তিবুর কল্পনা
প্রকাশিত: এপ্রিল ১২, ২০১৮
লেখকঃ vickycherry05

 2,468 বার দেখা হয়েছে

এই লেখক এর আরও লেখা পড়ুনঃ vickycherry05
গল্প লেখকঃ
সুর্বনা ইসলাম
(এপ্রিল – ২০১৮)
………………………
দুপর বেলা খাওয়া শেষে বাসার সবাই যখন নাকে সরিষা তেল দিয়ে ঘুমাচ্ছে। ঠিক তখন তিবু পড়াশোনা করছে। আর তিবুর ভাই তিহান তখন তার প্রিয় খেলা বারান্দার গ্রিল ধরে টানা টানি খেলছে। বাসার সবাই দুপুর বেলা ঘুমালেও তিবু আর তিহান ঘুমায় না। তিবু ঘুমায় না দুইটা কারনে প্রথমত, তিবু ঘুমালে কেনো যেনো তিহানের পেটের ভাত হজম হয় না সে যেভাবেই হোক তিবুকে খুচিয়ে ঘুম থেকে তুলবেই। মুলত ঘুম না, খাওয়া দাওয়া, পড়াশুনা, এমন কি বাথরুম করতে গেলেও তিবুর সাথে তিহান আঠার মত লেগে থাকে। আরেকটা কারন হলো, তিহান সবসময় তিবুকে জালালেও দুপুর বেলা জালায় না কারন তখন সে তার প্রিয় খেলাটা খেলে। আর তাই তিবু দুপুরবেলা টা পড়াশোনা করে কাটায়। প্রতিদিনের মত আজও তিবুর পড়তে পড়তে দুপুর থেকে সন্ধ্যা হয়ে গেলো। সন্ধ্যা হতেই সবাই ঘুম থেকে উঠে পরলো। এরপর সবাই হাল্কা নাস্তা করে নিলো সেখানে তিবু আর তিহানো আছে। এবাসার একটা রুটিন আছে সেটা হলো যা করতে হবে সবার একসাথে করতে হবে শুধু বাথরুম টা ছাড়া। কিন্তু তিহান বড় হওয়ার পরে এই নিয়মটা প্রায় বিলুেপ্তের পথে। খাওয়া শেষ করার প্রায় আধ ঘনটা পরে সান্তা মিস চলে এলো (তিবু ও তিহানের টিচার)। প্রতিদিনের মত আজও তিবু বাহবা আর তিহান দুটো কান মলা পেলো। সান্তা মিস যেতে যেতে আজও রাত নয় টা বেজে গেলো। সান্তা মিস যাওয়ার এক ঘনটা পরে সবাই রাতের খাবার খেয়ে ঘুমিয়ে পড়লো। পরদিন সকালে তিবুর দুই বোন তানি আর তিশি স্কুলে চলে গেল। তিবুকে মা স্কুলে যাওয়া থেকে আজ বারন করে দিলো। তাকে নিয়ে কোথাও একটা যাবে এজন্য। তিবু স্কুল যায় নি এজন্য তিহানও স্কুলে যায়নি। তিবুর দেখা দেখি তিহানও বাইরে যাওয়ার জন্য তৈরি হয়ে নিলো। খানিকবাদে তিবু মা বাবা তৈরি হয়ে বাসার বাইরে এসে তালাও লাগিয়ে নিল। কিন্তু তিহান বাসার ভেতরই রয়ে গেলো। তিবু অনেকবার মা কে তিহানের কথা মনে করিয়ে দিলো। কিন্তু মা বাবা তার কথা শুনা তো দুরে থাক উলটো তাকে একটা গগন বিদকারী ধমক দিয়ে চুপ করিয়ে রাখল। তিহানকে না নিয়েই মা বাবা তিবু গাড়িতে উঠল। তিবুর তিহানের জন্য অনেক দুশ্চিন্তা হতে থাকে। গাড়িটা চলতে চলতে এক সময় একটা বিলডিং এর সামনে এসে দাড়ায়। বিলডিং এর উপর বড় করে লেখা মানসিক হাসপাতাল। তিবু সেটা দেখেছে বলে মনে হলো না। সে তিহানকে নিয়েই ভাবতে থাকে। তিবুর আম্মু আব্বু তিবুকে ডাক্তারের কেবিনে নিয়ে যায়। সেখানে দুটো রুম একটা রুমে তিবুকে রাখা হয় অন্য আরেকটা রুমে তিবুর মা বাবা ডাক্তারের সাথে কথা বলছিল। কিছুক্ষণ পরে ডাক্তার তিবুর রুমে আসে। এই প্রথম তিবুর কেমন যেন ভয় লাগতে থাকে। ডাক্তার বেশ খানিক ক্ষণ তিবুর সাথে কথা বলে। তিবুর প্রতিটা কথায় সে তিহানের কথা বলতে থাকে।তিবুর সাথে ডাক্তারের আলোচনা শেষ হওয়ার পর ডাক্তার তিবুকে যা বলল তা শুনে তিবু আতকে উঠে। ডাক্তার বলল -ইয়াং ম্যান। আমি এখন যা বলব মন দিয়ে শুনবে। তিবু ডাক্তারের কথা শুনে মাথা নাড়ে। ডাক্তার বলে – আই অ্যাম সরি মাই বয়। তুমি যার কথা বলছ সে আসলে তোমার কল্পনা। তিবু আতকে উঠে। সে ভয়ে ভয়ে বলতে থাকে -ম-া-নে? ডাক্তার এবার একটা নিশাঃস ফেলে বলে – তুমি কি জানো পৃথিবীতে একটা রোগ আছে যার নাম স্কিজফেনিয়া। তিবু মাথা নেড়ে বলে -হ্যা এই রোগ টা হলে মানুষ কল্পনা দেখে। ডাক্তার তার হাতে থাবা দিয়ে বলে-বেরি গুড ইয়াংম্যান।আসলে তোমারও এই রোগ টাই হয়েছে। তিহানও শুধুই তোমার কল্পনা। তিবুর গা শিউরে উঠে। সাথে সাথেই সে তার কাধে একটা শীতল হাতের স্পর্শ পায়। পিছনে ফিরে তাকিয়ে দেখে তিহান যে বাসায় ছিল সে এখানে কি করে এল নিজেকে প্রশ্ন করে তিবু। সাথে সাথে বিছানা থেকে লাফ দিয়ে উঠে তিবু। কিছুক্ষণ পর টের পায় সে আসলে স্বপ্ন দেখছিল। নাহ সে কোন মানসিক হাসপাতালে যায়নি পুরোটাই একটা স্বপ্ন। ভোর হয়ে গেছে। পাশ ফিরে তাকায়ে দেখে তিহান ঘুমিয়ে আছে। সে তখন নিজেকে নিজে বলে, না তিহান আমার কোন কল্পনা না। আসলে সে আমার খাটি কিন্তু ভেজাল মনের একমাত্র মায়ের পেটের ভাই। ভোরের লাল আভা গিয়ে পরে তিহানের মুখে। ভোরের আলোতে তিহানের মুখটা তিবুর কাছে সবচেয়ে সুন্দর বলে মনে হতে থাকে।

সম্পর্কিত পোস্ট

মা

মা

ইশু মণি বাহিরে ঝুম বৃষ্টি হচ্ছে তাসবিহ্ ঘরের দরজা জানালা সব বন্ধ করে ঘরের এক কোণে গুটিসুটি মেরে বসে আছে।টিনের চালে বৃষ্টির ফোঁটা পড়ায় অনবরত শব্দ হচ্ছে, বাসার সাথে লাগানো পেয়ারা গাছটার বিশাল বড় ডালপালা গুলো চালের উপর চলে এসেছে বারবার সেগুলো বারি খাচ্ছে যার কারণে শব্দ...

শখের পাখি

শখের পাখি

লেখিকা-উম্মে কুলসুম সুবর্ণা এই তো সেদিন মেলা থেকে বাসার ছোট্ট ছেলেটা আমাকে কিনে এনেছিলো। তখন তো ছানা পাখি ছিলাম এখন বুড়ো হয়েছি। বাসায় মোট ছয়জন থাকে। আগে ভাবতাম দুই রুমের ক্ষুদ্র ফ্ল্যাট এ এত গুলো মানুষ কিভাবে থাকতে পারে। পরে বুঝলাম এই সব কিছু ছেলের বউয়ের চমৎকার। অনেক...

নীল কমলিনী

নীল কমলিনী

অনুগল্প: নীল কমলিনী লেখা: অনুষ্কা সাহা ঋতু . চন্দনের শেষ ফোঁটাটা দিয়েই মা ঝরঝর করে কেঁদে ফেললেন। ছোট বেলায় এমন কত সাজিয়েছেন আমাকে। তখন মুচকি মুচকি হাসতেন, আর আজ কাঁদছেন। মা টাও ভারি অদ্ভুত। আচ্ছা, তবে কি দুটো সাজের অর্থ ভিন্ন! কি জানি? . হঠাৎ শঙ্খ আর উলুধ্বনি ভেসে...

০ Comments

Submit a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *