মি
ঊর্মি: উঁকিঝুঁকি দিয়ে এভাবে কি দেখছেন? ভিতরে আসুন আপনি।
ইয়াকুব সাহেব: জ্বী, আপনাকে।
ঊর্মি : আমাকে এভাবে দেখার কি আছে?
ইয়াকুব সাহেব: জানিনা,তবু দেখছি।
ঊর্মি : দেখতে ইচ্ছে করলে ভিতরে এসে দেখবেন।
ইয়াকুব : ভিতরে আসলে যদি রাগ করেন তাই সাহস পাইনি।
ঊর্মি: সাহস না পেলে বাসায় চলে যেতেন এখানে ঊঁকিঝুকি দেওয়ার ত কোন মানে নেই।
ইয়াকুব সাহেব: আচ্ছা ঠিকাছে আর দিবোনা।
ঊর্মি: বুঝার জন্য ধন্যবাদ।
ইয়াকুব: একটা কথা বলবো? যদি আপনি অনুমতি দেন।
ঊর্মি: নেকামি করবেন না, বলেন। আপনি পার্মিশনের কি বুঝেন!
আবার পার্মিশন নেবার ঢঙ করার দরকার নেই।
ইয়াকুব: আপনি যে আমার ভুল টা ক্ষমাসুন্দর দৃষ্টিতে দেখেছেন এর জন্য আমি কৃতজ্ঞ।
ঊর্মি: আপনাকে কখন বললাম আমি ক্ষমা করে দিয়েছি?
ইয়াকুব : এই যে বললেন আর পার্মিশন নেওয়ার লাগবে না, তাই ভাবলাম।
ঊর্মি: আমি যথেষ্ট রাগ কন্ট্রোল করে কথা বলছি। সিনিওর তাই অসম্মান করতে চাচ্ছিনা।
ইয়াকুব : তাহলে কি আমি এখন চলে যাবো?
ঊর্মি: আপনি এখনি আমার চোখের সামনে থেকে যান,,,
ইয়াকুব: আচ্ছা ঠিক আছে, আপনি যা বলবেন তাই হবে।
ঊর্মি: ঢং এর কথা আর বলবেন না। এখন প্লিজ যান।
ইয়াকুব সাহেব কথা না বাড়িয়ে চলে গেলেন।
তার চলে যাবার দৃশ্য দেখে ঊর্মির কেন জানি একটু মন খারাপ লাগছে। মনে হচ্ছে সে একটু বেশিই বলে ফেলেছে। আর এই মানুষটাই বা কেমন এতো কিছু বলার পরও কোন রাগ নেই। বেহায়ার মতো বারবার চলে আসে।
সারাদিনে ইয়াকুব সাহেব ঊর্মির সাথে আর দেখা করতে আসেনি। ঊর্মির জন্য দুপুরের খাবার নার্সের মাধ্যমেই পাঠিয়েছে।
ইয়াকুব সাহেব যাবার পর তার সারা দিনটাই আজ খারাপ গেছে। সারাদিন শুধু মনে হয়েছে,সব দোষ তারই। সেই সব সময় অল্পতেই বেশি রিয়েক্ট করে ফেলে। এত বেশি মাথা গরম করাটা একদম ঠিক হয়নি তার।
ঊর্মি মনে মনে ঠিক করলো সে আজ ইয়াকুব সাহেবকে সরি বলবে। ঊর্মি নিজেই ফোন করে ইয়াকুব সাহেব কে আসতে বলেছে।সন্ধ্যার পর,
ইয়াকুব সাহেব ঊর্মির রুমে আসার পর থেকেই চুপচাপ বসে আছেন।
ঊর্মি: আপনি কি খেয়েছেন দুপুরে?
ইয়াকুব : জ্বি খেয়েছি।
ঊর্মি: সকালের ঘটনার জন্য অনেক সরি।
ইয়াকুব সাহেব: আমি কিছু মনে করিনি, সরি বলা লাগবে না।
ঊর্মি: আপনার কি রাগ হয়না? আমি আপনার সাথে এত খারাপ ব্যাবহার করি।
ইয়াকুব সাহেব: কোথায় যেন শুনেছি, যে অনেক বেশি রাগ করতে পারে, সে নাকি তার থেকে বেশি ভালোবাসতেও জানে।
তাই রাগ করিনা।
ঊর্মি ইয়াকুব সাহেব এর কথা শুনে চুপ করে নিচের দিকে তাকিয়ে রইল। সে বেশ লজ্জা পেয়েছে।
ইয়াকুব সাহেব : আপনার শরীরের কি অবস্থা এখন?
ঊর্মি: দুপুরের পর থেকেই অনেক মাথা ব্যাথা করছে। অনেকবার ঘুমোতে চেষ্টা করেও আর ঘুমোতে পারিনি।
ইয়াকুব সাহেব অবাক করে দিয়ে ঊর্মির মাথার কাছে এসে বসলো।
তার একটি হাত রাখলেন ঊর্মির মাথায়। তিনি ঊর্মির মাথায় হাত দিয়ে চুলে বিলি কেটে দেওয়া শুরু করলেন।আর মায়ামাখা কন্ঠে বললেন, আপনি এখন ঘুমান, আমি হাত বুলিয়ে দিচ্ছি মাথায়।
ঊর্মি ইয়াকুব সাহেব এর হাত তার মাথা থেকে সরিয়ে দিচ্ছে না।
সরিয়ে দিবে যে, তাও মনে হচ্ছে না।
ঊর্মি ইয়াকুব সাহেব এর চোখের দিকে তাকিয়ে আছে। ঊর্মির এখন মনে হচ্ছে—- ” এই হাতের
স্পর্শে মায়া আছে, মমতা আছে, ভালবাসা আছে। যেই ভালবাসার পূর্ণতাও আছে। ”
০ Comments