কবিঃ SHAFIUR RAHMAN
(১)
নিদ্রিত নয়নে,নির্মল সমীরে
দোদুল্যমান হিয়া;
বৈরাগ্য মোর নিশার-স্বপনে,
জাগিলো দর্শন দিয়া।
পিতার সহিত করিয়া মালিন্য,
ছাড়িয়া চলি আলয়;
আসিব না আর ফিরিয়া কভু,
যতই হোউক প্রলয়।
জীবন বাঁচিবার তরে নিত্যতায়
মনুষ্যকর্মই ভ্রান্তিময়;
বলিতে পারিবেনা, কেহ এ ভূবনে
সাফ আমি অতিশয়।
তথাপি ছলনাপূর্বক, হৃদয় যাতনে,
করিয়াছি আমি ভুল;
চাহিয়াছি ক্ষমা, তব নিকটে
অজস্র কান্নায় মশগুল।
তবে হইলে কেন বিরূপ? লইয়া,
শুধু একটিমাত্র সুত্র,
করিলে কেনো রাজ্য হইতে
মোরে এমনি ত্যাজ্যপুত্র?
(২)
নিবিড় গহনে হাঁটিতেছি আমি,
সাজিয়া বীরবেশ;
স্কন্ধ অবধি ঝুলিতেছে মোর,
কুন্তলা কালো কেশ।
নীল নীলিমার তপ্ত নূরের সমাসীনে,
জুড়ায়ে মোর অঙ্গ;
অচিন বিহঙ্গী উড়িয়া, উড়িয়া চলে
দিয়া আমায় সঙ্গ।
অরণ্যানীর সমুখে দর্শন পাইলাম,
অম্বুধির বিস্তৃত কান্তি;
জল-পিপাসা মিটাইয়া লইলাম,
পরাণে আসিলো প্রশান্তি।
দিবস অন্তে রজনী আসিলো,
হয়নি কো তবু ভোজ;
কোথায় আমি রাত্রি যাপিবো?
করিনি তো আশ্রয় খোঁজ!
গুল্ম পর্ণী বাধিয়া, বাধিয়া
বানিয়া লইলাম মাচা;
জন্তু-জানোয়ারের প্রতিরক্ষায়
ডালপালা হইলো খাঁচা।
…………………………………………
(৪)
এমনি করিয়া কাটিলো দিবস,
বৎসর পাঁচ কি ছয়;
বনবাসী হইয়া করিয়া লইছি,
অরণ্য আমি জয়।
স্বজনপ্রীতি জাগিলে মনে,
পরে নয়ন বহিয়া নীর;
এমত সময় উদিত হইলো,
বৃদ্ধ তান্ত্রিকধারী পির।
কহিলো সে পির স্নেহভরে স্বরে,
“বল হে মানব তব কথা;
মোর নিকটে প্রার্থনা করিলে,
কমিবে হৃদয়ও ব্যথা।”
কহিলাম,”বৎসর ছয়েক কাটাইতেছি,
দ্বীপে হইয়া স্বাধীন;
ফিরিয়া দাও মোরে মাতৃ হৃদয়ে,
করো তাহাদের অধীন।
লইয়া যাও মোরে নিজ ভূবনে,
মিনতি করি প্রভু;
রাজ-আদেশে ভাসিয়া চলিবো,
অবাধ্য হবো না কভু।”
(৫)
আকুল শুনিয়া পির, খুলিলেন তাবিজ
হইতে তাহার গাত্র;
মন্ত্র বলিয়া আনিলেন জল,
আনিলেন হস্তে পাত্র।
উদ্ধ গগনে ফুৎকার ছাড়িলেন,
দ্যুতি ছড়ালো কৃত্তিকা;
প্রবল কম্পনে কাঁপিয়া উঠিলেন,
ভুবন মাতা মৃত্তিকা।
চক্ষু খুলিয়া কহিলেন পির,
“পাইলাম আমি তথ্য;
তব রাজ্যপাল জানিতে পারিয়াছে,
মিথ্যা ভুলের সত্য।
চাহিলে তুমি ফিরিতে পারিবে,
নামিবে যখন রাত্রি;
পাঠাইবো তোমায় মাতৃহৃদয়ে,
হইয়া নভোবর্ত্মের যাত্রী।”
রজনী আসিলো জ্যোৎস্না উদিলো,
পির মুদিলেন অক্ষি;
বিকট শব্দে কম্পন করিয়া,
উড়িয়া আসিলো রথপক্ষি।
(৬)
ক্রন্দন-রোলে কহিলাম তবে,
“প্রভু! আমিতো তুচ্ছ,হীন;
এ জনমে শোধিতে পারিবো না
আপনার এই ঋণ।
যখন চাহিবেন তখনি হইবো,
আমি আপনার দাস;
ভগ্ন হৃদয় ভরিলো অদ্য,
মিটিলো সুখের আশ।”
উড়িয়া চলিলাম পক্ষীরথে,
হইলো যবে ভোর;
তন্দ্রাবিষ্ট দারোয়ান সবে,
খুলিতেছে কেবল দোর।
অবতরণে দেখিয়া আমায়,ফুৎকারিলো
“ওহে মা জননী;
প্রত্যাগমন করিয়া ফিরিয়াছে,
মোদের নয়নের মণি।”
মাতৃদেবী ছুটিয়া আসিলেন,
করিলেন পিতৃ-নিন্দা;
আদর,সোহাগে যতন করিলেন,
দেখিয়া আমায় জিন্দা।
(৭)
কহিলেন,”গুপ্তচরে প্রমাণ করিয়াছে,
সাক্ষ্য ছিলো সব ভণ্ড;
রাঘবকে তাই শুলে চড়িয়েছে,
দিয়েছে কঠোর দণ্ড।
প্রহরী পাঠিয়েছিলো খুঁজিতে তোকে,
করিয়া ভুল স্বীকার;
ফিরিয়া আসিলে অভিষেক করিবে,
দেবে অদ্যই রাজ্যধিকার।
গান্ধী রাজ্যয় খুঁজিয়া যখন,
মিলিলো না তোর চিহ্ন;
শলা-পরামর্শে বসিয়া তখন
সিদ্ধান্ত লইলো ভিন্ন।
নব-রাজ্য খুঁজিয়া আনিলেন,
রহিয়াছে যত জ্ঞানী,গুণী;
পরামর্শ লইয়া আনিলেন তবে,
হিমালয় হইতে মুনি।”
বিবরণ শুনিয়া কহিলেন মুনি,
“হে বিচক্ষণহীন অজ্ঞ;
হদিস পাইতে হীরনের তরে,
করিতে হইবে যজ্ঞ।”
যজ্ঞ করিয়া কহিলেন তিনি,
“করিয়ো না কোনো ভয়;
আসিবে শাহাজাদা ফিরিয়া তবে,
কাটিবে বৎসর ছয়।”
(৮)
তথা হইতে তোর ফেরার স্বপ্ন,
হৃদয় মাঝে বুনি;
নিদ্রা-জাগরণে বসিয়া,বসিয়া
দিবস কাল গুনি।
মহারাজের তো কঠোর চিত্তে,
উপশম হইয়াছে পীড়ন;
তোর প্রতীক্ষায় বসিয়া রহিয়াছে,
দর্শন দে তাহারে হীরন।”
ছুটিয়া চলিলাম পিতৃ নিকট,
প্রবেশিনু তাহার কক্ষে;
অকুল পাথারে সুখ পাইয়া তিনি,
জড়িয়ে লইলেন বক্ষে।
কহিলেন,”ক্ষমা কর মোরে যতই হই,
আমি তোর জনক;
মিথ্যা বিচারে দেশান্তর করিয়াছি,
নড়িয়াছে মোর টনক।
ছলনায় পরিয়া করিয়াছি আমি,
তোরে অযথা তিরস্কার;
রাজ অভিষেক করিয়া তাহার,
অদ্যই দিবো পুরস্কার।”
(৯)
অভিষেক অনুষ্ঠানে আসিলো সবে,
সুদূর হইতে প্রজাবর্গ;
মহারাজ-হীরন হইলো প্রজাবৎসল,
ফিরিয়া পাইলো স্বর্গ।
কোমল নিষ্ঠায় ছুটিয়া চলিলো,
হীরনের রাজ্য নীতি;
মহাকবিরা তাই রচনা করিলেন,
রাজা-প্রজার প্রীতি।
যামিনী কাটিলো প্রভাত আসিলো,
ভাঙ্গিলো না মোর ঘুম;
রুক্ষ কেশে হাত বুলিয়ে মাতা,
দিলো আদর,সোহাগি চুম।
কহিলেন,”বেলা দ্বিপ্রহর চলিয়া আসিলো,
পালঙ্ক এইবার ছাড়;
অলস শাহাজাদা নেবে কি তবে,
নব রাজ্যের ভার?”
কহিলাম,”নহে মা সে অলস নহে,
নহে সে অহি-রঙ্গ;
এই তো আমি জাগ্রত হইয়াছি
নিদ্রা হইয়াছে ভঙ্গ।”
————-সমাপ্ত————
বিঃদ্রঃ সময় সল্পতায় (৩) নং পরিচ্ছেদ লিখতে পারিনি।
নির্বাক_পাখি
হে কবি, শক্ত করে ধরো, তোমার অস্ত্র। আবারো, তোমার অস্ত্রের মধ্য দিয়ে, রক্তে রঞ্জিত করে দাও, এই শুভ্র ময়দান। হে কবি, শক্ত করে ধরো, তোমার অস্ত্র। যেভাবে, কবি নজরুল ধরেছিল, ইংরেজদের বিরুদ্ধে। যেভাবে, কবি সুকান্ত চেয়েছিল, ...
ভূবনে — ভুবনে
খুবই চমৎকার একটা কাহিনী কবিতা। পড়ে অনেক ভালো লাগলো।
হৃদয়ের মাঝে গেঁথে গেছে কবিতাটি।
শুভ কামনা।
অসাধারণ। অনেক যত্নের সাথে লেখা।বড় লেখা পড়তে হলেও ধৈর্যশীল হতে হয়। তবে কাহিনীকবিতা পড়তে ভালোই লাগে আমার।কবিতাটি ভালো লেগেছে।শুভকামনা নিরন্তর
পুরোটা পড়লাম। আসলেই আমি মুগ্ধ। ৩নং পরিচ্ছেদটা পড়ার জন্য খুবই আগ্রহ হচ্ছে। শব্দচয়ন, ছন্দমিল সবকিছু ককথায় চমৎকার। বানানে দু’চারটা ভুল আছে। কবিতা পড়ার সময় এতোটাই ঘোরে ছিলাম যে সেগুলোর দিকে আর নজর দিতে পারি নি।
সর্বোপরি শুভ কামনা।
অসাধারণ