তিনদিন পর
প্রকাশিত: মে ১৮, ২০১৮
লেখকঃ vickycherry05

 2,661 বার দেখা হয়েছে

এই লেখক এর আরও লেখা পড়ুনঃ vickycherry05

লেখকঃ
নুসরাত বিনতে সালমা
(মে – ২০১৮)
………………

হৈ চৈ করে করে মানুষ দল বেধে ছুটে অাসছে…..!
……অাহারে….. মেয়েটা বুঝি মারা গেলো… ধর … ধর গাড়িটাকে ধর কি করে এক্সিডেন্টটা করলো…!
এই বলে বলে সবাই মেয়েটিকে বাঁচানোর চেষ্টা করছে আর সবাই ধরাধরি করে এম্বুলেন্স তুলে দিলো।
ওফ…অামি বুঝতে পারছি অামার মাথায় অাঘাত পেয়েছি কথা বলতে কষ্ট হচ্ছে পারছি না হাতের ব্যাগটি হয়তো পড়ে অাছে রাস্তায় বা কেউ নিয়ে নিয়েছে মোবাইল টাও তাতে ছিল। যোগাযোগ কি করে করবো অামি বুঝতে পাচ্ছি সব বলতে পারছি না কি হবে না হবে কিছু বুঝতে পারছি না।

কিছুক্ষণ পর দু তিন জন ডাক্তার অপারেশন রুমে নিয়ে গেলো মিলিকে। মিলি বুঝতে পারলো তার বড় কিছু হয়েছে কিন্তু তার মাথায় চিন্তা হলো তার ভালোবাসার মানুষটির জন্য কথা। কথা দিয়েছিলাম অাবিরকে ভালোবেসে ঘর বাঁধবো কত রঙিন স্বপ্ন চোখে অামাদের মেয়ে হবে খুব সুন্দর টুকটুক লাল পরীর মত। অাবির বলতো পরী বুঝিনা অামার মিলির মত সুন্দর মনের একটি মেয়ে হোক হাহ!
একদিন তো বেশ হয়ে গেলো ঝগড়া; বলেছিলাম অামার মেয়েটা ডাক্তার হবে কিন্তু না সে বলে টিচার হবে। অামার না তার হ্যাঁ হয়ে গেলো গোফে তেল দেয়া হা হা হা……..!!!
অাবিরটা বড় ভালো ছেলে যখন যা বলেছি তা করতে চেষ্টা করেছে অামার মাও খুব পছন্দ করে অাবিরকে অামাদের বাবা নেই মা অার ছোট বোন টিনা…..!
কে জানে মা অার টিনা কত টেনশন করছে অামাকে ভেবে।
কি করে যে খবর পাবে অামাকে মনে হয় রিং করে যাচ্ছে কিন্তু পাবে কি করে মোবাইল এতক্ষণ অফ।
যাক দুই ঘন্টা ধরে ডাক্তাররা কি সব বলছে ফিসফিস করে অামি সুস্থ হবো তো?
কেন বা হবো না অামি তো সবার দোয়া নিয়ে অাছি অাবিরটা তো সবসময় অামার ভালো চাই কি করে অামার মন্দ হবে!!
ডাক্তার রা সব চলে গেলো অামাকে রুমে একা রেখে অামি অনুভব করলাম অামার চোখ বন্ধ করা গায়ে অন্য পোষাক হাতে স্যালাইন চলছে বোধহয় কিন্তু কাউকে অামি কিছু বলতে পাচ্ছি না। বলতে পাচ্ছি না অাপনারা অামার পরিচয় নিন; অামার মাকে খবর দিন। অামার মা টেনশন করছে। অাচ্ছা কেউ অামাকে কিছু বলেনা কেনো?
তাহলে কি অামি তাদের কাছে অজ্ঞান হয়ে অাছি! না তো অামি তো অামাকে বুঝতে পারছি তবে?
দুজন ডাক্তার এলো এবং বলাবলি করছে
স্যার ঃ এ মেয়ে বাঁচবে তো?
ডাঃ ঠিক বলা যাচ্ছে না জ্ঞান ফিরলে বলা যাবে ততক্ষণ খুব খেয়াল রাখতে হবে।
স্যার ঃকিন্তু এর পরিচয় তো জানতে হবে এখনো কোন খোঁজ পাওয়া যায়নি।
ডাঃ ঠিক অাছে তা বলে ফেলে রাখা যাবে না যখন জানা হবে তখন বুঝবো অাগে মানুষ।
জ্বী স্যার অামরা খেয়াল রাখছি।
অকে।

মিলি ভাবলো না না এ কি করে হয় অামি তো ঠিক অাছি এই ডঃ কে বলে দেখি বাসায় রিং দেয়া যায় কিনা….!
মিলি ডাকতে চাইলো এই যে স্যার শুনছেন?
শুনছেন কি অামাকে? অামি ডাকছি এইযে অামি হ্যালো স্যার?
ধ্যাত এত করে ডাকছি শুনেনা কেনো?
মিলি অবাক হয়ে চুপ করে রইলো। রাত কেটে গেলো অাবার দিন হলো। একদিন হয়ে গেলো এদিকে মিলির বাসায় অাবির হাজির মা অস্থির বোনটি কাঁদছে।
অাবির বললো কি হয়েছে অান্টি? মিলি কোথায় যাবে না বলে বা কেন যাবে যোগাযোগ না রেখে কোন ঝগড়া হলে তো অামাকে বলতো?
মিলির মা বললো জানিনা। অামার মেয়ে তো এমন না যে না বলে কোথাও যাবে।
অাবির বললো ঠিক অাছে তাহলে অামরা থানায় যোগাযোগ করি দেখি কি হয় এভাবে বসে থেকে কিছু হবে না।
মিলির মা বললো যা ভালো মনে করো তা করো বাবা অামার মেয়েটাকে এনে দাও…!অান্টি টেনশন করবে না দেখছি অামি এই বলে অাবির বের হলো।

এদিকে মিলি টেনশন করে যাচ্ছে কি করা যায়।
সে অনুভব করলো তার মাথায় ব্যাথা লাগছে খুব। চোখ দুটি অন্ধকার হয়ে অাসছে, গলাটা শুকিয়ে অাসছে। কেমন অস্থির লাগছে।
এমন সময় নার্স ডাকছে,
স্যার !স্যার! রোগী কেমন করছে জলদি অাসেন। দুজন ডাঃ এসে নার্সকে বলল, জলদি করে ইনজেকশন দেন রোগীকে।
নার্স তাই করলো। শান্ত হয়ে গেল মিলি।
কেমন শান্তি লাগছে এখন। মনে হলে মিলির ঘুম পাচ্ছে।
পরদিন অাবিরের কাছে কল এলো থানা থেকে,
অাবির বলছেন?
জ্বী!
অামি থানা থেকে বলছি!
জ্বী! জ্বী বলুন কি খবর পেলেন?
হ্যাঁ!
অাপনি যে ছবি দিয়ে মেয়েটিকে খুজছেন অাসলে সে পরশু সরক দুর্ঘটনায় অাহত হয়ে হাসপাতালে ভর্তি অাছে অাপনারা জলদি হাসপাতালে যান অামি ঠিকানা দিচ্ছি।
অাবির কি বলছেন তারাতারি দেন এই বলে অাবির মিলির মা অার বোন কে বুঝিয়ে হাসপাতালের দিকে রওয়ানা হলো।
এদিকে অাবার মিলির জ্ঞান ফিরলো
নার্স সেবা করছে মিলি ভাবলো সে ঘুম থেকে জাঁগলো বেশ ভালো লাগছে তার নার্সকে ডাকলো নার্স তা শুনতে পেলো
নার্স ঃ অাপনি কথা বললেন অহ্ গড অাপরি তিন ধরে কোন কথা বলতে পারেননি অাজ বলছেন কেমন লাগছে এখন?
মিলি ভালো তবে অামার কথা ছিলো অামার পরিবারের কেউকে জানানো হয়েছে কি?
নার্স ঃ না কাভাবে জানাবো অাপনি অজ্ঞান ছিলেন কোন পার্স বা ঠিকানা ছিলনা অাপনার তবে এখন তা নিয়ে ভাববেন না রেস্ট নেন জানা গেছে অাপনার বাড়ি থেকে লোক অাসছে…!
মিলি সত্যি তাহলে তো অাজ মা অাবিরকে টিনাকে দেখতে পাবো কতনা টেনশন করেছে তারা।
না জানি না খেয়ে মুখ শুকিয়ে বসে গেছে
নার্স ঃ অাপনি বেশি কথা বলবেন না অাবার অসুস্থ হয়ে যাবেন।
মিলি ঠিক অাছে মুচকি হাসলো মিলি তবে অাবার মাথাটা ব্যাথা শুরু করলো
চোখ দুটি লাল হয়ে অন্ধকার হয়ে অাসছে ছটফট লাগছে ভেতরটা শ্বাস নিচ্ছে জোড়ে জোড়ে তবু মনে হচ্ছে শ্বাস ঠিক যাচ্ছে না
নার্স ঃ কি হলো অাপনার ডাঃ অাসেন তারাতারি রোগীর অবস্থা ভালোনা। ডাক্তার এলো ধরাধরি করছে দুজন তাকে।

মিলি বুঝতে পারলো সমস্ত অস্থিরতা তাকে নিস্তেজ করে দিচ্ছে। হাত পা ঠান্ডা হয়ে যাচ্ছে। তবে কি সে মারা যাবে?
না! না! অামার অাবির কে দেখবে কে? মা কে কে দেখবে? অামি মরতে চাইনা। অামাকে টিনা অাপু বলে ডাকবে অামি লুকুচুড়ি খেলবো না তা কি করে হয়? অামার এমন লাগছে কেন? অাবিরের সাথে কি দেখা হবে না অামার? হাহ্ মৃত্যু সব অাশা
শেষ করে দেয়, সংসারের মায়া ভালোবাসা সব ছিন্ন করে দেয়।
হায়রে মৃত্যু কেন অাজ অামায় ঘিরে ফেললে? অামার অাবির অাসছে মা অাসছে টিনা অাসছে!!
কেন অারো অাগে তুমি এলেনা বা অারো পরে এলে না? তোমার কেমন বিচার মায়াহীন?
সময়টা কত অসহায় মৃত্যুর কাছে।
হে অাল্লাহ, হে মাবুদ!
অামার ভালোবাসা ঘরে হয়তো অামি যেতে পারিনি তবে সবাইকে তুমি ভালো রেখো।
মিলি নীরব হয়ে যেনো ঘুমিয়ে পড়লো।
সময়ক্ষেপণ যেনো শান্ত হয়ে গেলো সব।
ডাঃ দ্বীর্ঘশ্বাস ফেলে মাথা নাড়া দিয়ে বললো না হ্ বাঁচানো গেলো না।
এতক্ষণ হাজির হলো অাবির মা টিনা।
অাপনারা কি অাবির?
অাবির জ্বী..!
অামাদের রোগী কোথায়?
ডাক্তার বললো সরি অাবির সাহেব অামরা পারিনি তাকে বাঁচাতে।
কি?
হ্যাঁ . !
সবার মাথায় হাত পড়লো।
অাহ্ জীবন এমন নিয়তি সব হার মেনে যায় বাঁধনহারার ডোরে।
মৃত্যুটা এমনি হয় সকল ভালোবাসা উপেক্ষা করেনা।
তবু যে চলে যায় সে রেখে যায় অনুভবটুকু জীবনের পাতায় পাতায়।

সম্পর্কিত পোস্ট

পূনর্জন্ম

জুয়াইরিয়া জেসমিন অর্পি . কলেজ থেকে ফিরেই পিঠের ব্যাগটা বিছানায় ছুড়ে ফেললো অন্বেষা। তারপর পড়ার টেবিলের কাছে গিয়ে চেয়ার টেনে নিয়ে ধপ করে বসে দুই হাত দিয়ে মাথাটা চেপে ধরলো।প্রচণ্ড মেজাজ খারাপ ওর। আজ ওদের সেমিস্টার ফাইনালের রেজাল্ট দিয়েছে। একদমই ভালো করেনি সে। যদিও শুরু...

অনুভূতি

অনুভূতি

লেখা: মুন্নি রহমান চারদিকে ফজরের আজানের সুমধুর ধ্বনি ভেসে আসছে। বাইরে এখনো আবছা অন্ধকার। তড়িঘড়ি করে বিছানা ছাড়লো মালা। ঘরের কাজ সেরে বের হতে হবে ফুল কিনতে। তাড়াতাড়ি না গেলে ভালো ফুল পাওয়া যায় না আর ফুল তরতাজা না হলে কেউ কিনতে চায় না। মাথার ওপরে তপ্ত রোদ যেন...

অসাধারণ বাবা

অসাধারণ বাবা

লেখক:সাজেদ আল শাফি বাসায় আসলাম প্রায় চার মাস পর। বাবা অসুস্থ খুব।তা নাহলে হয়তো আরও পরে আসতে হতো।গাড়ি ভাড়া লাগে ছয়শো পঁচিশ টাকা।এই টাকাটা রুমমেটের কাছ থেকে ধার নিয়েছি।তার কাছে এই পর্যন্ত দশ হাজার টাকা ঋণ হয়েছে।বলি চাকরি হলেই দিয়ে দিব। পড়াশোনা শেষ করে দুই বছর...

০ Comments

Submit a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *